শিক্ষিকা শারমিন হত্যা মামলার রায়ে যুবলীগ নেতার মৃত্যুদণ্ড
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শিক্ষিকা শারমিন জাহান ওরফে সুমু হত্যা মামলার রায়ে যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম ওরফে আবুল গোমস্তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কে এম সলিমুল্লাহ গতকাল সোমবার এই রায় দিয়েছেন।
রায়ে বলা হয়, সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রায় ঘোষণার তারিখ থেকে সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় আবুলকে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের কক্ষ থেকে সরাসরি আদালতে নেওয়া হয়। আসামির উপস্থিতিতে বিচারক রায় পড়ে শোনান। রায় শুনে এজলাসেই আবুল সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পুলিশ সদস্যরা তাঁকে আদালত ভবনের নিচে নিয়ে আসেন। পরে গাড়িযোগে তাঁকে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত, এজাহার ও নিহত ব্যক্তির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার কালুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা ও সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অফিসার সরদার শাহজাহানের বড় মেয়ে শারমিন জাহান। ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তাঁর বিয়ে হয় জসিম উদ্দিন আনোয়ার ওরফে সোহেল তালুকদারের সঙ্গে। ওই বছর তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকার চাকরি পান। তাঁর কর্মস্থল ছিল উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যাতায়াতের সুবিধার্থে উপজেলা সদরের গৈলায় বাসা ভাড়া নিয়ে বোন আইরিন জাহান ইমুসহ তিনি বসবাস করতেন।
শারমিনের স্বামী সোহেল বলেন, 'মধ্য শিহিপাশা গ্রামের আকু গোমস্তার বখাটে ছেলে ও গৈলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল গোমস্তা (৩২) গত বছরের জুলাই থেকে মোবাইল ফোনে শারমিনকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথেও পথরোধ করে শারমিনকে সে যৌন হয়রানি করত। একপর্যায়ে শারমিন আগৈলঝাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রস্তাবে রাজি না হলে আবুল যে শারমিনকে হত্যার হুমকি দিয়েছে সে কথাও জিডিতে উল্লেখ করা হয়।'
সাইফুল আরো জানান, এ ঘটনায় গৈলা বাজারে একাধিকবার সালিসের মাধ্যমে আবুলকে জুতাপেটাসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে গৈলা বাজারের পশ্চিম পাশে এলে ওত পেতে থাকা আবুল গোমস্তা পথরোধ করে ধারালো ছুরি দিয়ে শারমিনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিলে চিকিৎসক শারমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে শারমিনকে হত্যা করার পর স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে বখাটে আবুলকে রক্তমাখা ছোরাসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় শারমিনের বাবা আবুল গোমস্তাকে আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
আদালতে আবুল খুনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া থানার এসআই আলী আহমেদ আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র অনুযায়ী পূর্ব সুজনকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাকসুদা বেগম, শিক্ষার্থী জুঁই, স্থানীয় নূপুর বেগম, ইউপি সদস্য হানিফ সরদারসহ ২২ জনকে সাক্ষী করা হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি একমাত্র আসামির উপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিচারক অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের আগে আবুলের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম সলিমুল্লাহ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রের খরচে প্রবীণ আইনজীবী মো. সামসুদ্দিনকে নিয়োগের আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গিয়াস উদ্দিন কাবুলকে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ২৪ কার্যদিবসে অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। পিপি কাবুল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
শারমিনের বাবা সরদার শাহজাহান গতকাল রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি রায় দ্রুত কার্যকর করার অনুরোধ জানান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সামসুদ্দিন রায়ের পর বলেন, এই মামলার ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই। আসামি আবুল গোমস্তার জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
রায় ঘোষণার সময় স্কুলের কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা নূপুর বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মুই আবুলরে খুন হরতে দ্যাখছি। তখন ম্যাডামের লইগ্যা মোর কষ্ট হইছিল। খুনির ফাঁসি হওয়ায় হেই কষ্ট দেল (হৃদয়) হইতে মুইছা গ্যাছে।' শিক্ষার্থী জুঁই বলে, 'স্যারের হত্যাকারীর ফাঁসির রায় হওয়ায় আমরা খুশি।' শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, 'এই রায়ে আমরা খুশি। এখন রায় দ্রুত কার্যকর হওয়া দেখতে চাই।'
