সংসদে গরহাজির মন্ত্রী-জবাবদিহিতার ফোরাম কেন উপেক্ষা?

ন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের টানা অনুপস্থিতি এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতার ইস্যুতে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশন উত্তপ্ত করে তুলেছিলেন ক্ষমতাসীন দলেরই কয়েকজন সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যসংখ্যা হাতেগোনা এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা সংসদে টানা অনুপস্থিত।


কিন্তু যে সংসদে ক্ষমতাসীন জোটের দখলে তিনশ'র বেশি আসন, সেখানে তারা কতজন নিয়মিত উপস্থিত থাকেন_ সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার সংসদে মাত্র সাত-আটজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন এবং এ কারণে সমালোচনা যৌক্তিক। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সংসদ অধিবেশন চলছে এবং সংসদে আলোচনার মতো এজেন্ডারও অভাব নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মন্ত্রীদের বেশিরভাগ সংসদে অনুপস্থিত। এ সমস্যা কেবল বৃহস্পতিবারেই প্রথম দেখা গেল_ সেটা নয়। বছরের পর বছর সংসদে জবাবদিহিতার জন্য মন্ত্রীদের অনেকেই সময়মতো হাজির থাকেন না। পাকিস্তানেও এ সমস্যা প্রকট। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের ডন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই মন্ত্রীদের উপস্থিতি থাকে কম। এ নিয়ে পার্লামেন্ট সদস্যরা তো বটেই, স্পিকারও মাঝে মধ্যে উষ্মা প্রকাশ করেন। একই সমস্যা নেপালেও, যেখানে জনগণ বিপুল আত্মত্যাগে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহসী লড়াই করে সার্বভৌম পার্লামেন্ট কায়েম করেছে। কিন্তু সেখানে যাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করার কথা, সেই মন্ত্রীরা হাজির না থাকলে সুশাসন নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে ওঠে বৈকি। মন্ত্রীদের সংসদের বাইরেও অনেক কাজ থাকে। নানা ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যও তাদের অনুরোধ আসে এবং তা রক্ষা করতেও হয়। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সংসদ অধিবেশনকে উপেক্ষা করতে হবে। অধিবেশন চলাকালে কীভাবে বাইরের কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হয়, সেটা তাদের উপলব্ধিতে না আসার কথা নয়। মন্ত্রীদের নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়। দাফতরিক কাজে অন্য দেশের নানা প্রান্তে যেতে হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকাও স্বাভাবিক। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, সংসদ অধিবেশন সারা বছর থাকে না। গোটা দিন জুড়েও থাকে না। সংসদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে অধিবেশন চলাকালে সেখানে হাজির থেকে অন্য কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে কাজ করার ক্ষেত্রেই-বা সমস্যা হবে কেন? মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা উভয় পদেই নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তাদের কাজের গণ্ডি নির্দিষ্ট করা আছে। সংসদের কাছে উপদেষ্টাদের জবাবদিহিতার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত রয়েছেন এবং তাদের যে কোনো কাজের দায় চূড়ান্ত বিচারে দলের ওপরেই বর্তায়। রাজনীতিতে অভিজ্ঞ দল আওয়ামী লীগের নেতারা এসব সমস্যা বোঝেন না_ তেমনটি ভাবা যায় না। সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা_ সবাইকেই সমন্বয় রেখে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা চাই। এর ব্যত্যয় ঘটলে জনগণ তা কিন্তু সহজেই ধরে ফেলতে পারে এবং তাদের দণ্ড অবশ্যই হয় কঠোর।
 

No comments

Powered by Blogger.