ভাষা আন্দোলন-তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি থেকে-গ্রন্থনা: সিমিন হোসেন রিমি
২৬.২.৫২ সকাল আটটায় মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে গেলাম। দুপুর সাড়ে ১২টায় বার লাইব্রেরিতে গেলাম। বেলা দুইটায় যোগীনগরে ফিরে এলাম। বিকেল সাড়ে চারটায় চাঁদপুরের সিরাজকে সঙ্গে নিয়ে মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে গেলাম। ঠিক সেই সময় সলিমুল্লাহ হল ঘেরাও করে অভিযান চালানো হলো।
সেন্ট্রাল কমিটি অব অ্যাকশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ থেকে শহরের সর্বত্র স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলো। লাগাতার পাঁচ দিন ধর্মঘট চলার পর রিকশাওয়ালাদের মতো দরিদ্র জনগণ তাদের বিরাম দেওয়ার জন্য আমাদের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করল।
আজ বিকেলে সলিমুল্লাহ হলে ঘেরাও দিয়ে অভিযান চালানো হয়। হাউস টিউটর ড. মফিজউদ্দিন ও ২৩ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশি অ্যাকশনের পুরো সময় উপাচার্য ও প্রভোস্টকে হলের কাছে আটকে রাখা হয়।
মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে অভিযান চালানো হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। পুলিশের গুলিতে নিহত রফিকুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত স্তম্ভ সকাল সাড়ে নয়টায় উদ্বোধন করেন তাঁর পিতা শফিকুর রহমান, এ কে শামসুদ্দিনের উপস্থিতিতে। পুলিশ স্তম্ভটি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় এবং একটি একটি করে ইট খুলে ফেলে। কোনো তল্লাশি চালানো হলো না। কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো না। সন্ধ্যা সাতটায় পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়।
অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, ড. পিসি চক্রবর্তী এবং জগন্নাথ কলেজের অজিত গুহকে গত রাতে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বোঝা যাচ্ছে, খুবই জোরেশোরে গ্রেপ্তার অভিযান চলবে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের মিথ্যা কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে এবং কোনো কারণ ছাড়াই এ বিষয়ে হিন্দুদের টেনে আনা হচ্ছে।
২৭.২.৫২
সকাল নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে ছিলাম। বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে ছিলাম। আতাউর রহমান খানের খসড়া করা একটি বিবৃতি নিলাম। আন্দোলনের সঙ্গে ধ্বংসাত্মক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের যোগসূত্র স্থাপনে সরকারের জঘন্য প্রচেষ্টার মুখোশ উন্মোচন করার উদ্দেশ্যেই এই বিবৃতি।
দুপুরে খাবার খেয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় বের হলাম। সোজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটির মূল কর্মী ও সদস্যরা গতকালের পুলিশি অভিযানের পর অন্যত্র সরে পড়েছে। সূর্যাস্তের পর অলি আহাদের সঙ্গে দেখা করলাম। সে আমার তৈরি করা বিবৃতিটিতে স্বাক্ষর করলে তা প্রকাশ করার জন্য সব সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হলো।
আগে দেওয়া জামিন বাতিল করে হামিদুল হক চৌধুরী এবং পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক এ সালামকে আজ কারাগারে পাঠানো হয়।
২৮.২.৫২
সকাল পৌনে নয়টায় বের হয়ে সোজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে। এসআই জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে এসএম হলে গেলাম এবং অ্যাসেম্বলি হলে সভায় যোগ দিলাম। সভাপতিত্ব করল আসাদ। আনোয়ার, মকসুদ, জিনু, মুখলেসুর রহমান এবং আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সরকারের অপপ্রচারের মুখোশ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমার দেওয়া প্রস্তাব গৃহীত হলো। মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে ফিরলাম বেলা সাড়ে ১১টায়। দুপুর সাড়ে ১২টায় যোগীনগরে চলে এলাম। বেলা আড়াইটায় বার লাইব্রেরির উদ্দেশে বের হলাম।
আমাদের নয় দফা দাবির ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমে মন্ত্রী আফজালের পাঠানো আপস ফর্মুলা নিয়ে কামরুদ্দীন আহমেদ, জমির, জহির ও আমি আলোচনা করলাম। বিকেল সাড়ে চারটায় বের হয়ে সোজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অলি আহাদ ১৫/৬-এ আমার সঙ্গে দেখা করল। সে চলে গেল রাত আটটায়।
২৯.২.৫২
সকাল পৌনে ১০টায় মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উদ্দেশে বের হলাম। সেখানে মতিন, এসআই জাহিদি এবং সাদিককে পেলাম।
