ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ শুধু কাগজে-কলমে-বিলুপ্তির আরও কাছে বাংলা শকুন by ইফতেখার মাহমুদ
এ দেশে একসময়ের অতিপরিচিত পাখি ‘বাংলা শকুন’ (ওরিয়েন্টাল হোয়াইট-ব্যাক্ড ভালচার) বিলুপ্ত হতে চলেছে। প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পরিচিত এই উপকারী পাখিটির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। ২০১১ সালের সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে, দুই বছর আগের ১০০০ থেকে এর সংখ্যা আরও কমে মাত্র ৭০০-তে নেমে এসেছে।
সাম্প্রতিককালে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় শকুনের দ্রুত বিলুপ্তির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত গরুর নিষিদ্ধ ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক দেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। ডাইক্লোফেনাক দিয়ে চিকিৎসা করা গরুর মৃত্যু হলে এর দেহ ভক্ষণের পর কিডনি বিকল হয়ে শকুনের মৃত্যু হয়।
পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক উদ্বেগ ও প্রচারণার পর বাংলাদেশে ২০১০ সালে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারি উদ্যোগ কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোনো কোম্পানি এই ওষুধ বিক্রি বন্ধ করেছে কি না তা দেখভালের দায়িত্ব কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ ওষুধের দোকানে এখনো ডাইক্লোফেনাক বিক্রি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন।
তিনটি স্থানীয় প্রজাতির শকুন নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়লে ২০০৬ সালে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়। গত বছরের মে মাসে প্লসওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতে নিষিদ্ধ করার পর দুই বছরে মৃত গরুর দেহে ডাইক্লোফেনাকের অবশেষ পাওয়ার হার ৪০ শতাংশ কমেছিল। যেসব মৃত গরুতে ডাইক্লোফেনাক ছিল সেখানেও এর মাত্রা ছিল লক্ষণীয়ভাবে কম।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর ব্যথানাশক হিসেবে ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসে। মৃত গরুর দেহ থেকে ডাইক্লোফেনাকের অবশেষ শকুনের শরীরে প্রবেশ করে তাদের কিডনি নষ্ট করে দেয়। এক দশক আগেও দেশে কয়েক হাজার বাংলা শকুন ছিল।
খোদ রাজধানীর নিমতলী, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ডাইক্লোফেনাক বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর বাইরেও কয়েক জায়গায় কমবেশি একই চিত্র দেখা যায়। গত ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের ‘বীজঘর’ দোকানে ক্রেতা সেজে কিনতে চাইলে দোকানি আট প্রকারের ডাইক্লোফেনাক আছে বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বেশির ভাগ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখনো ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে। দেশের বেশির ভাগ পশুপাখির ওষুধ বিক্রেতা দোকানে ওষুধটি রাখেন। সরকার প্রজ্ঞাপন জারির বাইরে এ পর্যন্ত এর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা ডাইক্লোফেনাকের বিকল্প হিসেবে মেলোক্সিক্যাম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এটি শকুনের জন্য ক্ষতিকর নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ভারতে নভেম্বর ২০০৭ থেকে জুন ২০১০ পর্যন্ত ২৫০টি ওষুধের দোকানে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, মেলোক্সিক্যামের ব্যবহার ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তবে সে দেশে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহূত ডাইক্লোফেনাক গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহার করা অব্যাহত রয়েছে বলেও সমীক্ষায় দেখা গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন ফর নেচারের (আইইউসিএন) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘বাংলা শকুন’ বিশ্বজুড়ে বিপন্ন প্রাণীর তালিকা থেকে অতিবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে, গত এক যুগে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলা শকুনের সংখ্যা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ কমে গেছে। ২০০৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনিরুল খানের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে এ শকুনের সংখ্যা ১০০০টি। ২০১১ সালের সর্বশেষ সমীক্ষায় এই সংখ্যা আরও কমে ৭০০টিতে নেমে এসেছে।
প্রধান বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী অঞ্চল) তপনকুমার দের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ডাইক্লোফেনাকের উৎপাদন ও বিক্রি এখনো চলার কথা স্বীকার করেন। তপন কুমার দে কারণ হিসেবে তাদের জনবলের স্বল্পতার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জনবল না থাকায় এই ওষুধের বিক্রি ও উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গরুর রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি মৃত গরুর শরীর থেকে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। শকুন হচ্ছে একমাত্র প্রাণী যারা তড়কা রোগে আক্রান্ত গরুর মৃতদেহ খেয়ে হজম করতে পারে। এ কারণে শকুন টিকে থাকলে তা প্রাকৃতিকভাবে তড়কা রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা করবে।
