সরল গরল-প্রধান বিচারপতির প্রশ্নবিদ্ধ সংবর্ধনা by মিজানুর রহমান খান
প্রধান বিচারপতি মো. ফজলুল করিম গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান’ হিসেবে সংবর্ধিত হয়েছেন। প্রথম আলোর ১৭ পৃষ্ঠায় এদিন এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন বাংলাদেশ আইন সমিতি দ্বারা সাভারে আয়োজিত এক পিকনিকে যোগ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারক আমন্ত্রিত ছিলেন। তবে আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্ট থেকে পাঁচজন বিচারক যোগ দেন বলে জানা যায়। পরদিন গাজীপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল অ্যাসোসিয়েশনের (রুলা) পিকনিকেও প্রধান বিচারপতি যোগ দেন। এ দুটি সংগঠনের নেতা ও সদস্যদের অনেকেই সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য হিসেবে আইন পেশায় সক্রিয়।
সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বিচারকদের উচ্চ নৈতিকতাসম্পন্ন যে আচরণবিধি রয়েছে, এর সঙ্গে এসবের সামঞ্জস্য রয়েছে কি না, তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ বিচারকেরা ব্যক্তিগত জীবনে স্ব-আরোপিত বিধিনিষেধ মেনে চলেন। পারতপক্ষে তাঁরা জনসমক্ষে উজ্জ্বল উপস্থিতি নিশ্চিত করেন না। একটা অলিখিত সীমারেখা মেনে চলেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমি ৩২ তোপখানায় যাই। চট্টগ্রাম ভবন ১০ তলা, সুরম্য অট্টালিকা। ১৯১২ সালে কলকাতায় ঐতিহ্যবাহী এ সমিতির সূচনা, তারা শতবর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর সদস্যপদ সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। ঢাকায় চট্টগ্রামের প্রভাবশালীদের প্রায় সবাই এই ‘অরাজনৈতিক ও সেবাধর্মী’ সংগঠনের সঙ্গে আছেন। এর সাধারণ সদস্য নেই। সবাই জীবনসদস্য। সংখ্যায় প্রায় তিন হাজার। সম্মানসূচক জীবনসদস্য আছেন। তাঁদের চাঁদা দিতে হয় না। জীবনসদস্যদের গোপন ভোটেই নির্বাহী পরিষদ এবং এর মনোনয়নের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদ চূড়ান্ত করে ট্রাস্টি বোর্ড। এটা একটা পরোক্ষ নির্বাচনপদ্ধতি। সমিতির গঠনতন্ত্র বলেছে, ট্রাস্টি মানে সাধারণ পরিষদে মনোনীত/নির্বাচিত ব্যক্তি। প্রধান বিচারপতি ১৯৯৭ সালে জীবনসদস্য (নম্বর-৯৫৫) হন। ২০০৬-০৭ সালে তিনি আপিল বিভাগে ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন এই সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি এ সময় সমিতির স্থাবর সম্পত্তি সংগ্রহ, ধারণ, সংরক্ষণ ও তা হস্তান্তর করার মতো দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি সংবর্ধিত হলেন সমিতির সদস্য হিসেবেই।
সংবিধানের ৯৬(৪) অনুচ্ছেদের আওতায় আমরা ২০০০ সালে ১৪ দফার পরিমার্জিত আচরণবিধি পেয়েছি। এটা সাংবিধানিক আইন। প্রত্যেক বিচারকের জন্য তা মানা আবশ্যিক। বিচারক ট্রাস্টি হলে আচরণবিধির ১০ ধারার লঙ্ঘন ঘটে। এতে বলা আছে, ‘বিচারককে কোনো অনুদান নিতে বা তাঁর কাউকে অনুদান দিতে বলা উচিত নয় কিংবা তিনি নিজকে অন্য কোনভাবেই তহবিল সংগ্রহের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হতে দিতে পারেন না।’ কিন্তু তিনি এখানে স্বীকৃতমতেই সমিতির জন্য স্থাবর সম্পত্তি সংগ্রহ করেছেন।
কোনো সংগঠনের সদস্য হতেও বিচারকদের জন্য বাধা আছে। বিধির ৪(গ)-এর আলোকে কর্মরত বিচারকের কোনো সংগঠনের সদস্য থাকার বৈধতা বিচার্য। এতে বলা আছে, ‘কোনো বিচারক কোনো সংগঠন বা সরকারি সংস্থার সদস্য, কর্মকর্তা বা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিন্তু সেই সংগঠন ও সংস্থাকে অবশ্যই আইন, আইনের পদ্ধতি কিংবা বিচার প্রশাসনের উন্নয়নে নিবেদিত হতে হবে।’ চট্টগ্রাম সমিতি প্রধানত চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিবেদিত।
১৯৯৯ সালে ভারতের সব রাজ্যের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন হয়। এতে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারকদের বিচারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে অনুসরণের জন্য গৃহীত হয় ১৫ দফা আচরণবিধি। এতে বলা আছে, ‘একজন বিচারক কোনো ক্লাব, সোসাইটি বা সমিতির কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আইনের সংশ্লিষ্টতা ব্যতিরেকে অন্য কোনো সমিতি বা সংগঠনের মনোনীত বা নির্বাচিত পদেও বিচারক থাকবেন না।’ আমাদের আগের আচরণবিধিতে নির্দিষ্টভাবে বলা ছিল, ‘বিচারবহির্ভূত যাবতীয় কর্তব্য কিংবা দায়িত্বশীলতা তা অফিশিয়াল বা প্রাইভেট যা-ই হোক, বিচারক তা এড়াবেন। এমনকি সংগঠন যেমনই হোক না কেন, বিচারক সেখানে কোনো মনোনীত বা নির্বাচিত পদেও প্রার্থী হবেন না।’
বিচারককে তাঁর নিরপেক্ষতা শুধু বজায় রাখলেই চলে না, এই নিরপেক্ষতা জনগণের কাছে প্রতীয়মান হতে হয়। সে কারণেই আমাদের আইনের ১১ ধারা বলেছে, ‘একজন বিচারক অবশ্যই সর্বদা সচেতন থাকবেন যে, জনগণ তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে এবং সে কারণে তাঁর দপ্তরের জন্য অশোভন প্রতীয়মান হয়, এমন কোনো কর্ম বা বিচ্যুতি থেকে সতর্ক থাকবেন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম রায়দানকারী বিচারক তিনি। এ কারণেই তিনি এর আগে হাইকোর্ট থেকে অন্যদের ডিঙিয়ে আপিল বিভাগে এবং দুইবার অতিক্রান্ত হওয়ার পরও প্রধান বিচারপতি হয়েছেন বলে একটি ধারণা রয়েছে। তাঁর উপস্থিতিতে, ভরা সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট বারের তত্কালীন সভাপতি রোকনউদ্দিন মাহমুদের মন্তব্য বিস্মৃত হওয়ার নয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছিরকে সংবর্ধনা দিচ্ছিল বার। তাঁকে লক্ষ্য করে বলা রোকনের সেই কথাগুলো ছিল এ রকম: ‘প্রধান বিচারপতি হতে আপনি রাতের আঁধারে মন্ত্রীদের বাড়িতে গিয়ে তদবির করেননি, রায় লিখে কারও নজর কাড়তে ভি চিহ্ন দেখাননি এবং ভুয়া সনদ (মুক্তিযোদ্ধা) সংগ্রহ করেননি।’ এই আক্রমণ কাকে উদ্দেশ করে করা হয়েছিল তা আইনজীবীদের অজানা নয়। সেদিন দেখেছি, আওয়ামী লীগ সমর্থিত বার সভাপতি রোকন তাঁর ওই অভিমতের জন্য প্রশংসিত হন।
প্রধান বিচারপতি বৃহস্পতিবার আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর আল্লাহ আমাকে এ পদে অসীন করেছেন।’ (যুগান্তর, ১৯ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি-সৃষ্ট রহস্যপুরুষ আবু সাফার পক্ষে বেআইনিভাবে মামলা নিষ্পত্তিতে তিনি সায় দিয়েছিলেন। আগামী সেপ্টেম্বরে অবসরে যাবেন তিনি। এ সময়ে তিনি মোট কতজন এবং কাদের কী প্রক্রিয়ায় বিচারক হিসেবে বাছাই করেন, সেটাই হলো সবচেয়ে জ্বলন্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈষত্ আশার রেখা আছে। অনেকে বলেন, তিনি বিচারক নিয়োগে সুষ্ঠু ভূমিকা রাখতেই সচেষ্ট হবেন। এ কথা যাঁরা বলেন, তাঁদের মুখে ফুল-চন্দন পড়ুক।
বুধবার রাতে চট্টগ্রাম সমিতির ১০ তলায় কথা হয় সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলামের সঙ্গে। জাহাঙ্গীর খান ইউসিবিএলের অন্যতম পরিচালক, যখন তিনি সংবর্ধনার আমন্ত্রণপত্র বিলি করেন, তখন ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। সৈয়দ ইসলাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। ইউসিবিএল তার মালিকানা স্বত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধে জড়িয়ে। ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট অনেকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত, কেউ আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত।
