অপরাধ রোধে উদ্যোগ-গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধ by আশরাফুল হক রাজীব

অপহরণ, গুমসহ নানামুখী অপরাধ নির্মূল করতে গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের গাড়িতেই কালো কাচ ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি মার্কারি ও অস্বচ্ছ কাচও ব্যবহার করা যাবে না। আদেশ কার্যকর করতে দু-একদিনের মধ্যে পুলিশের কাছে নির্দেশনা যাচ্ছে।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে দেশে অপহরণ ও গুমের ঘটনা বেড়ে গেছে। আর এসব কাজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাড়ি ব্যবহার হয়। গাড়িতে কালো কাচ থাকায় ভেতরে কী হচ্ছে- তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় থাকে না। অপহৃত ব্যক্তিকে নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও পুলিশের কিছু করার থাকে না। তা ছাড়া রাস্তায় চলাচলরত সব গাড়িতে তল্লাশি চালানোও পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। একই অবস্থা সাধারণ মানুষেরও। তারাও কিছু বুঝতে না পারায় স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রতিরোধ বা পুলিশের খবর দেওয়ার সামাজিক দায়িত্বটি পালন করতে পারে না। এ কারণে গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে চলাচলরত প্রায় অর্ধেক গাড়িতেই কালো কাচ ব্যবহার করা হয়। এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকলেও তা এত দিন কড়াকড়িভাবে আমলে নেওয়া হয়নি। কিন্তু অপহরণ-গুমের ঘটনায় সরকার কালো কাচের গাড়ি ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদ গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কালো কাচের আড়ালে নানা ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম হয়। এ কারণেই মূলত গাড়িতে কালো, মার্কারি বা অস্বচ্ছ কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।'
গত ২৬ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তরগুলোর মাসিক সমন্বয় সভায় গাড়িতে কালো কাচ, মার্কারি বা অস্বচ্ছ কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
২৬ এপ্রিলের সভায় জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলার বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন অপরাধ বা অপকর্ম রোধের জন্য গাড়িতে কালো কাচ ব্যবহার করা যাবে না। তবে ভিআইপিসহ জরুরি প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কালো কাচ ব্যবহার করা যাবে। সরকারি বা অন্য কারো প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। কালো বা অস্বচ্ছ কাচ আছে- এমন গাড়ি আমদানি না করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য বলা হয়েছে।
সমন্বয় সভায় সীমান্ত বা সমুদ্র উপকূলে মানব পাচার রোধে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষ করে কঙ্বাজারের টেকনাফ বা চকোরিয়ায় ট্রলার ছাড়ার সময় তাতে তল্লাশির সিদ্ধান্ত হয়। উপকূলে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোস্টগার্ড কী ব্যবস্থা নিয়েছে- তা জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। একইভাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশকে সীমান্ত এলাকায় মানব পাচার রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তা জানাতে বলা হয়েছে।
সমন্বয় সভায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শ্রমিকদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালুর সিদ্ধান্ত হয়। সভায় একজন যুগ্ম সচিব জানান, বিদেশগামী বা ফেরত শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই লেখাপড়া জানেন না। তাঁদের পক্ষে সিকিউরিটি ফর্ম পূরণ করা সম্ভব হয় না। শ্রমিকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ফরম পূরণ করেন দায়িত্বরত আনসার, পুলিশ বা বিমানবন্দরের কর্মচারীরা। এ ক্ষেত্রে একটি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হলে শ্রমিকদের নাজেহাল হতে হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘুষ-বাণিজ্য বন্ধ করতেও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা দরকার। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়া-আসার সময় সহায়তার জন্য বিমানবন্দরে অফিসিয়াল ডেস্ক চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.