পতাকা তুই সরে যা পতাকা তুই লজ্জা পা by রণজিৎ বিশ্বাস
বেদানা কোনো দানাহীন ফল নয়, ঘরে চাল বাড়ন্ত মানে চাল তার মটকা উপচে যাওয়া নয়, দণ্ডকাকও কোনো বায়স জাতীয় পক্ষী নয়। এটি ভিন্ন জিনিস। এই শক্ত শব্দ 'দণ্ডকাক' আমাদের পরিচিত কোনো প্রাণী তো নয়ই, সেটি আবার হৃৎপিণ্ডের আমাদের ধুকপুকুনি স্তব্ধ করে দিতে পারে। এর অর্থ কাকের রূপ নিয়ে প্রাণবিনাশী যম।
বাংলা ভাষাকে 'দণ্ড' বড় উদারভাবে শব্দ বিতরণ করেছে। যেমন_ মন্থনদণ্ড (দুগ্ধমন্থনের দণ্ড), দণ্ডনীতি (রাজশাসনের একটি নীতি), দণ্ডপাণি (দণ্ডধারী, যার হাতে লাঠি থাকে), দণ্ডপাল/দণ্ডপালক (শাসনকর্তা), দণ্ডবিধাতা, দণ্ডবিধান, দণ্ডবিধি, দণ্ড্য/দণ্ডনীয় (শাস্তিযোগ্য), দণ্ডবৎ (দণ্ডের মতো শায়িত অবস্থায় প্রণাম করা), দণ্ডমুণ্ড (সাধারণ শাস্তি থেকে প্রাণদণ্ড পর্যন্ত। এ সমস্ত দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা যার, তিনি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা)।
তবে সংসারে যত দণ্ড আছে_ দৃশ্যদণ্ড ও অদৃশ্যদণ্ড, অনুভবগ্রাহ্য দণ্ড ও বিতরণ নিরপেক্ষদণ্ড_ সব দণ্ডের চেয়ে ইন্টারেস্টিং একটি দণ্ড মালিকানা নির্বিশেষে গাড়িতে গাড়িতে ও বাহনে বাহনে আবির্ভূত হয়েছে এবং আবরণসহ প্রবলভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ধ্বজাদণ্ড বললে কেমন শোনাবে কে জানে, আমি বলি পতাকাদণ্ড। এই দণ্ড জাতীয় পতাকা গাড়িতে ওড়াবার নিয়ম একেবারেই মানতে চাচ্ছে না। প্রতিদিন নীরবে বলে যাচ্ছে_ তোর নিয়ম তোর কাছে, আমি তোকে মানি না, মানি না, মানি না। গাড়ির সামনে, দু'চোখের এক চোখের পাশে পতাকাদণ্ড উঁচিয়ে রাখার অর্থ হচ্ছে_ যারা আমাদের বিরক্ত করে, তাদের সন্দেহ ঘুচিয়ে বলছি, এই বাহনে খুব ইম্পোরট্যান্ট মানুষ যাওয়া-আসা করেন। যেখানে-সেখানে আটকে দিয়ে আমাদের হয়রানিও করো না, যানজটও বাড়িও না, টাকা-পয়সাও চেও না। সামাল দিতে পারবা না।
কোনো কোনো গাড়িতে আবার 'জেনুইন' ধ্বজাদণ্ডও দেখি। সেগুলোতে যারা চড়েন, রাষ্ট্রের আচার (রাষ্ট্রাচার, প্রটোকল, ফ্ল্যাগ রুলস ইত্যাদি) তাদের অধিকার আছে জাতীয় পতাকা ওড়াবার। তখন আমার বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা ওঠে, নগদ পুরনো দুঃখের কথা আমার মনে পড়ে।
কেমন সে দুঃখের কথা?