চট্টগ্রাম সমিতির বৃহস্পতিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীর খান। ইউসিবিএলের লভ্যাংশ-সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি আপিল বিভাগে চলছে। সংবর্ধনার দিন সকালেও দীর্ঘ শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চেই তা হচ্ছে। রেজাউল করিম বনাম এ বি এম খালেকুজ্জামান (সিভিল আপিল নং ৩১৯, ৩২০ ও ৩২১/২০০৮) শীর্ষক এই মামলার শুনানি গত বুধ ও বৃহস্পতিবার হয়েছে। এরপর শুনানি হবে আগামী ১ মার্চ। ব্যাংকের পক্ষে এ এফ হাসান আরিফ ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ মামলা পরিচালনা করছেন। অন্যান্য পক্ষে টি এইচ খান ও ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও রয়েছেন।
এ রকম সময়ে প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা এবং সেখানে আপনার সভাপতি হওয়ার কারণে একটা অপ্রয়োজনীয় বিভ্রম প্রতীয়মান হতে পারে কি? বুধবার রাতে ইউসিবিএলের পরিচালক ও সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান তা নাকচ করেন। তাঁর যুক্তি: ‘প্রধান বিচারপতি ও তাঁর সহধর্মিণী সমিতির জীবনসদস্য। তিনি আমাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাই এই সংবর্ধনা। চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও সাংসদেরা সমিতির সদস্য হিসেবে আমন্ত্রিত, অতিথি হিসেবে নন। সমিতির কেউ উঁচু পদে যেমন মন্ত্রী, এমপি, সচিব বা ব্যাংকের এমডি হলে আমরা সংবর্ধনা দিই। এর আগে মন্ত্রীদের দিয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি এক সাবেক সেনা ও নৌবাহিনীর প্রধানকে দেওয়া সংবর্ধনার কথাও বলেন। তবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আমীরুল কবির চৌধুরীও সমিতির জীবনসদস্য বহু বছর। প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার তিনি নিশ্চিত করেন, সংবর্ধনার জন্য তিনি কখনো আমন্ত্রিত হননি। তদুপরি আমি খোলা মনে ধরেই নিচ্ছি, সমিতির সভাপতির ওই দাবিই সত্য। এমনকি একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা কাকতালীয় বলতে পারেন।’ কিন্তু এখানে খটকা হলো, অহেতুক কিছু একটা প্রতীয়মান হওয়ার ঝুঁকি কিংবা ধাঁধা সৃষ্টির প্রশ্ন। যা এ ধরনের সংবর্ধনা না নিলে প্রশ্ন তোলারই সুযোগ হয় না। শুধু জন্মস্থানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি একান্ত আঞ্চলিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আচরণবিধির উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব হয় না। ১৮ ফেব্রুয়ারিতে আমরা দেখলাম, তাঁর বেঞ্চে শুনানি চলছে এমন মামলায় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট একজনের কাছ থেকে প্রধান বিচারপতি ক্রেস্ট নিলেন। এই সংবর্ধনা, এই ক্রেস্ট গ্রহণও আচরণবিধিতে নির্দিষ্টভাবে বারণ করা। ৮ ধারা বলেছে, ‘বিচারক তাঁর পরিবার, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুদের ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে কোনো উপহার বা অভ্যর্থনা নেবেন না।’ সমিতির তিন হাজার সদস্য কিংবা প্রায় ৪৫ সদস্যের যে নির্বাহী পরিষদ তাঁকে সংবর্ধনা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁদের নিশ্চয় ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলা যাবে না। অসংগতি প্রকট হয়ে ওঠে যখন তিনি চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যদের সমাবেশে ‘মায়ের কোলে ফেরার’ অতিশায্যে চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলেন। আর সেখানে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিশৃঙ্খলা রোধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল কনডাক্ট অ্যাডভাইজারি কমিটির অভিমত এখানে প্রণিধানযোগ্য। ‘বিচারকও সামাজিক জীব। বিচারবহির্ভূত কার্যক্রম থেকে তাঁকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা বিজ্ঞোচিত বা সম্ভবও নয়। বিচারক যে কমিউনিটিতে বাস করেন, সেখান থেকে তাঁর বিচ্ছিন্ন হওয়া উচিত নয়। কুশলাদি বিনিময়, সাধারণ অভ্যর্থনা তিনি নেবেন। তবে বার ছাড়া অন্য আমন্ত্রণ তিনি এড়াবেন।’ তবে বিষয়টি যে চূড়ান্ত বিচারে ব্যক্তির ওপরই নির্ভর করে। কমিটি বলছে, ‘তিনি সব সময় নিজেকে প্রশ্ন করবেন, জনগণ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে? তিনি বেঞ্চের বাইরের সব কার্যক্রমে উচ্চ নৈতিকতা বজায় রাখবেন। বিচারকের নিরপেক্ষতায় জনগণের যে বদ্ধমূল আস্থা, তাতে তিনি এতটুকু আঁচড় কাটতে দেবেন না।’
চট্টগ্রাম সমিতি দ্বারা তাঁর কৃতী সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বিষয়টি সাধারণভাবে দেখার সুযোগ নেই। এই সমিতির সদস্যপদে প্রধান বিচারপতি ও তাঁর স্ত্রীর বহাল থাকা সংবিধানের ৯৬(৪) অনুযায়ী চ্যালেঞ্জযোগ্য প্রতীয়মান হয়। কারণ এতে আইনের ২(খ) ধারার চেতনা নষ্ট হয়। এই ধারা বলেছে, ‘কোনো বিচারক তাঁর পরিবার, সামাজিক বা অন্যবিধ সম্পর্কের দ্বারা বিচারিক আচরণ বা রায়কে প্রভাবিত করতে দিতে পারেন না। অন্যের ব্যক্তিগত স্বার্থ অগ্রসর করাতে কোনো বিচারকের তাঁর পদমর্যাদার গৌরবকে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়।’ প্রধান বিচারপতিকে সদস্যপদে বহাল রেখে একটি আঞ্চলিক সমিতি তাঁর পদমর্যাদার গৌরবকেই ব্যবহার করে যাবে বলে প্রতীয়মান হবে।
বারের সংবর্ধনাই প্রধান বিচারপতির একমাত্র সংবর্ধনা হওয়া উচিত। প্রধান বিচারপতি কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নন। সংবিধানে লেখা, তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। তিনি যদি আঞ্চলিক বিবেচনায় কোনো সংবর্ধনা নেন, তাহলে তা জনগণের চোখে লাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বিচারকদের উচ্চ নৈতিকতাসম্পন্ন যে আচরণবিধি রয়েছে, এর সঙ্গে এসবের সামঞ্জস্য রয়েছে কি না, তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ বিচারকেরা ব্যক্তিগত জীবনে স্ব-আরোপিত বিধিনিষেধ মেনে চলেন। পারতপক্ষে তাঁরা জনসমক্ষে উজ্জ্বল উপস্থিতি নিশ্চিত করেন না। একটা অলিখিত সীমারেখা মেনে চলেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমি ৩২ তোপখানায় যাই। চট্টগ্রাম ভবন ১০ তলা, সুরম্য অট্টালিকা। ১৯১২ সালে কলকাতায় ঐতিহ্যবাহী এ সমিতির সূচনা, তারা শতবর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর সদস্যপদ সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। ঢাকায় চট্টগ্রামের প্রভাবশালীদের প্রায় সবাই এই ‘অরাজনৈতিক ও সেবাধর্মী’ সংগঠনের সঙ্গে আছেন। এর সাধারণ সদস্য নেই। সবাই জীবনসদস্য। সংখ্যায় প্রায় তিন হাজার। সম্মানসূচক জীবনসদস্য আছেন। তাঁদের চাঁদা দিতে হয় না। জীবনসদস্যদের গোপন ভোটেই নির্বাহী পরিষদ এবং এর মনোনয়নের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদ চূড়ান্ত করে ট্রাস্টি বোর্ড। এটা একটা পরোক্ষ নির্বাচনপদ্ধতি। সমিতির গঠনতন্ত্র বলেছে, ট্রাস্টি মানে সাধারণ পরিষদে মনোনীত/নির্বাচিত ব্যক্তি। প্রধান বিচারপতি ১৯৯৭ সালে জীবনসদস্য (নম্বর-৯৫৫) হন। ২০০৬-০৭ সালে তিনি আপিল বিভাগে ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন এই সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি এ সময় সমিতির স্থাবর সম্পত্তি সংগ্রহ, ধারণ, সংরক্ষণ ও তা হস্তান্তর করার মতো দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি সংবর্ধিত হলেন সমিতির সদস্য হিসেবেই।
