রম্যকথন-মানুষের চারটিই আসলে পা by রণজিৎ বিশ্বাস
: বিষয়ে বিষয়ে পার্থক্য বিচারে আজ মন ঢালার ইচ্ছে। : ইচ্ছে পূরণ করা ভালো। : চিত্র ও বিচিত্রের মধ্যে পার্থক্য কেমন? : চিত্র মানে ছবি। কখনো কখনো চেহারা_যেমন, 'চিন্তাসে চিত্র ঘটে (চিন্তামগ্ন থাকলে চেহারা-ছবি নষ্ট হয়), দুঃখ সে ঘটে শরীর/পাপোসে লখস্মি ঘটে কহা গ্যয়া দাস কবীর', 'আর বিচিত্র হচ্ছে বিশেষ প্রকৃতির চিত্র, কখনো কখনো বিষম চিত্র, বিদ্ঘুটে চিত্র, উদ্ভট চিত্র ইত্যাদি।
যেমন_তার বিচিত্র ভাবনা আমাকে বড় উত্ত্যক্ত করে। বুঝতে পাচ্ছেন তো?
: বিষয়টা বুঝতে পারা যাবে কিনা পরে বুঝব,
আগে আমি জবাবগুলো জড়ো করি। মানুষ ও চতুষ্পদ প্রাণীর মধ্যে কোনো তফাত আছে?
: এর জবাব দু-রকম। আছে, আবার নেইও। নেই, কারণ মানুষও জন্তু এবং চতুষ্পদও জন্তু।
: মানুষ তো দ্বিপদ প্রাণী হিসেবে পরিচিত!
: এই পরিচিতি মানুষই মানুষকে দিয়েছে। আদতে মানুষেরও পা চারটি। দুটি পা, দুটি পরিবর্তিত পা, মডিফাইড লেগস, সে দুটি আমরা হাত নামে চিনি। পশুর সব বৈশিষ্ট্য মানুষের মধ্যে আছে। আমি নাম ধরে ধরে বলতে চাই না, চাইলেই আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন।
: এবার পার্থক্যের কথা বলুন।
: কোথাও যেতে পশুর কোনো পাসপোর্ট-ভিসা লাগে না, মানুষের লাগে। পোশাকের খাতে পশুর কোনো খরচ নেই, মানুষের আছে। পশু অন্যের মাংস খায়, মানুষ নিজেদের মাংস খেতেও পছন্দ করে। পশু সামনাসামনি মোকাবিলা করে, তাদের পায়ের প্রয়োগ পেছন থেকে করে না, মানুষ দুটোই করে এবং দ্বিতীয়টি বেশি করে ও অতিশয় আনন্দের সঙ্গে করে। অন্যের বিপদ তৈরি করার জন্য এবং তৈরি বিপদ বাড়ানোর জন্য পশু জিনিসপত্র গুদামে ঢোকায় না, মানুষ ঢোকায়। রাস্তায় হর্ন দিলে পশু সরে যায় ও জায়গা ছাড়ে, মানুষ তা করে না। পশু ও মানুষ উভয়ই 'ওপেন এয়ার টয়লেট' ব্যবহার করে, পশুর এই কর্মব্যস্ততার সময় আমরা চোখ ফিরিয়ে নিই না, মানুষের বেলায় না নিয়ে পারি না। গুণপনা ও সাহস শৌর্য প্রকাশে পশু মানুষের ওপর মোটেই নির্ভরশীল নয়, কিন্তু মানুষ ভয়াবহভাবে নির্ভরশীল। কুকুরের মতো প্রভুভক্তি, শার্দুলের মতো সাহস, কেশরীর মতো শৌর্য, বকের মতো ধ্যানী, বায়সের মতো শ্রমী ও শৃগালের মতো সন্ধানী কিংবা মৃগনয়না কোকিলকণ্ঠী অথবা মরালগ্রীবা_শংসাসূচক এমন সব শব্দগুচ্ছ মানুষই তো ব্যবহার করে। পশুদের এসব প্রয়োজন হয় না।
তা ছাড়া পশুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক কিংবা ছদ্মসাম্প্রদায়িক-জাতীয় কোনো শ্রেণী প্রকোষ্ঠ নেই। তাদের মধ্যে ভেদবুদ্ধি নেই। তারা প্রথমত, যুদ্ধাপরাধ করে না; দ্বিতীয়ত, মহাশাস্তিযোগ্য সেই অপরাধ করার পর বিকৃত মুখভঙ্গি ও অশ্লীল শব্দাশব্দে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও আস্ফালন করে না। পশুর দুধ খেয়ে মানুষ বাঁচে ও বাড়ে কিন্তু, মানুষের কাছে পশুর তেমন কোনো ঋণ নেই। মানুষ ও পশু উভয়েরই লেঙ্গুড় আছে। তবে পশুর লেঙ্গুড় প্রকাশিত, মানুষের লেঙ্গুড় লুক্কায়িত। মানুষের টেইল পশুর টেইলের চেয়ে বেশি টুইস্ট করে। পশুর শিং থেকে খুর, হাড় থেকে চর্ম এবং তরল বর্জ্য থেকে পুরীষ_সবই মানুষের কাজে লাগে; মানুষের কোনো কিছুই পশুর কাজে লাগে না।
: কিন্তু, মানুষের তো শিংও নেই, খুরও নেই।
আছে। দুটোই আছে। প্রবলভাবে আছে। লুক্কায়িত অবস্থায়। পার্থক্যের আর দু-একটি কথা বলে আমি আমার ফ্যাক্টরিতে যেতে চাই। আজ আমাকে বিভিন্ন প্রকৃতির অনেক শ্রম ঢালতে হবে। পশুদের জগতে বাম হাতের উপার্জনের কোনো ধারণা নেই। পশুধর্মের নামে মানবদলন ও মানবহনন কিংবা আত্মহনন করে না; অথবা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কপ্রকোষ্ঠ ধৌত-বিধৌত করে সেখানে বর্জ্য পদার্থ ভরে দেয় না।
: রামচন্দ্র ও হনুমানের সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে?
: আছে। ভালোভালেই আছে।
: তাদের মধ্যে পার্থক্য কী?
: পার্থক্য খুব ইন্টারেস্টিং। রামচন্দ্রের তীরের আঘাত সওয়া যায়, হনুমানের মুখভেঙচানি নয়। তবু তা আমাদের সইতে হয়, মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। জীবনে যখন থাকে মধ্যরাত, এসব সইতে সইতে ও মানতে মানতে ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ভোর কখনো আসে, কখনো আসে না। কখনো কখনো 'তিনি' অন্ধকার জীবনে ভোর নামাতে ভুলে যান। কাজটা যে ভালো হয় না, তিনি বোঝেন না। তাঁকে বোঝানোর কেউ নেই। তিনি কারো কথা শোনেন না।
লেখক : রম্য লেখক ও কথাসাহিত্যিক
: বিষয়টা বুঝতে পারা যাবে কিনা পরে বুঝব,
আগে আমি জবাবগুলো জড়ো করি। মানুষ ও চতুষ্পদ প্রাণীর মধ্যে কোনো তফাত আছে?
: এর জবাব দু-রকম। আছে, আবার নেইও। নেই, কারণ মানুষও জন্তু এবং চতুষ্পদও জন্তু।
: মানুষ তো দ্বিপদ প্রাণী হিসেবে পরিচিত!
: এই পরিচিতি মানুষই মানুষকে দিয়েছে। আদতে মানুষেরও পা চারটি। দুটি পা, দুটি পরিবর্তিত পা, মডিফাইড লেগস, সে দুটি আমরা হাত নামে চিনি। পশুর সব বৈশিষ্ট্য মানুষের মধ্যে আছে। আমি নাম ধরে ধরে বলতে চাই না, চাইলেই আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন।
: এবার পার্থক্যের কথা বলুন।
: কোথাও যেতে পশুর কোনো পাসপোর্ট-ভিসা লাগে না, মানুষের লাগে। পোশাকের খাতে পশুর কোনো খরচ নেই, মানুষের আছে। পশু অন্যের মাংস খায়, মানুষ নিজেদের মাংস খেতেও পছন্দ করে। পশু সামনাসামনি মোকাবিলা করে, তাদের পায়ের প্রয়োগ পেছন থেকে করে না, মানুষ দুটোই করে এবং দ্বিতীয়টি বেশি করে ও অতিশয় আনন্দের সঙ্গে করে। অন্যের বিপদ তৈরি করার জন্য এবং তৈরি বিপদ বাড়ানোর জন্য পশু জিনিসপত্র গুদামে ঢোকায় না, মানুষ ঢোকায়। রাস্তায় হর্ন দিলে পশু সরে যায় ও জায়গা ছাড়ে, মানুষ তা করে না। পশু ও মানুষ উভয়ই 'ওপেন এয়ার টয়লেট' ব্যবহার করে, পশুর এই কর্মব্যস্ততার সময় আমরা চোখ ফিরিয়ে নিই না, মানুষের বেলায় না নিয়ে পারি না। গুণপনা ও সাহস শৌর্য প্রকাশে পশু মানুষের ওপর মোটেই নির্ভরশীল নয়, কিন্তু মানুষ ভয়াবহভাবে নির্ভরশীল। কুকুরের মতো প্রভুভক্তি, শার্দুলের মতো সাহস, কেশরীর মতো শৌর্য, বকের মতো ধ্যানী, বায়সের মতো শ্রমী ও শৃগালের মতো সন্ধানী কিংবা মৃগনয়না কোকিলকণ্ঠী অথবা মরালগ্রীবা_শংসাসূচক এমন সব শব্দগুচ্ছ মানুষই তো ব্যবহার করে। পশুদের এসব প্রয়োজন হয় না।
তা ছাড়া পশুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক কিংবা ছদ্মসাম্প্রদায়িক-জাতীয় কোনো শ্রেণী প্রকোষ্ঠ নেই। তাদের মধ্যে ভেদবুদ্ধি নেই। তারা প্রথমত, যুদ্ধাপরাধ করে না; দ্বিতীয়ত, মহাশাস্তিযোগ্য সেই অপরাধ করার পর বিকৃত মুখভঙ্গি ও অশ্লীল শব্দাশব্দে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ও আস্ফালন করে না। পশুর দুধ খেয়ে মানুষ বাঁচে ও বাড়ে কিন্তু, মানুষের কাছে পশুর তেমন কোনো ঋণ নেই। মানুষ ও পশু উভয়েরই লেঙ্গুড় আছে। তবে পশুর লেঙ্গুড় প্রকাশিত, মানুষের লেঙ্গুড় লুক্কায়িত। মানুষের টেইল পশুর টেইলের চেয়ে বেশি টুইস্ট করে। পশুর শিং থেকে খুর, হাড় থেকে চর্ম এবং তরল বর্জ্য থেকে পুরীষ_সবই মানুষের কাজে লাগে; মানুষের কোনো কিছুই পশুর কাজে লাগে না।
: কিন্তু, মানুষের তো শিংও নেই, খুরও নেই।
আছে। দুটোই আছে। প্রবলভাবে আছে। লুক্কায়িত অবস্থায়। পার্থক্যের আর দু-একটি কথা বলে আমি আমার ফ্যাক্টরিতে যেতে চাই। আজ আমাকে বিভিন্ন প্রকৃতির অনেক শ্রম ঢালতে হবে। পশুদের জগতে বাম হাতের উপার্জনের কোনো ধারণা নেই। পশুধর্মের নামে মানবদলন ও মানবহনন কিংবা আত্মহনন করে না; অথবা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কপ্রকোষ্ঠ ধৌত-বিধৌত করে সেখানে বর্জ্য পদার্থ ভরে দেয় না।
: রামচন্দ্র ও হনুমানের সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে?
: আছে। ভালোভালেই আছে।
: তাদের মধ্যে পার্থক্য কী?
: পার্থক্য খুব ইন্টারেস্টিং। রামচন্দ্রের তীরের আঘাত সওয়া যায়, হনুমানের মুখভেঙচানি নয়। তবু তা আমাদের সইতে হয়, মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। জীবনে যখন থাকে মধ্যরাত, এসব সইতে সইতে ও মানতে মানতে ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ভোর কখনো আসে, কখনো আসে না। কখনো কখনো 'তিনি' অন্ধকার জীবনে ভোর নামাতে ভুলে যান। কাজটা যে ভালো হয় না, তিনি বোঝেন না। তাঁকে বোঝানোর কেউ নেই। তিনি কারো কথা শোনেন না।
লেখক : রম্য লেখক ও কথাসাহিত্যিক
No comments