স্মরণ-অজিত রায় : তাঁর কাছে আমাদের ঋণ
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বাঙালি জাতিসত্তার অনেক কিছু জড়িত। এর সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষের উল্লেখযোগ্য কিছু কর্মযজ্ঞও। রণাঙ্গনে যাঁরা যুদ্ধ করেছেন তাঁরা যেমন মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি বিভিন্ন অবস্থানে কিংবা স্তরে অবস্থান করে নানাভাবে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন অধিকতর বেগবান করেছেন_তাঁরাও আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধা। অজিতদা তেমনই একজন।
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও গণসংগীত, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অজিতদার প্রয়াণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলাম, একজন বড় মাপের, সর্বাগ্রে একজন ভালো মানুষকে হারালাম। মাথানত করে অজিতদাকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর আত্মার সদ্গতি কামনা করি।
সংগীতশিল্পী, সুরকার, শিক্ষক, শব্দসৈনিক_এসব কোন অভিধায় তাঁকে অভিহিত করব? অজিত এরও বেশি কিছু আমাদের কাছে। আগেই বলেছি, তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে একজন ভালো মানুষ। ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তিনি ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন। অজিতদা পরিণত বয়সেই পরলোকগমন করেছেন, কিন্তু তার পরও মন ব্যাকুলভাবেই বলছে, তাঁর শারীরিক উপস্থিতি আমাদের জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে এও সত্য, তিনি শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে না থাকলেও তাঁর কৃতকর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। ১৯৬৪ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ডাকসুর উদ্যোগে প্রথম উন্মুক্ত মঞ্চে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ। সেই অনুষ্ঠানে সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুর করা 'বিচারপতি তোমার বিচার করবে যাঁরা আজ জেগেছে সেই জনতা' গানটি গেয়েছিলেন অজিত রায়। অনেকের সঙ্গে আমিও সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিলাম ওই অনুষ্ঠান, যা ভাবলে আজও নতুন প্রেরণা পাই। ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ভেসে আসে 'বিজয় নিশান উড়ছে ওই' গানটি। এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেগুলো ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অংশ।
প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব অজিত রায় দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর অবদান কখনোই ভোলা যাবে না। তিনি গণঐক্য গড়ে তোলার কাজটাও করেছেন। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এ দেশে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক সংস্কৃতিজনের বড় অভাব। অজিত রায় সম্পর্কে নতুন করে কী বলার আছে! খ্যাতির জন্য নয়, মনেপ্রাণে তিনি সংগীতকে বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীতকে ভালোবেসেছিলেন। তাঁর অভাব পূরণ হওয়ার নয়। কোনো কোনো মানুষ দেশ-জাতির কাছে বড় বেশি অপরিহার্য হয়ে ওঠেন।
অজিত রায় এমন কিছু গান গেয়েছেন, যা দেশপ্রেমবোধকে খুব উজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে। মারণব্যাধি ক্যান্সার তাঁর জীবনীশক্তি তিলে তিলে ক্ষয় করলেও তিনি সচল থাকতে চেয়েছেন। এই শক্তি সবার থাকে না। খুব স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে গেছি। তাঁর সঙ্গে আমার খণ্ড খণ্ড অনেক স্মৃতি আছে, যা উল্লেখ করা এই স্বল্প পরিসরে দুরূহ। তিনি আজ সব কিছুর ঊধর্ে্ব চলে গেলেন আমাদের রেখে। দাদার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। অজিতদা কতটা কী পেয়েছেন জানি না, তবে তিনি জাতিকে দিয়ে গেছেন অনেক কিছু। আমরা তাঁর কাছে তাঁর জন্যই চিরঋণী হয়ে থাকব।
ড. মুহাম্মদ আশকার ইবনে শাইখ
সংগীতশিল্পী, সুরকার, শিক্ষক, শব্দসৈনিক_এসব কোন অভিধায় তাঁকে অভিহিত করব? অজিত এরও বেশি কিছু আমাদের কাছে। আগেই বলেছি, তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে একজন ভালো মানুষ। ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তিনি ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন। অজিতদা পরিণত বয়সেই পরলোকগমন করেছেন, কিন্তু তার পরও মন ব্যাকুলভাবেই বলছে, তাঁর শারীরিক উপস্থিতি আমাদের জন্য প্রয়োজন ছিল। তবে এও সত্য, তিনি শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে না থাকলেও তাঁর কৃতকর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। ১৯৬৪ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ডাকসুর উদ্যোগে প্রথম উন্মুক্ত মঞ্চে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ। সেই অনুষ্ঠানে সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুর করা 'বিচারপতি তোমার বিচার করবে যাঁরা আজ জেগেছে সেই জনতা' গানটি গেয়েছিলেন অজিত রায়। অনেকের সঙ্গে আমিও সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিলাম ওই অনুষ্ঠান, যা ভাবলে আজও নতুন প্রেরণা পাই। ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ভেসে আসে 'বিজয় নিশান উড়ছে ওই' গানটি। এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেগুলো ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অংশ।
প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব অজিত রায় দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর অবদান কখনোই ভোলা যাবে না। তিনি গণঐক্য গড়ে তোলার কাজটাও করেছেন। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এ দেশে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক সংস্কৃতিজনের বড় অভাব। অজিত রায় সম্পর্কে নতুন করে কী বলার আছে! খ্যাতির জন্য নয়, মনেপ্রাণে তিনি সংগীতকে বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীতকে ভালোবেসেছিলেন। তাঁর অভাব পূরণ হওয়ার নয়। কোনো কোনো মানুষ দেশ-জাতির কাছে বড় বেশি অপরিহার্য হয়ে ওঠেন।
অজিত রায় এমন কিছু গান গেয়েছেন, যা দেশপ্রেমবোধকে খুব উজ্জীবিত করতে সহায়তা করেছে। মারণব্যাধি ক্যান্সার তাঁর জীবনীশক্তি তিলে তিলে ক্ষয় করলেও তিনি সচল থাকতে চেয়েছেন। এই শক্তি সবার থাকে না। খুব স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে গেছি। তাঁর সঙ্গে আমার খণ্ড খণ্ড অনেক স্মৃতি আছে, যা উল্লেখ করা এই স্বল্প পরিসরে দুরূহ। তিনি আজ সব কিছুর ঊধর্ে্ব চলে গেলেন আমাদের রেখে। দাদার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। অজিতদা কতটা কী পেয়েছেন জানি না, তবে তিনি জাতিকে দিয়ে গেছেন অনেক কিছু। আমরা তাঁর কাছে তাঁর জন্যই চিরঋণী হয়ে থাকব।
ড. মুহাম্মদ আশকার ইবনে শাইখ
No comments