পোলট্রি শিল্পের দুর্দিন
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও সরকারি মালিকানাধীন পোলট্রি শিল্প ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং দুর্নীতি ও সরকারি অসহযোগিতার কারণে বেসরকারি পোলট্রি শিল্পও বেকায়দায় পড়েছে। সরকারি ২১টি খামারের মধ্যে কিছু বন্ধ হয়ে
গেছে, বাকিগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। ভোক্তার জন্য ডিম কিংবা মাংস সরবরাহ করতে পারছে না খামারগুলো। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ার কারণে বাজারে দাম বেড়ে গেছে ডিম ও মাংসের। অন্যদিকে অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে দেশের খামারগুলোর মধ্যে রোগাক্রান্ত মোরগ-মুরগির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বার্ড ফু্লর মতো মারাত্মক রোগ বিস্তার রোধ করতে না পারার কারণে প্রায়ই খামার মালিকদের হাজার হাজার মুরগি মেরে ফেলতে হচ্ছে। সরকারি ভর্তুকি এবং সহযোগিতা সংকুচিত হওয়ার কারণে নতুন উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
পোলট্রি ফিড, বাচ্চা কিংবা ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা এই শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরও সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে যে অভিযোগ আছে, তাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এর সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণের নামে সংঘবদ্ধ কিছু প্রতিবন্ধকতার অভিযোগও শোনা যায়। বিশেষ করে মোরগ-মুরগির খামারের প্রয়োজনীয় ওষুধ, বাচ্চা কিংবা খাবার আমদানি করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুনকে এই শিল্প প্রসারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে কেউ এই শিল্পের কোনো দ্রব্য আমদানি করতে চাইলে আমদানিকারকদের সংগঠনের সদস্য হওয়া তার জন্য বাধ্যতামূলক। আর সেখানে তাকে লাখ টাকা গুনতে হয় সদস্য-চাঁদা হিসেবে। এর ফলে এই জরুরি প্রয়োজনেও ক্ষুদ্র শিল্পে নিয়োজিত উদ্যোক্তারা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছেন।
এই শিল্প খাতের দুরবস্থা যে কোন পর্যায়ে গিয়ে পেঁৗছেছে, তা বোঝা যায় গত এক মাসে মোরগ-মুরগির মৃত্যুর সংখ্যা দেখে। রোগাক্রান্ত হয়ে এই এক মাসেই এক লাখের বেশি মুরগি মেরে ফেলতে হয়েছে। এই ক্ষতি খামারের মালিকের জন্য যেমন, তেমনি ভোক্তার ওপরও বর্তায়। সুতরাং সরকারকে অতি জরুরি বিবেচনা করে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে আমদানি ব্যবস্থাপনা সহজতর করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর গত ১০ বছরে ২০০ কোটি টাকা গচ্চা দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। যারাই এই অনিয়মের জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারি খামারগুলো কোন কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে, তা দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি মালিকদের সামগ্রিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দিতে হবে। তা না হলে মোরগ-মুরগি ও ডিমের ক্রমবর্ধমান মূল্যের রাশ টেনে ধরা যাবে না।
No comments