বড় গভীর সে দুঃখের কথা। যেমন_ এই লোকটির বাহনে তো আমার দেশের পবিত্র জাতীয় পতাকা উড়তে পারে না। পারা তো উচিত নয়। যে লোক যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী লোকদের আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয়, প্রমোশন দেয়, পুনর্বাসন করে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকে ও তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে, তার বাহনে তো আমার প্রিয় জাতীয় পতাকার স্পর্শ থাকতে পারে না! যারা আমার দেশের স্বাধীনতা চায়নি, পতাকা চায়নি বরং তাকে খামচে ধরেছে, যারা মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি তাক করেছে, যারা সংসার থেকে আমার পিতামাতাকে মেরেছে, যারা নানা নামের বাহিনী গঠন করে আমার ভাই মেরেছে, বন্ধু মেরেছে, শিক্ষক ও সহপাঠী মেরেছে, তাদের আবাসে-শকটে যারা পতাকা দিয়েছে, অমাত্যজনার গৌরব দিয়েছে, তারা সঙ্গে সঙ্গেই গাড়িতে-বাড়িতে পতাকা ওড়াবার অধিকার হারিয়েছে। আমি তখন পতাকাকে বলি_ পতাকা তুই হারিয়ে যা, পতাকা তুই সরে যা। বলি_ পতাকা তুই পালিয়ে যা। পতাকা তুই লজ্জা পা, পতাকা তুই গুটিয়ে থাক। পতাকা বলে_ আমি তো তেমন থাকতেই চাই। কিন্তু আমার তো কোনো ক্ষমতা নাই! আমি তো এক বেজান পদার্থ, যেখানে উড়ি সেখানে অর্থ।
রণজিৎ বিশ্বাস : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
তবে সংসারে যত দণ্ড আছে_ দৃশ্যদণ্ড ও অদৃশ্যদণ্ড, অনুভবগ্রাহ্য দণ্ড ও বিতরণ নিরপেক্ষদণ্ড_ সব দণ্ডের চেয়ে ইন্টারেস্টিং একটি দণ্ড মালিকানা নির্বিশেষে গাড়িতে গাড়িতে ও বাহনে বাহনে আবির্ভূত হয়েছে এবং আবরণসহ প্রবলভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ধ্বজাদণ্ড বললে কেমন শোনাবে কে জানে, আমি বলি পতাকাদণ্ড। এই দণ্ড জাতীয় পতাকা গাড়িতে ওড়াবার নিয়ম একেবারেই মানতে চাচ্ছে না। প্রতিদিন নীরবে বলে যাচ্ছে_ তোর নিয়ম তোর কাছে, আমি তোকে মানি না, মানি না, মানি না। গাড়ির সামনে, দু'চোখের এক চোখের পাশে পতাকাদণ্ড উঁচিয়ে রাখার অর্থ হচ্ছে_ যারা আমাদের বিরক্ত করে, তাদের সন্দেহ ঘুচিয়ে বলছি, এই বাহনে খুব ইম্পোরট্যান্ট মানুষ যাওয়া-আসা করেন। যেখানে-সেখানে আটকে দিয়ে আমাদের হয়রানিও করো না, যানজটও বাড়িও না, টাকা-পয়সাও চেও না। সামাল দিতে পারবা না।
কোনো কোনো গাড়িতে আবার 'জেনুইন' ধ্বজাদণ্ডও দেখি। সেগুলোতে যারা চড়েন, রাষ্ট্রের আচার (রাষ্ট্রাচার, প্রটোকল, ফ্ল্যাগ রুলস ইত্যাদি) তাদের অধিকার আছে জাতীয় পতাকা ওড়াবার। তখন আমার বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা ওঠে, নগদ পুরনো দুঃখের কথা আমার মনে পড়ে।
কেমন সে দুঃখের কথা?
বড় গভীর সে দুঃখের কথা। যেমন_ এই লোকটির বাহনে তো আমার দেশের পবিত্র জাতীয় পতাকা উড়তে পারে না। পারা তো উচিত নয়। যে লোক যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী লোকদের আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয়, প্রমোশন দেয়, পুনর্বাসন করে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকে ও তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে, তার বাহনে তো আমার প্রিয় জাতীয় পতাকার স্পর্শ থাকতে পারে না! যারা আমার দেশের স্বাধীনতা চায়নি, পতাকা চায়নি বরং তাকে খামচে ধরেছে, যারা মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি তাক করেছে, যারা সংসার থেকে আমার পিতামাতাকে মেরেছে, যারা নানা নামের বাহিনী গঠন করে আমার ভাই মেরেছে, বন্ধু মেরেছে, শিক্ষক ও সহপাঠী মেরেছে, তাদের আবাসে-শকটে যারা পতাকা দিয়েছে, অমাত্যজনার গৌরব দিয়েছে, তারা সঙ্গে সঙ্গেই গাড়িতে-বাড়িতে পতাকা ওড়াবার অধিকার হারিয়েছে। আমি তখন পতাকাকে বলি_ পতাকা তুই হারিয়ে যা, পতাকা তুই সরে যা। বলি_ পতাকা তুই পালিয়ে যা। পতাকা তুই লজ্জা পা, পতাকা তুই গুটিয়ে থাক। পতাকা বলে_ আমি তো তেমন থাকতেই চাই। কিন্তু আমার তো কোনো ক্ষমতা নাই! আমি তো এক বেজান পদার্থ, যেখানে উড়ি সেখানে অর্থ।
রণজিৎ বিশ্বাস : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
No comments