বেঁচে থাকো নারী by তৃপ্তি বালা
স্বামীকে ভালোবেসেছেন রুমানা। বিশ্বাস করেছেন তাকে। প্রত্যেকটি নির্যাতনের পরে হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাইলেই মাফ করেছেন। কেন, না করে উপায় নেই বলে? এই দীনতা কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন শিক্ষিকা, একজন উচ্চশিক্ষিত নারীর এই যে অসহায়ত্ব আরেকবার আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় নারী, কন্যা-
জায়া-জননী আজও এই সময়ে এই শতাব্দীতেও কতখানি অরক্ষিত অসহায় এবং সামাজিক যূপকাষ্ঠে বলির শিকার! জন্মের পর থেকেই জীবনটা যার বঞ্চনা আর গ্গ্নানির মধ্য দিয়ে, সমাজ-সংসার প্রতিটি পদেই বেড়ি পরিয়ে রেখেছে যাকে, সহজাত-স্বাভাবিক বিকাশ যার জন্য প্রতি মুহূর্তেই এক বিড়ম্বনা; সেই নারীর-মানবীর মানসিক মুক্তি কীভাবে সম্ভব? মরে গিয়ে, অত্যাচার-বর্বরতা-নিষ্ঠুরতার সব যাতনা নিদ্বর্িধায়-নিশ্চুপ সহ্য করে তবেই তার প্রাণের মুক্তি, জন্মের সার্থকতা!
হায় রে, যে মানুষটি সেই শৈশবেই নিজের মূল্যটি বুঝে নিয়েছে অবহেলার একান্ত আত্মজনের কাছেই, তার আর কী চাইবার থাকে এই সমাজ-সংসার কিংবা সভ্যতার কাছে?
সভ্যতা তো মনুষ্যত্ববোধ আর চেতনার কথাও বলে। সন্তানকে লিঙ্গ-বর্ণ নির্বিশেষে ভালোবাসতে পারেন না পিতা-মাতাও, পুরুষ সন্তানটিকে অহেতুক বাড়তি আদর-যত্ন করে তার পরকালের পথটিকেই নষ্ট করার সুযোগ করে দেন। একপক্ষ যেমন এতে করে উপেক্ষা আর বঞ্চনার শিকার হয়, অন্যপক্ষ বাড়তি খাতির-যত্ন পেয়ে অমানুষ নয়তো একচোখা মানুষ হিসেবেই বেড়ে উঠতে শেখে। এই অবস্থা আজকের সভ্যতার জন্য লজ্জাকর এবং একান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত।
নারীর ওপর সব নির্যাতন-বর্বরতার মূলের বিষয়ই এই বৈষম্য; পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় কুসংস্কার। এর থেকে বেরিয়ে আসাটাই তাই আজকের মানুষের প্রধান কর্তব্য।
দেশটিতে অনেকদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী দু'জনই নারী অথচ অফিস-আদালতে মেয়েরা সমানাধিকারের সুষ্ঠুবোধ নিয়ে কাজ করতে পারেন না। পুরুষ কর্মী, সহকর্মী অনেকের আচরণই উদ্ধত অশালীন।
জন্ম থেকেই দেখছে তারা, বোন-কন্যাসন্তান মানেই নীচুতর এক প্রজাতি, নিগৃহীত এবং সবদিক থেকেই হীনবল। কন্যার মূল্যায়ন কিংবা মূল্যমান যাচাই তো ওই পারিবারিক গণ্ডিতেই হয়ে যায়। এই রকম জানা-বোঝার পুরুষ সন্তানরাই চারপাশে; তারা বোনের পিতৃসম্পত্তিতে বাদ সাধেন, মিছিল নামিয়ে রাস্তায় বিতণ্ডা বাধান, কোনো বিষয়ে জননী-ভগি্নর মতামতের তোয়াক্কা রাখেন না। বহু শত বছরের পিছিয়ে পড়া নারীর সর্বতো যোগ্যতা অর্জন আজ তাই এক বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষায়, আলোকে, মনুষ্যত্ববোধে নিজেকে তৈরি করাটা সত্যিই এক বড় চ্যালেঞ্জ তার সামনে। বহু যুগের চাপিয়ে দেওয়া মানসিক দাসত্ব কাটিয়ে ওঠার কাজটি তো সহজ নয়। কিন্তু তুমি যে শিক্ষিত নারী তোমাকে আজ তা পারতে হবে। মনের মুক্তি অর্জন করতে হবে তোমাকে।
ভালোবাসতে পারল না যে পাষণ্ড স্বামী, এমনকি মানুষের যোগ্য সম্মানটি পর্যন্ত টেনে-হিঁচড়ে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করে তুলল তার সঙ্গে আর যা-ই হোক আজকের শিক্ষিত নারী ঘর করবেন না। বেরিয়ে আসবেন, নয়তো বের করে দেবেন পরভুক, পরাশ্রয়ী ইতরকে! সমাজ-সংসারের ভাবনা তোমার নয়, যখন এই সমাজ কিংবা সংসার তোমার কথা ভাবছে না। তোমার নিরাপত্তা, বেঁচে থাকা_ একান্তই তোমার নিজস্ব প্রয়োজন। অত্যাচারী-পাষণ্ড স্বামীর ঘর থেকে সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে এসে যদি দেখ আত্মজন মুখ ফিরিয়ে, তুমি কষ্ট পেলেও দমে যেও না। কারণ তুমি মানুষ, একজন পূর্ণ মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার তোমার আছে। বিরাট এই বিশ্বে কাউকে না কাউকে তোমার পাশে পাবেই। কারণ হয়তো কিছু মানুষ এখনও এই পৃথিবীতে আছেন। আর না-ও যদি তাদের দেখা পাও, নিজের সামর্থ্যের ওপরই ভরসা রাখো। কারণ, তোমার দলে মানুষের তো আর অভাব নেই। তাদের সঙ্গেই যূথবদ্ধ হয়ে থাকো। তবু দোহাই তোমার, অন্যায়-অত্যাচার-বর্বরতার শিকার হয়ে তোমার মনুষ্য জীবনটাকে পঙ্গু হতে দিও না। তুমি সুস্থ থাকো, বেঁচে থাকো মানবী।
পুনশ্চ আবেদন : কন্যা-নারী-মানবী শত প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষায় নিজেকে স্বশিক্ষিত, স্বাবলম্বী করে তোল, নয়তো বিয়ের কথা ভেব না।
হায় রে, যে মানুষটি সেই শৈশবেই নিজের মূল্যটি বুঝে নিয়েছে অবহেলার একান্ত আত্মজনের কাছেই, তার আর কী চাইবার থাকে এই সমাজ-সংসার কিংবা সভ্যতার কাছে?
