পবিত্র কোরআনের আলো-মুশরিকরাও কিন্তু চরম বিপদে শুধু আল্লাহকেই ডাকে

০. ক্বুল আরাআইতাকুম ইন আতা-কুম আ'যা-বুল্লা-হি আও আতাত্কুমুচ্ছা-আ'তু আগাইরাল্লা-হি তাদঊ'না; ইন কুনতুম সা-দিক্বীন। ৪১. বাল ইয়্যা-হু তাদঊ'না ফাইয়াকশিফু মা তাদঊ'না ইলাইহি ইন শা-আ ওয়া তানছাওনা মা তুশরিকূন।
৪২. ওয়ালাক্বাদ আরছালনা ইলা উমামি ম্মিন ক্বাবলিকা ফাআখাযনা-হুম বিলবা'ছা-য়ি ওয়াদ্দ্বার্রা-য়ি লাআ'ল্লাহুম ইয়াতাদ্বার্রাঊ'ন।


৪৩. ফালাওলা- ইয্ জা-আহুম বা'ছুনা তাদ্বার্রাঊ' ওয়ালা-কিন ক্বাছাত্ ক্বুলূবুহুম ওয়া যাইয়্যানা লাহুমুশ্ শাইত্বা-নু মা- কা-নূ ইয়া'মালূন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৪০-৪৩]

অনুবাদ
৪০. (হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যখন তোমাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো শাস্তি আসবে, অথবা মৃত্যুর মুহূর্ত ঘনিয়ে আসবে, তখন কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবে? সত্যি করে বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
৪১. বরং তোমরা তখন শুধু তাঁকেই ডাকবে। তোমরা যে জন্য তাঁকে ডাকবে, তিনি চাইলে তা দূর করে দেবেন; আর তোমরা তখন ভুলে যাবে তাদের কথা, যাদের আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার বানাতে।
৪২. আপনার আগের অনেক সম্প্রদায়ের কাছেও আমি রাসুল পাঠিয়েছিলাম। তাদেরও আমি নানা দুঃখ-কষ্ট ও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছিলাম, যেন তারা বিনীত হতে শেখে।
৪৩. কিন্তু আমার দেওয়া শাস্তি্তর ভেতর যখন তারা পড়ল, তখনো কিন্তু বিনয়ী হলো না। বরং তাদের অন্তর আরো শক্ত হয়ে গেল এবং তারা যা করত, তাতে শয়তান তাদের আরো ভালোভাবে প্রবেশ করিয়ে দিল।

ব্যাখ্যা
৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসুলকে পরামর্শ দিচ্ছেন, তিনি যেন মুশরিকদের বলেন, তোমরা তোমাদের বিবেকের কাছে এই প্রশ্ন রাখো যে যখন তোমাদের কাছে কোনো কঠিন বিপদ এসে উপস্থিত হয় অথবা কিয়ামত মুহূর্তই এসে যায়, তাহলে তারা কি এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকে? এই প্রশ্ন তাদের বিবেকের কাছে উত্থাপন করার কথা বলা হয়েছে, যদি সত্যিই তাদের বিবেক থাকে। এটা একত্ববাদ সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি জাগিয়ে তোলার এক তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন। মক্কার পৌত্তলিক কুরাইশরাসহ প্রায় সব মুশরিক সম্প্রদায়ই আল্লাহর সঙ্গে নানা মিথ্যা উপাস্যকে শরিক বানাত ইহকালীন নানা রকম উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। চূড়ান্ত বিপদে-বিপর্যয়ে তারা জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহকেই স্মরণ করে। এই সত্যটা যদি তারা নিজেরা উপলব্ধি করে তাহলেই মুশরিকদের ভ্রান্ত ধর্মবিশ্বাসের আর কোনো ভিত্তি থাকে না। ৪১ নম্বর আয়াতে সেই চূড়ান্ত পরিণতির দিকে ধাবিত হওয়ার সময়ের কথাই বলা হয়েছে, তখন সবাই আল্লাহকেই ডাকবে। আর যে উদ্দেশ্যে তারা আল্লাহকে ডাকবে, তিনি তা পূরণ করেও দিতে পারেন। আল্লাহতায়ালা বিপদ থেকে তাদের উদ্ধার করেও দিতে পারেন, আবার নাও করতে পারেন। সেটা পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিনি শুধু মুমিনের ডাকেই সাড়া দেন না, মুমিন, কাফের, মুশরিক_সবার ডাকেই সাড়া দেন। সেই চূড়ান্ত সময়ে মুশরিকরা তাদের মিথ্যা উপাস্যদের কথা ভুলে যায়, এটাই হচ্ছে সত্য। আর ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, মক্কা বিজয়ের পর মুশরিকরা তাদের ভ্রান্ত উপাস্যের কথা চিরতরে ভুলে গিয়েছিল।
৪২ নম্বর আয়াতে অতীতে বিভিন্ন জাতির কাছে প্রেরিত নবী-রাসুলদের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। সেই সব জাতির ওপর আল্লাহতায়ালা বিপদ-আপদ নিয়ে আসতেন এ জন্য যে তারা এর ফলে বিনয়ী হবে, শিক্ষা নেবে। কিন্তু কার্যত দেখা গেছে উল্টো ফল। এরা বরং অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্যপনায় আরো কঠোর হয়ে উঠেছে। এদের অন্তর আরো কঠিন হয়ে উঠেছে এবং শয়তান তাদের আরো ভালোভাবে এদের এ ক্ষেত্রে পরিপোষণ করেছে। মক্কার উদ্ধত কুরাইশদের আ@ে@@@াপলব্ধি জাগিয়ে তোলার জন্য অতীতের এসব প্রসঙ্গ স্মরণ করানো হচ্ছে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.