অভিমত ভিন্নমত
বিশ্ববিদ্যালয়টি আর কতদিন বন্ধ থাকবে? গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিনই হল ত্যাগ করে আমাদের সন্তানেরা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। অথচ কিছু দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের ব্যক্তিগত নামে এই মর্মে পত্র পাঠায়, ‘আপনার সন্তান যদি এখনো হল ত্যাগ না করে থাকে তবে তাকে অবিলম্বে হল ত্যাগ করতে বলুন।’ অর্থাৎ তাদের ভাষায়, হলে অবস্থানকারীদের সঠিক তথ্য না জানা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অভিভাবকদের ব্যক্তিগত নামে পত্র পাঠানো হয়েছে। এই অচলাবস্থা প্রায় তিন মাস ধরে চলতে থাকায় গভীর উত্কণ্ঠায় অভিভাবকেরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন, তখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিভাবকদের ব্যক্তিগত নামে দ্বিতীয় পত্র পাঠানো হয়েছে। সে পত্রে শিক্ষকদের চাকরির বিভিন্ন বিষয়, পদায়ন, জেলা কোটা সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যা অভিভাবকদের জানানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।
ওই পত্রে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এই বলে যে, ওই সংবাদ সম্মেলনে যিনি লিখিত প্রস্তাব পাঠ করেছেন, তাঁর কোনো সন্তান এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন না। কিন্তু সন্তানের অনিশ্চিত শিক্ষাজীবনের দুশ্চিন্তায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের পাশে দেশের যেকোনো সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে দাঁড়াতে পারেন। প্রস্তাব পাঠকারীকে ছাত্রছাত্রীদের বাবা হতে হবে, এমন অযৌক্তিক দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের একমাত্র দাবি, আমাদের সন্তানদের নির্বিঘ্ন এবং নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাজীবন। এই দাবি দেশের যে কেউ করতে পারেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে আমরা গভীর উত্কণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ করছি, বর্তমান সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপে প্রয়াসী হচ্ছেন। অপর পক্ষে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী উপাচার্যের পক্ষাবলম্বন করেছেন। এই দুই পক্ষের জেদাজেদিতে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের অমূল্য তিন মাস ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রামের সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, শিক্ষার্থীদের আর সময় নষ্ট না করে বিশ্ববিদ্যালয়টি খোলার ব্যবস্থা করুন।
মো. সামসুল হক, নারিন্দা, ঢাকা।
শিকলে বাঁধা জীবন
গত ২৭ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘দুরন্ত রাফিনকে তালিম দিতে পায়ে শেকল’ প্রতিবেদনটি পড়ে ভীষণ মর্মাহত হয়েছি। ফরিদপুরের মিহিউস সুন্নাহ জামেয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা নূরানি মক্তব ও হেফজখানার ছাত্র রাফিন। ছয়-সাত বছরের ছেলেটিকে মাদ্রাসার একটি ছোট ঘরে সাত-আট দিন ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অপরাধ, সে একটু বেশি দুরন্ত! একটি বাচ্চা ছেলে দুরন্ত বা চঞ্চল প্রকৃতির হতেই পারে, তাই বলে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে চারদেয়ালে বন্দী রাখা অমানবিক, নিষ্ঠুর কাজ। দুরন্ত রাফিন মানুষের এই নিষ্ঠুরতা থেকে কী শিক্ষা নেবে, তা কি ভেবে দেখেছেন ওই মাদ্রাসার সম্মানিত অধ্যক্ষ? ছোট্ট রাফিনকে ‘শান্ত’ করতে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন একটু ভালোবাসা। শিক্ষক ভালোবাসা দিয়ে একটি ছাত্রকে আলোকিত করতে পারেন। ছোট্ট রাফিনের পায়ের শিকল খুলে দিন। ওকে মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে দিন। বিকেলে মাঠে খেলতে দিন। রাফিনের জীবনকে চারদেয়ালে বন্দী করে রাখবেন না। রাফিনের শৈশব আনন্দময় হোক।
আরাফাত
মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।
দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা বলছি
আমি মোসা. জোবেদা খাতুন, দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা। আমার বয়স এখন ৯৩ বছর, স্বামী প্রয়াত। ১৯৫৩ সাল থেকে দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছি। আমি সাত সন্তানের জননী। দুই ছেলেকে হারিয়েছি মহান মুক্তিযুদ্ধে। তাদের একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী মিজানুর রহমান মিজু, অন্যজন শহীদ ওবায়দুর রহমান ওযু। মিজানুর রহমান মিজুকে ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর ঘোড়াশালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। ২০০০ সালে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরিজ’ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় তার স্মরণে। ওবায়দুর রহমান ওযু ছিল সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধে দুই সন্তান হারানোর আঘাত সইতে না পেরে আমার স্বামী হূদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। আমার বড় ছেলে জিল্লুর রহমান বাংলা একাডেমীর সাবেক কর্মকর্তা। পাঁচ বছর ধরে সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। বর্তমানে সে দিনাজপুর হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমার অন্য সন্তানেরা বিদেশে বসবাস করছে। আমি অনেকটা অসহায় অবস্থায় একমাত্র আশ্রয়স্থল দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়ার বাড়িতে বসবাস করছি। কিন্তু এই বসবাস প্রাণান্তকর হয়ে উঠেছে। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসী আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমার বসতবাড়িটি জবরদখল করার চেষ্টা করছে। ৩ মার্চ তারা আমার বাড়ির একটি ঘর জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। নানা উপায়ে তারা আমার স্বাভাবিক জীবন যাপনে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
