গৈলা স্কুল ১২০ বছরে by শাহজাহান গাজী
'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে' কুসুম কুমারী দেবীর এ লেখা শৈশব থেকেই অন্তরে গাঁথা হয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, সহজ কথা যায় না বলা সহজে। কিন্তু কুসুম কুমারী কত সহজেই না আমাদের সবার অন্তরের কথা লিখে রেখে গেলেন! তিনি কবি জীবনানন্দ দাশের মা; বাড়ি গৈলায়। আমাদের বরিশাল শহরেই রয়েছে জীবনানন্দ দাশের বাড়ি_ নাম তার 'ধানসিড়ি'।
এ নামে একটি নদী আছে। এখন 'ধানসিড়ি' বাড়িতে গড়ে উঠেছে জীবনানন্দ সংগ্রহশালা। তার বাড়ির পাশ দিয়ে নিত্যদিনের আনাগোনা ছিল অনেক দিন। কিন্তু 'কথায় বড় না হয়ে কাজে বড় হওয়ার' প্রেরণা দিয়েছেন যে নারী, তার জন্মস্থান দেখার সুযোগ ঘটে সম্প্রতি। প্রথম আলো পত্রিকায় গত ১৯ নভেম্বর 'মুক্তিযোদ্ধার মা' লেখা পড়ে ছুটে যাই আগৈলঝাড়ার গৈলা গ্রামে। মুক্তিযোদ্ধার মা রেণুকা দাশগুপ্তার তিন ছেলে (আশীষ, অজয় ও অসীম) ও বড় জামাতা (মিহির দাশগুপ্ত) একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। গৈলা গ্রামটি আমাকে বরাবরই আকৃষ্ট করত। এ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা ড. সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ( তার দর্শনের বইগুলো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল), নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পিএইচডির রিসার্চ গাইড অমিয় দাশগুপ্ত, বরিশালের প্রথম গ্র্যাজুয়েট চন্দ্র কুমার দাশ, মনসা মঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্ত এবং এমন আরও অনেক কৃতী ব্যক্তি। ছয়-সাত দশক আগে গৈলার পরিচয় ছিল 'ঘরে ঘরে গ্র্যাজুয়েটের গ্রাম' হিসেবে। এখনও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। গৈলা হাসপাতাল অতিক্রম করেই প্রথমে নজরে পড়ে 'শতবর্ষ ভবন'_ গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের অর্থে নির্মিত। ১৮৯৩ সালের ২৩ জানুয়ারি গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৩ সালে শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেন ১৬০০ বর্গফুট আয়তনের এ ভবন। এমন নজির খুব বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিলবে না। স্কুলের মূল ভবনগুলোও আকর্ষণীয়। সেখানে রয়েছে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র সেনের স্মৃতিসৌধ। এতে উৎকীর্ণ বাক্যটি দারুণ Death Devide, Memory Lingers. . মৃত্যু তাকে সাত দশকেও বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে তাকে স্মরণ করে, শ্রদ্ধা জানায়। তিনি প্রতিষ্ঠানে থাকাকালেই পাশের গ্রাম আগৈলঝাড়ায় ভিএইচপি একাডেমী স্থাপনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং এ কারণে তার ওপর ওই স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
আমার বাড়ি বরিশাল শহরের সাগরদী এলাকায়। গৈলা গ্রামের টানে সেখানে ছুটে গিয়ে জানতে পারি, স্কুল ছাড়াও বাজার ও পোস্ট অফিসের নাম গৈলার নামে। ইউনিয়নের নামও গৈলা। মুক্তিযুদ্ধে এ এলাকার অনেকে সশস্ত্র হয়ে লড়েছেন। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও গৈলা লড়েছে অমিত বিক্রমে। স্কুলের পাশেই রয়েছে হিজলী বন্দিশিবিরে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে নিহত তারক সেনের স্মৃতিসৌধ। এর পাশেই একাত্তরের যুদ্ধে শহীদ আলাউদ্দিনের সমাধি।
গৈলা স্কুলের আশপাশের গ্রামগুলোতে রয়েছে কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কিন্তু তাতে এ প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি, বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী এরই প্রমাণ। যেসব গ্রামে স্কুল রয়েছে, তার পাশের বাড়িগুলো থেকেও গৈলায় পড়তে আসে ছাত্রছাত্রীরা। ১৮৯৩ সালে এ স্কুলটি যখন গড়ে ওঠে তখন বরিশালে হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। সে সময়ে যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম ছিল। গৈলা স্কুলে পড়তে আসত যারা তাদের অনেকে বর্ষায় জল-কাদা ভেঙে স্কুলে আসত। তাদের হাতে থাকত বই-খাতা এবং পরনের শার্ট-প্যান্ট। স্কুলের সামনে এসে ভেজা পোশাক বদল করত অনেকে। এখন সে অবস্থা নেই। গাড়িতেও স্কুলে যাওয়া যায়। সাবেক ছাত্রছাত্রীরা শতবর্ষ ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। তাদের সংগঠন 'গৈলা পরিষদ' নিয়মিত স্কুলে গিয়ে সৈয়দ আবুল হোসেন বৃত্তি তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে আসে। বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই এটা অনুকরণীয় হতে পারে। গৈলা গ্রামের আরেকটি আকর্ষণ বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির। একসময় মন্দিরটি ফুল্লশ্রী গ্রামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কবি নিজেও মনসা মঙ্গলে ফুল্লশ্রী গ্রামকে 'পণ্ডিত নগর' হিসেবে অভিহিত করেছেন। পাঁচশ' বছর আগে গণ্ড গ্রামে 'পণ্ডিত নগর'! ভাবুন তো, কতটা এগিয়ে ছিল। সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের বাড়ি সংলগ্ন ছিল সংস্কৃত কলেজ। এখানে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের পাশাপাশি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্র পড়ানো হতো। সুদূর চট্টগ্রাম থেকেও এখানে ছাত্ররা পড়তে আসত। বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির এখন নবরূপে সাজছে। আধুনিক নকশায় গড়ে তোলা মন্দিরের ভেতরে ২০০৪ সালে স্থাপিত হয়েছে প্রায় এক টন ওজনের পিতলের দেবী মূর্তি। মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়মিত আয়োজন করা হয় রয়ানি পালা।
বরিশালের গৌরনদী অঞ্চল দই ও রসগোল্লার জন্য বিখ্যাত। এ সুখ্যাতির অন্যতম দাবিদার গৈলার ঘোষেরা। এখনও তাদের দই-মিষ্টি রসনায় তৃপ্তি আনে। গৈলায় গেলে এর স্বাদ নিতে কেউ ভোলে না।
আজ ২৩ জানুয়ারি গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১২০তম জন্মদিন। এমন আনন্দঘন দিনে বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান সব ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনায় যুক্ত সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আমার বাড়ি বরিশাল শহরের সাগরদী এলাকায়। গৈলা গ্রামের টানে সেখানে ছুটে গিয়ে জানতে পারি, স্কুল ছাড়াও বাজার ও পোস্ট অফিসের নাম গৈলার নামে। ইউনিয়নের নামও গৈলা। মুক্তিযুদ্ধে এ এলাকার অনেকে সশস্ত্র হয়ে লড়েছেন। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও গৈলা লড়েছে অমিত বিক্রমে। স্কুলের পাশেই রয়েছে হিজলী বন্দিশিবিরে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে নিহত তারক সেনের স্মৃতিসৌধ। এর পাশেই একাত্তরের যুদ্ধে শহীদ আলাউদ্দিনের সমাধি।
গৈলা স্কুলের আশপাশের গ্রামগুলোতে রয়েছে কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কিন্তু তাতে এ প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি, বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী এরই প্রমাণ। যেসব গ্রামে স্কুল রয়েছে, তার পাশের বাড়িগুলো থেকেও গৈলায় পড়তে আসে ছাত্রছাত্রীরা। ১৮৯৩ সালে এ স্কুলটি যখন গড়ে ওঠে তখন বরিশালে হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। সে সময়ে যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম ছিল। গৈলা স্কুলে পড়তে আসত যারা তাদের অনেকে বর্ষায় জল-কাদা ভেঙে স্কুলে আসত। তাদের হাতে থাকত বই-খাতা এবং পরনের শার্ট-প্যান্ট। স্কুলের সামনে এসে ভেজা পোশাক বদল করত অনেকে। এখন সে অবস্থা নেই। গাড়িতেও স্কুলে যাওয়া যায়। সাবেক ছাত্রছাত্রীরা শতবর্ষ ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। তাদের সংগঠন 'গৈলা পরিষদ' নিয়মিত স্কুলে গিয়ে সৈয়দ আবুল হোসেন বৃত্তি তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে আসে। বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই এটা অনুকরণীয় হতে পারে। গৈলা গ্রামের আরেকটি আকর্ষণ বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির। একসময় মন্দিরটি ফুল্লশ্রী গ্রামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কবি নিজেও মনসা মঙ্গলে ফুল্লশ্রী গ্রামকে 'পণ্ডিত নগর' হিসেবে অভিহিত করেছেন। পাঁচশ' বছর আগে গণ্ড গ্রামে 'পণ্ডিত নগর'! ভাবুন তো, কতটা এগিয়ে ছিল। সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের বাড়ি সংলগ্ন ছিল সংস্কৃত কলেজ। এখানে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের পাশাপাশি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্র পড়ানো হতো। সুদূর চট্টগ্রাম থেকেও এখানে ছাত্ররা পড়তে আসত। বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির এখন নবরূপে সাজছে। আধুনিক নকশায় গড়ে তোলা মন্দিরের ভেতরে ২০০৪ সালে স্থাপিত হয়েছে প্রায় এক টন ওজনের পিতলের দেবী মূর্তি। মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়মিত আয়োজন করা হয় রয়ানি পালা।
বরিশালের গৌরনদী অঞ্চল দই ও রসগোল্লার জন্য বিখ্যাত। এ সুখ্যাতির অন্যতম দাবিদার গৈলার ঘোষেরা। এখনও তাদের দই-মিষ্টি রসনায় তৃপ্তি আনে। গৈলায় গেলে এর স্বাদ নিতে কেউ ভোলে না।
আজ ২৩ জানুয়ারি গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১২০তম জন্মদিন। এমন আনন্দঘন দিনে বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান সব ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনায় যুক্ত সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
No comments