আসামি যা বললেন : রায় ঘোষণার আগে পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামির সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। খুনের কথা অস্বীকার করে আসামি আবুল বলেন, 'ফাঁসি হইলেও মুই উচ্চ আদালতে যামু না। আর যামুই বা কী দিয়া? মোর তো ট্যাহা-পয়সা নাই। দুই ভাই, দুই বোন থাইক্যাও নাই। হ্যারা একটা বারও মোরে দ্যাখতে আয় নাই।' আবুল জানান, প্রায় তিন মাস আগে তাঁর স্ত্রীর ছেলেসন্তান হয়েছে। স্ত্রী অসুস্থ বলে জেলে দেখা করতে আসেননি। আর মা-ও অসুস্থ।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় আবুলকে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের কক্ষ থেকে সরাসরি আদালতে নেওয়া হয়। আসামির উপস্থিতিতে বিচারক রায় পড়ে শোনান। রায় শুনে এজলাসেই আবুল সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পুলিশ সদস্যরা তাঁকে আদালত ভবনের নিচে নিয়ে আসেন। পরে গাড়িযোগে তাঁকে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত, এজাহার ও নিহত ব্যক্তির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার কালুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা ও সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অফিসার সরদার শাহজাহানের বড় মেয়ে শারমিন জাহান। ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তাঁর বিয়ে হয় জসিম উদ্দিন আনোয়ার ওরফে সোহেল তালুকদারের সঙ্গে। ওই বছর তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকার চাকরি পান। তাঁর কর্মস্থল ছিল উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যাতায়াতের সুবিধার্থে উপজেলা সদরের গৈলায় বাসা ভাড়া নিয়ে বোন আইরিন জাহান ইমুসহ তিনি বসবাস করতেন।
শারমিনের স্বামী সোহেল বলেন, 'মধ্য শিহিপাশা গ্রামের আকু গোমস্তার বখাটে ছেলে ও গৈলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল গোমস্তা (৩২) গত বছরের জুলাই থেকে মোবাইল ফোনে শারমিনকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথেও পথরোধ করে শারমিনকে সে যৌন হয়রানি করত। একপর্যায়ে শারমিন আগৈলঝাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রস্তাবে রাজি না হলে আবুল যে শারমিনকে হত্যার হুমকি দিয়েছে সে কথাও জিডিতে উল্লেখ করা হয়।'
সাইফুল আরো জানান, এ ঘটনায় গৈলা বাজারে একাধিকবার সালিসের মাধ্যমে আবুলকে জুতাপেটাসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে গৈলা বাজারের পশ্চিম পাশে এলে ওত পেতে থাকা আবুল গোমস্তা পথরোধ করে ধারালো ছুরি দিয়ে শারমিনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিলে চিকিৎসক শারমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে শারমিনকে হত্যা করার পর স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে বখাটে আবুলকে রক্তমাখা ছোরাসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় শারমিনের বাবা আবুল গোমস্তাকে আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
আদালতে আবুল খুনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া থানার এসআই আলী আহমেদ আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র অনুযায়ী পূর্ব সুজনকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাকসুদা বেগম, শিক্ষার্থী জুঁই, স্থানীয় নূপুর বেগম, ইউপি সদস্য হানিফ সরদারসহ ২২ জনকে সাক্ষী করা হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি একমাত্র আসামির উপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিচারক অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের আগে আবুলের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম সলিমুল্লাহ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রের খরচে প্রবীণ আইনজীবী মো. সামসুদ্দিনকে নিয়োগের আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গিয়াস উদ্দিন কাবুলকে। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ২৪ কার্যদিবসে অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। পিপি কাবুল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
শারমিনের বাবা সরদার শাহজাহান গতকাল রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি রায় দ্রুত কার্যকর করার অনুরোধ জানান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সামসুদ্দিন রায়ের পর বলেন, এই মামলার ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই। আসামি আবুল গোমস্তার জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
রায় ঘোষণার সময় স্কুলের কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা নূপুর বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মুই আবুলরে খুন হরতে দ্যাখছি। তখন ম্যাডামের লইগ্যা মোর কষ্ট হইছিল। খুনির ফাঁসি হওয়ায় হেই কষ্ট দেল (হৃদয়) হইতে মুইছা গ্যাছে।' শিক্ষার্থী জুঁই বলে, 'স্যারের হত্যাকারীর ফাঁসির রায় হওয়ায় আমরা খুশি।' শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, 'এই রায়ে আমরা খুশি। এখন রায় দ্রুত কার্যকর হওয়া দেখতে চাই।'
আসামি যা বললেন : রায় ঘোষণার আগে পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামির সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। খুনের কথা অস্বীকার করে আসামি আবুল বলেন, 'ফাঁসি হইলেও মুই উচ্চ আদালতে যামু না। আর যামুই বা কী দিয়া? মোর তো ট্যাহা-পয়সা নাই। দুই ভাই, দুই বোন থাইক্যাও নাই। হ্যারা একটা বারও মোরে দ্যাখতে আয় নাই।' আবুল জানান, প্রায় তিন মাস আগে তাঁর স্ত্রীর ছেলেসন্তান হয়েছে। স্ত্রী অসুস্থ বলে জেলে দেখা করতে আসেননি। আর মা-ও অসুস্থ।
No comments