আমার দুই সন্তানের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে এই ৯৩ বছর বয়সে আমাকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, এমনটা কখনো ভাবিনি। দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা হওয়াই কি আমার অপরাধ? নাকি এই দেশে আইন-বিচার বলে কিছু নেই? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আবেদন, আমার বসতবাড়ির জবরদখল করা ঘরটি সন্ত্রাসীদের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করে দিন। তারা যাতে আমার বাড়িটি পুরোপুরি গ্রাস করার অপপ্রয়াস বন্ধ করে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিন। সারা দেশে যারা আমার মতো এ ধরনের অন্যায়-অবিচারের শিকার হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা, সম্পত্তির অধিকার, নিজের বসতভিটায় নিরাপদে-নিরুপদ্রবে বসবাসের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য আপনার সরকারকে সক্রিয় করুন।
মোসা. জোবেদা খাতুন
মুন্সিপাড়া, দিনাজপুর।
ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ
আগে জানতাম, ব্যাংকে টাকা রাখলে টাকা বাড়ে। এখন দেখছি কমে, এমনকি শূন্যও হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকগুলো সঞ্চয় হিসেবে ৩০০ টাকা করে বছরে দুবারে ৬০০ টাকা এবং চলতি হিসাবে ৫০০ টাকা করে বছরে দুবারে এক হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ আদায় করতে পারবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সংসারখরচ মিটিয়ে তেমন একটা সঞ্চয় করতে পারে না। তাদের সঞ্চয় হিসেবে তেমন একটা জমা থাকে না। যাদের সঞ্চয় হিসাবে এক হাজার টাকা আছে, তারা বছর শেষে দেখবে (১০০০-৬০০)= ৪০০ টাকা আছে। অনেক পরিবারের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া একাধিক ছেলেমেয়ে রয়েছে, যাদের কলেজের ফি, স্কলারশিপ গ্রহণ ইত্যাদি কাজের জন্য সঞ্চয় হিসাব থাকে। অর্থের প্রয়োজনে এসব হিসাবের বরাতে তারা ডিডি, টিটি ইত্যাদি করে থাকে। এসব হিসাবেও যদি বছরে ৬০০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়, তাহলে একটি পরিবারকে বছরে কয়েকটি হিসাবের বিপরীতে কয়েক হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে, যা কাম্য নয়।
আগামী জুন ২০১০ ও ডিসেম্বর ২০১০-এ এভাবে ৩০০ টাকা করে লাখ লাখ সঞ্চয় হিসাবে দুবার সার্ভিস চার্জ কর্তন করে নেওয়া হবে। এদিকে সঞ্চয় হিসাবে সুদের হার খুবই কম এবং তা শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ শর্ত ভঙ্গ হলেই এসব হিসাবে সুদ দেওয়া হয় না। আবার ন্যূনতম স্থিতি না থাকলে সে জন্য আছে পেনাল্টির ব্যবস্থা। তদুপরি দুই বছর লেনদেন না করলে পুরো টাকার মালিক হয়ে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্রিয় গভর্নর মহোদয় ব্যাংকিংসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু উল্লিখিত কর্তন, সার্ভিস চার্জ, জরািমানা ইত্যাদির অত্যাচারে অনেক সাধারণ মানুষকেই টিনের কৌটায় টাকা জমানোর চিন্তা করতে হবে। এ দেশের গরিব মধ্যবিত্ত মানুষ দিন দিন নানা যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে, সুযোগ-সুবিধা, সেবা এগুলো পাওয়ার যোগ্যতা যেন তাদের নেই।
গভর্নরের কাছে আমার আকুল আবেদন, বছরে ৬০০ টাকা সার্ভিস চার্জ যাঁরা দিতে পারবেন, তাঁদের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য করা হোক, সবার জন্য নয়।
আফরোজা বেগম
আরামবাগ, ঢাকা।
তৃণমূলের অবহেলিত চিকিৎসকরা
ইদানীং তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। প্রথম আলোতে এ নিয়ে একটি সম্পাদকীয়ও ছাপানো হয়েছে। ব্যাপারটা ভিতর থেকে দেখা প্রয়োজন। গ্রামেগঞ্জে কতো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ডাক্তারদের কাজ করতে হচ্ছে—তা ভালোভাবেই জানি। সিকি শতাব্দীর চাকরি-জীবনের বেশির ভাগ সময় আমার কেটেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাবসেন্টারে। পাঁচ বছর চাকরি করেছি শুধু ইউনিয়ন সাবসেন্টারেই। ওখানে ভাঙা নড়বড়ে ঘরে অফিস করেছি, বাস করতাম বিদ্যুিবহীন একটা অতিক্ষুদ্র সেন্টার রুমে। ওখানে কোনো টয়লেট পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু শত কষ্টের মধ্যেও নিয়মিত কর্মস্থলে থেকেই চাকরি করেছি।
তার প্রতিদান হিসেবে পেয়েছি ঘনঘন বদলি; এমনকি তিন মাসেও আমি বদলির শিকার হয়েছি এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায়। যারা ফাঁকি দিয়েছে তারাই পদোন্নতি পেয়েছে নানা উপায়ে। এ সার্ভিসে জুনিয়র-সিনিয়র কিছুই বিবেচনা করা হয় না। যার খুঁটির জোর বেশি সেই ভালো পোস্টিং ও প্রমোশন পায়। কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নির্বিকার ও নির্মম। কোনো সিস্টেমও নেই। ফলে কর্তব্যপরায়ণরা অন্ধকারেই থেকে যায়, বঞ্চিত, অবহেলিত, পীড়িত হয়। যখন ক্ষমতা আমলাদের হাতে থাকে তখন তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করেন। আবার যখন ড্যাব বা স্বাচিপের হাতে ক্ষমতা থাকে, তখন স্বেচ্ছাচার করেন এই দুই সংগঠনের নেতারা।
চাকরিজীবনে আমি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে একটা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিই এবং সর্বোচ্চ ডিগ্রিও অর্জন করি। ২৪ বছর চাকরি করার পরও আমাকে একটা উপজেলায় পোস্টিং দেওয়া হয় জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে চলতি দায়িত্বে। ১০ বছর চলতি দায়িত্বে কাজ করার পরও আমাকে নিয়মিত করা হয়নি। চলতি দায়িত্ব নিয়েই আমি দুটি জেলা হাসপাতাল ও দুটি উপজেলা হাসপাতালে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম। এতবছর চাকরি করার পর একটি উচ্চতর স্কেলও আমি পাইনি। অথচ আমার সঙ্গে যারা অন্য ক্যাডার সার্ভিসে ঢুকেছেন তাঁরা আজ জয়েন্ট সেক্রেটারি বা তদুর্ধ্ব পদে কর্মরত। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কারো কাছে মুখ দেখাতে পারি না। সামাজিকভাবে চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলাম। ছাত্রজীবনে ছিলাম অন্যতম সেরা ছাত্র, সেই আমি পেশাজীবনে অন্যতম ব্যর্থ ব্যক্তি। বেতন না বাড়ায় আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
এসবের প্রতিকার কেউ করবে না। এটা শুধু আমার অবস্থা নয়। আমার মতো হাজার হাজার ডাক্তার এ ধরনের অন্যায়ের শিকার। কেউ উদ্যোগী হয়ে একটু সময় নিয়ে জরিপ করলেই সব জানা যাবে। এ দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট সেক্টরে ঢুকেছেন বা বিদেশ চলে গেছেন। প্রসঙ্গত, ডাক্তারদের মধ্যে চাকরি ত্যাগের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। কারণ চাকরি তাঁদের কাছে গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়। আজ যখন দেখি—নবীন চিকিৎসকরা তৃণমূল পর্যায়ে যেতে চায় না—তখন মনে হয় ওরা সবকিছু দেখেশুনে অনেক চালাক ও সতর্ক হয়ে গেছে। আমাদের অবস্থা দেখে ওরা ধরে নিয়েছে, এ সার্ভিস থেকে কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না। তাই অহেতুক গ্রামগঞ্জে কষ্ট করে কোনো লাভ নেই। মনে হয় বোকা ছিলাম বলেই আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। যে সার্ভিসে কারো ন্যূনতম মূল্যায়ন হয় না—সে সার্ভিস ভেঙে পড়বে এবং পড়ছেও। তাই সরকারকে মূল সমস্যার সমাধান করে স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
জনৈক চিকিৎসক।
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা
ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি ভূমি অফিসে কর্মরত আছি। ২০০৪ সালে যখন চাকরি হয়, তখন আমরা মোট ৭৬ জন যোগদান করি। চাকরিটা তৃতীয় শ্রেণীর হলেও এখানে যোগদানকারীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ স্নাতক ও এক-তৃতীয়াংশ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।
বর্তমানে সরকারি চাকরির বাজার মন্দা বলেই এইচএসসি লেভেলের একটি চাকরিতে এ রকম উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা যোগ দিয়েছেন। অফিসের কাজকর্ম পরিচালনা করতে এসে দেখা যায়, চাকরি ছোট হলেও কাজ বা দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ, নামজারি ও জমা ভাগ, জমা খারিজ, খাসজমির রক্ষণাবেক্ষণ, আদালতে প্রতিবেদন, ভূমিসংশ্লিষ্ট ওপর মহলের যেকোনো তথ্য প্রদান ইত্যাদি কাজসহ মহামান্য হাইকোর্টের মামলার দফাওয়ারি প্রতিবেদনও তৈরি করতে হয়।
এসব কাজ এইচএসসি পাস একজন লোকের পক্ষে করা দুরূহ। তাই নিয়োগবিধি সংশোধন করে এই পদে এইচএসসির পরিবর্তে ডিগ্রি পাসের শর্ত একান্ত আবশ্যক। পাশাপাশি পদবি পরিবর্তন করে শুধু ‘ভূমি সহকারী কর্মকর্তা’ করা এবং বেতন স্কেল বাড়িয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদা দিলে এসব বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের যেমন সামাজিক মর্যাদা বাড়বে, তেমনি তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এতে ভূমি অফিসের দুর্নীতির যে বদনাম, সেটাও অনেকাংশে কমে যাবে।
তা ছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের (পিয়ন) পদোন্নতি দিয়ে ‘ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা’ করা হয়; বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা মানসম্মান বিসর্জন দিয়ে অর্থের পেছনে লেগে থাকেন। এতে সরাসরি নিয়োগ পাওয়ারা (যাঁরা ডিগ্রিধারী) হীনম্মন্যতায় ভোগেন।
এভাবে পদোন্নতি বন্ধ করা হোক এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে ‘ভূমি সহকারী কর্মকর্তা’দের পদোন্নতি দিয়ে ‘কানুনগো’ করার বিধান রাখা হোক। এতে ভূমিসংক্রান্ত সব কাজে গতিশীলতা আসবে এবং কাজের মান বজায় থাকবে।
সোহেল আরমান
চট্টগ্রাম।
‘বঙ্গবন্ধু বনাম শহীদ জিয়া’
সম্প্রতি প্রথম আলোয় প্রকাশিত আসিফ নজরুলের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু বনাম শহীদ জিয়া’ শিরোনামের নিবন্ধটি পড়লাম। সে লেখায় তিনি দুই দলের কিছু অসুস্থ প্রবণতা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে আমি একমত। তবে দেবতা-দানবের প্রসঙ্গ এনে তিনি প্রকারান্তরে বলতে চাইছেন, শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান দুজনই দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত দুই নেতা। এখানে এই দুই ব্যক্তিকে সমান ঐতিহাসিক মর্যাদা দেওয়ার একটা চেষ্টা আছে। তিনি নিজে তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, জিয়াউর রহমান ঘটনাচক্রে সুবিধাভোগী। এই ‘ঘটনাচক্রে’ ব্যাপারটিকে আরও স্পষ্ট করা দরকার। আমরা ভুলে যাইনি যে জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১১টা পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুগত হয়ে কাজ করেছেন এবং কোনো রকম রাজনৈতিক পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া ঘটনাচক্রে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। আমরা জানি, তিনি পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর বন্দী হয়ে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন এবং ঘটনাচক্রেই কর্নেল তাহের তাঁকে মুক্ত করার কারণে পুনরায় সেনাবহিনীতে আসার সুযোগ পান। আমরা এও জানি, সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার চেয়েও অনেক উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে খালেদ মোশাররফ বা কর্নেল তাহেরের, যাঁদের নাম আসিফ নজরুলও তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। অথচ জিয়ার নামটি বেশি প্রচারিত হয়েছে ঘটনাচক্রে তিনি সে সময় চট্টগ্রামে থাকার কারণে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বলে।
পরে তিনি প্রথমে সামরিক উর্দি পরে দেশের ক্ষমতা নিয়ে, তারপর সুবিধামতো সময়ে ইউনিফর্ম খুলে সাধারণ রাজনীতি শুরু করেন। ক্ষমতায় গিয়ে তিনি তাঁর মুক্তিদাতা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেন, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বহু হত্যাকাণ্ড ঘটান বলেও অভিযোগ রয়েছে। আমরা ভুলে যাইনি যে জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতির সুযোগ দেন এবং শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষভাবে পুনর্বাসন করেন। আসিফ নজরুল লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু জিয়াকে স্নেহ করতেন। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেননি, জিয়ার ওপর বঙ্গবন্ধুর পুরোপুরি আস্থা ছিল না বলেই জিয়াউর রহমান সে সময় সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু তাঁকে সেনাপ্রধান করেননি।
মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তাঁর ভূমিকা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ ইত্যাদি কারণে জিয়াউর রহমান অবশ্যই স্মরণযোগ্য। কিন্তু ঘটনাচক্রে মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনীতিতে চলে আসা একজন পুরোদস্তুর সামরিক কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকেই নানাভাবে মদদ দিয়েছেন, তাঁকে দেবতার আসনে বসানো যায় না। শেখ মুজিবও ত্রুটিহীন দেবতা নন। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর সীমাবদ্ধতাও ছিল। কিন্তু তাই বলে ইতিহাসে শেখ মুজিবের বিশাল রাজনৈতিক মাত্রার পাশে ‘শহীদ’ অভিধা দিয়ে জিয়াউর রহমানের জন্য সমান মহত্ত্ব্ব আরোপ গ্রহণযোগ্য নয়।
এনামুল হক, ঢাকা।
৩০তম বিসিএস পরীক্ষা
আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমাদের চতুর্থ বর্ষ বিএসএস (অনার্স) কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা আগামী ১৫ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ মে। পিএসসির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ বছর ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ তারিখ ২০ এপ্রিল।
আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনার্স কোর্স ফাইনাল পরীক্ষার একটি কোর্সে অংশ নিলে ‘অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট’ পেত ও বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারত।
কিন্তু পিএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে একজন প্রার্থীকে অনার্স কোর্স ফাইনাল পরীক্ষার সবগুলো কোর্সের পরীক্ষাই সম্পন্ন করতে হবে। এ শর্তের কারণে মাত্র ১৫ দিনের জন্য আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগই নয়, আরও কয়েকটি বিভাগ ও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী একই কারণে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন।
আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের এভাবে একটি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা মানে জীবনযুদ্ধে অনেকখানি পিছিয়ে পড়া। ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়ানো হলে অথবা অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট পাওয়ার শর্তটি শিথিল করা হলে আমরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাব।
বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আমরা সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃপক্ষকে সবিনয় অনুরোধ করছি।
ফারুক, রিয়াদ, রাফী, মান্না, ফাতেমা, রাইনা, বেলাল ও সাগর
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি কি নিয়ন্ত্রণে আসবে না?
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। অতিরিক্ত জনসংখ্যাই আমাদের দেশের অনেক সমস্যার মূলে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে ঢাকা মহানগরের যানজটসহ অনেক সমস্যা দিনকে দিন জটিলতর হচ্ছে। সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী নয়। এ কথাটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় থেকে। জনসংখ্যা কার্যক্রমের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে নিশ্চয়ই পরিবার পরিকল্পনাকে ক্যাডার সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কেন তাহলে এ ক্যাডারকে দুর্বল ও গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছে? ১৮তম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে যোগদান করেও কেন এখনো কেউ পদোন্নতি পায়নি? কেন এতগুলো পদ শূন্য আছে? যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে কেন এ অধিদপ্তর চালানো হচ্ছে? একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, যদি পদোন্নতি আটকেই রাখা হবে, তবে কেন এই ক্যাডারে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে? এই ক্যাডারকে দুর্বল করে রেখে শুধু জনসংখ্যা কার্যক্রমকে গুরুত্বহীন করা হচ্ছে না, এ ক্যাডারে যোগদানকারী মেধাবী কর্মকর্তাদের জীবন ও ভবিষ্যেক ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনো পরিকল্পনাই দেশের জন্য প্রকৃত সুফল বয়ে আনবে না। কাজেই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ক্যাডার-অফিসারদের অবিলম্বে পদোন্নতি প্রদান, পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, যুগোপযোগী জনসংখ্যা নীতিমালা প্রণয়নসহ সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে আমাদের সামনে হয়তো আরও ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
দীপ্তি রহমান
আকুয়া, ময়মনসিংহ।
লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন ডাকযোগে:
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন,
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইলে (এমএস ওয়ার্ড অ্যাটাচমেন্ট): obhimot@prothom-alo.info
ওই পত্রে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এই বলে যে, ওই সংবাদ সম্মেলনে যিনি লিখিত প্রস্তাব পাঠ করেছেন, তাঁর কোনো সন্তান এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন না। কিন্তু সন্তানের অনিশ্চিত শিক্ষাজীবনের দুশ্চিন্তায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের পাশে দেশের যেকোনো সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে দাঁড়াতে পারেন। প্রস্তাব পাঠকারীকে ছাত্রছাত্রীদের বাবা হতে হবে, এমন অযৌক্তিক দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের একমাত্র দাবি, আমাদের সন্তানদের নির্বিঘ্ন এবং নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাজীবন। এই দাবি দেশের যে কেউ করতে পারেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে আমরা গভীর উত্কণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ করছি, বর্তমান সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপে প্রয়াসী হচ্ছেন। অপর পক্ষে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী উপাচার্যের পক্ষাবলম্বন করেছেন। এই দুই পক্ষের জেদাজেদিতে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের অমূল্য তিন মাস ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রামের সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, শিক্ষার্থীদের আর সময় নষ্ট না করে বিশ্ববিদ্যালয়টি খোলার ব্যবস্থা করুন।
মো. সামসুল হক, নারিন্দা, ঢাকা।
শিকলে বাঁধা জীবন
গত ২৭ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘দুরন্ত রাফিনকে তালিম দিতে পায়ে শেকল’ প্রতিবেদনটি পড়ে ভীষণ মর্মাহত হয়েছি। ফরিদপুরের মিহিউস সুন্নাহ জামেয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা নূরানি মক্তব ও হেফজখানার ছাত্র রাফিন। ছয়-সাত বছরের ছেলেটিকে মাদ্রাসার একটি ছোট ঘরে সাত-আট দিন ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অপরাধ, সে একটু বেশি দুরন্ত! একটি বাচ্চা ছেলে দুরন্ত বা চঞ্চল প্রকৃতির হতেই পারে, তাই বলে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে চারদেয়ালে বন্দী রাখা অমানবিক, নিষ্ঠুর কাজ। দুরন্ত রাফিন মানুষের এই নিষ্ঠুরতা থেকে কী শিক্ষা নেবে, তা কি ভেবে দেখেছেন ওই মাদ্রাসার সম্মানিত অধ্যক্ষ? ছোট্ট রাফিনকে ‘শান্ত’ করতে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন একটু ভালোবাসা। শিক্ষক ভালোবাসা দিয়ে একটি ছাত্রকে আলোকিত করতে পারেন। ছোট্ট রাফিনের পায়ের শিকল খুলে দিন। ওকে মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে দিন। বিকেলে মাঠে খেলতে দিন। রাফিনের জীবনকে চারদেয়ালে বন্দী করে রাখবেন না। রাফিনের শৈশব আনন্দময় হোক।
আরাফাত
মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।
দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা বলছি
আমি মোসা. জোবেদা খাতুন, দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা। আমার বয়স এখন ৯৩ বছর, স্বামী প্রয়াত। ১৯৫৩ সাল থেকে দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছি। আমি সাত সন্তানের জননী। দুই ছেলেকে হারিয়েছি মহান মুক্তিযুদ্ধে। তাদের একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী মিজানুর রহমান মিজু, অন্যজন শহীদ ওবায়দুর রহমান ওযু। মিজানুর রহমান মিজুকে ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর ঘোড়াশালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। ২০০০ সালে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরিজ’ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় তার স্মরণে। ওবায়দুর রহমান ওযু ছিল সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধে দুই সন্তান হারানোর আঘাত সইতে না পেরে আমার স্বামী হূদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। আমার বড় ছেলে জিল্লুর রহমান বাংলা একাডেমীর সাবেক কর্মকর্তা। পাঁচ বছর ধরে সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। বর্তমানে সে দিনাজপুর হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমার অন্য সন্তানেরা বিদেশে বসবাস করছে। আমি অনেকটা অসহায় অবস্থায় একমাত্র আশ্রয়স্থল দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়ার বাড়িতে বসবাস করছি। কিন্তু এই বসবাস প্রাণান্তকর হয়ে উঠেছে। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসী আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমার বসতবাড়িটি জবরদখল করার চেষ্টা করছে। ৩ মার্চ তারা আমার বাড়ির একটি ঘর জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। নানা উপায়ে তারা আমার স্বাভাবিক জীবন যাপনে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
আমার দুই সন্তানের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে এই ৯৩ বছর বয়সে আমাকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, এমনটা কখনো ভাবিনি। দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা হওয়াই কি আমার অপরাধ? নাকি এই দেশে আইন-বিচার বলে কিছু নেই? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আবেদন, আমার বসতবাড়ির জবরদখল করা ঘরটি সন্ত্রাসীদের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করে দিন। তারা যাতে আমার বাড়িটি পুরোপুরি গ্রাস করার অপপ্রয়াস বন্ধ করে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিন। সারা দেশে যারা আমার মতো এ ধরনের অন্যায়-অবিচারের শিকার হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা, সম্পত্তির অধিকার, নিজের বসতভিটায় নিরাপদে-নিরুপদ্রবে বসবাসের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য আপনার সরকারকে সক্রিয় করুন।
মোসা. জোবেদা খাতুন
মুন্সিপাড়া, দিনাজপুর।
ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ
আগে জানতাম, ব্যাংকে টাকা রাখলে টাকা বাড়ে। এখন দেখছি কমে, এমনকি শূন্যও হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকগুলো সঞ্চয় হিসেবে ৩০০ টাকা করে বছরে দুবারে ৬০০ টাকা এবং চলতি হিসাবে ৫০০ টাকা করে বছরে দুবারে এক হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ আদায় করতে পারবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সংসারখরচ মিটিয়ে তেমন একটা সঞ্চয় করতে পারে না। তাদের সঞ্চয় হিসেবে তেমন একটা জমা থাকে না। যাদের সঞ্চয় হিসাবে এক হাজার টাকা আছে, তারা বছর শেষে দেখবে (১০০০-৬০০)= ৪০০ টাকা আছে। অনেক পরিবারের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া একাধিক ছেলেমেয়ে রয়েছে, যাদের কলেজের ফি, স্কলারশিপ গ্রহণ ইত্যাদি কাজের জন্য সঞ্চয় হিসাব থাকে। অর্থের প্রয়োজনে এসব হিসাবের বরাতে তারা ডিডি, টিটি ইত্যাদি করে থাকে। এসব হিসাবেও যদি বছরে ৬০০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়, তাহলে একটি পরিবারকে বছরে কয়েকটি হিসাবের বিপরীতে কয়েক হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে, যা কাম্য নয়।
আগামী জুন ২০১০ ও ডিসেম্বর ২০১০-এ এভাবে ৩০০ টাকা করে লাখ লাখ সঞ্চয় হিসাবে দুবার সার্ভিস চার্জ কর্তন করে নেওয়া হবে। এদিকে সঞ্চয় হিসাবে সুদের হার খুবই কম এবং তা শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ শর্ত ভঙ্গ হলেই এসব হিসাবে সুদ দেওয়া হয় না। আবার ন্যূনতম স্থিতি না থাকলে সে জন্য আছে পেনাল্টির ব্যবস্থা। তদুপরি দুই বছর লেনদেন না করলে পুরো টাকার মালিক হয়ে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্রিয় গভর্নর মহোদয় ব্যাংকিংসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু উল্লিখিত কর্তন, সার্ভিস চার্জ, জরািমানা ইত্যাদির অত্যাচারে অনেক সাধারণ মানুষকেই টিনের কৌটায় টাকা জমানোর চিন্তা করতে হবে। এ দেশের গরিব মধ্যবিত্ত মানুষ দিন দিন নানা যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে, সুযোগ-সুবিধা, সেবা এগুলো পাওয়ার যোগ্যতা যেন তাদের নেই।
গভর্নরের কাছে আমার আকুল আবেদন, বছরে ৬০০ টাকা সার্ভিস চার্জ যাঁরা দিতে পারবেন, তাঁদের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য করা হোক, সবার জন্য নয়।
আফরোজা বেগম
আরামবাগ, ঢাকা।
তৃণমূলের অবহেলিত চিকিৎসকরা
ইদানীং তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। প্রথম আলোতে এ নিয়ে একটি সম্পাদকীয়ও ছাপানো হয়েছে। ব্যাপারটা ভিতর থেকে দেখা প্রয়োজন। গ্রামেগঞ্জে কতো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ডাক্তারদের কাজ করতে হচ্ছে—তা ভালোভাবেই জানি। সিকি শতাব্দীর চাকরি-জীবনের বেশির ভাগ সময় আমার কেটেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাবসেন্টারে। পাঁচ বছর চাকরি করেছি শুধু ইউনিয়ন সাবসেন্টারেই। ওখানে ভাঙা নড়বড়ে ঘরে অফিস করেছি, বাস করতাম বিদ্যুিবহীন একটা অতিক্ষুদ্র সেন্টার রুমে। ওখানে কোনো টয়লেট পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু শত কষ্টের মধ্যেও নিয়মিত কর্মস্থলে থেকেই চাকরি করেছি।
তার প্রতিদান হিসেবে পেয়েছি ঘনঘন বদলি; এমনকি তিন মাসেও আমি বদলির শিকার হয়েছি এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায়। যারা ফাঁকি দিয়েছে তারাই পদোন্নতি পেয়েছে নানা উপায়ে। এ সার্ভিসে জুনিয়র-সিনিয়র কিছুই বিবেচনা করা হয় না। যার খুঁটির জোর বেশি সেই ভালো পোস্টিং ও প্রমোশন পায়। কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নির্বিকার ও নির্মম। কোনো সিস্টেমও নেই। ফলে কর্তব্যপরায়ণরা অন্ধকারেই থেকে যায়, বঞ্চিত, অবহেলিত, পীড়িত হয়। যখন ক্ষমতা আমলাদের হাতে থাকে তখন তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করেন। আবার যখন ড্যাব বা স্বাচিপের হাতে ক্ষমতা থাকে, তখন স্বেচ্ছাচার করেন এই দুই সংগঠনের নেতারা।
চাকরিজীবনে আমি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে একটা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিই এবং সর্বোচ্চ ডিগ্রিও অর্জন করি। ২৪ বছর চাকরি করার পরও আমাকে একটা উপজেলায় পোস্টিং দেওয়া হয় জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে চলতি দায়িত্বে। ১০ বছর চলতি দায়িত্বে কাজ করার পরও আমাকে নিয়মিত করা হয়নি। চলতি দায়িত্ব নিয়েই আমি দুটি জেলা হাসপাতাল ও দুটি উপজেলা হাসপাতালে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম। এতবছর চাকরি করার পর একটি উচ্চতর স্কেলও আমি পাইনি। অথচ আমার সঙ্গে যারা অন্য ক্যাডার সার্ভিসে ঢুকেছেন তাঁরা আজ জয়েন্ট সেক্রেটারি বা তদুর্ধ্ব পদে কর্মরত। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কারো কাছে মুখ দেখাতে পারি না। সামাজিকভাবে চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলাম। ছাত্রজীবনে ছিলাম অন্যতম সেরা ছাত্র, সেই আমি পেশাজীবনে অন্যতম ব্যর্থ ব্যক্তি। বেতন না বাড়ায় আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
এসবের প্রতিকার কেউ করবে না। এটা শুধু আমার অবস্থা নয়। আমার মতো হাজার হাজার ডাক্তার এ ধরনের অন্যায়ের শিকার। কেউ উদ্যোগী হয়ে একটু সময় নিয়ে জরিপ করলেই সব জানা যাবে। এ দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট সেক্টরে ঢুকেছেন বা বিদেশ চলে গেছেন। প্রসঙ্গত, ডাক্তারদের মধ্যে চাকরি ত্যাগের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। কারণ চাকরি তাঁদের কাছে গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়। আজ যখন দেখি—নবীন চিকিৎসকরা তৃণমূল পর্যায়ে যেতে চায় না—তখন মনে হয় ওরা সবকিছু দেখেশুনে অনেক চালাক ও সতর্ক হয়ে গেছে। আমাদের অবস্থা দেখে ওরা ধরে নিয়েছে, এ সার্ভিস থেকে কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না। তাই অহেতুক গ্রামগঞ্জে কষ্ট করে কোনো লাভ নেই। মনে হয় বোকা ছিলাম বলেই আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। যে সার্ভিসে কারো ন্যূনতম মূল্যায়ন হয় না—সে সার্ভিস ভেঙে পড়বে এবং পড়ছেও। তাই সরকারকে মূল সমস্যার সমাধান করে স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
জনৈক চিকিৎসক।
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা
ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি ভূমি অফিসে কর্মরত আছি। ২০০৪ সালে যখন চাকরি হয়, তখন আমরা মোট ৭৬ জন যোগদান করি। চাকরিটা তৃতীয় শ্রেণীর হলেও এখানে যোগদানকারীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ স্নাতক ও এক-তৃতীয়াংশ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।
বর্তমানে সরকারি চাকরির বাজার মন্দা বলেই এইচএসসি লেভেলের একটি চাকরিতে এ রকম উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা যোগ দিয়েছেন। অফিসের কাজকর্ম পরিচালনা করতে এসে দেখা যায়, চাকরি ছোট হলেও কাজ বা দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ, নামজারি ও জমা ভাগ, জমা খারিজ, খাসজমির রক্ষণাবেক্ষণ, আদালতে প্রতিবেদন, ভূমিসংশ্লিষ্ট ওপর মহলের যেকোনো তথ্য প্রদান ইত্যাদি কাজসহ মহামান্য হাইকোর্টের মামলার দফাওয়ারি প্রতিবেদনও তৈরি করতে হয়।
এসব কাজ এইচএসসি পাস একজন লোকের পক্ষে করা দুরূহ। তাই নিয়োগবিধি সংশোধন করে এই পদে এইচএসসির পরিবর্তে ডিগ্রি পাসের শর্ত একান্ত আবশ্যক। পাশাপাশি পদবি পরিবর্তন করে শুধু ‘ভূমি সহকারী কর্মকর্তা’ করা এবং বেতন স্কেল বাড়িয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদা দিলে এসব বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের যেমন সামাজিক মর্যাদা বাড়বে, তেমনি তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এতে ভূমি অফিসের দুর্নীতির যে বদনাম, সেটাও অনেকাংশে কমে যাবে।
তা ছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের (পিয়ন) পদোন্নতি দিয়ে ‘ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা’ করা হয়; বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা মানসম্মান বিসর্জন দিয়ে অর্থের পেছনে লেগে থাকেন। এতে সরাসরি নিয়োগ পাওয়ারা (যাঁরা ডিগ্রিধারী) হীনম্মন্যতায় ভোগেন।
এভাবে পদোন্নতি বন্ধ করা হোক এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে ‘ভূমি সহকারী কর্মকর্তা’দের পদোন্নতি দিয়ে ‘কানুনগো’ করার বিধান রাখা হোক। এতে ভূমিসংক্রান্ত সব কাজে গতিশীলতা আসবে এবং কাজের মান বজায় থাকবে।
সোহেল আরমান
চট্টগ্রাম।
‘বঙ্গবন্ধু বনাম শহীদ জিয়া’
সম্প্রতি প্রথম আলোয় প্রকাশিত আসিফ নজরুলের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু বনাম শহীদ জিয়া’ শিরোনামের নিবন্ধটি পড়লাম। সে লেখায় তিনি দুই দলের কিছু অসুস্থ প্রবণতা নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে আমি একমত। তবে দেবতা-দানবের প্রসঙ্গ এনে তিনি প্রকারান্তরে বলতে চাইছেন, শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান দুজনই দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত দুই নেতা। এখানে এই দুই ব্যক্তিকে সমান ঐতিহাসিক মর্যাদা দেওয়ার একটা চেষ্টা আছে। তিনি নিজে তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, জিয়াউর রহমান ঘটনাচক্রে সুবিধাভোগী। এই ‘ঘটনাচক্রে’ ব্যাপারটিকে আরও স্পষ্ট করা দরকার। আমরা ভুলে যাইনি যে জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১১টা পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনুগত হয়ে কাজ করেছেন এবং কোনো রকম রাজনৈতিক পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া ঘটনাচক্রে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। আমরা জানি, তিনি পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর বন্দী হয়ে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন এবং ঘটনাচক্রেই কর্নেল তাহের তাঁকে মুক্ত করার কারণে পুনরায় সেনাবহিনীতে আসার সুযোগ পান। আমরা এও জানি, সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার চেয়েও অনেক উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে খালেদ মোশাররফ বা কর্নেল তাহেরের, যাঁদের নাম আসিফ নজরুলও তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। অথচ জিয়ার নামটি বেশি প্রচারিত হয়েছে ঘটনাচক্রে তিনি সে সময় চট্টগ্রামে থাকার কারণে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বলে।
