হিলির নষ্ট সার-সার না শাঁখের করাত?
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন সার যেভাবে খোলা আকাশের নিচে সাত বছর ধরে পড়ে আছে, তা যেমন উদ্বেগজনক তেমনই কৌতুককরও। অস্বীকার করা যাবে না, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়ার সময় আটক ভারতীয় ওই বিপুল পরিমাণ সার নিম্নমানের।
এগুলো সময়মতো বিক্রি হলে যে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের ঘরে উঠতে পারত, তাও সত্য। কিন্তু তাতে করে দীর্ঘমেয়াদে কৃষিজমির ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। আবার ইতিমধ্যে সারগুলো পচে গিয়ে পরিবেশ দূষণসহ আশপাশের আবাদি জমির ক্ষতি করছে বলে মঙ্গলবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে। একটি উপায় ছিল সারগুলো ধ্বংস করে ফেলা। সে জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় দুই কোটি টাকা; ওই অর্থ চেয়ে পত্র দিলেও বরাদ্দ পাওয়া স্বভাবতই সহজ নয়। অন্যদিকে সারের এ বিশাল স্তূপ হিলি স্থলবন্দরের ব্যাপক জায়গা দখল করে থাকায় আমদানি-রফতানি পণ্য ওঠানামায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা জানি শাঁখের করাত আসতে কাটে, যেতেও কাটে। হিলিতে পড়ে থাকা ওই সার আরেক কাঠি সরেস। এগুলো ফেলে রাখলেও ক্ষতি, ব্যবহার করলেও ক্ষতি; সরানো কিংবা ধ্বংস করার আর্থিক দণ্ডও অনেক। এত টাকা কে দেবে? আমরা মনে করি, হিলির নষ্ট সার নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা আসলে ধারাবাহিক অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার ফল। সংশ্লিষ্টদের উচিত ছিল আটকের সময়ই সারগুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। ভারতীয় সার যে নিম্নমানের এবং তা ব্যবহারে জমির ক্ষতি হয়_ এ তথ্য তাদের জানা না থাকার বিষয়টি বোধগম্য নয়। আসলে চোরাচালান পণ্য আটক করে বিক্রির নামে নয়ছয় করার যে সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে এ হচ্ছে তারই ফল। এগুলো ধ্বংস করার খরচ চোরাচালানকারীর কাছ থেকেই আদায় করা সঙ্গত ছিল। কিন্তু এতদিন পর তা কি সম্ভব? আটক সারগুলো বিক্রি না করে ধ্বংস করার নির্দেশ এবং সে জন্য অর্থ বরাদ্দ চাইতে সাত বছর লেগে যাওয়ার বিষয়টিও আমাদের আমলাতান্ত্রিকতার মহিমা কীর্তনই করে। আমরা আশা করি, বিলম্বে ও কিছুটা আক্কেল সেলামি দিয়ে হলেও পরিবেশ ও কৃষির জন্য ক্ষতিকর সারের স্তূপটি নিকাশ করা হবে।
No comments