আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি-সরকারের দায় এড়ানোর অবকাশ নেই

যে দৃষ্টিকোণ থেকে, যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বিষয়টি দেখা হোক না কেন, দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জন-উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মাত্রা ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে। এর পরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের তরফে বাস্তবতা অস্বীকারের অপপ্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে অশুভ শক্তি ক্রমেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহির পাট চুকে যাচ্ছে।


আর এর বিরূপ মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে যেখানে নির্মোহ অবস্থান থেকে মানুষ কঠোর কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছে, সেখানে এই বৈপরীত্য নানা প্রশ্নেরও জন্ম দিয়ে চলেছে। মুঠোফোনে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করছে অপশক্তি। তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। এমন পরিস্থিতি যেকোনো রাষ্ট্র কিংবা সমাজের জন্য শুভ পরিণতির পথই সংকুচিত করে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পক্ষে গণরায়ের যে দৃষ্টান্ত বিগত জাতীয় নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছিল, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য এক অধ্যায়। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে এই প্রজন্ম সার্বিক পরিবর্তনের প্রত্যাশা রেখেই ওই রায় দিয়েছিল। জনরায় পেয়ে মহাজোট সরকার গঠন করে পুনর্বার দৃঢ়তার সঙ্গে অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল, জানমালের নিরাপত্তাসহ গণমানুষের জন্য যা কিছু হিতকর, তা-ই তারা নিশ্চিত করবে। এ সরকারের সাফল্য অনেক ক্ষেত্রেই আছে বটে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতার দাগটি খুব মোটা। শুধু রাজধানী ঢাকায়ই নয়, বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয়, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পর্যন্ত জননিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। খুন, ডাকাতিসহ নানা ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড জনমনে যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। গত ২১ জানুয়ারি দিনদুপুরে রাজধানীর মধ্য পীরেরবাগ এলাকায় (মিরপুর) সন্ত্রাসীরা বাসায় ঢুকে জিয়া হায়দার নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে। এর আগের দিন রাতে ঢাকার শ্যামপুরে এবং ২২ জানুয়ারি শান্তিনগরে দিনদুপুরে ঘটেছে আরো দুটি হত্যাকাণ্ড। প্রায় নিত্য প্রচারমাধ্যমে হত্যা, গুম, অপহরণসহ নানা অপরাধ ও দুষ্কর্মের যে প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে, তা বড় ধরনের অশুভ লক্ষণ। অতীতে এ ধরনের অপরাধচিত্র বড় রকম পরিবর্তন ঘটার পূর্বাভাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কখনো কখনো আইনি সংস্থাগুলোরই বেআইনি তৎপরতাও জন-উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকারকেই রোধ করতে হবে কোনো রকম কালক্ষেপণ না করে সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি-দায়বদ্ধতার পাটও অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সীমাবদ্ধতার কথা মানুষ শুনতে চাইবে কেন? জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় সর্বাগ্রে রাষ্ট্রশক্তির। পুলিশ, র‌্যাবসহ সব আইনি সংস্থার বেআইনি তৎপরতা রোধে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার যে অঙ্গীকার সরকার করেছিল, বর্তমানে তার বিপরীত পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। যেকোনো সমাজে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অবকাশ তখনই পায়, যখন রাষ্ট্রযন্ত্রের স্তরগুলোয় দায়িত্ব পালনরত ব্যক্তিরা তা পালনে ব্যর্থ হন। এখানে বিভিন্ন স্তরে এমন আলামতই দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি, মহাজোট সরকার কোনো রকম অজুহাত দাঁড় না করিয়ে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপশক্তির শিকড় উৎপাটনে সক্ষম হবে। এসব নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এখনো পরিলক্ষিত হচ্ছে বড় বিবর্ণ চিত্র। আশু এর অবসান দরকার। মানুষ এখন ঘরেও নিরাপদ নয়_এই বাস্তবতা আমলে নিয়েই যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দায় এড়ানোর কিংবা বাস্তবতা অস্বীকারের অপপ্রবণতা বর্জন ভিন্ন গত্যন্তর নেই।

No comments

Powered by Blogger.