মাতৃদুগ্ধ দিবস-শিশুর জন্য অবিকল্প
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, নবজাতকের সুস্থ, স্বাভাবিক ও পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য জন্মের পর ছয় মাস অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত। বিশ্বব্যাপী মাতৃদুগ্ধ দান কর্মসূচি প্রচারণায় এ বিষয়ের ওপরই জোর দেওয়া হয়। ১ আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস। ১ থেকে ৭ আগস্ট সপ্তাহব্যাপী বিশ্বে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হবে। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য মানুষকে সচেতন করাই মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালনের উদ্দেশ্য। মাতৃদুগ্ধ পানের মধ্য দিয়ে সন্তান ও মায়ের মধ্যে তৈরি হয় এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
শিশুর জন্য উপযোগী, সঠিক ও সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ, যা শিশুর জন্য অবিকল্প। বারবার গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত, মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর চেয়ে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা শিশুরোগের আশঙ্কা তাদের ১৪ গুণ বেশি। মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে পরিপূর্ণভাবে। জন্মের পরপরই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। কুসংস্কার ও অশিক্ষার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুকে জন্মের পর শালদুধ পান করানো হয় না; মধু ও চিনি খাওয়ানো হয়। অথচ এ সময়টায় শিশুকে আলাদাভাবে পানি খাওয়ানো উচিত নয়। মায়ের দুধ শিশুর পানির চাহিদাও মেটায়। সঠিক নিয়মে এবং নিয়মিত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে শিশু ও মা_উভয়েরই স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক কম থাকে। কারণ মায়ের দুধে ৮৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে। তার পরও অনেক মা আছেন, যাঁরা নানা কারণে বুকের দুধ সন্তানকে দিতে পারেন না। মায়ের শারীরিক অক্ষমতা, কর্মজীবী মায়ের পর্যাপ্ত দুধ তৈরি না হওয়া প্রভৃতি কারণে ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ সন্তান মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত থাকে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) এক হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৮ থেকে ২১ লাখ শ্রমিক পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশ নারী শ্রমিক। এ ছাড়া নানাভাবে অনেক কর্মজীবী নারী কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শ্রম দিচ্ছেন। বাংলাদেশে যেসব নারী নানা পেশায় কর্মরত, তাঁদের অনেক প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটির কোনো নীতিমালা নেই। বেসরকারি সংগঠন কর্মজীবী নারীর পরিচালনায় এক জরিপ থেকে দেখা গেছে, মাত্র ৬ শতাংশ নারী মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করেন। ২৩ শতাংশ নারী বেতন ছাড়া এ ছুটি পান। ৪৫ শতাংশ নারী মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে বঞ্চিত। ফলে শ্রমের সঙ্গে জড়িত একটি বড় অংশের নারী তাঁর সন্তানকে মায়ের দুধ পান থেকে বঞ্চিত করে রাখছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বিজিএমইএর স্মারক অনুযায়ী, কর্মজীবী মায়ের জন্য প্রতিটি পোশাক কারখানায় অবশ্যই ডে কেয়ার সেন্টার থাকতে হবে, যাতে কর্মজীবী মায়েরা তাঁদের শিশুসন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। সন্তানের প্রথম অধিকার হচ্ছে মায়ের দুধ পাওয়া। শিশুর এ অধিকার ভোগ করার জন্য কর্মজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। শিশুকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে মায়ের স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। সাধারণত স্তন্যদানের মেয়াদ যত বেশি হবে (কমপক্ষে দুই বছর), গর্ভসঞ্চারও তত দিন পর্যন্ত রোধ করা সম্ভব। এতে দেখা যায়, সন্তান জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত প্রায় ৯৮ শতাংশ মা গর্ভবতী হন না। আবার শিশুদের অনেক রোগের কারণ হচ্ছে ঠিকমতো মায়ের দুধ পান না করার অভ্যাস। অথচ মায়ের দুধ পান করলে শিশু অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকে। এতে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকিও অনেকখানি কমে যায়। সব শ্রেণী-পেশার অবস্থানের মা তাঁর সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে আগ্রহী ও সচেতন হবেন_এটাই হোক মাতৃদুগ্ধ দিবসের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বনরূপা চক্রবর্তী
No comments