বার লাইব্রেরিতে গেলাম। কামরুদ্দীন আহমদ, জমির প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উদ্দেশে বের হলাম দুপুর সাড়ে ১২টায়। সেখানে গিয়ে দেখি, পুলিশ বাহিনী হোস্টেল ঘেরাও দিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। সব কক্ষেই তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালানো হলো। ভৃত্যদের ও এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হলো। কিছুই পাওয়া যায়নি। মতিন অন্যত্র চলে গেছে। জাহিদি ও সাদিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে
আজ বিকেলে সলিমুল্লাহ হলে ঘেরাও দিয়ে অভিযান চালানো হয়। হাউস টিউটর ড. মফিজউদ্দিন ও ২৩ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশি অ্যাকশনের পুরো সময় উপাচার্য ও প্রভোস্টকে হলের কাছে আটকে রাখা হয়।
মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে অভিযান চালানো হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। পুলিশের গুলিতে নিহত রফিকুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত স্তম্ভ সকাল সাড়ে নয়টায় উদ্বোধন করেন তাঁর পিতা শফিকুর রহমান, এ কে শামসুদ্দিনের উপস্থিতিতে। পুলিশ স্তম্ভটি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় এবং একটি একটি করে ইট খুলে ফেলে। কোনো তল্লাশি চালানো হলো না। কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো না। সন্ধ্যা সাতটায় পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়।
অধ্যাপক মুজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, ড. পিসি চক্রবর্তী এবং জগন্নাথ কলেজের অজিত গুহকে গত রাতে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বোঝা যাচ্ছে, খুবই জোরেশোরে গ্রেপ্তার অভিযান চলবে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের মিথ্যা কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে এবং কোনো কারণ ছাড়াই এ বিষয়ে হিন্দুদের টেনে আনা হচ্ছে।
২৭.২.৫২
সকাল নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে ছিলাম। বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত বার লাইব্রেরিতে ছিলাম। আতাউর রহমান খানের খসড়া করা একটি বিবৃতি নিলাম। আন্দোলনের সঙ্গে ধ্বংসাত্মক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের যোগসূত্র স্থাপনে সরকারের জঘন্য প্রচেষ্টার মুখোশ উন্মোচন করার উদ্দেশ্যেই এই বিবৃতি।
দুপুরে খাবার খেয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় বের হলাম। সোজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটির মূল কর্মী ও সদস্যরা গতকালের পুলিশি অভিযানের পর অন্যত্র সরে পড়েছে। সূর্যাস্তের পর অলি আহাদের সঙ্গে দেখা করলাম। সে আমার তৈরি করা বিবৃতিটিতে স্বাক্ষর করলে তা প্রকাশ করার জন্য সব সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হলো।
আগে দেওয়া জামিন বাতিল করে হামিদুল হক চৌধুরী এবং পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক এ সালামকে আজ কারাগারে পাঠানো হয়।
২৮.২.৫২
সকাল পৌনে নয়টায় বের হয়ে সোজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে। এসআই জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে এসএম হলে গেলাম এবং অ্যাসেম্বলি হলে সভায় যোগ দিলাম। সভাপতিত্ব করল আসাদ। আনোয়ার, মকসুদ, জিনু, মুখলেসুর রহমান এবং আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সরকারের অপপ্রচারের মুখোশ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমার দেওয়া প্রস্তাব গৃহীত হলো। মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে ফিরলাম বেলা সাড়ে ১১টায়। দুপুর সাড়ে ১২টায় যোগীনগরে চলে এলাম। বেলা আড়াইটায় বার লাইব্রেরির উদ্দেশে বের হলাম।
আমাদের নয় দফা দাবির ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমে মন্ত্রী আফজালের পাঠানো আপস ফর্মুলা নিয়ে কামরুদ্দীন আহমেদ, জমির, জহির ও আমি আলোচনা করলাম। বিকেল সাড়ে চারটায় বের হয়ে সোজা গেলাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অলি আহাদ ১৫/৬-এ আমার সঙ্গে দেখা করল। সে চলে গেল রাত আটটায়।
২৯.২.৫২
সকাল পৌনে ১০টায় মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উদ্দেশে বের হলাম। সেখানে মতিন, এসআই জাহিদি এবং সাদিককে পেলাম।
বার লাইব্রেরিতে গেলাম। কামরুদ্দীন আহমদ, জমির প্রমুখের সঙ্গে দেখা করলাম। মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উদ্দেশে বের হলাম দুপুর সাড়ে ১২টায়। সেখানে গিয়ে দেখি, পুলিশ বাহিনী হোস্টেল ঘেরাও দিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। সব কক্ষেই তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালানো হলো। ভৃত্যদের ও এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হলো। কিছুই পাওয়া যায়নি। মতিন অন্যত্র চলে গেছে। জাহিদি ও সাদিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে
No comments