বিশেষ সাক্ষাৎকার-সরকারের জন্য আগামী অর্থবছর হবে বেশি চ্যালেঞ্জিং by দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৫৬ সালে। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ, মস্কোর প্লেখানভ ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল ইকোনমি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। কাজ করেছেন বিআইডিএস, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও ইউএনডিপিসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।


বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত। পরের দুই বছর জেনেভায় ডব্লিউটিও এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, আঙ্কটাডের সেক্রেটারি জেনারেলের স্বল্পোন্নত দেশবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন ২০০৯-১০ সালে। এখন সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া

প্রথম আলো  বর্তমান সরকারের মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো বাজেটের সময় আসছে। আর্থিক নীতি ইত্যাদি বিবেচনায় সরকারের দুই বছরের বেশি সময় কেমন চলল?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  ২০১০-১১ অর্থবছর শেষ হতে চলেছে। সরকার তার মেয়াদের প্রায় অর্ধেক সময় অতিক্রম করবে এর মধ্য দিয়ে। এই সময়কালের বেশির ভাগই নীতি প্রণয়ন ও নানা উদ্যোগ-আয়োজনের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক ফলাফল পর্যালোচনা করে বলতে হয়, এ সময় সরকারের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন, ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে শক্তি ও দুর্বলতা দুই দিকই প্রকাশ পেয়েছে। বলা যায়, বর্তমান সরকারের শাসনকালের সূর্য এখন মধ্য গগনে। তাই সরকারের মেয়াদকালের দ্বিতীয় ভাগ ক্রমান্বয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রথম আলো  শক্তির দিকগুলো কী?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  প্রথমেই বলতে হয়, এই সময়ে সরকার বিশ্বমন্দা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। ৫.৫ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র কৃষি বা গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। রাজস্ব আহরণে সাফল্য এসেছে। একই সঙ্গে রপ্তানির পতনকেও ঘুরে দাঁড় করানো গেছে।
প্রথম আলো  আর দুর্বলতার দিকগুলো?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  দুর্বলতার মূল দিকটি হচ্ছে শিল্পে বিনিয়োগ আশানুরূপভাবে তেজি না হওয়া। এর জন্য অবশ্য প্রধানত দায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঘাটতিজনিত সমস্যা। এই খাতে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্যদিকে সরকারের নীতি কার্যকর করার মূল হাতিয়ার, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুভব করার মতো কোনো উন্নতি ঘটেনি। তবে দেশের অর্থনীতির শক্তি ও দুর্বলতার যে মিশ্র চিত্রটির কথা বলছি, সেখানে কিন্তু বর্তমান অর্থবছরের দ্বিতীয় ভাগ থেকে নতুন কিছু চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ২০১১-১২ অর্থবছরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে হয়তো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।
প্রথম আলো  এর একটি কারণ কি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি অন্যতম। গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি থাকবে এবং আগামী বছরও এই চাপ অব্যাহত থাকবে। আগামী বছর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেরও মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে সুদের হার বেড়ে যাওয়া ও টাকার বিনিময় হার কমে যাওয়ার প্রবণতা। তবে এসবই উপসর্গ। মূল কারণ হচ্ছে অর্থনীতির বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বৃদ্ধি, সরকারি আয়-ব্যয় কাঠামোতে ভারসাম্য কমে যাওয়া এবং ব্যাংকিং ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা। তাই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধি বেগবান করা এবং আগামী বাজেটের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করা—এই তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে আগামী বছরের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন নেতিবাচক পূর্বাভাস এই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে।
প্রথম আলো  বর্তমান সরকার সাধারণভাবে যে অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করে চলেছে, সেখানে কোনো সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন কি?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কাঠামোতে যেসব বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে সেগুলোকে আমি সঠিক বলে মনে করি। যেমন: খাদ্যনিরাপত্তা, জ্বালানিসংকট, দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্পদপ্রবাহ বাড়ানো, কর সংগ্রহ জোরদার করা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থাকে উন্নত করা এবং রপ্তানি ও অনাবাসী আয় বৃদ্ধি—এগুলো সবই ইতিবাচক নীতিরই প্রতিফলন।
প্রথম আলো  সমস্যা কি তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতার অভাব?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  অর্থনৈতিক নীতিতে প্রাধিকারগুলো ঠিক থাকলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রাক-প্রস্তুতির অভাব, সরকারের ভেতর সমন্বয়ের ঘাটতি, মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতার ঘাটতি ও উন্নয়ন প্রশাসনের দুর্বলতা—এগুলোই বেশ বড় প্রতিবন্ধকতা।
প্রথম আলো  দুর্নীতি?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  দুর্নীতির বিষয়টি যথোপযুক্ত মনোযোগ না পাওয়ায় এই পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই আরও জটিল হয়েছে। এটি তৃণমূল পর্যায় থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত সত্য। এ ছাড়া সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত। উপরন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রেই যৌক্তিক অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কার্যকর স্থানীয় সরকার কাঠামো গড়ে না তোলায় তৃণমূল পর্যায়ে সম্পদ সঞ্চালন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততর করা যাচ্ছে না।
প্রথম আলো  আপনি বলেছেন, সরকারের নীতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু আপনিই বললেন, এই খাতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্থাপিত প্রায় ৭০০ মেগাওয়াটসহ বর্তমান সরকারের আমলে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলেও দৃশ্যমান উন্নতি চোখে পড়েনি। একটি হিসাব দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। গত বছরের আগস্টে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল চার হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট, এ বছরের ১১ এপ্রিল বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল চার হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট। দেখা যাচ্ছে প্রকৃত প্রবাহ বাড়েনি। এর কারণ পিডিবির অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোনো হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনক্ষমতা কমেছে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়মিত বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে বাড়তি যে বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে, তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ চাহিদা তো বছরে প্রায় ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকার বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়টি মেনে নিয়ে ‘কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলো নির্ধারিত সময় উৎপাদনে যেতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে, মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় ৪০০-৫০০ মেগাওয়াটের বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে না পারা। একই সঙ্গে গ্যাস সরবরাহও অপ্রতুল।
প্রথম আলো  কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে অর্থ বরাদ্দ তো হয়েছিল যথেষ্ট।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  সমস্যাটা অর্থের নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অর্থ বরাদ্দ চলমান অর্থবছরে প্রায় ৬১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পিডিবির পুরোনো কেন্দ্রগুলো আধুনিকায়নে ও নতুন বড় স্থাপনা গড়ে তোলায় অনেক সময় ক্ষেপণ করেছে। সরকার চিন্তা করছে, কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কিন্তু এর জন্য অবকাঠামোগত প্রস্তুতি নেই। এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বাপেক্সকে যুক্ত করে স্থলভাগে ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ না নেওয়ায় সরকারের বড় ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের এই অব্যাহত সংকটময় পরিস্থিতি অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উচ্চমূল্যে তরল জ্বালানি আমদানির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর যেমন চাপ পড়ছে, এই খাতে প্রভূত ভর্তুকির কারণে রাজস্ব ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট ভর্তুকি বরাদ্দ আরও প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়াতে হবে। জ্বালানি আমদানি করতে বাড়তি ব্যয় হবে ১০০ কোটি ডলারের মতো। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে দেওয়া সর্বোচ্চ বরাদ্দ বহুল পরিমাণে অব্যবহূত থেকে যাচ্ছে।
