গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য অপ্রয়োজনীয় : মুহিত

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মন্তব্যের পরও এ বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে হিলারির মন্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'তাঁর ওই বক্তব্য অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রত্যাশিত।'


অর্থমন্ত্রীর কথায় ক্ষোভ ঝরে পড়ে- 'ইউনূস বলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক দখল করতে চায়। ইটস টোটালি রাবিশ। আমি দুঃখিত যে আমাকে আবারও রাবিশ বলতে হলো। টোটালি রাবিশ।'
হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরকালে গত রবিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তরুণসমাজের সঙ্গে এক আড্ডা অনুষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে হিলারি বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি ওয়াশিংটন থেকে নজর রেখেছি। সরকারের কোনো সিদ্ধান্তে গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না- এটিই আমি দেখতে চাই। সরকারের কোনো সিদ্ধান্তে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।'
সচিবালয়ে গতকাল সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, হিলারি ক্লিনটনের ওই বক্তব্যে সরকারের অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন ছিল না। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল অপ্রত্যাশিত।'
আগামী অর্থবছরের বাজেট-সংক্রান্ত এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক সরকারের। সরকারই এটি প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্যাংকটিকে সামনের দিকে এগিয়েও নিয়েছে সরকার। আমি নিজেও এর একজন প্রতিষ্ঠাতা। বরং গ্রামীণ ব্যাংকের হাত ধরেই ড. ইউনূস এত দূর পৌঁছাতে পেরেছেন।'
মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক সব সময়ই নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করেছে। এখনো করছে। সরকার কখনোই ব্যাংকের কার্যক্রমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করেনি। এখনোও করছে না। ফলে গ্রামীণ ব্যাংক আগের মতোই চলছে। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক আগে থেকেই বিকেন্দ্রীকরণভাবে চলছে। এখনো তাই। ফলে গত এক বছরে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ, আদায়, মুনাফা সব কিছুই বেড়েছে।'
মন্ত্রী বলেন, 'আমরা ব্যাংকটি নিয়ে কোনো রকম ঝগড়াও করিনি। বরং ড. ইউনূসই ব্যাংকটি নিয়ে ঝগড়া করছেন। আর যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংককে এক পয়সাও সহযোগিতা করেনি।'
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পান। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পর তাঁকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। এরই মধ্যে ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর সরকারি মালিকানাধীন নরওয়ে সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের (এনআরকে) টেলিভিশনে প্রচারিত 'ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে' (কট ইন মাইক্রো ডেট) প্রামাণ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়, মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্য দূর করতে দাতাদের দেওয়া গ্রামীণ ব্যাংকের ১০ কোটি ডলার (বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) গ্রামীণ কল্যাণ নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নিয়েছেন। তখন ইউনূসের ব্যাপারে কঠোর হয় সরকারও। গঠন করে একটি পর্যালোচনা কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশ পাওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১১ সালের ২ মার্চ এক আদেশে বয়সসীমা উত্তীর্ণ হওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে সফরকারীরা ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকে বহাল রাখার জন্য সরকারকে চাপ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের ৯ জন পরিচালক হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন করেছিলেন ৩ মার্চ। তিন দিন শুনানি শেষে একই বছরের ৮ মার্চ হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রিট আবেদন দুটি সরাসরি খারিজ করে দেন। এতে স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগে দুটি আবেদন (সিএমপি) করা হয় ২০১১ সালের ৯ মার্চ। ৫ এপ্রিল তাও খারিজ করে দেন আদালত। তবে গত বছরের শেষ দিকে ড. ইউনূসের আইনজীবীদের করা একটি লিভ টু আপিল এখনো উচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে গত বছরের ১২ মে মুহাম্মদ ইউনূস সংবাদ সম্মেলন করে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

No comments

Powered by Blogger.