পবিত্র কোরআনের আলো-হুনায়নের যুদ্ধ এবং মুশরিকদের প্রতি হজপালনে নিষেধাজ্ঞা
২৫. লাক্বাদ নাসারাকুমুল্লা-হু ফী মাওয়াতি্বনা কাছীরাতিন ওয়া ইয়াওমা হুনাইনিন ইয্ আ'জাবাত্কুম্ কাছ্রাতুকুম ফালাম তুগ্নি আ'নকুম্ শাইআন ওয়াদ্বা-ক্বাত আ'লাইকুমুল্ আরদ্বু বিমা রাহুবাত্ ছুম্মা ওয়াল্লাইতুম মুদবিরীন। ২৬. ছুম্মা আন্যালাল্লা-হু ছাকীনাতাহূ আ'লা রাসূলিহী ওয়া আ'লাল্ মু'মিনীনা ওয়া আন্যালা জুনূদান লাম তারাওহা ওয়া আ'য্যাবাল্লাযীনা কাফারূ; ওয়া যা-লিকা জাযা-উল কাফিরীন।
২৭. ছুম্মা ইয়াতূবুল্লা-হু মিম্ বা'দি যা-লিকা আ'লা মান ইয়াশাউ; ওয়াল্লা-হু গাফূরুর্ রাহীম। ২৮. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ ইন্নামাল মুশ্রিকূনা নাজাছুন, ফালা ইয়াক্ব্রাবুল্ মাছ্জিদাল হারা-মা বা'দা আ'-মিহিম হা-যা; ওয়া ইন্ খিফ্তুম আ'ইলাতান ফাছাওফা ইউগ্নীকুমুল্লা-হু মিন্ ফাদ্বলিহি ইন শা-আ; ইন্নাল্লা-হা আ'লীমুন হাকীম।
[সুরা : আত তাওবা, আয়াত : ২৫-২৮]
অনুবাদ : ২৫. আল্লাহ তায়ালা তো বহু জায়গায়ই তোমাদের সাহায্য করেছেন, বিশেষ করে হুনায়নের (যুদ্ধের) দিন। যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের বিভোর করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনো কাজে আসেনি। (সেদিন) জমিন তার প্রশস্ততা সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েও গেলে।
২৬. অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল ও মুমিনদের প্রতি প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং এমন এক বাহিনী নামিয়ে দিলেন, যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। আর এভাবেই আল্লাহ শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের, যারা তাঁর অবাধ্য হয়েছিল। এটাই অবাধ্যদের প্রাপ্য পরিণতি।
২৭. অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে এ সব কিছুর পরও তওবার সৌভাগ্য দান করেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
২৮. হে মুমিনরা! তোমরা জেনে রেখো, মুশরিকরা তো (বিশ্বাস ও আদর্শের দিক থেকে) অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর যেন তারা মসজিদুল হারামের কাছেও না আসে। (এই নির্দেশে মুশরিকদের হজ নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং এর ফলে) তোমরা যদি আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করো, তাহলে জেনে রেখো, আল্লাহ চাহে তো নিজ অনুগ্রহে তিনি তোমাদের সমৃদ্ধিশালী করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও মহাকুশলী।
ব্যাখ্যা : ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে মূলত হুনায়নের যুদ্ধ এবং এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। এই আয়াতগুলোর তাৎপর্য বুঝতে হলে হুনায়নের যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। মক্কা বিজয়ের পর নবী করিম (সা.) খবর পেলেন, মালিক ইবনে আউফের নেতৃত্বে বনু হাওয়াজিন গোত্রের লোকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
বনু হাওয়াজিন এক বিশাল গোষ্ঠী। এর অনেক শাখা-প্রশাখা। তায়েফের প্রসিদ্ধ ছাকিফ গোত্রও এরই শাখা। তাদের সংগৃহীত যোদ্ধাসংখ্যা ২৪ থেকে ২৮ হাজার ছিল বলে জানা যায়। হাওয়াজিনের এই যুদ্ধাভিযান প্রতিহত করার জন্য নবী (সা.) ১৪ হাজার যোদ্ধা সাহাবির এক বাহিনী নিয়ে মক্কা থেকে বের হয়ে হুনায়ন উপত্যকায় উপস্থিত হন। এর আগে কোনো যুদ্ধে মুসলমানদের সেনাসংখ্যা এত বেশি ছিল না। এবার সেনাদলের কলেবর নিয়ে তাদের অনেকের মধ্যে কিছুটা বড়াইয়ের মনোভাব জাগ্রত হলো। কেউ কেউ জয়ের ব্যাপারে অতি নিশ্চিত হয়ে গেলেন। মুসলমানরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর এতটা নির্ভর করছিল, যা ইমানি শক্তির দুর্বলতারই প্রকাশ। সুতরাং এ যুদ্ধে মুসলমানরা যাতে সঠিক শিক্ষাটা পায়, সে জন্য আল্লাহর ইচ্ছায় একটা বিপর্যয়ের মুখে তারা পড়েছিল। মুসলমান বাহিনী যখন এক সংকীর্ণ গিরিপথ অতিক্রম করছিল, তখন হাওয়াজিনের তীরন্দাজ বাহিনী অকস্মাৎ তাদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং পর্যুদস্ত করে ফেলে। পরে আল্লাহর বিশেষ রহমতে আবার তারা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয় এবং জয়লাভ করে।