প্রথম আলো  এডিপি বাস্তবায়নের সমস্যার মূল কারণ কী?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল বলে মনে হয়। প্রথম অর্থবছরে (২০০৯-১০) এডিপি বাস্তবায়নের হার কিছুটা বেড়েছিল। বর্তমান অর্থবছরে এসে এর ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। বর্তমান অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মোট বরাদ্দের মাত্র ৪৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যেই সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ নয় শতাংশ কমিয়েছে। এর কারণ বহুবিধ। দেখা যাচ্ছে, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের হার কমছে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ ও সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অত্যন্ত শ্লথ। বরাদ্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের প্রশাসনিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার অভাব বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সার্বিক উন্নয়ন প্রশাসনে একধরনের পেশাগত অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। সর্বোপরি অর্থবছরের শেষাংশে এসে তড়িঘড়ি উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয় করার প্রবণতা থেকে সরকার বের হয়ে আসতে পারেনি। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুণগত মানের নিশ্চয়তা নিয়েও সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়ার পরও কাজ হচ্ছে না।
প্রথম আলো  মনে হয় বিনিয়োগ-পরিস্থিতি নেতিবাচক হওয়ায় কর্মসংস্থান একটি বড় সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে। কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতি কি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে বা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  কৃষি অর্থনীতিতে একধরনের তেজি ভাব থাকার কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কৃষি খাত মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির একটি ক্ষীয়মাণ অংশ। আশির দশকে যেখানে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৩২ শতাংশ, এখন তা ২০ শতাংশের নিচে। অথচ দেশের শ্রমশক্তির প্রায় ৫০ শতাংশ এখানে নিয়োজিত। ফলে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এই খাতে উদ্বৃত্ত শ্রম রয়েছে। বাংলাদেশের কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য এই শ্রমশক্তিকে অন্য উৎপাদনশীল খাতে, বিশেষ করে শিল্প খাতে স্থানান্তর করতে হবে। অধিকতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করার ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাই শিল্প খাতের দ্রুততর উন্নতির কোনো বিকল্প নেই।
প্রথম আলো  শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক ধস ও এর পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  শেয়ারবাজার বিপর্যয় ঘটার আগেই সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। অতিমাত্রায় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এই বিকৃত অর্থনৈতিক প্রবণতাকে সরকার সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি। এসইসি বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে। তবে শুধু এসইসিকে বলির পাঁঠা বানানো ঠিক হবে না। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়—এদের ভূমিকাও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বৃহৎ বিত্তশালী গোষ্ঠী কীভাবে সরকারের একটি অংশের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলল, সেটাও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। এই কলুষ সম্পর্কের রাজনৈতিক-অর্থনীতি যদি সঠিকভাবে অনুধাবন ও মোকাবিলা করা না যায়, তবে অর্থনীতির অন্য খাতেও একই ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। তাই পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নের জন্য তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
প্রথম আলো  ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিট ফি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা বিবেচনায় নিয়ে তা নির্ধারণের কথা বলছেন অনেকে। এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  বাংলাদেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার ভূমিকা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে অবশ্যই আমাদের আঞ্চলিক পরিবহনব্যবস্থা, জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পানিবণ্টনব্যবস্থা এবং সেবা ও শিল্প খাতে বিনিয়োগকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টি এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। আবার বাংলাদেশের পণ্য নেপাল ও ভুটানে পাঠানোর জন্য আমাদেরও ভারতে ট্রানজিট প্রয়োজন। কিন্তু তথাকথিত বিনা শুল্কে ভারতকে ট্রানজিট প্রদান এবং সেই জন্য ডব্লিউটিওর বিধান ও নীতিমালার অপব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না। এটা ঠিক যে ট্রানজিটের মালামালের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করা যায় না, কিন্তু আমাদের বিভিন্ন ধরনের জাতীয় ব্যয়কে ট্রানজিট ফির আওতায় এনে একে কেন উভয় দেশের জন্য লাভজনক করা যাবে না, তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডব্লিউটিওর বিধান প্রাসঙ্গিক বলে আমি মনে করি না। আরও মনে রাখতে হবে, আগামী চার-পাঁচ বছরের আগে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অনুপস্থিতির কারণে সম্পূর্ণ ট্রানজিট চালু করা সম্ভব নয়। অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার।
প্রথম আলো  আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.