উঁচু, পুরোনো গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আবাস ধ্বংস হওয়াও দেশে শকুনের বিপর্যয় ঘনিয়ে আসার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া দূষণসহ বিভিন্ন কারণে শকুনের ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার হারও কমছে। ২০১০ সালের আগস্ট থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত ‘বাংলাদেশে বাংলা শকুন সংরক্ষণ’ শীর্ষক এক গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে। সাধারণত ৫০ শতাংশেরও বেশি ডিম থেকে বাচ্চা হয়। ৩২টি শকুনের বাসার ওপর ওই সমীক্ষা চালানো হয়।
সমীক্ষাটির প্রধান গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে দেশে শকুনের বংশ রক্ষা পেতে পারে।
পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক উদ্বেগ ও প্রচারণার পর বাংলাদেশে ২০১০ সালে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারি উদ্যোগ কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোনো কোম্পানি এই ওষুধ বিক্রি বন্ধ করেছে কি না তা দেখভালের দায়িত্ব কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ ওষুধের দোকানে এখনো ডাইক্লোফেনাক বিক্রি হয় বলে সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন।
তিনটি স্থানীয় প্রজাতির শকুন নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়লে ২০০৬ সালে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়। গত বছরের মে মাসে প্লসওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতে নিষিদ্ধ করার পর দুই বছরে মৃত গরুর দেহে ডাইক্লোফেনাকের অবশেষ পাওয়ার হার ৪০ শতাংশ কমেছিল। যেসব মৃত গরুতে ডাইক্লোফেনাক ছিল সেখানেও এর মাত্রা ছিল লক্ষণীয়ভাবে কম।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর ব্যথানাশক হিসেবে ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসে। মৃত গরুর দেহ থেকে ডাইক্লোফেনাকের অবশেষ শকুনের শরীরে প্রবেশ করে তাদের কিডনি নষ্ট করে দেয়। এক দশক আগেও দেশে কয়েক হাজার বাংলা শকুন ছিল।
খোদ রাজধানীর নিমতলী, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ডাইক্লোফেনাক বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর বাইরেও কয়েক জায়গায় কমবেশি একই চিত্র দেখা যায়। গত ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের ‘বীজঘর’ দোকানে ক্রেতা সেজে কিনতে চাইলে দোকানি আট প্রকারের ডাইক্লোফেনাক আছে বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বেশির ভাগ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখনো ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে। দেশের বেশির ভাগ পশুপাখির ওষুধ বিক্রেতা দোকানে ওষুধটি রাখেন। সরকার প্রজ্ঞাপন জারির বাইরে এ পর্যন্ত এর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা ডাইক্লোফেনাকের বিকল্প হিসেবে মেলোক্সিক্যাম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এটি শকুনের জন্য ক্ষতিকর নয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ভারতে নভেম্বর ২০০৭ থেকে জুন ২০১০ পর্যন্ত ২৫০টি ওষুধের দোকানে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, মেলোক্সিক্যামের ব্যবহার ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তবে সে দেশে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহূত ডাইক্লোফেনাক গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহার করা অব্যাহত রয়েছে বলেও সমীক্ষায় দেখা গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন ফর নেচারের (আইইউসিএন) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘বাংলা শকুন’ বিশ্বজুড়ে বিপন্ন প্রাণীর তালিকা থেকে অতিবিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে, গত এক যুগে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলা শকুনের সংখ্যা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ কমে গেছে। ২০০৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনিরুল খানের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে এ শকুনের সংখ্যা ১০০০টি। ২০১১ সালের সর্বশেষ সমীক্ষায় এই সংখ্যা আরও কমে ৭০০টিতে নেমে এসেছে।
প্রধান বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী অঞ্চল) তপনকুমার দের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ডাইক্লোফেনাকের উৎপাদন ও বিক্রি এখনো চলার কথা স্বীকার করেন। তপন কুমার দে কারণ হিসেবে তাদের জনবলের স্বল্পতার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জনবল না থাকায় এই ওষুধের বিক্রি ও উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গরুর রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি মৃত গরুর শরীর থেকে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। শকুন হচ্ছে একমাত্র প্রাণী যারা তড়কা রোগে আক্রান্ত গরুর মৃতদেহ খেয়ে হজম করতে পারে। এ কারণে শকুন টিকে থাকলে তা প্রাকৃতিকভাবে তড়কা রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা করবে।
উঁচু, পুরোনো গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আবাস ধ্বংস হওয়াও দেশে শকুনের বিপর্যয় ঘনিয়ে আসার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া দূষণসহ বিভিন্ন কারণে শকুনের ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার হারও কমছে। ২০১০ সালের আগস্ট থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত ‘বাংলাদেশে বাংলা শকুন সংরক্ষণ’ শীর্ষক এক গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে। সাধারণত ৫০ শতাংশেরও বেশি ডিম থেকে বাচ্চা হয়। ৩২টি শকুনের বাসার ওপর ওই সমীক্ষা চালানো হয়।
সমীক্ষাটির প্রধান গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে দেশে শকুনের বংশ রক্ষা পেতে পারে।
No comments