গন্তব্য ঢাকা-বই তাঁকে রেখেছে ঢাকায় by সিনড্রেলা
টিএসসি থেকে শাহবাগের দিকে আসতে পথেই পড়বে কাজী নজরুল স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধের পাশেই প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের অন্যতম বন্ধু বই নিয়ে বসে থাকেন ৬০ বছর বয়সী গিয়াসউদ্দীন আহমেদ। গ্রামের বাড়ি তাঁর কিশোরগঞ্জে। ১৫-১৬ বছর ধরে এখানেই পথযাত্রীদের বই দিয়ে সেবা করে চলেছেন তিনি।
বাবার চাকরির সুবাদে জন্ম থেকে তিনি ঢাকাতেই। বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। সাত ভাই ও দুই বোনের সংসার ছিল তাঁদের। বোন দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। আর সাত ভাইয়ের ছয় ভাই ঢাকায়। এক ভাই গ্রামে মায়ের কাছে থাকেন। বাবা মারা গেছেন ছয় বছর হলো। মা গ্রামেই থাকেন। শেওড়াপাড়ায় থাকেন গিয়াসউদ্দীন। পাঁচ মেয়ে, এক ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তাঁর সংসার। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, বাকি ছেলেমেয়েরা এখনো পড়াশোনা করছে স্কুলে।
‘আপনি পড়াশোনা করেছেন কোথায়?’ প্রশ্ন শুনে মুখ খোলেন গিয়াসউদ্দীন। বলেন, ‘জন্ম ঢাকাতে হওয়ায় ম্যাট্রিক পাস করেছি এখানেই। ইন্টারমিডিয়েট করেছি আইডিয়াল কলেজে। পরে ডিগ্রি করেছি তিতুমীর কলেজ থেকে। এরপর বিভিন্ন পেশায় থেকেছি। সিনেমা হল লিজ নিয়েছি, ফিল্ম লাইনে কিছু টেকনিক্যাল কাজ করেছি। কিন্তু কোনোটাতেই স্থির হতে পারিনি, স্থায়ীভাবে সেগুলো ধরে রাখতে পারিনি। পরে বই নিয়ে বিক্রি করার চিন্তা মাথায় আসে। শুরু করি কাজ। আর এতেই আমি মজা খুঁজে পাই। বই আমার খুব পছন্দের বিষয়। বই-ই মানুষের অন্যতম বন্ধু। বই কারও ক্ষতি করে না। আর এই বই বিক্রি করতে গিয়ে আমি অনেক বড় বড় ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ পেয়েছি। তাই তো অনেকে আমাকে এই পেশা ছাড়তে বললেও আমি তা উপেক্ষা করেছি। প্রতিদিন এ থেকে গড়ে প্রায় ৩০০-৩৫০ টাকার মতো আয় হয়, যা দিয়ে ঢাকা শহরে ছয়জনের সংসার বহন করা অসম্ভব। তবুও তো ঢাকাতেই আছি। উপরন্তু ছেলেমেয়ের পড়াশোনা আছে।’
নির্দিষ্ট কোনো বই নয়, বরং সব ধরনের বই-ই তাঁর কাছে পাওয়া যায়। তবে জার্নালগুলোই তিনি প্রাধান্য দেন বেশি। দু-তিন দিন পরপর নীলক্ষেত থেকে বই নিয়ে আসেন তিনি। বেচাকেনা শেষে বইগুলো চারুকলা ইনস্টিটিউটের উল্টোদিকে ছবির হাটের এক স্থানে রেখে যান। পরদিন আবার সেখান থেকে নিয়ে কাজ শুরু করেন।
ঢাকায় থাকতে কেমন লাগে। জবাব দেন, ‘অনেক আগে দেখা ঢাকা আজকের এই ঢাকার মতো ছিল না। তখন ঢাকা বলতে বোঝাত পুরান ঢাকাকেই। না ছিল এত জনসংখ্যা, না ছিল এত দূষণ। এখন শুধু চারদিকে মানুষ আর মানুষ। প্রতিদিন তা আরও বাড়ছে। এভাবে জনস্রোত যদি বাড়তে থাকে, তবে ঢাকা আর বসবাসের উপযোগী থাকবে না। কিন্তু যাঁদের এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করার কথা, তাঁরা তা করছেন না। ওদিকে গ্রামে ফিরে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। কেননা, সেখানেও আয়ের উৎস কমে যাচ্ছে। আবার প্রতিনিয়ত ভাগ হওয়ার ফলে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। জমিতে কাজ করে কৃষক যথার্থ আয় করতে পারছে না। আবার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে লোকের প্রয়োজনীয়তাও কমে যাচ্ছে। সরকার যদি এসব লোকের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করত, তাহলে এত বেকার হতো না। আবার লোকজন ঢাকামুখীও হতো না। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ স্থানে কাজ করত। এতে ঢাকাও সুস্থ থাকত। ঢাকায় আমরা যেভাবে থাকি, এটা তো জীবন নয়। যেসব খাবার আমরা খাই, তা খাওয়ার উপযোগী নয়। সাধারণ মানুষ এসব খাবার খাচ্ছে। তারা তো নিজেদের খাবার নিয়েই চিন্তা করে না, দেশ নিয়ে কী চিন্তা করবে। উপরন্তু আমরা গাছ কেটে ফেলছি প্রতিনিয়ত। সেখানে বানাচ্ছি ভাস্কর্য, নয় অন্য কিছু। ফলে আমাদের পরিবেশকেও ধ্বংস করছি।’ গ্রামে ফিরতে মন চায় না? ‘তা আর বলতে। গ্রামে এখনো কিছু জমি রয়েছে, কিন্তু তা দিয়ে কি সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা যায়। তাই ভালো না লাগলেও আর কষ্ট হলেও ঢাকায় থাকতে হবে। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে গ্রামে ফিরে যেতে চায়। মূল লক্ষ্য তো গ্রামেই ফেরা। তবে কবে যেতে পারব, কখন যেতে পারব, তা জানা নেই।’
