আদমশুমারির যাচাই জরিপ-বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৮০ লাখ!

পঞ্চম আদমশুমারি শেষে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছিল দেশের জনসংখ্যা হচ্ছে ১৪ কোটি ২৩ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) জরিপ যাচাই করে দেখতে পেয়েছে, দেশের জনসংখ্যা আরো ৫৭ লাখ বাড়বে।


এর ফলে দেশের মোট জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৪ কোটি ৮০ লাখে। আর আগামী জুনে আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১তে দেশের যে জনসংখ্যা পাওয়া গেছে, এর সঙ্গে আরো ৪ শতাংশ যোগ করে প্রকৃত জনসংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। বিআইডিএস গতকাল সোমবার জানিয়েছে, সারা দেশে গড়ে ৩ দশমিক ৯৭১ শতাংশ জনসংখ্যা ওই গণনায় বাদ পড়েছে। গণনা-পরবর্তী যাচাই জরিপের (পিইসি) ফল হিসেবে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শাহজাহান আলী মোল্লা বলেন, আদমশুমারির চূড়ান্ত ফলে জনসংখ্যা আরো বাড়বে। সেই ফলের সঙ্গে পিইসির হিসাব অনুসারে আরো ৩ দশমিক ৯৭১ শতাংশ যোগ করে প্রকৃত জনসংখ্যা আগামী জুনে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচাইয়ের কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ জুলাই পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের পঞ্চম ও সর্বশেষ আদমশুমারির প্রাথমিক ফল প্রকাশ করে। সেই ফল অনুসারে গত বছর ১৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ সাত কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার এবং নারী সাত কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার। প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ১০০ দশমিক ৩ জন। জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধি ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। খানার সংখ্যা তিন কোটি ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০। খানার গড় সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৪ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯৬৪ জন।
প্রাথমিক ফলে জানানো হয়, ১০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এক কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার। এর মধ্যে বরিশালে জনসংখ্যা বাড়েনি। ২০০১ সালে এ বিভাগের জনসংখ্যা ছিল ৮১ লাখ ৭৪ হাজার। এখনো তাই। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা কম। জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ঢাকা জেলায়। এ বিভাগে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩২ দশমিক ৮ শতাংশের (৪ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার) বসবাস। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন ১ হাজার ৫০২ জন। এ বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলাতেই জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৩ শতাংশের (১ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার) বসবাস। জনসংখ্যার ঘনত্ব বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম। বরিশাল বিভাগে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬১৩ জন। আর জেলা হিসেবে জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে কম বান্দরবানে। এ জেলায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৬ জনের বসবাস।
ওইদিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভাকক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার আদমশুমারির ওই প্রাথমিক ফল ঘোষণা করে জানান, টালিশিটের তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক এই ফল পাওয়া গেছে। শুমারিতে পূরণকৃত প্রশ্নপত্রের সম্পূর্ণ তথ্য কম্পিউটারে গণনা করে জনসংখ্যার চূড়ান্ত তথ্য ২০১২ সালে প্রকাশ করা হবে। সে তথ্য বর্তমান তথ্যের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে। এ ছাড়া বিআইডিএস-এর গণনা-পরবর্তী যাচাই কাজ সম্পন্ন করা হবে। এতে জনসংখ্যা প্রাথমিক ফলের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হতে পারে।
এদিকে গতকাল বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে. মুজেরী তাঁদের গণনা পরবর্তী যাচাই জরিপ ও এর ফল হিসেবে আরো জানান, শুমারির গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য তারা ২৮০টি নমুনা এলাকায় গতবছর ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পিইসি সম্পন্ন করেন। এসব নমুনা এলাকার মধ্যে পল্লী অঞ্চলের ১৪০টি, শহর অঞ্চলের ১৪০টি (উপজেলা হেডকোয়ার্টারে ২০টি, পৌরসভায় ৬০টি এবং সিটি করপোরেশনে ৬০টি) এলাকা ছিল। তাদের গণনাকারীরা প্রতিটি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত তথ্য মূল শুমারির তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। মূল শুমারির সঙ্গে নন-ম্যাচিংয়ের হার বেশি থাকায় ৬১টি গণনা এলাকায় পিইসির নিয়ম অনুযায়ী ফলোআপ জরিপের মাধ্যমে পুনঃযাচাই করা হয়।
তিনি জানান, পল্লী এলাকায় মূল শুমারির নেট এরর রেট বা বাদ পড়া জনসংখ্যা ৩ দশমিক ৭৯৯ শতাংশ। পৌরসভা এলাকায় এই রেট ৫ দশমিক ২৫৬ শতাংশ। উপজেলা হেডকোয়ার্টার এলাকায় ৪ দশমকি ৭৩ শতাংশ। আর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩ দশমকি ৮৫৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে সারা দেশে গড়ে এই রেট ৩ দশমিক ৯৭১ শতাংশ। ২০০১ সালের শুমারিতে এই রেট ছিল ৪ দশমকি ৯৮ শতাংশ।
ড. মুস্তফা কে. মুজেরী বলেন, 'মূল শুমারি এবং পিইসির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবারের শুমারিতে সংগৃহীত তথ্যের গুণগতমান অতীতের তুলনায় ভালো।'

No comments

Powered by Blogger.