আইনি বাহিনীর বেআইনি কাজ বন্ধ হোক-থানা হেফাজতে মৃত্যু

কেবল পিটিয়েই মেরে ফেলা হলো টাঙ্গাইলের তরুণ ওষুধ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান রুবেলকে। পুলিশ ভুলে যেতে পারে কিন্তু সবাই জানে, পুলিশের হাত মানে আইনেরই হাত। তাদের হেফাজতে থাকা মানে আইনের হেফাজতে থাকা। সুতরাং তাদের হাতে কারও অপমৃত্যু ঘটা কেবল হত্যাকাণ্ডই নয়, আইনেরও চরম অপব্যবহার।


যে পুলিশ আইনের হেফাজতকারী, যে পুলিশ মানুষের জানমালের হেফাজতকারী, তাদের হাতে নির্যাতনে কারও মৃত্যু ঘটা মানে আইনের ও নিরাপত্তার অধিকারেরও মৃত্যু। এবং এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা মডেল থানাগুলোর একটিতে, বলা হয়েছিল যে থানাগুলো হবে মানবাধিকার রক্ষা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধার আদর্শ।
টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার এসআই মোশাররফ হোসেনের মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ। এই অভিযোগে তিনি নিজেই আরও পুলিশকে নিয়ে ওষুধ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান রুবেল (২৮) এবং তাঁর বন্ধু শরিফুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সেই জিজ্ঞাসাবাদ এমনই নিষ্ঠুর যে রুবেল মারা যান। মারা যাওয়ার আগে তাঁর আত্মীয়স্বজন থানায় গিয়ে রুবেলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ব্যর্থ হন। গত শনিবারের প্রথম আলোর সংবাদ বলছে, তাঁরা সে সময় থানার ভেতর থেকে রুবেলের চিৎকার শুনতে পান। রুবেলের বাবা জামালপুর পুলিশ বিভাগের টেলিকম কর্মকর্তা হয়েও ছেলের মানবাধিকার এবং প্রাণ কোনোটাই বাঁচাতে পারেননি। এ রকম অবস্থায় সাধারণ মানুষের কী দশা হয়, তা অনুমান করা কঠিন নয়।
এ বছরের প্রথম তিন মাসে নিরাপত্তা হেফাজতে মারা গেছেন ৩৮ জন: গড়ে প্রতি তিন দিনে একজন। নিহত ব্যক্তিরা পুলিশ-র্যাব এবং জেলখানায় আটক অবস্থায় মৃত্যুর শিকার হন। সম্প্রতি ঝালকাঠিতে মিথ্যা অভিযোগে লিমন নামের কলেজপড়ুয়া এক তরুণের পায়ে র্যাবের গুলি করার ঘটনা জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে তার পা-টি কেটে ফেলতে হয়। এখন আবার র্যাব নিজের ‘ভুল’ শোধরাতে লিমনকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হলেও সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বিকার। আইনের রক্ষকেরা যদি এভাবে ভক্ষক হয়ে ওঠে, তাহলে সমাজে মাৎস্যন্যায় নেমে আসে। সৃষ্টি হয় আতঙ্কের পরিবেশ। কোনো সভ্য সমাজেই তা চলতে পারে না। রুবেল হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, দায়ী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি হোক, বন্ধ হোক নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা। অভিযোগ যত গুরুতরই হোক না কেন, বিচারের আগে কাউকে যে শাস্তি দেওয়া যায় না, এই কথাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভুলে গেলে চলবে না।

No comments

Powered by Blogger.