চরাচর-ঐতিহ্যবাহী ক্যাসেল পার্ক by আলম শাইন
১৯১১ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে নওগাঁ শহরে একটি বিনোদন পার্ক তৈরি করা হয়। লর্ড ক্যাসেলের নামানুসারে পার্কটির নামকরণ করা হয় 'ক্যাসেল পার্ক'। মূলত তৎকালীন রাজশাহী জেলা বোর্ডের উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই পার্কটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'রাজশাহী জেলা বোর্ড উদ্যান'।
নাম পরিবর্তনের হিড়িকে পড়েছে এটি তৃতীয় দফায়ও। নওগাঁ মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হলে পার্কটির নাম ধারণ করে 'নওগাঁ জেলা পরিষদ পার্ক'। পার্কটির মোট আয়তন প্রায় আড়াই একর। এর মধ্যে প্রায় সোয়া একরের একটি দিঘি রয়েছে। পুরো পার্কটি দেয়ালঘেরা। দেয়ালের চারদিকে রয়েছে বেশ কয়টি ছোট দরজা। অন্যদিকে উত্তর প্রান্তে রয়েছে পার্কের প্রধান ফটক। এ ফটক দিয়ে তখন প্রবেশ করতেন নওগাঁ মহকুমার কর্তাব্যক্তিরা। ছোট দরজাগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার কথা থাকলেও তৎকালীন কর্তাব্যক্তিরা কাউকে ঢুকতে দিতেন না। এক কথায় পার্কটিতে তখন সর্বসাধারণের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। বর্তমানে সেই নিষেধাজ্ঞা নেই। পার্কটি প্রতিষ্ঠাকালেই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এখানে শত প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গাছ হলো অশোক, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অর্জুন, মেহগনি, ঝাউ, হরীতকী ও বহেড়া। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের দেশজ ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী ক্যাসেল পার্কটি অবহেলায়-অযত্নে তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। অবস্থা এমন হয়েছে যে তখন আর এটিকে পার্কের মর্যাদা দেওয়া যেত না। সেখানে ছিল হাতেগোনা কয়েকটি গাছ, ভাঙা বেঞ্চ আর ছিল পলেস্তারা খসে-পড়া বাউন্ডারি দেয়াল। বিষয়টা অনুধাবন করেন তৎকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর প্রচেষ্টায় পার্কটি আধুনিক রূপে সজ্জিত করা হয়। হারানো যৌবন ফিরে পাওয়ার পর পার্কটিতে লোকসমাগম ঘটতে থাকে। এটি নওগাঁ শহরবাসীর জন্য হয়ে ওঠে একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র। প্রতিদিন শত শত লোক বিনোদনের খোরাক মেটালেও একটি ব্যাপারে এখানকার বিজ্ঞজনরা কর্তৃপক্ষের ওপর অনেকটা নাখোশ। তাঁরা পার্কের নাম পরিবর্তনের পক্ষে নন। অনেকেই বলে থাকেন, 'এভাবে নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ইতিহাসকে খাটো করা হয়, যা আমরা মানতে পারছি না। বরং ভালো হয় আবার ঐতিহাসিক ক্যাসেল পার্ক নামে নামকরণ করলে।' তাই আশা করছি বিষয়টি ভেবে দেখবে কর্তৃপক্ষ।
আলম শাইন
আলম শাইন
No comments