পবিত্র কোরআনের আলো-অবাধ্যরা তাদের প্রবৃত্তি ও অহমিকার কারণেই ইমান আনতে পারবে না
৩১. ক্বুল মান ইয়্যারযুক্বুকুম্ মিনাস সামা-য়ি ওয়ালআরদ্বি আম্মান ইয়্যামলিকুস সাম্আ' ওয়াল আবসা-রা ওয়ামান ইয়ুখরিজুল হাইয়্যা মিনাল মায়্যিতি ওয়া ইউখরিজুল মায়্যিতা মিনাল হাইয়্যি, ওয়া মান ইয়ূ্যদাবি্বরুল আমরা; ফাছাইয়াক্বূলূনাল্লা-হু ফাক্বুল আফালা- তাত্তাক্বূন।
৩২. ফাযা-লিকুমুল্লা-হু রাব্বুকুমুল হাক্কু ফামা- যা- বা'দাল হাক্কি্ব ইল্লাদ্ দ্বালা-লু ফাআন্না- তুস্রাফূন।
৩৩. কাযা-লিকা হাক্ক্বাত কালিমাতু রাবি্বকা আ'লাল্লাযীনা ফাছাক্বূ আন্নাহুম লা-ইয়ু'মিনূন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৩১-৩৩]
অনুবাদ : ৩১. (হে নবী, মুশরিকদের) আপনি বলুন, কে তোমাদের আকাশের আবহাওয়া ও জমিনের উর্বরতা থেকে রিজিক সরবরাহ করেন? অথবা কে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির প্রকৃত মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করে আনেন? এবং কে-ই বা (বিশ্বজগতের) যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন? তারা বলতে বাধ্য হবে, 'আল্লাহ'। আপনি বলুন, এর পরও কি তোমরা আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার ভয় করবে না?
৩২. (হে মানবজাতি) তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের সত্যিকারের প্রতিপালক। সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে! এতদসত্ত্বেও তোমাদের (প্রবৃত্তির প্ররোচনায় উল্টোপথে) কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
৩৩. এভাবেই যারা অবাধ্যতার নীতি অবলম্বন করেছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহর এ বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে যে তারা ইমান আনবে না।
ব্যাখ্যা : ৩১ নম্বর আয়াতে আরবের মুশরিকদের বিশেষ করে মক্কার কোরাইশদের কাছে প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে : বিশ্বজগতের মূল নিয়ন্তা আসলে কে? কে মানুষের জীবন-মরণ নির্ধারণ করেন? কে আকাশ ও জমিনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে খাদ্যের সরবরাহ দেন, কে আসলে জগৎটা চালান? তখন মুশরিক কোরাইশরা আল্লাহর কথাই বলতে বাধ্য হতো। তারা স্বীকার করত যে সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকর্তা আল্লাহই। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের বিশ্বাস ছিল, আল্লাহ তাঁর অধিকাংশ এখতিয়ার বিভিন্ন শক্তির হাতে ছেড়ে দিয়েছেন, আর সেই শক্তিগুলোই তাদের দেব-দেবী। কাজেই তাদের দেব-দেবীরা আল্লাহর শরিক। তারা তাদের কোনো কোনো পূর্বপুরুষকেও অলৌকিক শক্তিধর কল্পনা করে দেব-দেবীদের কাতারে বসাত। তারা বিশ্বাস করত, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেব-দেবীদের খুশি রাখতে হবে এবং খুশি রাখতে তাদের পূজা-অর্চনা করতে হবে। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যেহেতু স্বীকার করছ যে আল্লাহ সব কিছুর চূড়ান্ত নিয়ন্তা, তখন অন্য কারো উপাসনা করা যে নির্বুদ্ধিতা এটা কেন বুঝতে পারছ না?
৩২ নম্বর আয়াতে মক্কার কোরাইশরাসহ মানবজাতিকে উদ্দেশ করে বলা হচ্ছে, আগের লোকেরা যা-ই করে থাকুক, আল্লাহর রাসুল যখন সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন, তখন তো সত্যকে গ্রহণ করা সবার কর্তব্য হয়ে পড়েছে। সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তো এর অন্যথা করার ন্যায্যত কোনো সুযোগ থাকে না। এই আয়াতে কর্মবাচ্য ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে মানুষের স্বীয় কুপ্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি বা অহমিকার প্রতিই ইশারা করা হয়েছে। এগুলোর দ্বারা তাড়িত হয়েই মানুষ উল্টোদিকে যায় এবং তারা সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে না। ৩৩ নম্বর আয়াতেও এই প্রবৃত্তি ও আত্মঅহমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, এভাবেই তারা অবাধ্যতার নীতি অবলম্বন করেছে এবং তাদের নিজেদের এই প্রবৃত্তি ও অহমিকাই ইমানের সৌভাগ্য থেকে তাদের বঞ্চিত করে রেখেছে। আল্লাহ তাদের ভাগ্যে লিখে রেখেছেন যে তারা ইমানের সৌভাগ্য লাভ করবে না। সেটা তাদের নিজেদের অবস্থানের কারণেই। নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের এ দায়-দায়িত্বও তাদেরই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৩৩. কাযা-লিকা হাক্ক্বাত কালিমাতু রাবি্বকা আ'লাল্লাযীনা ফাছাক্বূ আন্নাহুম লা-ইয়ু'মিনূন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৩১-৩৩]
অনুবাদ : ৩১. (হে নবী, মুশরিকদের) আপনি বলুন, কে তোমাদের আকাশের আবহাওয়া ও জমিনের উর্বরতা থেকে রিজিক সরবরাহ করেন? অথবা কে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির প্রকৃত মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করে আনেন? এবং কে-ই বা (বিশ্বজগতের) যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন? তারা বলতে বাধ্য হবে, 'আল্লাহ'। আপনি বলুন, এর পরও কি তোমরা আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার ভয় করবে না?
৩২. (হে মানবজাতি) তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের সত্যিকারের প্রতিপালক। সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে! এতদসত্ত্বেও তোমাদের (প্রবৃত্তির প্ররোচনায় উল্টোপথে) কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
৩৩. এভাবেই যারা অবাধ্যতার নীতি অবলম্বন করেছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহর এ বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে যে তারা ইমান আনবে না।
ব্যাখ্যা : ৩১ নম্বর আয়াতে আরবের মুশরিকদের বিশেষ করে মক্কার কোরাইশদের কাছে প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে : বিশ্বজগতের মূল নিয়ন্তা আসলে কে? কে মানুষের জীবন-মরণ নির্ধারণ করেন? কে আকাশ ও জমিনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে খাদ্যের সরবরাহ দেন, কে আসলে জগৎটা চালান? তখন মুশরিক কোরাইশরা আল্লাহর কথাই বলতে বাধ্য হতো। তারা স্বীকার করত যে সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকর্তা আল্লাহই। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের বিশ্বাস ছিল, আল্লাহ তাঁর অধিকাংশ এখতিয়ার বিভিন্ন শক্তির হাতে ছেড়ে দিয়েছেন, আর সেই শক্তিগুলোই তাদের দেব-দেবী। কাজেই তাদের দেব-দেবীরা আল্লাহর শরিক। তারা তাদের কোনো কোনো পূর্বপুরুষকেও অলৌকিক শক্তিধর কল্পনা করে দেব-দেবীদের কাতারে বসাত। তারা বিশ্বাস করত, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেব-দেবীদের খুশি রাখতে হবে এবং খুশি রাখতে তাদের পূজা-অর্চনা করতে হবে। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যেহেতু স্বীকার করছ যে আল্লাহ সব কিছুর চূড়ান্ত নিয়ন্তা, তখন অন্য কারো উপাসনা করা যে নির্বুদ্ধিতা এটা কেন বুঝতে পারছ না?
৩২ নম্বর আয়াতে মক্কার কোরাইশরাসহ মানবজাতিকে উদ্দেশ করে বলা হচ্ছে, আগের লোকেরা যা-ই করে থাকুক, আল্লাহর রাসুল যখন সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন, তখন তো সত্যকে গ্রহণ করা সবার কর্তব্য হয়ে পড়েছে। সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তো এর অন্যথা করার ন্যায্যত কোনো সুযোগ থাকে না। এই আয়াতে কর্মবাচ্য ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে মানুষের স্বীয় কুপ্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি বা অহমিকার প্রতিই ইশারা করা হয়েছে। এগুলোর দ্বারা তাড়িত হয়েই মানুষ উল্টোদিকে যায় এবং তারা সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে না। ৩৩ নম্বর আয়াতেও এই প্রবৃত্তি ও আত্মঅহমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, এভাবেই তারা অবাধ্যতার নীতি অবলম্বন করেছে এবং তাদের নিজেদের এই প্রবৃত্তি ও অহমিকাই ইমানের সৌভাগ্য থেকে তাদের বঞ্চিত করে রেখেছে। আল্লাহ তাদের ভাগ্যে লিখে রেখেছেন যে তারা ইমানের সৌভাগ্য লাভ করবে না। সেটা তাদের নিজেদের অবস্থানের কারণেই। নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের এ দায়-দায়িত্বও তাদেরই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments