আমি বাড়ি ফিরছি-খোকা by আসাদ সরকার

খোকা, আমি বাড়ি ফিরছি। এই তো পথেই আছি। আমি জানি, তুমি আমার অপেক্ষায় প্রহর গুনছ। আমার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় কত কাজ বাদ রয়েছে তোমার! শুনেছি আমার ফেরার অপেক্ষায় কলেজে যাওয়াও বন্ধ রেখেছ তুমি। আমি ফিরলে টিউশন ফি নিয়ে তবেই কলেজে যাবে। তোমার মা-মণি নাকি কার কাছ থেকে ধার করে কলেজের টিউশন ফি এনে দিয়েছিল তোমাকে।


তুমি সে টাকা নিয়েছ বটে কিন্তু কলেজের টিউশন ফি পরিশোধ করোনি। বরং সে টাকায় তোমার মা-মণির জন্য ওষুধ কিনেছ।
তোমার মা-মণির সে ধার করা টাকা পরিশোধের সময়ও পার হয়েছে গত সপ্তাহে। খুকির বায়নাগুলো ইদানীং আরও বেড়ে গেছে শুনলাম। যখন-তখন যেকোনো কিছু খাওয়ার জেদ ধরে। ধরবেই তো! কতই বা বয়স ওর। তোমার মা-মণি নাকি সে জেদ সামলাতে না পেরে খুব মেরেছে ওকে। বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়ার জন্য বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। তাকেও জানিয়ে দিয়েছি, আমি ফিরছি। পকেটে আমার মাসের বেতনের টাকা।
খোকা, প্রথমেই তোমার টিউশন ফির টাকাটা দেব, তারপর বাড়িওয়ালার। তোমার মা-মণির হাতে এবার বেশ কিছু টাকা রেখে আসব। সংসারের খরচের বাইরেও সে যেন খুকির চাওয়াগুলো পূরণ করতে পারে। তোমার দিদামণির জন্য চশমা কেনার টাকাটা তোমার হাতেই দিয়ে আসব। তোমার মা-মণির জন্য একটা শাড়ি কেনা খুব দরকার। অবশ্য তোমারও নতুন কোনো জামা নেই।
এ মাসে কোনোটিই দিতে পারব না হয়তো। তবে সামনের মাসে পারবই। সামনের ছয় মাস তো আর তোমার কলেজের টিউশন ফি দেওয়া লাগবে না। সে টাকাতেই না হয়...। খুকির জন্য একটা সাইকেল কিনব। তোমার মামণিকে তাহলে কম বিরক্ত করবে সে। জানো খোকা, তোমাদের দেখার জন্য আমার মনটা ব্যাকুল আছে। কত দিন তোমাকে বুকে জড়িয়ে আদর করি না। খুকিটাকে পিঠে নিয়ে ঘোড়া সাজব এবার। দেখবে ও খুব মজা পাবে।
তোমার মা-মণি আমাকে কিছু বলে না কিন্তু আমি বুঝতে পারি, ফোনে কথা বলার সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে সে। আমি ফিরছি খোকা। তোমাদের সব চাওয়া-পাওয়া মেটাতে আর আমার কলজেটা জুড়াতে আমি ফিরছি। এই তো পথেই আছি। যদি এ পথেই পথ ফুরিয়ে না যায় আমার, তবে অল্প সময় পরই আমাকে বুকে জড়াতে পারবে। আর যদি আমার রিকশা কিংবা বাইকটাকে পেছন থেকে কোনো একটা বাস কিংবা ট্রাক পিষে দিয়ে যায় কিংবা চলতি পথে কোথাও উল্টে যায় আমাকে বহনকারী গাড়িটি তাহলে হয়তো কখনোই ফিরব না। এমনকি তোমরা হয়তো জানতেও পারবে না।
লাশঘরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে থাকব আমি আর তোমরা থাকবে আমার ফেরার অপেক্ষায়। আর যদি জানতেও পারো, আমার হত্যার কোনো বিচার প্রত্যাশা করতে পারবে না কিংবা আমার অনুপস্থিতির জন্য তোমাদের যে বেহাল দশা হবে তার দায়ভারও নেবে না কেউ।
কেমন করে বাঁচবে তোমরা? কী হবে তোমাদের? টিউশন ফির কারণে তোমার লেখাপড়াটা বন্ধ হবে কি না কিংবা বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে কি না, কেউ ভাববে না সে কথা। খোকা, যদি পথেই হারিয়ে ফেলি পথ, কষ্ট পেলেও ভেঙে পোড়ো না যেন। পথের মাঝেই পথ হারানো এই আমার সব দায়িত্বই তো তোমার ওপর। স্রষ্টা যেন তোমায় অন্তত নিরাপদ সড়কে বাঁচিয়ে রাখে।
 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা

No comments

Powered by Blogger.