জিলহজ মাসের প্রথম দশক by মুফতি মাহফূযুল হক

সলামে বৈরাগ্য নেই। সংসার ও সমাজের দায়বদ্ধতা থেকে নিজেকে মুক্ত করে, দুনিয়ার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু কতিপয় আনুষ্ঠানিক আরাধনার জন্য নিবিষ্ট হওয়াকে ইসলাম অনুমোদন করে না। সংসার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব, দুনিয়ার সব কাজ কোরআন-সুন্নাহ মতে পালন করে জীবনের সব অঙ্গনে আল্লাহর দেওয়া আইন প্রতিপালন করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি।


এ দাবির বাস্তবায়ন সম্ভব হওয়ার পূর্বশর্ত আল্লাহর প্রেমের অথৈ সাগরে কিছুটা অবগাহন করে নিজেকে ইলাহি প্রেমে সিক্ত করা। তাই খুবই প্রয়োজন মাঝে মধ্যে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু সময়ের জন্য আল্লাহর প্রত্যক্ষ ইবাদতে নিবিষ্ট হওয়া। যেমন_ রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। আবার মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্ন না হয়ে দুনিয়াবি সম্পর্ককে শিথিল করে, সব দায়িত্ব হালকা করে কিছুটা সময়ের জন্য জিকির, তাসবিহ, তাহলিল, ইস্তিগফার, তিলাওয়াত, নামাজ ও রোজাকে বাড়ানো। যেমন_ জিলহজ মাসের প্রথম দশক। এতে আল্লাহর নূরের আলোয় মানুষ আত্মিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে। সুকুমার বৃত্তিগুলো তার মধ্যে বিকশিত হওয়ার আনুকূল্য পায়। কুপ্রবৃত্তিগুলো শক্ত বাধার মুখে পড়ে। ফলে মানুষ হয়ে ওঠে নির্মোহ, নীতিবান ও সত্যের সৈনিক।
জিলহজ মাসের প্রথম দশক ইবাদতের দশক। সাহাবি আবদুুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালার কাছে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অন্য কোনো দিনের ইবাদত অধিক প্রিয় নয়। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহর কাছে ইবাদতের জন্য জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অপেক্ষা অধিক পছন্দের আর কোনো দিন নেই। এর প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার বরাবর এবং প্রতি রাতের নামাজ কদর রাতের নামাজ সমতুল্য। সাহাবি হাফসা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) চারটি বিষয় কখনও ছাড়তেন না। মহররম মাসের দশ তারিখের রোজা, জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিনের রোজা, প্রতি চান্দ্র মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখের রোজা, ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ।
এ দশকের শেষ রাতটি অর্থাৎ ঈদের দিনের আগের রাতটি যাকে ইসলামের পরিভাষায় ঈদের রাত বলা হয়। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত জেগে নামাজ পড়বে সে ওই দিন মনমরা হবে না যেদিন অধিকাংশ মানুষ মনমরা হয়ে থাকবে। এ দশকের শেষ দিনটি ঈদুল আজহা, এদিনের বিশেষ দুটি আমল হলো ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা এবং কোরবানি করা। জাতির জননী আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ঈদুল আজহাতে আল্লাহতায়ালার কাছে কোরবানি অপেক্ষা অধিক প্রিয় আর কোনো ইবাদত মানুষ করে না। কিয়ামতের মাঠে কোরবানিকৃত পশুটি তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে (অর্থাৎ দাতাকে এগুলো অনুপাতেও পুণ্য দেওয়া হবে)। পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কোরবানি কবুল হয়ে যায়। তাই মনের ফুর্তিতে কোরবানি কর।
উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা সহজেই বোঝা যায়, জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন একজন মুসলমানের জন্য কঠোর সাধনার সময়। এ সময় মহানবীর (সা.) প্রেম ও ভালোবাসা তাকে এত ব্যাকুল করে তোলে যে, সে রাতে বিছানায় কোনো স্বস্তি পায় না, দিনের খাবারে কোনো মজা পায় না। সুন্নত অনুকরণের সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা তাকে রাতভর নামাজে দাঁড় করিয়ে রাখে, দিনভর রোজা পালন করায়। প্রেমের মত্ততায় রাতের বিছানার চেয়ে জায়নামাজ আর দিনের ভোগের চেয়ে সংযম হয়ে ওঠে অনেক বেশি প্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত। তাই আসুন, আখিরাতকে নিজের প্রয়োজন মনে করি। রাসূল ও তাঁর সুন্নাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। এ দশ দিনের সাধনার জন্য দুনিয়া থেকে ছুটি নিয়ে সুদৃঢ় মনোবলের সঙ্গে শুরু করি। আল্লাহ পূর্ণতায় পেঁৗছাবেন।
 

No comments

Powered by Blogger.