একাত্তরের ১০ এপ্রিলের ঐতিহাসিক তাৎপর্য by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
প্রতিটি রাষ্ট্রেই জাতীয় দিবস হিসেবে এক বা একাধিক দিবস পালিত হয়ে থাকে। যেমন- আমরা ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বর পালন করে থাকি। তবে এর বাইরেও কিছু দিবস আছে, যার গুরুত্ব ও তাৎপর্য খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অনেক রক্তক্ষয় ঘটে।
তার চেয়ে বড় কথা, এটি অর্জনের পথ অনেক দীর্ঘ। অনেক সোপান পেরিয়ে আসতে হয়। আমরা আমাদের ইতিহাস নিয়েই আলোচনা করি।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের কাছ থেকে প্রথম আঘাত আসে আমাদের ভাষার ওপর। তৎকালীন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ আমরা পূর্ব পাকিস্তানবাসী। আমাদের ভাষা বাংলা। এখন পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে চারটি প্রদেশ যথা- সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ। এর কোনো অঞ্চলের ভাষা ছিল না উর্দু। অথচ পাকিস্তানের জনক জিন্নাহ ঘোষণা দিলেন যে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। জিন্নাহ তুখোড় আইনজীবী এবং একজন অতীব জ্ঞানী রাজনীতিক হয়েও কেন নির্বোধের মতো এ রকম ঘোষণা দিয়েছিলেন জানি না। অবশ্য তৎকালীন যেসব রাজনীতিকের ওপর পূর্ব বাংলার মানুষ অগাধ আস্থা রেখেছিল, ভাষা আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল লজ্জাজনক। বাংলার আপামর জনতার সমর্থন নিয়ে তরুণ ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে বিজয় আসে। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য প্রথম এবং প্রধান সোপান স্থাপিত হয় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর এক এক করে আসে বিভিন্ন আন্দোলন। যেমন- '৬২-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। এরপর '৬৪-তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব বাঙালির মুক্তি সনদ ছয় দফার ঘোষণা দেন। তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু হননি। এই ছয় দফা ঘিরে গোটা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের ঢেউ ছড়াতে থাকে শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে। আইয়ুব-মোনেমের নির্যাতন বাঙালিকে দমাতে পারেনি। ১৯৬৯ সালে হলো গণ-অভ্যুত্থান। পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুব বিতাড়িত হলেন। ইতিমধ্যে শেখ মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। '৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ বিপুলভাবে ম্যান্ডেট দিল ছয় দফা বাস্তবায়িত করার জন্য। একাত্তরের ১ মার্চ যখন পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দিলেন, সেদিনই পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটল। তখন জনগণই একধাপ এগিয়ে এসে বলল, এক দাবি এক দফা- বাংলার স্বাধীনতা। আর অপেক্ষা করল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের। এলো ৭ই মার্চ ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু বললেন, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। এর আগে বঙ্গবন্ধু কখনো জনতার সামনে স্বাধীনতা কথাটা উচ্চারণ করেননি। সেদিন করলেন। কেননা সেদিন লাখো জনতার চোখের ভাষা এবং তাঁর মনের কথা এক সুরে মিলে গেল। তিনি ঘোষণা দিয়ে বললেন যে এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু বললেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। জয়দেবপুরের প্রতিরোধ এর প্রমাণ যে জনতা স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চই হওয়া উচিত ছিল আমাদের স্বাধীনতা দিবস। তাহলে আজ আর এ রকম নিকৃষ্ট এবং হাস্যকর কথা শুনতে হতো না যে একজন সরকারি কর্মকর্তার (তাও আবার মধ্যম পদমর্যাদার) ঘোষণায় স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকা এবং বস্তি। এই বস্তির সহস্র জনতা শরিক হতো বাঙালির দাবি আদায়ের মিছিলে। বাকিরা ধানমণ্ডি, গুলশান ও বনানী থেকে; সেখানে হামলা চালায়নি। হামলা চালায়নি বেইলি রোড ও মিন্টো রোডে। কেননা তারা জানত যে এখানে যারা থাকবে, তাদের বেশির ভাগ চলে আসবে পাকিস্তানিদের সঙ্গে। ঘটেছেও তা-ই। ৯ মাস যুদ্ধ চলেছে কৃষক-শ্রমিক ও ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে। আমলাদের খুব কমসংখ্যক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছে। এখানে একটা ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন। একাত্তর সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন এম ভিভি গিরি। সম্ভবত '৭৪-এ তিনি ঢাকায় আসেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনায় বহু উচ্চপদস্থ আমলার আসন শূন্য ছিল। তারা তো সবই লাহোরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেখানে শেখানো হয়েছে- ভারত হিন্দুরাষ্ট্র, তাদের অবজ্ঞা করো। সেই মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সেই অনুষ্ঠানে। তৎকালীন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাকে বিভিন্নভাবে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন বাঙালি টেলিফোন অপারেটররা। আমি নিজের কথাই বলি। সে সময় আমি বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলাম ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পিসিওতে একটি ফোন ছিল। ডাল ঘোঁটার মতো ঘুটতে হলো। সেই পিসিওর অপারেটর কাকডাকা ভোরে আমার সঙ্গে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক শহীদ শামসুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। জনাব শামসুদ্দীনের মুখে শুনলাম, ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার কথা। তাঁর নেতৃত্বে আমি এক মাস আমার এলাকায় কাজ করেছি মুক্তিযুদ্ধের সময়।
একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। কিন্তু কোনো সমন্বিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। বিবিসি, ভোয়া এবং আকাশবাণী ছিল খবরের উৎস। বঙ্গবন্ধু বাইরে, না পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি- এ নিয়েও বিভ্রান্তি কাটল কয়েক দিন পর। বাকি নেতারা কে কোথায় তা বুঝতে পারছিলাম না। মাঝেমধ্যে দু-একবার আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যদের আত্মসমর্পণের খবর পাওয়া যেত, যা আমাদের আরো হতাশ করত। আমরা জানি যে এ রকম পরিস্থিতিতে একটি নির্বাসিত সরকার হলেও তার প্রয়োজন। অথচ কোথাও কিছু নেই। মনে হতে লাগল যে গাঢ় কালো মেঘ যেন ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে। ঠিক এ অবস্থা চলতে চলতে কালো মেঘ ছিন্ন করে একাত্তরের ১০ এপ্রিল আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা দিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। খুব সংক্ষেপে বলা হয়েছে, কী কারণে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো এবং বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার কথা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ওই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্র স্থাপনের কথা বলতে পারেননি। একাত্তরের ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একত্রে বসে দৃঢ়ভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে পাকিস্তান এই যুদ্ধ তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং তারা আক্রমণকারী। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে এই যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আরো উল্লেখ্য যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাঁদের সমন্বয়ে নিজেদের গণপরিষদের প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় জাতিসংঘের সনদ মেনে চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। কিছুসংখ্যক দালাল, রাজাকার এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও মুসলিম লীগের সদস্য ছাড়া আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। আগেই উল্লেখ করেছি যে একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বাংলার মানুষ আর পাকিস্তানকে স্বীকার করেনি। অতএব একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে তারা সর্বাত্মকভাবে লড়তে থাকে। তখন একটি জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলো। তা হলো- কমান্ড, নির্দেশনা ও একটি সরকার। আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্যও এর প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষাপটে একাত্তরের ১০ এপ্রিলের ঘোষণা জাতিকে প্রচণ্ডভাবে উজ্জীবিত করে তোলে। কেননা সবাই বিক্ষিপ্তভাবে লড়লেও একটা কেন্দ্রীয় কমান্ডের তখন খুব প্রয়োজন ছিল। নইলে তো ধীরে ধীরে গোষ্ঠীস্বার্থের অভ্যুদয় ঘটতো। অতএব, ১০ এপ্রিলের ঘোষণা দিয়ে আমাদের নেতারা অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলার স্বাধীনতাযুদ্ধে জয়ী হওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করা ছাড়া আর যে তাঁদের কোনো লক্ষ্যই থাকতে পারে না, এটিই প্রমাণিত হয়েছিল ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ওই ঘোষণার পরিপূর্ণতা লাভ করে ১৭ এপ্রিল, যখন মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু রইলেন রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী। অন্য সদস্যরা হলেন- এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং খন্দকার মোশতাক আহমদ। যিশুখ্রিস্টের শিষ্যদের ভেতর বিশ্বাসঘাতক ছিলেন জুডিথ। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে তেমনি খন্দকার মোশতাক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করার ফলে মূল চার স্তম্ভের তিনটি পূরণ হয়। যেমন- নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানা, জনগোষ্ঠী এবং সরকার। বাকি রইল সার্বভৌমত্ব। যেটি পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধ চালাতে হয়েছে। জাতীয় দিবস না হলেও ১০ এপ্রিলকে আমাদের পূর্ণ মর্যাদায় পালন করা প্রয়োজন। এই ঘোষণার অন্যতম প্রণেতা হলেন প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তিনি একসময় সংসদ সদস্য ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতিতে চলার কালে অনেক সময় কিছু মতপার্থক্য আসতে পারে। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তাদের এটুকু মনে রাখা প্রয়োজন- যতক্ষণ কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তাঁরা আমাদের বরণীয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ওয়াশিংটন। তাঁকে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন অ্যাডামস, জেফারসন, ম্যাডিসন এবং আরো অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম যে দৃঢ়ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, তা বলতে গেলে জর্জ ওয়াশিংটনের একার নাম বললে হয় না, সঙ্গে সঙ্গে বলতে হয় জেফারসন ও ম্যাডিসনের কথা। সে কারণে জর্জ ওয়াশিংটন পর পর দুবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েও তৃতীয়বার নির্বাচিত হননি। তখন কিন্তু কোনো সাংবিধানিক বাধা ছিল না। এটি আরোপ করা হয় ১৯৫১-৫২ সালে। বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা এবং হাজার বছরের সেরা বাঙালি। কিন্তু তিনি তো মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। এরপর ৭ই মার্চের ঘোষণা অনুযায়ী বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যায়। কিন্তু কমান্ডের প্রয়োজন হয়। আর সেটি দিয়েছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছেন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মন্ত্রিসভার অপর দুই সদস্য- মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান। মোশতাকের অন্তর্ঘাতমূলক কাজকেও সামলাতে হয়েছে মুজিবনগর সরকারকে। সব শেষে বলা দরকার, ইতিহাস বিকৃতি যেমন খারাপ, তেমনি খারাপ ইতিহাস কুক্ষিগত করার মানসিকতাও। কেননা ফলাফল একই হয়। প্রকৃত ইতিহাস জানা কঠিন হয়। জাতীয় চার নেতা কতখানি দেশপ্রেমিক ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি কতটা আনুগত্য ছিল, তা তো তাঁরা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করলেন।
লেখক : সাবেক সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,
মুজিবনগর সরকার ও কলামিস্ট।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের কাছ থেকে প্রথম আঘাত আসে আমাদের ভাষার ওপর। তৎকালীন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ আমরা পূর্ব পাকিস্তানবাসী। আমাদের ভাষা বাংলা। এখন পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে চারটি প্রদেশ যথা- সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ। এর কোনো অঞ্চলের ভাষা ছিল না উর্দু। অথচ পাকিস্তানের জনক জিন্নাহ ঘোষণা দিলেন যে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। জিন্নাহ তুখোড় আইনজীবী এবং একজন অতীব জ্ঞানী রাজনীতিক হয়েও কেন নির্বোধের মতো এ রকম ঘোষণা দিয়েছিলেন জানি না। অবশ্য তৎকালীন যেসব রাজনীতিকের ওপর পূর্ব বাংলার মানুষ অগাধ আস্থা রেখেছিল, ভাষা আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল লজ্জাজনক। বাংলার আপামর জনতার সমর্থন নিয়ে তরুণ ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে বিজয় আসে। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য প্রথম এবং প্রধান সোপান স্থাপিত হয় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর এক এক করে আসে বিভিন্ন আন্দোলন। যেমন- '৬২-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন। এরপর '৬৪-তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব বাঙালির মুক্তি সনদ ছয় দফার ঘোষণা দেন। তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু হননি। এই ছয় দফা ঘিরে গোটা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের ঢেউ ছড়াতে থাকে শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে। আইয়ুব-মোনেমের নির্যাতন বাঙালিকে দমাতে পারেনি। ১৯৬৯ সালে হলো গণ-অভ্যুত্থান। পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুব বিতাড়িত হলেন। ইতিমধ্যে শেখ মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। '৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ বিপুলভাবে ম্যান্ডেট দিল ছয় দফা বাস্তবায়িত করার জন্য। একাত্তরের ১ মার্চ যখন পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দিলেন, সেদিনই পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটল। তখন জনগণই একধাপ এগিয়ে এসে বলল, এক দাবি এক দফা- বাংলার স্বাধীনতা। আর অপেক্ষা করল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের। এলো ৭ই মার্চ ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু বললেন, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। এর আগে বঙ্গবন্ধু কখনো জনতার সামনে স্বাধীনতা কথাটা উচ্চারণ করেননি। সেদিন করলেন। কেননা সেদিন লাখো জনতার চোখের ভাষা এবং তাঁর মনের কথা এক সুরে মিলে গেল। তিনি ঘোষণা দিয়ে বললেন যে এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু বললেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। জয়দেবপুরের প্রতিরোধ এর প্রমাণ যে জনতা স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চই হওয়া উচিত ছিল আমাদের স্বাধীনতা দিবস। তাহলে আজ আর এ রকম নিকৃষ্ট এবং হাস্যকর কথা শুনতে হতো না যে একজন সরকারি কর্মকর্তার (তাও আবার মধ্যম পদমর্যাদার) ঘোষণায় স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকা এবং বস্তি। এই বস্তির সহস্র জনতা শরিক হতো বাঙালির দাবি আদায়ের মিছিলে। বাকিরা ধানমণ্ডি, গুলশান ও বনানী থেকে; সেখানে হামলা চালায়নি। হামলা চালায়নি বেইলি রোড ও মিন্টো রোডে। কেননা তারা জানত যে এখানে যারা থাকবে, তাদের বেশির ভাগ চলে আসবে পাকিস্তানিদের সঙ্গে। ঘটেছেও তা-ই। ৯ মাস যুদ্ধ চলেছে কৃষক-শ্রমিক ও ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে। আমলাদের খুব কমসংখ্যক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছে। এখানে একটা ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন। একাত্তর সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন এম ভিভি গিরি। সম্ভবত '৭৪-এ তিনি ঢাকায় আসেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনায় বহু উচ্চপদস্থ আমলার আসন শূন্য ছিল। তারা তো সবই লাহোরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেখানে শেখানো হয়েছে- ভারত হিন্দুরাষ্ট্র, তাদের অবজ্ঞা করো। সেই মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সেই অনুষ্ঠানে। তৎকালীন প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাকে বিভিন্নভাবে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন বাঙালি টেলিফোন অপারেটররা। আমি নিজের কথাই বলি। সে সময় আমি বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলাম ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পিসিওতে একটি ফোন ছিল। ডাল ঘোঁটার মতো ঘুটতে হলো। সেই পিসিওর অপারেটর কাকডাকা ভোরে আমার সঙ্গে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক শহীদ শামসুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। জনাব শামসুদ্দীনের মুখে শুনলাম, ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার কথা। তাঁর নেতৃত্বে আমি এক মাস আমার এলাকায় কাজ করেছি মুক্তিযুদ্ধের সময়।
একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। কিন্তু কোনো সমন্বিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। বিবিসি, ভোয়া এবং আকাশবাণী ছিল খবরের উৎস। বঙ্গবন্ধু বাইরে, না পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি- এ নিয়েও বিভ্রান্তি কাটল কয়েক দিন পর। বাকি নেতারা কে কোথায় তা বুঝতে পারছিলাম না। মাঝেমধ্যে দু-একবার আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যদের আত্মসমর্পণের খবর পাওয়া যেত, যা আমাদের আরো হতাশ করত। আমরা জানি যে এ রকম পরিস্থিতিতে একটি নির্বাসিত সরকার হলেও তার প্রয়োজন। অথচ কোথাও কিছু নেই। মনে হতে লাগল যে গাঢ় কালো মেঘ যেন ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে। ঠিক এ অবস্থা চলতে চলতে কালো মেঘ ছিন্ন করে একাত্তরের ১০ এপ্রিল আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা দিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। খুব সংক্ষেপে বলা হয়েছে, কী কারণে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো এবং বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার কথা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ওই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্র স্থাপনের কথা বলতে পারেননি। একাত্তরের ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একত্রে বসে দৃঢ়ভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে পাকিস্তান এই যুদ্ধ তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং তারা আক্রমণকারী। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে এই যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আরো উল্লেখ্য যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাঁদের সমন্বয়ে নিজেদের গণপরিষদের প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় জাতিসংঘের সনদ মেনে চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। কিছুসংখ্যক দালাল, রাজাকার এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও মুসলিম লীগের সদস্য ছাড়া আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। আগেই উল্লেখ করেছি যে একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বাংলার মানুষ আর পাকিস্তানকে স্বীকার করেনি। অতএব একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে তারা সর্বাত্মকভাবে লড়তে থাকে। তখন একটি জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলো। তা হলো- কমান্ড, নির্দেশনা ও একটি সরকার। আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্যও এর প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষাপটে একাত্তরের ১০ এপ্রিলের ঘোষণা জাতিকে প্রচণ্ডভাবে উজ্জীবিত করে তোলে। কেননা সবাই বিক্ষিপ্তভাবে লড়লেও একটা কেন্দ্রীয় কমান্ডের তখন খুব প্রয়োজন ছিল। নইলে তো ধীরে ধীরে গোষ্ঠীস্বার্থের অভ্যুদয় ঘটতো। অতএব, ১০ এপ্রিলের ঘোষণা দিয়ে আমাদের নেতারা অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলার স্বাধীনতাযুদ্ধে জয়ী হওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করা ছাড়া আর যে তাঁদের কোনো লক্ষ্যই থাকতে পারে না, এটিই প্রমাণিত হয়েছিল ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ওই ঘোষণার পরিপূর্ণতা লাভ করে ১৭ এপ্রিল, যখন মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু রইলেন রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী। অন্য সদস্যরা হলেন- এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং খন্দকার মোশতাক আহমদ। যিশুখ্রিস্টের শিষ্যদের ভেতর বিশ্বাসঘাতক ছিলেন জুডিথ। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে তেমনি খন্দকার মোশতাক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করার ফলে মূল চার স্তম্ভের তিনটি পূরণ হয়। যেমন- নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানা, জনগোষ্ঠী এবং সরকার। বাকি রইল সার্বভৌমত্ব। যেটি পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধ চালাতে হয়েছে। জাতীয় দিবস না হলেও ১০ এপ্রিলকে আমাদের পূর্ণ মর্যাদায় পালন করা প্রয়োজন। এই ঘোষণার অন্যতম প্রণেতা হলেন প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তিনি একসময় সংসদ সদস্য ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতিতে চলার কালে অনেক সময় কিছু মতপার্থক্য আসতে পারে। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তাদের এটুকু মনে রাখা প্রয়োজন- যতক্ষণ কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তাঁরা আমাদের বরণীয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ওয়াশিংটন। তাঁকে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন অ্যাডামস, জেফারসন, ম্যাডিসন এবং আরো অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম যে দৃঢ়ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, তা বলতে গেলে জর্জ ওয়াশিংটনের একার নাম বললে হয় না, সঙ্গে সঙ্গে বলতে হয় জেফারসন ও ম্যাডিসনের কথা। সে কারণে জর্জ ওয়াশিংটন পর পর দুবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েও তৃতীয়বার নির্বাচিত হননি। তখন কিন্তু কোনো সাংবিধানিক বাধা ছিল না। এটি আরোপ করা হয় ১৯৫১-৫২ সালে। বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা এবং হাজার বছরের সেরা বাঙালি। কিন্তু তিনি তো মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। এরপর ৭ই মার্চের ঘোষণা অনুযায়ী বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যায়। কিন্তু কমান্ডের প্রয়োজন হয়। আর সেটি দিয়েছেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছেন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মন্ত্রিসভার অপর দুই সদস্য- মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান। মোশতাকের অন্তর্ঘাতমূলক কাজকেও সামলাতে হয়েছে মুজিবনগর সরকারকে। সব শেষে বলা দরকার, ইতিহাস বিকৃতি যেমন খারাপ, তেমনি খারাপ ইতিহাস কুক্ষিগত করার মানসিকতাও। কেননা ফলাফল একই হয়। প্রকৃত ইতিহাস জানা কঠিন হয়। জাতীয় চার নেতা কতখানি দেশপ্রেমিক ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি কতটা আনুগত্য ছিল, তা তো তাঁরা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করলেন।
লেখক : সাবেক সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,
মুজিবনগর সরকার ও কলামিস্ট।
No comments