এ কেমন তারুণ্য? by আসিফ আহমেদ

দলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হয় না_ এমন অভিযোগ সর্বদা উত্থাপিত হয় ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সভায়। আওয়ামী লীগের যেসব সভায় 'সাধারণের' কথা বলার বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকে, সেখানে এটা অবশ্যই শুনতে পাবেন। কয়েকদিন আগে আওয়ামী যুবলীগের বর্ধিত সভা হয়। নেতারা চেয়েছিলেন এক বেলাতেই সভা শেষ করতে।


যত কথা তত যে ঝামেলা! কিন্তু জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা সারাদিন সভা চালিয়ে যেতে বাধ্য করল। যুবলীগ আওয়ামী লীগের তালিকাভুক্ত সংগঠন। সরাসরি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এ সংগঠন নেই। কিন্তু ক্ষমতার সুফল অনেক নেতা ভোগ করেন। সেদিনের সভার কার্যক্রম থেকে ধারণা করা যায়, সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে 'বঞ্চিত' সংখ্যা অনেক। তারা কেউ দাবি করেনি_ দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। এটাও বলা হয়নি যে, সরকারি কাজের বিলি-বণ্টন যথাযথভাবে হওয়া উচিত। সংবাদপত্রে প্রায়শই খবর থাকে_ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের টেন্ডার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ তো বটেই, ছাত্রলীগের 'ছাত্ররাও' জড়িত হয়ে পড়ে সংঘাতে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। কিন্তু যুবলীগের 'তরুণ রক্ত' থেকে দাবি ওঠেনি_ এসব অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। নবীনদের কাছে যুগ যুগ ধরে দাবি উঠছে_ অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা যেন রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু হায়! যুবলীগের সভায় যে উল্টো দাবি উঠেছে_ কিছু লোক একচেটিয়াভাবে সরকারি সুবিধা ভোগ করছে। আর অনেক লোক বঞ্চিত হচ্ছে। এখন দাবি সমাজতন্ত্রের_ সমভাবে অনিয়ম বণ্টন।
বিএনপিরও বর্ধিত সভা হয়ে গেল ঢাকায়। এ দলটি ক্ষমতায় থাকার সময় একই ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে_ 'ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হয় না।' হাওয়া ভবন সম্পর্কেও সমালোচনা শোনা গেছে। যুবলীগের সভায় যেমন বলা হয়েছে, 'নেতারা কর্মীদের ফোনও ধরেন না'_ একই ধ্বনি খালেদা জিয়ার আমলে উঠেছে ছাত্রদল-যুবদলের সভা থেকে। এবারে বিএনপির সভায় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারাও ছিলেন। আবার অনেক তরুণ-যুবকও ছিলেন। তারা এখন ক্ষমতার সুফল বণ্টনের দাবি করবে না_ এটাই স্বাভাবিক। যদি ক্ষমতায় আসে তবে সুর পাল্টাবে। এখন প্রস্তুতি ক্ষমতায় আসার। সে জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু তরুণদের অভিযোগ_ হরতাল ডাকলে নেতারা পিকেটিংয়ে হাজির থাকেন না। পুলিশ এলে সিনিয়রদের গায়ে আঘাত পড়ে না। তাদের মাঠে পেতে হবে তো? এ কারণে তরুণদের দাবি_ সিনিয়ররাও মাঠে থাকুন। দেখা যাক, প্রবীণরা এ কথাকে কীভাবে গ্রহণ করেন। সভায় তারা বলতে পারতেন, আমরা পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েই বয়স বাড়িয়েছি। এখন তোমরা একই পথে চলো। তবেই না মন্ত্রী-এমপি হতে পারবে।
কিন্তু সেটা যে বলেননি, তার সঙ্গত কারণ রয়েছে। বিএনপির জন্মলগ্ন ছিল সত্তরের দশকে সামরিক শাসনের সময়ে। বিভিন্ন দলের অনেক নেতাকর্মীকে সামরিক শাসকের দলে টেনে আনা হয়েছে নানা প্রলোভন দেখিয়ে। আন্দোলন-সংগ্রাম করার দরকার নেই, রাজপথে হরতালের সময় পিকেটিং করার দরকার নেই। ত্যাগের নয়, ভোগের জন্যই তাদের দলে নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই কি বিএনপির তরুণ নেতাদের প্রবল বাক্যমানের মুখেও তারা চুপ করে ছিলেন? কারণ যাই হোক না কেন_ বিএনপির তরুণদের আহ্বানে ইতিবাচক কিছু নেই। তারাও আসলে 'বুড়োদের মতোই' পুলিশকে ভয় পায়। আন্দোলনের যত আওয়াজই দেওয়া হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে রাজপথ উত্তপ্ত রাখা সহজ নয়। মিছিল-সমাবেশের চেয়ে হরতাল তাদের কাছে অনেক সহজ মনে হয়। হাল আমলে মিডিয়ার কল্যাণেই হরতাল আহ্বানের খবর মানুষের কাছে দ্রুত ও সহজে পেঁৗছে যায়। এ ধরনের কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজ-দোকান খোলে না ভয়ে। যানবাহনও কম বের হয়। অতএব, হরতাল সফল। বুড়ো-কিংবা তরুণ কাউকেই পথে নেমে রিকশা-গাড়ির চাকায় হাত দিতে হয় না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটে গিয়েও করতে হয় না পিকেটিং। হরতাল এখন ডাকলেই পালিত হয়। তারপরও কেন যে প্রবীণদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ! একটু কষ্ট কি করা যায় না!

No comments

Powered by Blogger.