২৮ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার উপসংহার টানা হয়েছে। মুশরিকদের জন্য কাবাগৃহের কাছে আসাও নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। এর প্রকৃত অর্থ মুশরিক ও কাফিরদের জন্য হজ পালন নিষিদ্ধ হয়ে গেল। তবে আক্ষরিক অর্থে কাবাগৃহে বা যেকোনো মসজিদে মুশরিক ও কাফিরদের প্রবেশ নিষিদ্ধ নয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
[সুরা : আত তাওবা, আয়াত : ২৫-২৮]
অনুবাদ : ২৫. আল্লাহ তায়ালা তো বহু জায়গায়ই তোমাদের সাহায্য করেছেন, বিশেষ করে হুনায়নের (যুদ্ধের) দিন। যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের বিভোর করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনো কাজে আসেনি। (সেদিন) জমিন তার প্রশস্ততা সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েও গেলে।
২৬. অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল ও মুমিনদের প্রতি প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং এমন এক বাহিনী নামিয়ে দিলেন, যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। আর এভাবেই আল্লাহ শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের, যারা তাঁর অবাধ্য হয়েছিল। এটাই অবাধ্যদের প্রাপ্য পরিণতি।
২৭. অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে এ সব কিছুর পরও তওবার সৌভাগ্য দান করেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
২৮. হে মুমিনরা! তোমরা জেনে রেখো, মুশরিকরা তো (বিশ্বাস ও আদর্শের দিক থেকে) অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর যেন তারা মসজিদুল হারামের কাছেও না আসে। (এই নির্দেশে মুশরিকদের হজ নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং এর ফলে) তোমরা যদি আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করো, তাহলে জেনে রেখো, আল্লাহ চাহে তো নিজ অনুগ্রহে তিনি তোমাদের সমৃদ্ধিশালী করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও মহাকুশলী।
ব্যাখ্যা : ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে মূলত হুনায়নের যুদ্ধ এবং এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। এই আয়াতগুলোর তাৎপর্য বুঝতে হলে হুনায়নের যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। মক্কা বিজয়ের পর নবী করিম (সা.) খবর পেলেন, মালিক ইবনে আউফের নেতৃত্বে বনু হাওয়াজিন গোত্রের লোকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
বনু হাওয়াজিন এক বিশাল গোষ্ঠী। এর অনেক শাখা-প্রশাখা। তায়েফের প্রসিদ্ধ ছাকিফ গোত্রও এরই শাখা। তাদের সংগৃহীত যোদ্ধাসংখ্যা ২৪ থেকে ২৮ হাজার ছিল বলে জানা যায়। হাওয়াজিনের এই যুদ্ধাভিযান প্রতিহত করার জন্য নবী (সা.) ১৪ হাজার যোদ্ধা সাহাবির এক বাহিনী নিয়ে মক্কা থেকে বের হয়ে হুনায়ন উপত্যকায় উপস্থিত হন। এর আগে কোনো যুদ্ধে মুসলমানদের সেনাসংখ্যা এত বেশি ছিল না। এবার সেনাদলের কলেবর নিয়ে তাদের অনেকের মধ্যে কিছুটা বড়াইয়ের মনোভাব জাগ্রত হলো। কেউ কেউ জয়ের ব্যাপারে অতি নিশ্চিত হয়ে গেলেন। মুসলমানরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর এতটা নির্ভর করছিল, যা ইমানি শক্তির দুর্বলতারই প্রকাশ। সুতরাং এ যুদ্ধে মুসলমানরা যাতে সঠিক শিক্ষাটা পায়, সে জন্য আল্লাহর ইচ্ছায় একটা বিপর্যয়ের মুখে তারা পড়েছিল। মুসলমান বাহিনী যখন এক সংকীর্ণ গিরিপথ অতিক্রম করছিল, তখন হাওয়াজিনের তীরন্দাজ বাহিনী অকস্মাৎ তাদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং পর্যুদস্ত করে ফেলে। পরে আল্লাহর বিশেষ রহমতে আবার তারা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয় এবং জয়লাভ করে।
২৮ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার উপসংহার টানা হয়েছে। মুশরিকদের জন্য কাবাগৃহের কাছে আসাও নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। এর প্রকৃত অর্থ মুশরিক ও কাফিরদের জন্য হজ পালন নিষিদ্ধ হয়ে গেল। তবে আক্ষরিক অর্থে কাবাগৃহে বা যেকোনো মসজিদে মুশরিক ও কাফিরদের প্রবেশ নিষিদ্ধ নয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments