অনুমতি পেয়েও পাহাড় কাটায় অনিয়ম by ইফতেখার মাহমুদ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পে শর্ত সাপেক্ষে পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য পরিবেশ আইনের ব্যত্যয়ও করা হয়। কিন্তু এই অনুমতির সুযোগ নিয়ে পাহাড় কাটার কাজ পাওয়া কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত অংশের অতিরিক্ত পাহাড় কেটেছে। এমনকি এই পাহাড় কাটার মাটি অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগও উঠেছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি যৌথ দল সম্প্রতি পরিদর্শনে এসব অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত অংশে মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন পাহাড় কাটায় অনিয়মের দৃশ্য চোখে পড়েছে।
এই মহাসড়ক চার লেন করার প্রকল্পের মাটির জন্য পাহাড় কাটা শুরু হয় ২০১১ সালের শুরুতে। অভিযোগ পেয়ে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেয়। এরপর এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক হয়। পরে প্রকল্পটিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রায় ৫০ একর এলাকার ১০টি পাহাড় ও টিলার মাটি নেওয়ার অনুমতি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই এলাকার দাগ ও মৌজা নম্বর নির্দিষ্ট করে পাহাড় কাটার নিয়মও বলে দেওয়া হয়। কিন্তু পাহাড় কাটার কাজ পাওয়া ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটিই ওই নিয়ম মানেনি। ঢাল না রেখে খাড়াভাবে এবং নির্দিষ্ট এলাকার বাইরের পাহাড়ও কাটা হয়েছে। অধিদপ্তর এভাবে পাহাড় কাটাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০-এর ৪ ধারার (৬খ)-তে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, নির্দিষ্ট এলাকার বাইরের পাহাড় কাটার এবং নিয়ম না মানার অভিযোগ তাদের কাছেও এসেছে। সওজ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ তদন্ত দল ১৫ মার্চ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। দলটি সাতটি এলাকায় পাহাড় কাটায় মারাত্মক ও আংশিক বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চারটি, সীতাকুণ্ডে দুটি ও কুমিল্লায় একটি পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ছাড়পত্র) ও পাহাড় কাটা পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত ও খাড়াভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ঘটনা তদন্ত করা হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অতিরিক্ত পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের জলিলঘাটে প্রায় ১৩ একর এলাকার পাহাড় কাটার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই পাহাড়গুলো আবুল খায়ের গ্রুপের মালিকানাধীন জমিতে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কিছু অংশ খাড়াভাবে কাটা হয়েছে। ওই এলাকায় পাহাড় কেটেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুসন্ধান ও জরিপে দেখা গেছে, সেখানে অতিরিক্ত ১ দশমিক ৮৫ একর পাহাড় কাটা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবুল খায়ের গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক ইমরুল কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চার লেনের মতো একটি জাতীয় স্বার্থমূলক প্রকল্পে মাটি দেওয়ার জন্য আমাদের মালিকানাধীন পাহাড় থেকে বিনা মূল্যে মাটি সংগ্রহ করতে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে যদি একটু এদিক-সেদিক হয়, তার দায়দায়িত্ব তো আমাদের নয়। এটা যারা পাহাড় কেটেছে, তাদের ব্যাপার।’
তাহের ব্রাদার্সের উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক এফ আর ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের যতটুকু এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ততটুকুই কেটেছি। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কিছু অংশের পাহাড় কেটেছে।’
পাহাড় কাটা মাটি ইটভাটায়: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মস্তাননগর এলাকায় আবুল কাশেম ভূঁইয়া, সোনাপাহাড় এলাকায় আজিজুল হক ও ইকবাল এবং হাবিবুল্লাহ, মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার জামিনুর ইসলাম ও কুমিল্লার বিজয়পুরের ভাঙ্গমুরায় ইয়াসিন ও প্রদীপ কুমার পাল এবং আবুল হোসেন পাহাড় কাটার কাজ পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা নির্দিষ্ট সীমানার অতিরিক্ত পাহাড় কেটেছেন। এমনকি চার লেনের জন্য পাহাড় কেটে মাটি অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ও ইটভাটায় সরবরাহ করার অভিযোগও রয়েছে।
মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুরে সোনাপাহাড় এলাকায় তিন একর পাহাড় কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাশের কেডিআই ব্রিকস নামের ইটভাটায় পাহাড়ের মাটি ব্যবহূত হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অনিয়মের জন্য পাহাড় কাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এই মহাসড়ক চার লেন করার প্রকল্পের মাটির জন্য পাহাড় কাটা শুরু হয় ২০১১ সালের শুরুতে। অভিযোগ পেয়ে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেয়। এরপর এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক হয়। পরে প্রকল্পটিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রায় ৫০ একর এলাকার ১০টি পাহাড় ও টিলার মাটি নেওয়ার অনুমতি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই এলাকার দাগ ও মৌজা নম্বর নির্দিষ্ট করে পাহাড় কাটার নিয়মও বলে দেওয়া হয়। কিন্তু পাহাড় কাটার কাজ পাওয়া ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটিই ওই নিয়ম মানেনি। ঢাল না রেখে খাড়াভাবে এবং নির্দিষ্ট এলাকার বাইরের পাহাড়ও কাটা হয়েছে। অধিদপ্তর এভাবে পাহাড় কাটাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০-এর ৪ ধারার (৬খ)-তে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, নির্দিষ্ট এলাকার বাইরের পাহাড় কাটার এবং নিয়ম না মানার অভিযোগ তাদের কাছেও এসেছে। সওজ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ তদন্ত দল ১৫ মার্চ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। দলটি সাতটি এলাকায় পাহাড় কাটায় মারাত্মক ও আংশিক বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চারটি, সীতাকুণ্ডে দুটি ও কুমিল্লায় একটি পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ছাড়পত্র) ও পাহাড় কাটা পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত ও খাড়াভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ঘটনা তদন্ত করা হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অতিরিক্ত পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের জলিলঘাটে প্রায় ১৩ একর এলাকার পাহাড় কাটার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই পাহাড়গুলো আবুল খায়ের গ্রুপের মালিকানাধীন জমিতে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেশ কিছু অংশ খাড়াভাবে কাটা হয়েছে। ওই এলাকায় পাহাড় কেটেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুসন্ধান ও জরিপে দেখা গেছে, সেখানে অতিরিক্ত ১ দশমিক ৮৫ একর পাহাড় কাটা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবুল খায়ের গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক ইমরুল কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চার লেনের মতো একটি জাতীয় স্বার্থমূলক প্রকল্পে মাটি দেওয়ার জন্য আমাদের মালিকানাধীন পাহাড় থেকে বিনা মূল্যে মাটি সংগ্রহ করতে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে যদি একটু এদিক-সেদিক হয়, তার দায়দায়িত্ব তো আমাদের নয়। এটা যারা পাহাড় কেটেছে, তাদের ব্যাপার।’
তাহের ব্রাদার্সের উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক এফ আর ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের যতটুকু এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ততটুকুই কেটেছি। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কিছু অংশের পাহাড় কেটেছে।’
পাহাড় কাটা মাটি ইটভাটায়: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মস্তাননগর এলাকায় আবুল কাশেম ভূঁইয়া, সোনাপাহাড় এলাকায় আজিজুল হক ও ইকবাল এবং হাবিবুল্লাহ, মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার জামিনুর ইসলাম ও কুমিল্লার বিজয়পুরের ভাঙ্গমুরায় ইয়াসিন ও প্রদীপ কুমার পাল এবং আবুল হোসেন পাহাড় কাটার কাজ পেয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা নির্দিষ্ট সীমানার অতিরিক্ত পাহাড় কেটেছেন। এমনকি চার লেনের জন্য পাহাড় কেটে মাটি অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ও ইটভাটায় সরবরাহ করার অভিযোগও রয়েছে।
মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুরে সোনাপাহাড় এলাকায় তিন একর পাহাড় কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাশের কেডিআই ব্রিকস নামের ইটভাটায় পাহাড়ের মাটি ব্যবহূত হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অনিয়মের জন্য পাহাড় কাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
No comments