সংবিধানের ৯৬(৪) অনুচ্ছেদের আওতায় আমরা ২০০০ সালে ১৪ দফার পরিমার্জিত আচরণবিধি পেয়েছি। এটা সাংবিধানিক আইন। প্রত্যেক বিচারকের জন্য তা মানা আবশ্যিক। বিচারক ট্রাস্টি হলে আচরণবিধির ১০ ধারার লঙ্ঘন ঘটে। এতে বলা আছে, ‘বিচারককে কোনো অনুদান নিতে বা তাঁর কাউকে অনুদান দিতে বলা উচিত নয় কিংবা তিনি নিজকে অন্য কোনভাবেই তহবিল সংগ্রহের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হতে দিতে পারেন না।’ কিন্তু তিনি এখানে স্বীকৃতমতেই সমিতির জন্য স্থাবর সম্পত্তি সংগ্রহ করেছেন।
কোনো সংগঠনের সদস্য হতেও বিচারকদের জন্য বাধা আছে। বিধির ৪(গ)-এর আলোকে কর্মরত বিচারকের কোনো সংগঠনের সদস্য থাকার বৈধতা বিচার্য। এতে বলা আছে, ‘কোনো বিচারক কোনো সংগঠন বা সরকারি সংস্থার সদস্য, কর্মকর্তা বা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিন্তু সেই সংগঠন ও সংস্থাকে অবশ্যই আইন, আইনের পদ্ধতি কিংবা বিচার প্রশাসনের উন্নয়নে নিবেদিত হতে হবে।’ চট্টগ্রাম সমিতি প্রধানত চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিবেদিত।
১৯৯৯ সালে ভারতের সব রাজ্যের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন হয়। এতে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারকদের বিচারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে অনুসরণের জন্য গৃহীত হয় ১৫ দফা আচরণবিধি। এতে বলা আছে, ‘একজন বিচারক কোনো ক্লাব, সোসাইটি বা সমিতির কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আইনের সংশ্লিষ্টতা ব্যতিরেকে অন্য কোনো সমিতি বা সংগঠনের মনোনীত বা নির্বাচিত পদেও বিচারক থাকবেন না।’ আমাদের আগের আচরণবিধিতে নির্দিষ্টভাবে বলা ছিল, ‘বিচারবহির্ভূত যাবতীয় কর্তব্য কিংবা দায়িত্বশীলতা তা অফিশিয়াল বা প্রাইভেট যা-ই হোক, বিচারক তা এড়াবেন। এমনকি সংগঠন যেমনই হোক না কেন, বিচারক সেখানে কোনো মনোনীত বা নির্বাচিত পদেও প্রার্থী হবেন না।’
বিচারককে তাঁর নিরপেক্ষতা শুধু বজায় রাখলেই চলে না, এই নিরপেক্ষতা জনগণের কাছে প্রতীয়মান হতে হয়। সে কারণেই আমাদের আইনের ১১ ধারা বলেছে, ‘একজন বিচারক অবশ্যই সর্বদা সচেতন থাকবেন যে, জনগণ তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে এবং সে কারণে তাঁর দপ্তরের জন্য অশোভন প্রতীয়মান হয়, এমন কোনো কর্ম বা বিচ্যুতি থেকে সতর্ক থাকবেন।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম রায়দানকারী বিচারক তিনি। এ কারণেই তিনি এর আগে হাইকোর্ট থেকে অন্যদের ডিঙিয়ে আপিল বিভাগে এবং দুইবার অতিক্রান্ত হওয়ার পরও প্রধান বিচারপতি হয়েছেন বলে একটি ধারণা রয়েছে। তাঁর উপস্থিতিতে, ভরা সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট বারের তত্কালীন সভাপতি রোকনউদ্দিন মাহমুদের মন্তব্য বিস্মৃত হওয়ার নয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছিরকে সংবর্ধনা দিচ্ছিল বার। তাঁকে লক্ষ্য করে বলা রোকনের সেই কথাগুলো ছিল এ রকম: ‘প্রধান বিচারপতি হতে আপনি রাতের আঁধারে মন্ত্রীদের বাড়িতে গিয়ে তদবির করেননি, রায় লিখে কারও নজর কাড়তে ভি চিহ্ন দেখাননি এবং ভুয়া সনদ (মুক্তিযোদ্ধা) সংগ্রহ করেননি।’ এই আক্রমণ কাকে উদ্দেশ করে করা হয়েছিল তা আইনজীবীদের অজানা নয়। সেদিন দেখেছি, আওয়ামী লীগ সমর্থিত বার সভাপতি রোকন তাঁর ওই অভিমতের জন্য প্রশংসিত হন।
প্রধান বিচারপতি বৃহস্পতিবার আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর আল্লাহ আমাকে এ পদে অসীন করেছেন।’ (যুগান্তর, ১৯ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি-সৃষ্ট রহস্যপুরুষ আবু সাফার পক্ষে বেআইনিভাবে মামলা নিষ্পত্তিতে তিনি সায় দিয়েছিলেন। আগামী সেপ্টেম্বরে অবসরে যাবেন তিনি। এ সময়ে তিনি মোট কতজন এবং কাদের কী প্রক্রিয়ায় বিচারক হিসেবে বাছাই করেন, সেটাই হলো সবচেয়ে জ্বলন্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈষত্ আশার রেখা আছে। অনেকে বলেন, তিনি বিচারক নিয়োগে সুষ্ঠু ভূমিকা রাখতেই সচেষ্ট হবেন। এ কথা যাঁরা বলেন, তাঁদের মুখে ফুল-চন্দন পড়ুক।
বুধবার রাতে চট্টগ্রাম সমিতির ১০ তলায় কথা হয় সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলামের সঙ্গে। জাহাঙ্গীর খান ইউসিবিএলের অন্যতম পরিচালক, যখন তিনি সংবর্ধনার আমন্ত্রণপত্র বিলি করেন, তখন ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। সৈয়দ ইসলাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। ইউসিবিএল তার মালিকানা স্বত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধে জড়িয়ে। ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট অনেকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত, কেউ আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত।
চট্টগ্রাম সমিতির বৃহস্পতিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীর খান। ইউসিবিএলের লভ্যাংশ-সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি আপিল বিভাগে চলছে। সংবর্ধনার দিন সকালেও দীর্ঘ শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চেই তা হচ্ছে। রেজাউল করিম বনাম এ বি এম খালেকুজ্জামান (সিভিল আপিল নং ৩১৯, ৩২০ ও ৩২১/২০০৮) শীর্ষক এই মামলার শুনানি গত বুধ ও বৃহস্পতিবার হয়েছে। এরপর শুনানি হবে আগামী ১ মার্চ। ব্যাংকের পক্ষে এ এফ হাসান আরিফ ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ মামলা পরিচালনা করছেন। অন্যান্য পক্ষে টি এইচ খান ও ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও রয়েছেন।
এ রকম সময়ে প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা এবং সেখানে আপনার সভাপতি হওয়ার কারণে একটা অপ্রয়োজনীয় বিভ্রম প্রতীয়মান হতে পারে কি? বুধবার রাতে ইউসিবিএলের পরিচালক ও সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান তা নাকচ করেন। তাঁর যুক্তি: ‘প্রধান বিচারপতি ও তাঁর সহধর্মিণী সমিতির জীবনসদস্য। তিনি আমাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাই এই সংবর্ধনা। চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও সাংসদেরা সমিতির সদস্য হিসেবে আমন্ত্রিত, অতিথি হিসেবে নন। সমিতির কেউ উঁচু পদে যেমন মন্ত্রী, এমপি, সচিব বা ব্যাংকের এমডি হলে আমরা সংবর্ধনা দিই। এর আগে মন্ত্রীদের দিয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি এক সাবেক সেনা ও নৌবাহিনীর প্রধানকে দেওয়া সংবর্ধনার কথাও বলেন। তবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আমীরুল কবির চৌধুরীও সমিতির জীবনসদস্য বহু বছর। প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার তিনি নিশ্চিত করেন, সংবর্ধনার জন্য তিনি কখনো আমন্ত্রিত হননি। তদুপরি আমি খোলা মনে ধরেই নিচ্ছি, সমিতির সভাপতির ওই দাবিই সত্য। এমনকি একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা কাকতালীয় বলতে পারেন।’ কিন্তু এখানে খটকা হলো, অহেতুক কিছু একটা প্রতীয়মান হওয়ার ঝুঁকি কিংবা ধাঁধা সৃষ্টির প্রশ্ন। যা এ ধরনের সংবর্ধনা না নিলে প্রশ্ন তোলারই সুযোগ হয় না। শুধু জন্মস্থানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি একান্ত আঞ্চলিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আচরণবিধির উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব হয় না। ১৮ ফেব্রুয়ারিতে আমরা দেখলাম, তাঁর বেঞ্চে শুনানি চলছে এমন মামলায় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট একজনের কাছ থেকে প্রধান বিচারপতি ক্রেস্ট নিলেন। এই সংবর্ধনা, এই ক্রেস্ট গ্রহণও আচরণবিধিতে নির্দিষ্টভাবে বারণ করা। ৮ ধারা বলেছে, ‘বিচারক তাঁর পরিবার, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুদের ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে কোনো উপহার বা অভ্যর্থনা নেবেন না।’ সমিতির তিন হাজার সদস্য কিংবা প্রায় ৪৫ সদস্যের যে নির্বাহী পরিষদ তাঁকে সংবর্ধনা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁদের নিশ্চয় ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলা যাবে না। অসংগতি প্রকট হয়ে ওঠে যখন তিনি চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যদের সমাবেশে ‘মায়ের কোলে ফেরার’ অতিশায্যে চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলেন। আর সেখানে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিশৃঙ্খলা রোধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল কনডাক্ট অ্যাডভাইজারি কমিটির অভিমত এখানে প্রণিধানযোগ্য। ‘বিচারকও সামাজিক জীব। বিচারবহির্ভূত কার্যক্রম থেকে তাঁকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা বিজ্ঞোচিত বা সম্ভবও নয়। বিচারক যে কমিউনিটিতে বাস করেন, সেখান থেকে তাঁর বিচ্ছিন্ন হওয়া উচিত নয়। কুশলাদি বিনিময়, সাধারণ অভ্যর্থনা তিনি নেবেন। তবে বার ছাড়া অন্য আমন্ত্রণ তিনি এড়াবেন।’ তবে বিষয়টি যে চূড়ান্ত বিচারে ব্যক্তির ওপরই নির্ভর করে। কমিটি বলছে, ‘তিনি সব সময় নিজেকে প্রশ্ন করবেন, জনগণ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে? তিনি বেঞ্চের বাইরের সব কার্যক্রমে উচ্চ নৈতিকতা বজায় রাখবেন। বিচারকের নিরপেক্ষতায় জনগণের যে বদ্ধমূল আস্থা, তাতে তিনি এতটুকু আঁচড় কাটতে দেবেন না।’
চট্টগ্রাম সমিতি দ্বারা তাঁর কৃতী সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বিষয়টি সাধারণভাবে দেখার সুযোগ নেই। এই সমিতির সদস্যপদে প্রধান বিচারপতি ও তাঁর স্ত্রীর বহাল থাকা সংবিধানের ৯৬(৪) অনুযায়ী চ্যালেঞ্জযোগ্য প্রতীয়মান হয়। কারণ এতে আইনের ২(খ) ধারার চেতনা নষ্ট হয়। এই ধারা বলেছে, ‘কোনো বিচারক তাঁর পরিবার, সামাজিক বা অন্যবিধ সম্পর্কের দ্বারা বিচারিক আচরণ বা রায়কে প্রভাবিত করতে দিতে পারেন না। অন্যের ব্যক্তিগত স্বার্থ অগ্রসর করাতে কোনো বিচারকের তাঁর পদমর্যাদার গৌরবকে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়।’ প্রধান বিচারপতিকে সদস্যপদে বহাল রেখে একটি আঞ্চলিক সমিতি তাঁর পদমর্যাদার গৌরবকেই ব্যবহার করে যাবে বলে প্রতীয়মান হবে।
বারের সংবর্ধনাই প্রধান বিচারপতির একমাত্র সংবর্ধনা হওয়া উচিত। প্রধান বিচারপতি কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নন। সংবিধানে লেখা, তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। তিনি যদি আঞ্চলিক বিবেচনায় কোনো সংবর্ধনা নেন, তাহলে তা জনগণের চোখে লাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments