বাংলার বাঘ by শেখ রোকন
আমাদের সুন্দরবনে যখন বাঘের সংখ্যা কমছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওহিওতে টেরি থম্পসনের বাড়িতে তখন রাজকীয় প্রাণীটি একের পর এক জড়ো হচ্ছিল। একটি-দুটি করে ১৮টি! দুর্ভাগ্যবশত সবক'টিই মারা পড়েছে পুলিশের গুলিতে। টাইম ম্যাগাজিনের ভাষ্যকার বলছেন, বিপন্ন প্রজাতির এই বাঘের সংখ্যা এখন পৃথিবীজুড়ে মাত্র আড়াই হাজার।
মানব জাতির সঙ্গে যদি তুলনা করা যায়, এতগুলো রাজকীয় বঙ্গীয় ব্যাঘ্রের মৃত্যু মানে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণহানি।
বিচরণক্ষেত্র যদি বিবেচনা করা যায়; ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের বাইরে আর কোনো দেশে এই প্রজাতির বৃহৎ বিড়াল এত বেশি নেই। কিন্তু খবর তা নয়; কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যেই বাড়িতে হিংস্র বন্যপ্রাণী পালন বিধিসম্মত। আর ওহিওতে তো কেউ কেউ তামাশা করে বলেন, পিট বুল (এক প্রজাতির কুকুর) কেনার চেয়েও বাঘ বা সিংহ কেনা সহজ। ফলে মি. থম্পসনের বাড়িতে বাঘ, সিংহ, ভালুক, বাঁদর আর অজগর মিলিয়ে ৫৬টি বন্যপ্রাণীর বসবাসের সংবাদমূল্য এতদিন ছিল সামান্যই। তিনি ও তার শখের প্রাণীগুলো সিএনএন, টাইম ম্যাগাজিনসহ যুক্তরাষ্ট্রের ছাপা ও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে সম্প্রতি। অক্টোবরের ১৮ তারিখ সব প্রাণী ছেড়ে দেন তিনি এবং আত্মহত্যা করেন। প্রায় জঙ্গলহীন ও ৩০ বর্গ কিলোমিটারের জেনসভিল শহরে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ২৬ হাজার বাসিন্দার মধ্যে দুঃসাহসী কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই খিল এঁটে বসে থাকেন। শেরিফের নেতৃত্বে শুরু হয় অভিযান। ফলাফল_ একটি ভালুক, দুটি বানর ও তিনটি চিতা বাঘ জীবিত ধরা পড়েছে। একটি বানর অপর একটি বাঘের খোরাকে পরিণত হয়েছে। বাকি পশু মরেছে গুলি খেয়ে। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওসহ যুক্তরাষ্ট্রের পশুপ্রেমীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বন্য পশু পালনের অনুমতি দেওয়ার পরিণতি হলো এটি। ওহিওর গভর্নর এমন সুযোগ সীমিত করে ইতিমধ্যেই একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে এত বঙ্গীয় বাঘের প্রাণহানি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তবে এই ঘটনা প্রমাণ করে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা হ্রাস কেবল প্রাকৃতিক নয়। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন উজাড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি বাঘের স্বাভাবিক বসবাসে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বটে, বাঘ পাচারের কারণও সমান দায়ী। অস্বীকার করা যাবে না, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাস কেবল বাংলাদেশে নয়। জেনসভিল শহরে বেঘোরে প্রাণ হারানো বাঘগুলো সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ ছাড়াও উপমহাদেশের বাঘ বিচরণস্থল অন্য দেশগুলো থেকে পাচার হতেই পারে। কিন্তু এর মধ্যে যে আমাদের বাঘও নেই, সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
আমাদের এখানে বাঘ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বসতি বিনষ্ট ইত্যাদি নিয়ে যত কথা হয়, তার সিকিভাগও বাঘ পাচার নিয়ে হয় না। কিন্তু বাঘ পাচারের যে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক, আমরা তা থেকে মুক্ত_ এমনটা বিশ্বাস করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা সমান কথা। বাঘ পাচার বন্ধ করার জন্য ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে। কিন্তু তাতে পাচার সামলানো গেছে বলে জানা যায় না। কারণ মিলিয়ন ডলারের এ ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কেবল ভয়ঙ্করই নয়, ভয়ঙ্কর কৌশলীও। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাঘ-কসাইরা প্রায় প্রতিটি অপারেশনেই নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে।
আমাদের দেশে শিকারির কৌশল মোকাবেলা দূরে থাক, বাঘ যে পাচার হচ্ছে কিংবা হতে পারে_ তা নিয়েই তো কথাবার্তা নেই!
skrokon@gmail.com
বিচরণক্ষেত্র যদি বিবেচনা করা যায়; ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের বাইরে আর কোনো দেশে এই প্রজাতির বৃহৎ বিড়াল এত বেশি নেই। কিন্তু খবর তা নয়; কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যেই বাড়িতে হিংস্র বন্যপ্রাণী পালন বিধিসম্মত। আর ওহিওতে তো কেউ কেউ তামাশা করে বলেন, পিট বুল (এক প্রজাতির কুকুর) কেনার চেয়েও বাঘ বা সিংহ কেনা সহজ। ফলে মি. থম্পসনের বাড়িতে বাঘ, সিংহ, ভালুক, বাঁদর আর অজগর মিলিয়ে ৫৬টি বন্যপ্রাণীর বসবাসের সংবাদমূল্য এতদিন ছিল সামান্যই। তিনি ও তার শখের প্রাণীগুলো সিএনএন, টাইম ম্যাগাজিনসহ যুক্তরাষ্ট্রের ছাপা ও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে সম্প্রতি। অক্টোবরের ১৮ তারিখ সব প্রাণী ছেড়ে দেন তিনি এবং আত্মহত্যা করেন। প্রায় জঙ্গলহীন ও ৩০ বর্গ কিলোমিটারের জেনসভিল শহরে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ২৬ হাজার বাসিন্দার মধ্যে দুঃসাহসী কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই খিল এঁটে বসে থাকেন। শেরিফের নেতৃত্বে শুরু হয় অভিযান। ফলাফল_ একটি ভালুক, দুটি বানর ও তিনটি চিতা বাঘ জীবিত ধরা পড়েছে। একটি বানর অপর একটি বাঘের খোরাকে পরিণত হয়েছে। বাকি পশু মরেছে গুলি খেয়ে। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওসহ যুক্তরাষ্ট্রের পশুপ্রেমীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বন্য পশু পালনের অনুমতি দেওয়ার পরিণতি হলো এটি। ওহিওর গভর্নর এমন সুযোগ সীমিত করে ইতিমধ্যেই একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে এত বঙ্গীয় বাঘের প্রাণহানি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তবে এই ঘটনা প্রমাণ করে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা হ্রাস কেবল প্রাকৃতিক নয়। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন উজাড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি বাঘের স্বাভাবিক বসবাসে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বটে, বাঘ পাচারের কারণও সমান দায়ী। অস্বীকার করা যাবে না, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাস কেবল বাংলাদেশে নয়। জেনসভিল শহরে বেঘোরে প্রাণ হারানো বাঘগুলো সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ ছাড়াও উপমহাদেশের বাঘ বিচরণস্থল অন্য দেশগুলো থেকে পাচার হতেই পারে। কিন্তু এর মধ্যে যে আমাদের বাঘও নেই, সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
আমাদের এখানে বাঘ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বসতি বিনষ্ট ইত্যাদি নিয়ে যত কথা হয়, তার সিকিভাগও বাঘ পাচার নিয়ে হয় না। কিন্তু বাঘ পাচারের যে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক, আমরা তা থেকে মুক্ত_ এমনটা বিশ্বাস করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা সমান কথা। বাঘ পাচার বন্ধ করার জন্য ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে। কিন্তু তাতে পাচার সামলানো গেছে বলে জানা যায় না। কারণ মিলিয়ন ডলারের এ ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কেবল ভয়ঙ্করই নয়, ভয়ঙ্কর কৌশলীও। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাঘ-কসাইরা প্রায় প্রতিটি অপারেশনেই নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে।
আমাদের দেশে শিকারির কৌশল মোকাবেলা দূরে থাক, বাঘ যে পাচার হচ্ছে কিংবা হতে পারে_ তা নিয়েই তো কথাবার্তা নেই!
skrokon@gmail.com
No comments