নারায়ণগঞ্জ-তবুও সুষ্ঠু হোক নির্বাচন
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ। নানা কারণে এ নির্বাচন দেশবাসীর গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর নিকটবর্তী এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সব মহল যে গুরুত্ব আরোপ করেছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সবার এই কেন্দ্রীভূত মনোযোগের পেছনে বেশকিছু কারণ আছে।
প্রথমত, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠানের বৃহত্তর দায়িত্ব এখন নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তেছে। জাতীয় নির্বাচনের এখনও বেশ দেরি। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কতটা সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করতে পারছে তা পরীক্ষা করে দেখতে আগ্রহী সবাই। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সেদিক থেকে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। দ্বিতীয়ত, এ পরীক্ষা সরকারের জন্যও। দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় সাধারণত স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকে সরকারের হাতে। যদিও সংবিধান অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আসার কথা। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকাকালে এ নিয়ন্ত্রণ সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অবশ্য সরকার আন্তরিক হলে, কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের বাতাবরণ তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ নির্বাচনে লোকে সরকারের মনোভাব যাচাই করে দেখতে আগ্রহী। তৃতীয়ত, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনমত যাচাইয়ের একটি মহড়া হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিকভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার বিন্যাস অত্যন্ত জটিল। নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস, কালো টাকার ব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগও উঠেছে। সাধারণের মনোযোগের কেন্দ্র যখন নারায়ণগঞ্জ তখন বিষয়টি নিয়ে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক এড়ানো সরকারের বিশেষ দায়িত্ব ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল। নির্বাচনী এলাকার মানুষের প্রত্যাশা ছিল, সেখানে নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন করা হোক। সে অনুসারে নির্বাচন কমিশন পরিপত্রও জারি করেছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেনা মোতায়েন দূরের কথা, নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাবও দেয়নি সরকার। এতে কিছু সাংবিধানিক জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু পরোক্ষে এর বাইরেও বেশ কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেনা মোতায়েনের দাবিতে নির্বাচনী এলাকার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, গোলযোগের দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না। প্রশ্ন হলো, এমন একটি পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হলো? সরকার কি এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে পারত না? সেনা মোতায়েন না হওয়ার পরও সবাই আশা করছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। তবে এ ক্ষেত্রে অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব অনেকগুণ বেড়ে যাবে। দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে প্রার্থী ও সমর্থকদের। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তাদের, যারা পবিত্র ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। সেনা মোতায়েন না হওয়ায় শ্বাসরুদ্ধকর নির্বাচনে বাড়তি চাপ যুক্ত হলো যেমন, তেমনি দায়িত্বশীলদের পরীক্ষার মাত্রাও বেড়ে গেল। কিন্তু সবাই মিলে চেষ্টা করলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই এ চাপ মোকাবেলা করা সম্ভব। আমরা আশা করি, সব আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত করে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করুক।
No comments