সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড-ক্ষমাহীন এ ব্যর্থতা

তিন মাসেরও বেশি আগে এক অভিশপ্ত রাতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি তাদের রাজাবাজারস্থ সুরক্ষিত ফ্ল্যাটবাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হলে আমরা শোকে-বেদনায় আচ্ছন্ন হই, মর্মযাতনায় দগ্ধ হই। তাদের শিশুপুত্র মেঘের জন্য সবার মনেই সৃষ্টি হয় অশেষ সহানুভূতি।


পেশাগত জীবনে সফল এ দুই সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডে সর্বস্তরের নারী-পুরুষের মধ্যে যে ক্ষোভ ও ধিক্কার দেখা যায় তা আমাদের শোকের কঠিন সময় অতিক্রমে শক্তি ও সাহস জোগায়। এভাবে সম্মিলিত সমবেদনার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার জন্য তাদের নিবেদিতপ্রাণ কাজের স্বীকৃতি। এ হত্যাকাণ্ডের পরদিন সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের '৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ঘাতকদের গ্রেফতার করা হবে'_ এমন প্রকাশ্য ঘোষণা এ সাংবাদিক দম্পতির স্বজন ও সহকর্মীদের জন্য এটুকু সান্ত্বনা এনে দেয় যে, অন্তত এ ক্ষেত্রে বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, '৪৮ ঘণ্টার' ডেডলাইনের মতোই পুলিশের 'রহস্য উন্মোচনে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি' সাধনের ঘোষণা এখন পরিহাস মাত্র।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবশালী মহলের কেউ জড়িত কি-না_ এ প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ প্রশ্নের জবাব মিলবে কবে_ র‌্যাবও পুলিশের মতো ব্যর্থতার দায় নিয়ে নীরব হয়ে যাবে কি-না কে জানে! রহস্য উন্মোচনে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না তুলে এ কথা অনায়াসে বলা যায় যে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তারা অন্ধকার ঈষৎ আলোর রেখাও দেখাতে সক্ষম হয়নি। অবশেষে আদালতের নির্দেশনায় এ দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। প্রথমে র‌্যাবের তৎপরতা দৃষ্টিগ্রাহ্য হলেও মূল তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি। অতঃপর সাংবাদিক দম্পতির লাশ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হলেও আসলে হত্যারহস্য উন্মোচনে আদৌ কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি-না তা র‌্যাবের তরফে কিছু জানানো হয়নি।
অপেক্ষার প্রহর গুনছেন সাগর-রুনির স্বজনরা। সাগরের মা বলেছেন, তার ছেলের কোনো শত্রু নেই। যে কাউকে সহজে বন্ধু করে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল সাগর-রুনির। তবে কে বা কারা খুন করল, কেন খুনিদের খুঁজে বের করতে পারল না পুলিশ। পুলিশের এ ব্যর্থতায় সমাজ অসহায়ত্ব বোধ করছে। সমাজের এ বোধ একটি সুশীল রাষ্ট্রের জন্য সুখের বার্তা বয়ে আনে না। এ কথা সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।
এহেন পরিস্থিতিতে স্বভাবতই সাংবাদিক সমাজ আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মানববন্ধনের পর গতকাল সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এই হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে আরও কঠিন কর্মসূচি সাংবাদিক সমাজকে বাধ্য করার পূর্বেই তদন্তে দৃষ্টিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য অগ্রগতি হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.