আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমঝোতা-জাতীয় রাজনীতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

নেতিবাচক ও সংঘাতময় রাজনীতিই যেন বাংলাদেশে বহমান। অন্তত সমকালীন রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনা করতে গিয়ে অনেকেই এমনটি মনে করেন। কিন্তু তার মধ্যেও দুয়েকটি উদাহরণ আমাদের এই নেতিবাচক চিন্তাকে দূর করতে সহযোগিতা করে। অন্তত বুঝিয়ে দেয়, রাজনীতি মানেই সংঘাত নয়। রাজনীতি সমাজের উন্নয়ন, শান্তি এবং কল্যাণকে নিশ্চিত করে। মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে।


বিভিন্ন স্থানে হানাহানি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজির মতো রাজনীতির মধ্যে সিরাজগঞ্জের একটি উদ্যোগ সত্যিই আমাদের অনুপ্রাণিত করে, নেতিবাচক ও সংঘাতের রাজনীতির পরিবর্তে ইতিবাচক রাজনীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। তাদের গৃহীত কিছু পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, রাজনীতিবিদরা যদি চেষ্টা করেন, তাহলে সমাজ থেকে কুপ্রবৃত্তিগুলো দূর করার একটা সূত্র অবশ্যই পাওয়া যায়। সিরাজগঞ্জের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে আলোচনা বৈঠক শেষে সমঝোতার সিদ্ধান্ত হয়_সেখানে তারা ঐকমত্যে পেঁৗছেছে এলাকার টেন্ডারবাজি, দলাদলি, একে অপরের অনিষ্ট সাধন ইত্যাদি নেতিবাচক রাজনীতি হতে দেবে না। এর জন্য তারা সমঝোতার ভিত্তিতে উভয় দলের নেতাদের নিয়ে একটি যৌথ ইশতেহার প্রণয়নেরও উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ। শুধু তা-ই নয়, নিকট-অতীতে যেসব নেতা-কর্মী সেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘি্নত করেছেন এবং সেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছে।
একটি জেলা শহরের রাজনৈতিক নেতাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সামনে একটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করতে পারে। তাঁরা যদি অনুরূপ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যেত। অন্তত প্রতিটি জেলায়ই শান্তি প্রতিষ্ঠা হতো। সিরাজগঞ্জের ঘটনাটি কেন্দ্রীয় উদ্যোগে ঘটেনি। তাতে প্রমাণ হয়, কেন্দ্র সরাসরি উদ্যোগ না নিলেও স্থানীয় পর্যায়ে এমন কিছু ইতিবাচক কাজ করা যায়। আর এমনটা যদি সিরাজগঞ্জের মতো বাকি জেলাগুলোয়ও হতো, তাহলে অন্তত রাজনৈতিক কারণে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ও খুনাখুনি বন্ধ হয়ে যেত। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারতেন। টেন্ডারবাজির কারণে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়নই স্থবির হয়ে আছে, সেগুলোর স্থবিরতা ঘুচত এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতো। ফলে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত হতো। রাজনীতির প্রতি অনেকের যে বীতশ্রদ্ধ ভাবনা এসেছে, তারও পরিসমাপ্তি ঘটত। তাই সিরাজগঞ্জের এই ঘটনাকে আমরা জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে অনুসরণীয় একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করি এবং সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার জন্য বাকি সবাইকে আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.