পরে তিনি প্রথমে সামরিক উর্দি পরে দেশের ক্ষমতা নিয়ে, তারপর সুবিধামতো সময়ে ইউনিফর্ম খুলে সাধারণ রাজনীতি শুরু করেন। ক্ষমতায় গিয়ে তিনি তাঁর মুক্তিদাতা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেন, সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বহু হত্যাকাণ্ড ঘটান বলেও অভিযোগ রয়েছে। আমরা ভুলে যাইনি যে জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতির সুযোগ দেন এবং শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষভাবে পুনর্বাসন করেন। আসিফ নজরুল লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু জিয়াকে স্নেহ করতেন। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেননি, জিয়ার ওপর বঙ্গবন্ধুর পুরোপুরি আস্থা ছিল না বলেই জিয়াউর রহমান সে সময় সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু তাঁকে সেনাপ্রধান করেননি।
মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তাঁর ভূমিকা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ ইত্যাদি কারণে জিয়াউর রহমান অবশ্যই স্মরণযোগ্য। কিন্তু ঘটনাচক্রে মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনীতিতে চলে আসা একজন পুরোদস্তুর সামরিক কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকেই নানাভাবে মদদ দিয়েছেন, তাঁকে দেবতার আসনে বসানো যায় না। শেখ মুজিবও ত্রুটিহীন দেবতা নন। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর সীমাবদ্ধতাও ছিল। কিন্তু তাই বলে ইতিহাসে শেখ মুজিবের বিশাল রাজনৈতিক মাত্রার পাশে ‘শহীদ’ অভিধা দিয়ে জিয়াউর রহমানের জন্য সমান মহত্ত্ব্ব আরোপ গ্রহণযোগ্য নয়।
এনামুল হক, ঢাকা।
৩০তম বিসিএস পরীক্ষা
আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমাদের চতুর্থ বর্ষ বিএসএস (অনার্স) কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা আগামী ১৫ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ মে। পিএসসির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ বছর ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ তারিখ ২০ এপ্রিল।
আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনার্স কোর্স ফাইনাল পরীক্ষার একটি কোর্সে অংশ নিলে ‘অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট’ পেত ও বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারত।
কিন্তু পিএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে একজন প্রার্থীকে অনার্স কোর্স ফাইনাল পরীক্ষার সবগুলো কোর্সের পরীক্ষাই সম্পন্ন করতে হবে। এ শর্তের কারণে মাত্র ১৫ দিনের জন্য আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগই নয়, আরও কয়েকটি বিভাগ ও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী একই কারণে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন।
আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের এভাবে একটি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা মানে জীবনযুদ্ধে অনেকখানি পিছিয়ে পড়া। ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়ানো হলে অথবা অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট পাওয়ার শর্তটি শিথিল করা হলে আমরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাব।
বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আমরা সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃপক্ষকে সবিনয় অনুরোধ করছি।
ফারুক, রিয়াদ, রাফী, মান্না, ফাতেমা, রাইনা, বেলাল ও সাগর
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি কি নিয়ন্ত্রণে আসবে না?
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। অতিরিক্ত জনসংখ্যাই আমাদের দেশের অনেক সমস্যার মূলে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে ঢাকা মহানগরের যানজটসহ অনেক সমস্যা দিনকে দিন জটিলতর হচ্ছে। সরকারও এ বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী নয়। এ কথাটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় থেকে। জনসংখ্যা কার্যক্রমের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে নিশ্চয়ই পরিবার পরিকল্পনাকে ক্যাডার সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কেন তাহলে এ ক্যাডারকে দুর্বল ও গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছে? ১৮তম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে যোগদান করেও কেন এখনো কেউ পদোন্নতি পায়নি? কেন এতগুলো পদ শূন্য আছে? যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে কেন এ অধিদপ্তর চালানো হচ্ছে? একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, যদি পদোন্নতি আটকেই রাখা হবে, তবে কেন এই ক্যাডারে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে? এই ক্যাডারকে দুর্বল করে রেখে শুধু জনসংখ্যা কার্যক্রমকে গুরুত্বহীন করা হচ্ছে না, এ ক্যাডারে যোগদানকারী মেধাবী কর্মকর্তাদের জীবন ও ভবিষ্যেক ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনো পরিকল্পনাই দেশের জন্য প্রকৃত সুফল বয়ে আনবে না। কাজেই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ক্যাডার-অফিসারদের অবিলম্বে পদোন্নতি প্রদান, পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, যুগোপযোগী জনসংখ্যা নীতিমালা প্রণয়নসহ সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে আমাদের সামনে হয়তো আরও ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
দীপ্তি রহমান
আকুয়া, ময়মনসিংহ।
লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন ডাকযোগে:
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন,
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইলে (এমএস ওয়ার্ড অ্যাটাচমেন্ট): obhimot@prothom-alo.info
No comments