জামালপুরের কাবিখা সিন্ডিকেট-নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফাঁক বন্ধ করুন

কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা কাবিখার মতো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীমূলক কর্মসূচিতে নয়ছয় জামালপুরের বাইরেও আমরা দেখেছি। যেনতেনভাবে মাটি স্তূপ করে সেটাকে 'রাস্তা' নাম দেওয়া; সড়ক সংস্কারের নামে পুরনো ঢাল নতুনভাবে ছেঁটে আরও নাজুক করে তোলা; পুকুরে এমন 'পরিচ্ছন্নতা অভিযান' চালানো যাতে সেটা সাবেক অবস্থায় ফিরে যেতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় না নেয় ইত্যাদি।


কাবিখা প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শ্রমিকদের মজুরি নিয়েও নানা কারসাজি হয়। কিন্তু জামালপুরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্পের আওতায় কাবিখা কর্মসূচির চাল প্রকাশ্যে যেভাবে কালোবাজারে চলে যাচ্ছে, তার নজির বিরল। সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রকল্প সভাপতি ডিওতে স্বাক্ষর করে কেবল টাকা গুণে নিচ্ছেন। তিনি বা শ্রমিকরা চাল চোখে দেখছেন না। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতার মদদে গড়ে ওঠা ওই চক্র খাদ্য গুদাম থেকে মাস্টাররোল পর্যন্ত কমিশন আদায় করেই কেবল ক্ষান্ত নয়, স্বাভাবিক বাজারের চেয়ে কম দামে চাল বিক্রি করতে বাধ্য করছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে জেলার সাত শতাধিক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাঁচ হাজার টন চাল বানরের পিঠা ভাগাভাগির পাল্লায় পড়েছে। বলাবাহুল্য, বানরের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতেই হবে। কারণ বিষয়টির সঙ্গে কেবল দুর্নীতি যুক্ত নয়। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুদৃঢ় করে তোলা। যখন স্বাভাবিক কর্মসংস্থান থাকে না বা কমে যায়, মাঠে ও জলাশয়ে উৎপাদন হ্রাস পায়, জোগানের অভাবে বাজারেও খাদ্যদ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তখনই এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয় মূলত খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষুধামুক্তির জন্য। সেই চালই যদি কালোবাজারে চলে যায়, তাতে মূল উদ্দেশ্যই হয় ব্যাহত। নিংড়ানো যে অর্থ শ্রমিকরা পাবে, তা দিয়ে স্বাভাবিক বাজার থেকে মজুরি হিসেবে প্রাপ্য চালের ভগ্নাংশও কিনতে পারবে কি-না সন্দেহ। আমরা আশা করি, জামালপুরে এই অপকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রশাসন আন্তরিক হলে দায়ীদের শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে না। আমরা জানি, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেষ্টনীর ফাঁক বন্ধ করতে না পারলে, তা সফল করে তোলা কঠিন।
 

No comments

Powered by Blogger.