সভ্যতা তো মনুষ্যত্ববোধ আর চেতনার কথাও বলে। সন্তানকে লিঙ্গ-বর্ণ নির্বিশেষে ভালোবাসতে পারেন না পিতা-মাতাও, পুরুষ সন্তানটিকে অহেতুক বাড়তি আদর-যত্ন করে তার পরকালের পথটিকেই নষ্ট করার সুযোগ করে দেন। একপক্ষ যেমন এতে করে উপেক্ষা আর বঞ্চনার শিকার হয়, অন্যপক্ষ বাড়তি খাতির-যত্ন পেয়ে অমানুষ নয়তো একচোখা মানুষ হিসেবেই বেড়ে উঠতে শেখে। এই অবস্থা আজকের সভ্যতার জন্য লজ্জাকর এবং একান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত।
নারীর ওপর সব নির্যাতন-বর্বরতার মূলের বিষয়ই এই বৈষম্য; পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় কুসংস্কার। এর থেকে বেরিয়ে আসাটাই তাই আজকের মানুষের প্রধান কর্তব্য।
দেশটিতে অনেকদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী দু'জনই নারী অথচ অফিস-আদালতে মেয়েরা সমানাধিকারের সুষ্ঠুবোধ নিয়ে কাজ করতে পারেন না। পুরুষ কর্মী, সহকর্মী অনেকের আচরণই উদ্ধত অশালীন।
জন্ম থেকেই দেখছে তারা, বোন-কন্যাসন্তান মানেই নীচুতর এক প্রজাতি, নিগৃহীত এবং সবদিক থেকেই হীনবল। কন্যার মূল্যায়ন কিংবা মূল্যমান যাচাই তো ওই পারিবারিক গণ্ডিতেই হয়ে যায়। এই রকম জানা-বোঝার পুরুষ সন্তানরাই চারপাশে; তারা বোনের পিতৃসম্পত্তিতে বাদ সাধেন, মিছিল নামিয়ে রাস্তায় বিতণ্ডা বাধান, কোনো বিষয়ে জননী-ভগি্নর মতামতের তোয়াক্কা রাখেন না। বহু শত বছরের পিছিয়ে পড়া নারীর সর্বতো যোগ্যতা অর্জন আজ তাই এক বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষায়, আলোকে, মনুষ্যত্ববোধে নিজেকে তৈরি করাটা সত্যিই এক বড় চ্যালেঞ্জ তার সামনে। বহু যুগের চাপিয়ে দেওয়া মানসিক দাসত্ব কাটিয়ে ওঠার কাজটি তো সহজ নয়। কিন্তু তুমি যে শিক্ষিত নারী তোমাকে আজ তা পারতে হবে। মনের মুক্তি অর্জন করতে হবে তোমাকে।
ভালোবাসতে পারল না যে পাষণ্ড স্বামী, এমনকি মানুষের যোগ্য সম্মানটি পর্যন্ত টেনে-হিঁচড়ে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করে তুলল তার সঙ্গে আর যা-ই হোক আজকের শিক্ষিত নারী ঘর করবেন না। বেরিয়ে আসবেন, নয়তো বের করে দেবেন পরভুক, পরাশ্রয়ী ইতরকে! সমাজ-সংসারের ভাবনা তোমার নয়, যখন এই সমাজ কিংবা সংসার তোমার কথা ভাবছে না। তোমার নিরাপত্তা, বেঁচে থাকা_ একান্তই তোমার নিজস্ব প্রয়োজন। অত্যাচারী-পাষণ্ড স্বামীর ঘর থেকে সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে এসে যদি দেখ আত্মজন মুখ ফিরিয়ে, তুমি কষ্ট পেলেও দমে যেও না। কারণ তুমি মানুষ, একজন পূর্ণ মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার তোমার আছে। বিরাট এই বিশ্বে কাউকে না কাউকে তোমার পাশে পাবেই। কারণ হয়তো কিছু মানুষ এখনও এই পৃথিবীতে আছেন। আর না-ও যদি তাদের দেখা পাও, নিজের সামর্থ্যের ওপরই ভরসা রাখো। কারণ, তোমার দলে মানুষের তো আর অভাব নেই। তাদের সঙ্গেই যূথবদ্ধ হয়ে থাকো। তবু দোহাই তোমার, অন্যায়-অত্যাচার-বর্বরতার শিকার হয়ে তোমার মনুষ্য জীবনটাকে পঙ্গু হতে দিও না। তুমি সুস্থ থাকো, বেঁচে থাকো মানবী।
পুনশ্চ আবেদন : কন্যা-নারী-মানবী শত প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষায় নিজেকে স্বশিক্ষিত, স্বাবলম্বী করে তোল, নয়তো বিয়ের কথা ভেব না।
No comments