চরাচর-চরখাগরিয়াবাসীর দিগন্তবিস্তৃত স্বপ্ন by বনরূপা
গ্রামের নাম চরখাগরিয়া। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একটি গ্রাম, যে গ্রামের কর্মক্ষম হাতগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছিল কাজ এবং কাজকে অবলম্বন করেই তারা দেখছিল স্বাবলম্বী হওয়ার বিস্তৃত স্বপ্ন। তাদের অনেকেরই সে স্বপ্নপূরণ হয়েছে এবং কারো কারো অভাবনীয় সাফল্য অন্যদেরও স্বপ্নের দিগন্ত বিস্তৃত করেছে।
চরখাগরিয়া গ্রামে যখন পেঁৗছি, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে পড়ছিল। চট্টগ্রামে বেড়াতে যাওয়া মানেই ছুটে চলা ক্ষেতজুড়ে ফুলের বিস্তৃত জমি দেখার জন্য। কিন্তু গিয়ে দেখা গেল অনেক ফুলে ছেয়ে আছে মাঠ, বাড়ির আঙিনা, এমনকি হেঁটে চলাচলের দুপাশও। মাঠের দিকে যেতেই চোখে পড়ল ফুলচাষিরা ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। জানা গেল, প্রায় এক যুগ ধরে ওই গ্রামে ফুলচাষ হয়ে আসছে। চরখাগরিয়ার চাষিদের উৎপাদিত ফুল দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। সেখানে ফুল চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছে কয়েক শ পরিবার। দারিদ্র্য জয়ের যুদ্ধে তারা জয়ী হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছে, তাদের দেখে আরো অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে। রায়হান সবেমাত্র কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রেখেছে। সে খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছে ফুলচাষে। পড়াশোনা যতটুকু করেছে, সেটুকুকে সে কাজে লাগাতে চায় উন্নত চাষাবাদে। একদিকে ফুলচাষে অনেকেরই ভাগ্য ইতিমধ্যে বদলে গেছে, আর অন্যদিকে বদলে যাওয়া ভাগ্যবানদের দৃষ্টান্ত অনেকের ভাগ্য বদলাতে ব্যাপক উৎসাহ জোগাচ্ছে। ফুল চাষ, ফুল তোলা, মালা গাঁথা, পাইকারদের ফুল সাজিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজে যুক্ত হয়েছে কিশোর-কিশোরীরাও। এ যেন এক অন্য রকম দৃশ্য, যা আনন্দের বৈভবে তাদের মনকেও ফুলের মতো করে তুলছে। গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, রজনীগন্ধাসহ নানা রকম ফুল চাষ হচ্ছে। শুধু মাঠেই নয়, আবারো বলতে হচ্ছে বাড়ির আঙিনায়ও এক ইঞ্চি জায়গা কেউ এখন সেখানে ফেলে রাখতে চায় না। কিশোররা স্কুল শেষেই ছোটে ফুলের মাঠে পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা করতে। ফুলচাষি নুর উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বললেন, আমাদের হাত পবিত্র কাজে যুক্ত। ফুল চাষ কিংবা উৎপাদন করে আমরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি, তেমনি ফুলের ক্ষেতে গেলে মনটাও যেন ফুলের মতো হয়ে ওঠে। তিনি সব খরচ বাদ দিয়েও ফুল চাষ করে বছরে প্রায় ৭০ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারছেন। আরেক চাষি জানালেন, এ গ্রামের যারা একদিন দুই বেলা পেট পুরে খেতে পারত না, তারাও এখন অনেক টাকার মালিক। তাদের শ্রম, প্রচেষ্টা, বিনিয়োগ_কোনো কিছুই বিফলে যায়নি; বরং নতুন এক দিগন্তের দিকে ধাবিত করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ফুল ব্যবসায়ীদের চোখ এখন চরখাগরিয়ার দিকে। প্রতিদিন অনেক ব্যবসায়ী সেখান থেকে ফুল নিয়ে আসছেন। কিন্তু অনেক চাষিরই অভিযোগ, ফুল চাষ করে তাঁরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাঁরা এও জানান, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো এগিয়ে যেতে পারতেন এবং আমাদের রপ্তানি তালিকায় ফুল বড় জায়গা করে নিতে পারত। চরখাগরিয়ার মানুষ থেমে নেই, নিজ চেষ্টায়ই তারা আরো এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছে এবং সে ক্ষেত্রে তারা সফল হবে_এ প্রত্যয় অনেকেই ব্যক্ত করেছে দৃঢ়ভাবে।
বনরূপা
বনরূপা
No comments