লুৎফর রহমান রনো-মানুষের ভিড়ে মানুষের অভাব
মানুষের অস্তিত্বের ঘোষণা তার উচ্চারণে-শব্দে। মানবজাতির বিকাশ তাই অবধারিত হয়ে উঠেছে ভাষার মাধ্যমে। ভাষাহীনতা মানে_মূক-মূঢ়, চিন্তাহীন পশুর সমান। তাই ভাষার বিকাশ, উন্নয়ন বা উৎকর্ষ একটি জাতির উন্নয়নের মাপকাঠি।
ভাবের প্রকাশ বা চিন্তা ও কল্পনার চিহ্ন আমরা ভাষার মধ্যে লালন করি, চর্চা করি_জীবনের বা সংস্কৃতির চর্চা করি আপন ভাষায়। আশা-আকাঙ্ক্ষা নির্মাণ করি ভাষার বর্ণে বর্ণে। যুগ বদলায়, সমাজের বিন্যাস বিনির্মাণ হয়, সংগঠিত হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের নতুন নতুন সংগঠন। তাই বিরামহীন আমাদের ভাষারও নতুন সংগঠন, নতুন নির্মাণ ও বিনির্মাণ চলে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'শিক্ষার হেরফের' প্রবন্ধে লিখেছেন, 'চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তি জীবনযাত্রা নির্বাহের পক্ষে দুইটি অত্যাবশ্যক শক্তি, তাহাতে আর সন্দেহ নেই। অর্থাৎ যদি মানুষের মতো মানুষ হইতে হয়, তবে ঐ দুইটি পদার্থ জীবন হইতে বাদ দিলে চলে না। অতএব বাল্যকাল হইতে চিন্তা ও কল্পনার চর্চা না করিলে কাজের সময় যে তাহাকে হাতের কাছে পাওয়া যাইবে না, এই কথা অতি পুরাতন।'
এই 'পুরাতন' কথা কিন্তু কোনো দিনই পুরনো হওয়ার উপায় নেই। অথচ আমরা শুধু পুরনো বলেই পরোয়া করি না তা নয়; পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছি। আমাদের চিন্তা ও কল্পনাশক্তির কোনো আবশ্যকতা নেই_এ কথাটা মুখে না বললেও কাজকর্মে প্রতি মুহূর্তে তারই প্রমাণ রেখে চলেছি। চিন্তা বা কল্পনা কোনো বায়বীয় বস্তু নয় বা অলৌকিক বিষয় নয়। সমুদ্র স্বচক্ষে যে দেখেছে, সে সমুদ্রের বিশালতা, সমুদ্রের আদিগন্ত জলরাশির সৌন্দর্য বা হাহাকার ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে পারবে_মহাসমুদ্রের মহাকাশের কল্পনাও করতে পারবে। দ্বিতীয় পথ হলো সমুদ্র কী, তা দেখার সুযোগ না হলে, সমুদ্রের সৌন্দর্যের, বৈশিষ্ট্যের বিবরণ পাঠ করা। আর পাঠকৃতিটি অবশ্যই হতে হবে সেই ভাষায়, যে ভাষার সঙ্গে পাঠকের বোধগম্যতা সবচেয়ে নিবিড়। যদি তা-ই হয়, তবে ভাষার মাধ্যমে ভাবের সমাবেশ, রসের আবেশ ঘটে। তা থেকে চিন্তার উদয় হয় কিংবা কল্পনার আকাশ নির্মাণ শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের ছোটবেলায় কি সেরূপ শিক্ষাদানের আবশ্যকতা আছে বলে শিক্ষক বা অভিভাবকরা ভাবেন? না, ভাবেন না। কারণ আমাদের সন্তানদের চিন্তাশীল করে 'মানুষের মতো মানুষ' (সংবেদনশীল-চিন্তাশীল জ্ঞানীজন) করে গড়ে তোলার প্রয়োজন কেউ স্বীকার করি না। প্রয়োজনের পেছনে ছুটে চলা ছাড়া এদিক-ওদিক তাকানোর ফুরসত নেই। তাই তো যখন শিশুর চিন্তা-কল্পনাশক্তি বিকাশের সময়, সে বয়সে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বিজাতীয় ভাষার ভার। লক্ষ্য একটিই_পড়ো, মুখস্থ করো, পাস করো, চাকরি ধরো বা নির্দিষ্ট ব্যবসায় নিবদ্ধ হও। পরিণতি দাঁড়িয়েছে এমন যে_ওসব বিএ-এমএ পাস ভূরি ভূরি 'উচ্চশিক্ষিত' নাগরিকরা না শিখেছে সে মানের ইংরেজি, যে ইংরেজি জানা থাকলে মানবীয় বিদ্যার বই সাহিত্য-দর্শন-ইতিহাস ইংরেজিতে পড়ে চিন্তার খোরাক জোগাড় করতে পারবে, না শিখেছে মাতৃভাষা বাংলা। বাংলায় একটি দরখাস্ত বা চিঠি লিখলে বানান ভুল থাকবে অথবা যা বলতে চাচ্ছে তা গুছিয়ে নিজের ভাষায়ও প্রকাশ করতে অক্ষম। সে কথা রবীন্দ্রনাথ কত আগেই বলে গেছেন, 'বাংলা তাহারা জানেন না সে কথা স্পষ্টরূপে স্বীকার না করিয়া তাঁহারা বলেন, 'বাংলায় কি কোনো ভাব প্রকাশ করা যায়? এ ভাষা আমাদের মতো শিক্ষিত মনের উপযোগী নহে।' আরো বলেছেন, '...ইংরেজি ভাষাটা অতিমাত্রায় বিজাতীয় ভাষা। শব্দবিন্যাস-পদবিন্যাস সম্বন্ধে আমাদের ভাষার সহিত তাহার কোনো প্রকার মিল নাই। তাহার পরে আবার ভাববিন্যাস এবং বিষয় প্রসঙ্গও বিদেশি। আগাগোড়া কিছুই পরিচিত নহে, ... তাহাতে না চিবাইয়া গিলিয়া খাইবার ফল হয়।'
আমাদের এই যে 'প্রয়োজন'-এর পেছনে ছোটা, অর্থ-প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্ত দৌড়_তা শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই।
কোনো কিছুই 'চিবাইয়া' খাওয়া হয় না, 'গিলিয়া' ফেলা হয়। তাই, 'সে কি বয়ঃপ্রাপ্তিকালে...নিজে স্বাভাবিক তেজে মস্তক উন্নত করিয়া রাখিতে পারে? সেকি কেবল মুখস্থ করিতে, নকল করিতে এবং গোলামি করিতে শেখে না?' এই গোলামিপনায় ছেয়ে গেছে বাঙালি জাতির সংস্কৃতির উচ্চ থেকে নিচ পর্যন্ত, সর্বত্র সর্বগ্রাসী আত্মস্বার্থ প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতার প্ররোচনা। রাষ্ট্র সংস্থা থেকে সমাজব্যবস্থার সর্বত্র স্বাধীন চিন্তা ও মানবিকতার আকালে সব কিছুই বিপন্ন, প্রায় বিকলও। এ বিপন্নতা খোলা চোখে সব সময় দেখার বিষয় নয়। আমাদের চেনা শব্দে তাকে উপস্থাপন করলে বুঝতে সহজ হয়। চাটুকার সংস্কৃতি দ্বারা আক্রান্ত সব দিক। প্রতিনিয়ত তাই সত্য ও ন্যায়নীতি মার খাচ্ছে তথাকথিত শিক্ষিত চাটুকারদের দ্বারা। আর 'চাটুকার' তৈরি হয় প্রকৃত শিক্ষার অভাবে। আত্মমর্যাদাহীন, মেরুদণ্ডহীন চরিত্রের লোকই সর্বস্তরে তাই দাপুটে। এই অব্যক্ত বেদনায় নীল খোদ বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা পর্যন্ত।
ঔপনিবেশিক আমল থেকে সেই যে ইংরেজি ভাষা ছিল চাটুকার ও আত্মপ্রতিষ্ঠালোভীদের ভাষা, আজও তা-ই নানা রঙে-ঢঙে আরো সুদৃঢ় হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রজন্ম-পরম্পরা এই যে 'উচ্চশিক্ষিতদের' বিস্তার ঘটছে; আর তা সমাজ ও রাষ্ট্রের উচ্চস্তর পর্যন্ত আক্রান্ত করছে_এতে এ জাতি মেধা-মননে পিছিয়ে পড়ছে। চিন্তাশীলতা-সৃজনশীলতাশূন্য জাতি হিসেবে পরিচয়ের দুর্ভাগ্য বরণ করতে চলেছি আমরা। বিশ্বায়নিক বিশ্বের চাকচিক্যবহুল উন্নয়ন দেখে খুশি হওয়ার যে কোনো কারণ নেই, তাও বলা যাচ্ছে না_এমন এক স্থিতাবস্থায় যুক্ত হয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতিগ্রাসী তথ্যপ্রযুক্তি। আমাদের জমিন উর্বর হলে এ প্রযুক্তি আশীর্বাদই হতো। কিন্তু খরাদগ্ধ জমিনে উন্নত বীজ ছিটালেও অঙ্কুরোদগমের আশা করা নির্বুদ্ধিতা মাত্র।
যা হোক, মর্মকথা নয় ইংরেজি বর্জন, অবশ্যই ভাব ও চিন্তার বিকাশের জন্য পরভাষা অর্জন জরুরি। কিন্তু শুধু কেরানি তৈরি বা চাটুকার গড়ার যে প্রক্রিয়া ও ইংরেজি শিক্ষার যে উদ্দেশ্য, তার পরিবর্তন প্রয়োজন। চিন্তাশীল মানুষ তৈরি করতে হবে_এই হলো কথা।
লেখক : সাংবাদিক
ronokk1969@gmail.com
এই 'পুরাতন' কথা কিন্তু কোনো দিনই পুরনো হওয়ার উপায় নেই। অথচ আমরা শুধু পুরনো বলেই পরোয়া করি না তা নয়; পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছি। আমাদের চিন্তা ও কল্পনাশক্তির কোনো আবশ্যকতা নেই_এ কথাটা মুখে না বললেও কাজকর্মে প্রতি মুহূর্তে তারই প্রমাণ রেখে চলেছি। চিন্তা বা কল্পনা কোনো বায়বীয় বস্তু নয় বা অলৌকিক বিষয় নয়। সমুদ্র স্বচক্ষে যে দেখেছে, সে সমুদ্রের বিশালতা, সমুদ্রের আদিগন্ত জলরাশির সৌন্দর্য বা হাহাকার ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে পারবে_মহাসমুদ্রের মহাকাশের কল্পনাও করতে পারবে। দ্বিতীয় পথ হলো সমুদ্র কী, তা দেখার সুযোগ না হলে, সমুদ্রের সৌন্দর্যের, বৈশিষ্ট্যের বিবরণ পাঠ করা। আর পাঠকৃতিটি অবশ্যই হতে হবে সেই ভাষায়, যে ভাষার সঙ্গে পাঠকের বোধগম্যতা সবচেয়ে নিবিড়। যদি তা-ই হয়, তবে ভাষার মাধ্যমে ভাবের সমাবেশ, রসের আবেশ ঘটে। তা থেকে চিন্তার উদয় হয় কিংবা কল্পনার আকাশ নির্মাণ শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের ছোটবেলায় কি সেরূপ শিক্ষাদানের আবশ্যকতা আছে বলে শিক্ষক বা অভিভাবকরা ভাবেন? না, ভাবেন না। কারণ আমাদের সন্তানদের চিন্তাশীল করে 'মানুষের মতো মানুষ' (সংবেদনশীল-চিন্তাশীল জ্ঞানীজন) করে গড়ে তোলার প্রয়োজন কেউ স্বীকার করি না। প্রয়োজনের পেছনে ছুটে চলা ছাড়া এদিক-ওদিক তাকানোর ফুরসত নেই। তাই তো যখন শিশুর চিন্তা-কল্পনাশক্তি বিকাশের সময়, সে বয়সে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বিজাতীয় ভাষার ভার। লক্ষ্য একটিই_পড়ো, মুখস্থ করো, পাস করো, চাকরি ধরো বা নির্দিষ্ট ব্যবসায় নিবদ্ধ হও। পরিণতি দাঁড়িয়েছে এমন যে_ওসব বিএ-এমএ পাস ভূরি ভূরি 'উচ্চশিক্ষিত' নাগরিকরা না শিখেছে সে মানের ইংরেজি, যে ইংরেজি জানা থাকলে মানবীয় বিদ্যার বই সাহিত্য-দর্শন-ইতিহাস ইংরেজিতে পড়ে চিন্তার খোরাক জোগাড় করতে পারবে, না শিখেছে মাতৃভাষা বাংলা। বাংলায় একটি দরখাস্ত বা চিঠি লিখলে বানান ভুল থাকবে অথবা যা বলতে চাচ্ছে তা গুছিয়ে নিজের ভাষায়ও প্রকাশ করতে অক্ষম। সে কথা রবীন্দ্রনাথ কত আগেই বলে গেছেন, 'বাংলা তাহারা জানেন না সে কথা স্পষ্টরূপে স্বীকার না করিয়া তাঁহারা বলেন, 'বাংলায় কি কোনো ভাব প্রকাশ করা যায়? এ ভাষা আমাদের মতো শিক্ষিত মনের উপযোগী নহে।' আরো বলেছেন, '...ইংরেজি ভাষাটা অতিমাত্রায় বিজাতীয় ভাষা। শব্দবিন্যাস-পদবিন্যাস সম্বন্ধে আমাদের ভাষার সহিত তাহার কোনো প্রকার মিল নাই। তাহার পরে আবার ভাববিন্যাস এবং বিষয় প্রসঙ্গও বিদেশি। আগাগোড়া কিছুই পরিচিত নহে, ... তাহাতে না চিবাইয়া গিলিয়া খাইবার ফল হয়।'
আমাদের এই যে 'প্রয়োজন'-এর পেছনে ছোটা, অর্থ-প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্ত দৌড়_তা শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই।
কোনো কিছুই 'চিবাইয়া' খাওয়া হয় না, 'গিলিয়া' ফেলা হয়। তাই, 'সে কি বয়ঃপ্রাপ্তিকালে...নিজে স্বাভাবিক তেজে মস্তক উন্নত করিয়া রাখিতে পারে? সেকি কেবল মুখস্থ করিতে, নকল করিতে এবং গোলামি করিতে শেখে না?' এই গোলামিপনায় ছেয়ে গেছে বাঙালি জাতির সংস্কৃতির উচ্চ থেকে নিচ পর্যন্ত, সর্বত্র সর্বগ্রাসী আত্মস্বার্থ প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতার প্ররোচনা। রাষ্ট্র সংস্থা থেকে সমাজব্যবস্থার সর্বত্র স্বাধীন চিন্তা ও মানবিকতার আকালে সব কিছুই বিপন্ন, প্রায় বিকলও। এ বিপন্নতা খোলা চোখে সব সময় দেখার বিষয় নয়। আমাদের চেনা শব্দে তাকে উপস্থাপন করলে বুঝতে সহজ হয়। চাটুকার সংস্কৃতি দ্বারা আক্রান্ত সব দিক। প্রতিনিয়ত তাই সত্য ও ন্যায়নীতি মার খাচ্ছে তথাকথিত শিক্ষিত চাটুকারদের দ্বারা। আর 'চাটুকার' তৈরি হয় প্রকৃত শিক্ষার অভাবে। আত্মমর্যাদাহীন, মেরুদণ্ডহীন চরিত্রের লোকই সর্বস্তরে তাই দাপুটে। এই অব্যক্ত বেদনায় নীল খোদ বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা পর্যন্ত।
ঔপনিবেশিক আমল থেকে সেই যে ইংরেজি ভাষা ছিল চাটুকার ও আত্মপ্রতিষ্ঠালোভীদের ভাষা, আজও তা-ই নানা রঙে-ঢঙে আরো সুদৃঢ় হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রজন্ম-পরম্পরা এই যে 'উচ্চশিক্ষিতদের' বিস্তার ঘটছে; আর তা সমাজ ও রাষ্ট্রের উচ্চস্তর পর্যন্ত আক্রান্ত করছে_এতে এ জাতি মেধা-মননে পিছিয়ে পড়ছে। চিন্তাশীলতা-সৃজনশীলতাশূন্য জাতি হিসেবে পরিচয়ের দুর্ভাগ্য বরণ করতে চলেছি আমরা। বিশ্বায়নিক বিশ্বের চাকচিক্যবহুল উন্নয়ন দেখে খুশি হওয়ার যে কোনো কারণ নেই, তাও বলা যাচ্ছে না_এমন এক স্থিতাবস্থায় যুক্ত হয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতিগ্রাসী তথ্যপ্রযুক্তি। আমাদের জমিন উর্বর হলে এ প্রযুক্তি আশীর্বাদই হতো। কিন্তু খরাদগ্ধ জমিনে উন্নত বীজ ছিটালেও অঙ্কুরোদগমের আশা করা নির্বুদ্ধিতা মাত্র।
যা হোক, মর্মকথা নয় ইংরেজি বর্জন, অবশ্যই ভাব ও চিন্তার বিকাশের জন্য পরভাষা অর্জন জরুরি। কিন্তু শুধু কেরানি তৈরি বা চাটুকার গড়ার যে প্রক্রিয়া ও ইংরেজি শিক্ষার যে উদ্দেশ্য, তার পরিবর্তন প্রয়োজন। চিন্তাশীল মানুষ তৈরি করতে হবে_এই হলো কথা।
লেখক : সাংবাদিক
ronokk1969@gmail.com
No comments