কোরআনের আলো-নবুয়ত প্রদান আল্লাহর হাতে, এতে মানুষের কোনো হাত নেই
পবিত্র ৭৭. ইন্নাল্লাযীনা ইয়াশ্তারূনা বিআহদিল্লা-হি ওয়া আইমা-নিহিম ছামানান ক্বালীলান উলা-ইকা লা- খালা-ক্বা লাহুম ফিল আ-খিরাতি ওয়ালা- ইউকালি্লমুহুমুল্লা-হু ওয়ালা- ইয়ানযুরু ইলাইহিম ইয়াওমাল কি্বয়া-মাতি ওয়ালা- ইউযাক্কীহিম; ওয়ালাহুম আ'যা-বুন আলীম।
৭৮. ওয়া ইন্না মিনহুম লাফারীক্বান ইয়ালঊনা আলছিনাতাহুম বিলকিতা-বি লিতাহ্ছাবূহু মিনাল কিতা-বি ওয়ামা- হুয়া মিনাল কিতাবি; ওয়া ইয়াক্বূলূনা হুয়া মিন ই'নদিল্লা-হি ওয়ামা- হুয়া মিন ই'নদিল্লাহি; ওয়া ইয়াক্বূলূনা আ'লাল্লা-হিল কাযিবা ওয়াহুম ইয়া'লামূন।
৭৯. মা-কা-না লিবাশারিন আইঁউতিইয়াহুল্লা-হু ল্কিতা-বা ওয়ালহুকমাতা ওয়ান্নবুওয়াতা ছুম্মা ইয়াক্বূলা লিন্না-ছি কূনূ ই'বা-দা ল্লী মিন দূনি ল্লা-হি ওয়ালা-কিন কূনূ রাব্বা-নিয়্যীনা বিমা- কুনতুম তুআ'লি্লমূনাল কিতা-বা ওয়াবিমা- কুনতুম তাদ্রুছূন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭-৭৯]
অনুবাদ : ৭৭. অবশ্যই যারা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার ও শপথকে সামান্য অর্থমূল্যে বিক্রি করে দেয় তাদের জন্য পরকালে কোনো অংশই থাকবে না। সেদিন আল্লাহ এদের প্রসঙ্গে কোনো কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না এবং তাদের পাপের কালিমা থেকে পবিত্রও করবেন না। এদের জন্য রয়েছে কঠোর পীড়াদায়ক শাস্তি।
৭৮. এদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যারা পড়ার সময় তাদের জিহ্বাকে এমনভাবে নাড়ায় যেন তোমরা মনে করো যে তা সত্যই বুঝি আল্লাহর কিতাবের কোনো অংশ; কিন্তু আসলে তা কিতাবের কোনো অংশই নয়।
তারা আরো বলে, এটা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে, কিন্তু তা আল্লাহর কাছ থেকে আসা কিছু নয়। তারা জেনে-বুঝে আল্লাহর ওপর মিথ্যা বলে চলেছে।
৭৯. আল্লাহ কাকে কিতাব দেবেন, ক্ষমতা দেবেন এবং নবুয়ত দেবেন এটা কোনো মানুষের হাতে নয়। এমন তো নয়ই যে সে লোকদের ডেকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার উপাসক হয়ে যাও; বরং সত্যিকার নবুয়তপ্রাপ্তির পর সে বলবে, তোমরা সবাই তোমাদের প্রভুর উপাসক হয়ে যাও। এটা এ কারণে যে তোমরাই মানুষকে কিতাব শেখাচ্ছিলে এবং নিজেরাও অধ্যয়ন করছিলে।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মবেত্তাদের কথা বলা হয়েছে। তারা সামান্য বৈষয়িক স্বার্থে অথবা কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখার জন্য তাওরাত ও ইঞ্জিলের কথা ও ভাবার্থ পরিবর্তন করত অথবা উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা দিত। পবিত্র কোরআনের ভাষায় এটাকেই বলা হয়েছে 'অঙ্গীকার ও শপথকে অল্পমূল্যে বিক্রি করা' বলে। তাদের জন্য কঠোর পীড়াদায়ক শাস্তির খবর দেওয়া হয়েছে।
৭৮ নম্বর আয়াতে আহলে কিতাবের এমন সব আলেমের কথা বলা হয়েছে, যারা তাদের বানোয়াট উক্তিগুলো এমনভাবে আওড়ায়, যাতে লোকে মনে করে যে এগুলো তাওরাত বা ইঞ্জিলের উক্তি। তারা তাদের উদ্দেশ্যমূলক বানোয়াট উক্তিগুলো আল্লাহ প্রেরিত কিতাবের উক্তি হিসেবে মানুষকে বোঝানোর জন্য এ রকম ভান করত। এই আয়াতে এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'এরা জেনে-বুঝে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করছে।' অর্থাৎ আল্লাহ যা বলেননি তা তারা আল্লাহর নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এরাও সেই আগের আয়াতে বর্ণিত পাপিষ্ঠদের মধ্যে গণ্য হবে।
