চারদলীয় জোট আমলের ‘সেই’ নিয়োগ অবৈধ

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পাঁচটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।


হাইকোর্টের আদেশে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে এই মামলায় পক্ষভুক্ত (চাকরিচ্যুত) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুনরায় আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বয়সসীমার শর্ত শিথিলযোগ্য হবে। তবে যোগ্যতা প্রমাণের জন্য তাঁদেরও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া আইন ও বিধি অনুসারে জাতীয় দৈনিকে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। অপর নির্দেশনায় বলা হয়, ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে যে বেতন-ভাতা নিয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে না।
রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌঁসুলি জাফর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৪ সালের ৫ জানুয়ারি তিনটি এবং ১১ ও ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি পত্রিকাসহ পাঁচটি পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত। ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়ায় তা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাঁচটি পত্রিকার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই সময়ে প্রায় এক হাজার ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিতে নেই। এই রায়ের ফলে প্রায় এক হাজার ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি অবৈধ হলো।
প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা-র্কমচারীর পক্ষের আইনজীবী খায়ের এজাজ মাস্উদ প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
আইনজীবীরা জানান, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সব কর্মকর্তা-কমচারী নিয়োগ পান। ওই নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়া হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট আদালত রুল জারি করেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির পর ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট আদালত রিট আবেদন (রুল ডিসচার্জ) খারিজ করে রায় দেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চে ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন গাজীপুর-১ আসনের সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ২৩ আগস্ট আদালত রায় দেন। ওই রায়ে ওই সব জনবলকে কোনো রকম বিলম্ব ছাড়াই অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া আট শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে দ্বিতীয় এই রায়ের বিরুদ্ধে ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী আপিল বিভাগে পৃথক আপিল অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। চেম্বার বিচারপতির আদালত বিষয়টি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এরপর গত ৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মূল রিট আবেদনটি হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। তিন সপ্তাহ শুনানি শেষে গতকাল আদালত রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিট আবেদন ও পুনর্বিবেচনা আবেদনকারীর (পরে পক্ষভুক্ত) পক্ষে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, আবদুর রব চৌধুরী, এ এম আমিনউদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী জাফর আহমেদ মামলা পরিচালনা করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রফিক-উল হক, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও খায়ের এজাজ মাস্উদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।
পরে বিশ্বজিৎ রায় প্রথম আলোকে বলেন, রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালত আট দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন। নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-সংক্রান্ত জনবল কাঠামো আইনগতভাবে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.