পুরনো খোয়াই by শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল
ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা পরিকল্পিতভাবে ভরাট করা হচ্ছে দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-জলাশয়গুলো। এমনকি ক্ষমতার দাপটে অনেকেই নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ পর্যন্ত করছেন। এসব সংবাদ আমরা পত্রপত্রিকায় দেখে থাকি। যাদের দায়িত্ব এসব দেখার তারা ইচ্ছা করে কিংবা অন্য কারণে তা দেখেন না।
রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত ভূমিখেকো কিংবা ভূমিদস্যু যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। মাঝে মধ্যে মনে হয়, কেউ যেন দেখার নেই।
পরিবেশবাদীরা দেশের পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে কথা বলছেন। কে শুনে কার কথা। দায়িত্বশীলদের শোনার সময় কোথায়। যেখানে সবাই ব্যস্ত আছেন নিজেদের লাভ-লোকসানের ভবিষ্যৎ নিয়ে, সেখানে পরিবেশবাদীর কথা শোনার সময় কোথায়। আমার বাসার পেছন দিয়ে ছোটবেলায় যে নদীটি বয়ে যেতে দেখেছি সেই খরস্রোতা নদীটি এখন আর আমার বাসার পেছন দিয়ে বয়ে যায় না। সেটার গতিমুখ পরিবর্তন করা হয়েছে। আর তার যে চিহ্ন পড়ে রয়েছে সেটাকে বলা হয় হবিগঞ্জের মৃত খোয়াই নদী বা পুরনো খোয়াই নদী। এখন শহর বড় হয়েছে। মৃত খোয়াই নদী এখন শহরের মাঝখানে পড়েছে। এই পুরনো খোয়াই নদীটাও দখলদারদের কব্জায় চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক দখলদারদের তৎপরতা দেখে এতটাই বিস্মিত হয়েছেন যে, তিনি দখলদারদের তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দখলবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এ কথাও বলেন যে, খোয়াই অববাহিকায় অবস্থিত হবিগঞ্জ শহরটি সুন্দর, সুশ্রী অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন থাকার কথা থাকলেও তা দেশের মধ্যে অন্যতম নোংরা পরিকল্পিত শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। তবে শহরবাসীর কথা হচ্ছে, দখলবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করলে তাদের তৎপরতা কখনও বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। কর্তা ব্যক্তিদের হাতে দেশের আইন-কানুন। তারা তো ইচ্ছা করলেই আইনের ছড়ি ঘুরিয়ে দখলবাজদের উচ্ছেদ করতে পারেন।
বলা হচ্ছে, স্টাফ কোয়ার্টার থেকে পুরনো মুন্সেফি পর্যন্ত পুরনো খোয়াই নদী জেলা প্রশাসক পরিদর্শন করে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। পুরনো খোয়াই নদী উদ্ধারের জন্য কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা। বাপার কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে পুরনো খোয়াই নদীর বর্তমান অবস্থা দেখতে পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। পরিদর্শন শেষে বাপার নেতারা তাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে পুরনো খোয়াই নদী দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে দাবি পেশ করেছেন। দাবিগুলো হচ্ছে পুরনো খোয়াই নদীর সীমানা চিহ্নিত করা, দখলকৃত নদীর জায়গা দখলমুক্ত করা, দখলদারদের তালিকা করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা, গৃহস্থালির বর্জ্যসহ অন্যান্য দূষণ কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা, পুরনো খোয়াই নদী সংরক্ষণ, দূষণমুক্ত, সবুজায়ন ও সৌন্দর্য বর্ধন করে দু'পাশে হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করাসহ পুরনো খোয়াই নদীসহ সব পুকুর, জলাশয় সংরক্ষণ করা। হবিগঞ্জ শহরবাসী মনে করে, তাদের দাবি অযৌক্তিক নয়। চোখের সামনে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। কেউ বলতে এখানে দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিদেরই বোঝানো হচ্ছে। হবিগঞ্জ শহরের পুরনো মুন্সেফি কোয়ার্টারে রামচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বড় পুকুর রক্ষা করতে গিয়ে সংশিল্গষ্ট এলাকার লোকজন রাস্তায় পর্যন্ত নেমেছে। তাই আমরা হবিগঞ্জ শহরবাসী মনে করি, পুরনো খোয়াই নদী রক্ষা করা হবিগঞ্জ প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্ব। এতে হবিগঞ্জবাসী উপকৃত হবে।
হ হবিগঞ্জ
No comments