‘আপনি পড়াশোনা করেছেন কোথায়?’ প্রশ্ন শুনে মুখ খোলেন গিয়াসউদ্দীন। বলেন, ‘জন্ম ঢাকাতে হওয়ায় ম্যাট্রিক পাস করেছি এখানেই। ইন্টারমিডিয়েট করেছি আইডিয়াল কলেজে। পরে ডিগ্রি করেছি তিতুমীর কলেজ থেকে। এরপর বিভিন্ন পেশায় থেকেছি। সিনেমা হল লিজ নিয়েছি, ফিল্ম লাইনে কিছু টেকনিক্যাল কাজ করেছি। কিন্তু কোনোটাতেই স্থির হতে পারিনি, স্থায়ীভাবে সেগুলো ধরে রাখতে পারিনি। পরে বই নিয়ে বিক্রি করার চিন্তা মাথায় আসে। শুরু করি কাজ। আর এতেই আমি মজা খুঁজে পাই। বই আমার খুব পছন্দের বিষয়। বই-ই মানুষের অন্যতম বন্ধু। বই কারও ক্ষতি করে না। আর এই বই বিক্রি করতে গিয়ে আমি অনেক বড় বড় ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ পেয়েছি। তাই তো অনেকে আমাকে এই পেশা ছাড়তে বললেও আমি তা উপেক্ষা করেছি। প্রতিদিন এ থেকে গড়ে প্রায় ৩০০-৩৫০ টাকার মতো আয় হয়, যা দিয়ে ঢাকা শহরে ছয়জনের সংসার বহন করা অসম্ভব। তবুও তো ঢাকাতেই আছি। উপরন্তু ছেলেমেয়ের পড়াশোনা আছে।’
নির্দিষ্ট কোনো বই নয়, বরং সব ধরনের বই-ই তাঁর কাছে পাওয়া যায়। তবে জার্নালগুলোই তিনি প্রাধান্য দেন বেশি। দু-তিন দিন পরপর নীলক্ষেত থেকে বই নিয়ে আসেন তিনি। বেচাকেনা শেষে বইগুলো চারুকলা ইনস্টিটিউটের উল্টোদিকে ছবির হাটের এক স্থানে রেখে যান। পরদিন আবার সেখান থেকে নিয়ে কাজ শুরু করেন।
ঢাকায় থাকতে কেমন লাগে। জবাব দেন, ‘অনেক আগে দেখা ঢাকা আজকের এই ঢাকার মতো ছিল না। তখন ঢাকা বলতে বোঝাত পুরান ঢাকাকেই। না ছিল এত জনসংখ্যা, না ছিল এত দূষণ। এখন শুধু চারদিকে মানুষ আর মানুষ। প্রতিদিন তা আরও বাড়ছে। এভাবে জনস্রোত যদি বাড়তে থাকে, তবে ঢাকা আর বসবাসের উপযোগী থাকবে না। কিন্তু যাঁদের এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করার কথা, তাঁরা তা করছেন না। ওদিকে গ্রামে ফিরে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। কেননা, সেখানেও আয়ের উৎস কমে যাচ্ছে। আবার প্রতিনিয়ত ভাগ হওয়ার ফলে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। জমিতে কাজ করে কৃষক যথার্থ আয় করতে পারছে না। আবার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে লোকের প্রয়োজনীয়তাও কমে যাচ্ছে। সরকার যদি এসব লোকের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করত, তাহলে এত বেকার হতো না। আবার লোকজন ঢাকামুখীও হতো না। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ স্থানে কাজ করত। এতে ঢাকাও সুস্থ থাকত। ঢাকায় আমরা যেভাবে থাকি, এটা তো জীবন নয়। যেসব খাবার আমরা খাই, তা খাওয়ার উপযোগী নয়। সাধারণ মানুষ এসব খাবার খাচ্ছে। তারা তো নিজেদের খাবার নিয়েই চিন্তা করে না, দেশ নিয়ে কী চিন্তা করবে। উপরন্তু আমরা গাছ কেটে ফেলছি প্রতিনিয়ত। সেখানে বানাচ্ছি ভাস্কর্য, নয় অন্য কিছু। ফলে আমাদের পরিবেশকেও ধ্বংস করছি।’ গ্রামে ফিরতে মন চায় না? ‘তা আর বলতে। গ্রামে এখনো কিছু জমি রয়েছে, কিন্তু তা দিয়ে কি সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা যায়। তাই ভালো না লাগলেও আর কষ্ট হলেও ঢাকায় থাকতে হবে। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে গ্রামে ফিরে যেতে চায়। মূল লক্ষ্য তো গ্রামেই ফেরা। তবে কবে যেতে পারব, কখন যেতে পারব, তা জানা নেই।’
No comments