৭৯ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_নাজরানের খ্রিস্টানরা রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হলে তিনি তাদের ইসলাম কবুলের জন্য আহ্বান জানান। এর জবাবে খ্রিস্টানদের এক আলেম আবু রাফে কারাযী বললেন, আপনি কি চান যে আমরা আপনার ইবাদত করি? কারণ খ্রিস্টানরা তখন তাদের নবী ঈসা (আ.)-এর ইবাদত করত। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নবী হিসেবে মেনে নেওয়ার অর্থ তারা এটাই বুঝত। তাদের এই অবান্তর প্রশ্নের জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, 'নাউযুবিল্লাহ! কখনোই নয়। আমি আল্লাহর রাসুল। আমি বার্তাবাহক মাত্র। আমি উপাস্য নই।' এ পটভূমিতেই আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ কাকে তাঁর কিতাব দেবেন, তাঁর অর্পিত ক্ষমতা দেবেন এবং নবুয়ত দেবেন তা কোনো মানুষের হাতে নয়। অর্থাৎ নবুয়ত একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে এ জন্য মনোনীত করেন শুধু তাকেই দেন, কেউ চেষ্টা-সাধনা করে তা পায় না। আর নবুয়ত মানে এমন তো নয়ই যে কেউ নিজে নিজে নবী বনে গিয়ে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার উপাসক হয়ে যাও; বরং সত্যিকার নবুয়তপ্রাপ্তির পর সে বলবে, তোমরা সবাই তোমাদের প্রভুর উপাসক হয়ে যাও। খ্রিস্টানদের নবী হজরত ঈসা (আ.) অনুরূপ কথাই বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে খ্রিস্টানরা তা থেকে বিচ্যুত হয়ে হজরত ঈসা (আ.)-কে তাদের উপাস্য বানিয়ে ফেলেছে। নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষ যাতে সে ভুল আর না করে সে জন্য।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৭৯. মা-কা-না লিবাশারিন আইঁউতিইয়াহুল্লা-হু ল্কিতা-বা ওয়ালহুকমাতা ওয়ান্নবুওয়াতা ছুম্মা ইয়াক্বূলা লিন্না-ছি কূনূ ই'বা-দা ল্লী মিন দূনি ল্লা-হি ওয়ালা-কিন কূনূ রাব্বা-নিয়্যীনা বিমা- কুনতুম তুআ'লি্লমূনাল কিতা-বা ওয়াবিমা- কুনতুম তাদ্রুছূন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭-৭৯]
অনুবাদ : ৭৭. অবশ্যই যারা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার ও শপথকে সামান্য অর্থমূল্যে বিক্রি করে দেয় তাদের জন্য পরকালে কোনো অংশই থাকবে না। সেদিন আল্লাহ এদের প্রসঙ্গে কোনো কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না এবং তাদের পাপের কালিমা থেকে পবিত্রও করবেন না। এদের জন্য রয়েছে কঠোর পীড়াদায়ক শাস্তি।
৭৮. এদের মধ্যে এমন কিছু লোকও আছে, যারা পড়ার সময় তাদের জিহ্বাকে এমনভাবে নাড়ায় যেন তোমরা মনে করো যে তা সত্যই বুঝি আল্লাহর কিতাবের কোনো অংশ; কিন্তু আসলে তা কিতাবের কোনো অংশই নয়।
তারা আরো বলে, এটা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে, কিন্তু তা আল্লাহর কাছ থেকে আসা কিছু নয়। তারা জেনে-বুঝে আল্লাহর ওপর মিথ্যা বলে চলেছে।
৭৯. আল্লাহ কাকে কিতাব দেবেন, ক্ষমতা দেবেন এবং নবুয়ত দেবেন এটা কোনো মানুষের হাতে নয়। এমন তো নয়ই যে সে লোকদের ডেকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার উপাসক হয়ে যাও; বরং সত্যিকার নবুয়তপ্রাপ্তির পর সে বলবে, তোমরা সবাই তোমাদের প্রভুর উপাসক হয়ে যাও। এটা এ কারণে যে তোমরাই মানুষকে কিতাব শেখাচ্ছিলে এবং নিজেরাও অধ্যয়ন করছিলে।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মবেত্তাদের কথা বলা হয়েছে। তারা সামান্য বৈষয়িক স্বার্থে অথবা কায়েমি স্বার্থ বজায় রাখার জন্য তাওরাত ও ইঞ্জিলের কথা ও ভাবার্থ পরিবর্তন করত অথবা উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা দিত। পবিত্র কোরআনের ভাষায় এটাকেই বলা হয়েছে 'অঙ্গীকার ও শপথকে অল্পমূল্যে বিক্রি করা' বলে। তাদের জন্য কঠোর পীড়াদায়ক শাস্তির খবর দেওয়া হয়েছে।
৭৮ নম্বর আয়াতে আহলে কিতাবের এমন সব আলেমের কথা বলা হয়েছে, যারা তাদের বানোয়াট উক্তিগুলো এমনভাবে আওড়ায়, যাতে লোকে মনে করে যে এগুলো তাওরাত বা ইঞ্জিলের উক্তি। তারা তাদের উদ্দেশ্যমূলক বানোয়াট উক্তিগুলো আল্লাহ প্রেরিত কিতাবের উক্তি হিসেবে মানুষকে বোঝানোর জন্য এ রকম ভান করত। এই আয়াতে এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'এরা জেনে-বুঝে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করছে।' অর্থাৎ আল্লাহ যা বলেননি তা তারা আল্লাহর নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এরাও সেই আগের আয়াতে বর্ণিত পাপিষ্ঠদের মধ্যে গণ্য হবে।
৭৯ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_নাজরানের খ্রিস্টানরা রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হলে তিনি তাদের ইসলাম কবুলের জন্য আহ্বান জানান। এর জবাবে খ্রিস্টানদের এক আলেম আবু রাফে কারাযী বললেন, আপনি কি চান যে আমরা আপনার ইবাদত করি? কারণ খ্রিস্টানরা তখন তাদের নবী ঈসা (আ.)-এর ইবাদত করত। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নবী হিসেবে মেনে নেওয়ার অর্থ তারা এটাই বুঝত। তাদের এই অবান্তর প্রশ্নের জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, 'নাউযুবিল্লাহ! কখনোই নয়। আমি আল্লাহর রাসুল। আমি বার্তাবাহক মাত্র। আমি উপাস্য নই।' এ পটভূমিতেই আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ কাকে তাঁর কিতাব দেবেন, তাঁর অর্পিত ক্ষমতা দেবেন এবং নবুয়ত দেবেন তা কোনো মানুষের হাতে নয়। অর্থাৎ নবুয়ত একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে এ জন্য মনোনীত করেন শুধু তাকেই দেন, কেউ চেষ্টা-সাধনা করে তা পায় না। আর নবুয়ত মানে এমন তো নয়ই যে কেউ নিজে নিজে নবী বনে গিয়ে মানুষকে বলবে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার উপাসক হয়ে যাও; বরং সত্যিকার নবুয়তপ্রাপ্তির পর সে বলবে, তোমরা সবাই তোমাদের প্রভুর উপাসক হয়ে যাও। খ্রিস্টানদের নবী হজরত ঈসা (আ.) অনুরূপ কথাই বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে খ্রিস্টানরা তা থেকে বিচ্যুত হয়ে হজরত ঈসা (আ.)-কে তাদের উপাস্য বানিয়ে ফেলেছে। নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষ যাতে সে ভুল আর না করে সে জন্য।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments