দুই চাকায় ইভ টিজিং প্রতিরোধের বার্তা... by সুমন কুমার দাশ ও মিসবাহ উদ্দিন

সকাল নয়টা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে ১৫ জন শিক্ষার্থী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। পরনে সাদা রঙের এক ধরনের বিশেষ টি-শার্ট। সেই টি-শার্টে রয়েছে নারী নির্যাতনবিরোধী নানা ধরনের সচেতনতামূলক স্লোগান। প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে বাইসাইকেল।


বাইসাইকেলে করে এই শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করবেন। সে লক্ষ্যে সবাই এই সাতসকালে একত্র হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের এ অভিনব শোভাযাত্রার শুরুর মুহূর্তে ৩ মে সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. সালেহ উদ্দিন থেকে শুরু করে তাঁদের শিক্ষক-সহপাঠীরাও উপস্থিত হয়েছেন। কারণটা উপাচার্যের কথাতেই টের পাওয়া যায়। উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সচেতনতামূলক এ বাইসাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে সেই দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের দলকে অভিনন্দন।
‘আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আসুন, যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন ও ইভ টিজিং প্রতিরোধ করি’—এ স্লোগান নিয়ে এরপর শুরু হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পথচলা। পথ চলতে চলতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজারে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি ও পথসভা করেছেন। ১৫ সদস্যের এ দলটি চার দিন ধরে বৃহত্তর সিলেটের আটটি উপজেলা পরিভ্রমণ করেছে। উপজেলাগুলো হলো: সিলেটের বিয়ানীবাজার, দক্ষিণ সুরমা ও গোলাপগঞ্জ; মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা।
বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১১ সালে দেশে ইভ টিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যা ও খুনের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাংলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী এটি প্রতিরোধে কিছু একটা করার কথা বিভাগের শিক্ষকদের জানান। একসময় সিদ্ধান্ত হয়, বাইসাইকেলে শোভাযাত্রা করে মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা চালাতে হবে। সে অনুযায়ী ২০১১ সালের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জ জেলায় শোভাযাত্রা হয়। ২০১২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো চার দিনব্যাপী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
বাইসাইকেল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সোহেল আহমদ বলেন, ‘সংবাদপত্রে প্রতিদিন যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন ও ইভ টিজিংয়ের সংবাদ পড়ে খুব কষ্ট পেতাম। বিবেকের তাড়না থেকেই সচেতনতামূলক এ শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছি। আমরা হয়তো পুরো দেশকে পাল্টাতে পারব না। কিন্তু আমাদের কারণে একটি ঘটনা প্রতিরোধ করা গেলেও এ প্রয়াস সার্থক হবে।’
বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী প্রণব সরকার বলেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে নিজের মধ্যে দেশের ও মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থেকে এ ধরনের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি আনন্দিত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর সাথে সাথেই একটি ভালো কাজে যুক্ত হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’
বাইসাইকেল শোভাযাত্রার দলনেতা আফজল হোসেন আকন্দ বলেন, ‘যার যার অবস্থান থেকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে মানুষের এগিয়ে আসাকে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছি। নির্যাতনকারী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, রাষ্ট্র তার বিচার করবেই—এ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা আমাদের মধ্যে ছিল। গত দুই বছর শুধু ছাত্ররাই এ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে। আগামী বছর ছাত্রীদের অংশগ্রহণের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.