সতর্ক থাকার পরামর্শ-চরম গরমে পুড়ছে দেশ

বৈশাখের প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে পুরো দেশ। ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে লাগামহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনজীবনের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। দিনে-রাতে সমানতালে চলছে এ ভোগান্তি। গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।


'হিট স্ট্রোক' থেকে অনেক শিশুর ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপ-প্রবাহ চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আরো দু-এক দিন চলবে এ পরিস্থিতি। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হলে গরম কিছুটা কমতে পারে। তাদের মতে, গ্রীষ্মকালীন এ গরম আবহাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণত ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রাকে রেকর্ড পরিমাণ বলে ধরা হয়। সে হিসাবে দেশের ওপর দিয়ে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি। এটিই এই মৌসুমের এ পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা। এ ছাড়া গতকাল ঈশ্বরদীতে ৩৮ দশমিক ২, বগুড়ায় ৩৭ দশমিক ২, যশোরে ৩৭ এবং ঢাকায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে বলেন, 'সাধারণত বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি হিট স্ট্রোকের শিকার হয়। তাই তীব্র তাপদাহ যেন তারা এড়িয়ে চলে। এ সময় সব বয়সী মানুষের ঢিলেঢালা ও সুতি পোশাক পরা ভালো। প্রখর রোদে বের হতে হলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করা যেতে পারে। শ্রমিক ও দিনমজুররা যেন ছাউনির নিচে কাজ করেন সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, গরমের কারণে প্রচুর ঘাম হয় বলে অনেকের এ সময় পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে লবণ-পানি বা সরাসরি খাবার স্যালাইন খাওয়া দরকার। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি ফলের রস, সরবত ইত্যাদি পান করা যেতে পারে। তবে কোনো মতেই রাস্তার খোলা সরবত বা ফলের রস পান করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এ ছাড়া গরমকালে তৈরি খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বলে খাবার টাটকা থাকতেই তা গ্রহণ করা ভালো। পচাবাসী খাবার একদম খাওয়া চলবে না।
সব সতর্কতা সত্ত্বেও কেউ হিট স্ট্রোকের শিকার হলে কী করা যায়- এ প্রশ্নের জবাবে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, গরমের কারণে কেউ অসুস্থ বোধ করলে তাকে দ্রুত ছায়া সুশীতল এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তিকে পাখার নিচে বা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে নিয়ে পরিচর্যা করা গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছা পানিতে ভিজিয়ে বারবার তার ঘাম মুছে দিতে হবে। হিট স্ট্রোকের কারণে কেউ জ্ঞান হারালে দ্রুত তাকে কাছের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.