বেপরোয়া চাঁদাবাজি-'বড় ভাইদের' সামলাতে হবে
'বড় ভাই' আর 'দলের খরচে'র নামে বেড়েছে চাঁদাবাজি_ শিরোনামে গত শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত সংবাদটি উদ্বেগজনক। রিপোর্টে দেখা যায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে নতুন নতুন চাঁদাবাজি গ্রুপ গজিয়ে উঠছে। তারা বিদেশে অবস্থানরত কারান্তরীণ 'বড় ভাই' ও 'দলের খরচে'র নামে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাড়ির মালিক বা সামর্থ্যবান যে কোনো লোককেই চাঁদা আদায়ের টার্গেটে পরিণত করছে। কোথাও টেলিফোনে, কোথাও সরাসরি হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।
সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দিলে তার পরিণতি কী_ তা বোঝানোর জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারেও তারা কুণ্ঠিত হচ্ছে না। অবস্থা এমনি দাঁড়িয়েছে যে, ভুক্তভোগীদের অনেকে থানা-পুলিশ করার সাহসও হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায় না। আবার পুলিশ প্রোটেকশন চেয়ে কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে লাশ হতে হয়েছে দেখে অন্যরা থানায় নামকাওয়াস্তে জিডি করে নিরাপদ আশ্রয় রুট খুঁজতে দিনরাত এক করছেন। পুলিশের ভাষ্য হলো, চাঁদাবাজি আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু সমকালের প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী চাঁদাবাজির হার বেড়েছে। কার ভাষ্য ঠিক? পুলিশ প্রশাসন নিশ্চয়ই জানে যে, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে অনেক ব্যবসায়ী ও সামর্থ্যবান ব্যক্তি এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে পুলিশের শরণাপন্ন হন না। এভাবে অনেক চাঁদাবাজির ঘটনা পুলিশের হিসাবের বাইরে থেকে যায়। এ জন্য পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা, গাফিলতি এবং কতক ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতাও কম দায়ী নয়। এভাবে চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পাওয়া সামাজিক অস্থিরতা ও অসুস্থতার লক্ষণও বটে। আমাদের সমাজ কদাপি নিয়মনীতি মেনে চলে। অন্যায়-অবিচারেরই এখানে দোর্দণ্ড প্রতাপ। এক শ্রেণীর মানুষ তরতর করে অন্যায় উপার্জনের মাধ্যমে সমাজের উপরতলায় উঠে যান এবং সমাজে তাদের কেউ কেউ পরিচিতও হন। মাস্তানি করে অর্থবিত্তের মালিক বনা লোকের সংখ্যাও সমাজে কম নয়। এসবের পেছনে রাজনৈতিক মদদ থাকার বিষয়টি আজ সাধারণেরও জানা। তবে চাঁদাবাজির ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ না করা গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা যে যায় না তা নয়। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথেষ্ট দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আর চাঁদাবাজদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়দানও বন্ধ করতে হবে।
No comments