বিএনপির কর্মী-পুলিশ ব্যাপক সংঘর্ষ, আহত চার শতাধিক

গণমিছিলে পুলিশের বাধাকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিক, পুলিশ ও নারীসহ চার শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বিএনপি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সংঘর্ষের সময় পুলিশ বিএনপি ও চারদলের নেতা-কর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিপেটা করে। এ ছাড়া পুলিশ ৬৭টি রাবার বুলেট ও দুই শতাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।


আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয়, প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
দিনাজপুর: দিনাজপুরে গতকাল চারদলীয় জোটের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১৫ পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন বিএনপির নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ কমপক্ষে ৫০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। পুলিশের মধ্যে আহত হয়েছেন কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনিছুর রহমান, এসআই রফিক, নজরুল ইসলাম, মহসিন, ফখরুল প্রমুখ।
লুৎফর রহমান জানান, তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিপেটা করে।
কোতোয়ালি থানার ওসি হাসান ইকবাল শামীম জানান, মিছিলের আড়ালে চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। তাই পুলিশ মিছিল করতে দেয়নি।
নাটোর: নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার অভিযোগ করেন, সকালে তাঁদের নেতা-কর্মীরা মিছিলের উদ্যোগ নিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাধা দেন। তাঁরা বিএনপির ১১৮ জন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেন। এরশাদ আলী (৪০) নামের এক কর্মীর পায়ের রগও কেটে দেন তাঁরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ তাঁদের বহনকারী ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা নাটোর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ মোজাম্মেল হকের জিপ ভাঙচুর করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিএনপির মিছিলে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জামায়াতের চার কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশ ও ব্যবসায়ীসহ কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সদর থানার ওসি মইনুল ইসলাম, এসআই শফিকুল, আজিজুল হকসহ পুলিশের ১০ জন সদস্য রয়েছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের পিকাপভ্যান ভাঙচুর করে। পুলিশ কয়েক দফায় ১৫০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ২৫টি রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
এদিকে কুড়িগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে স্থানীয় সাংসদ জাফর আলীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
নীলফামারী: নীলফামারীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১২টি রাবার বুলেট ও তিনটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
সংঘর্ষে ‘সময় টিভি’র নীলফামারী প্রতিনিধি সরকার কনক ওয়াজেদ, এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি মিল্লাদুর রহমান, বাংলাবাজার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মুজাহিদ বিন খয়রাত আহত হন।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৩০টি রাবার বুলেট ও নয়টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপসহ ব্যাপক লাঠিপেটা করে। এ সময় বিএনপির ১৩ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশের রাবার গুলিতে আবদুস শহিদ (৩৫), রাসেল (২৫) ও আসাদসহ (২৪) বিএনপির তিন কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরগুনা: বরগুনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১৫ পুলিশসহ বিএনপির কমপক্ষে ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে বিক্ষুব্ধ বিএনপির কর্মীরা সদর থানার ওসি জাকির হোসেন ও উপপরিদর্শক (এসআই) মনসুর আহম্মেদের দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মাদারীপুর: মাদারীপুরে পুলিশের লাঠিপেটায় নারী ও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গণমিছিলের আগে কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সুমন হোটেল এলাকায় এসে জড়ো হন। গুরুতর আহত নাছিমা বেগম, কামাল হোসেন, রাজীব ও আল আমিনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে জেলা বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ১২ নেতা-কর্মী আহত হন। এ ছাড়া পুলিশ পাঁচটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সাবেক সাংসদ মুশফিকুর রহমান বলেন, পুলিশ গণমিছিলে বাধা দিয়ে সরকারের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে বিএনপির গণমিছিলে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের হামলায় বিএনপির পাঁচজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। সকালে বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল শহরের পৌর উদ্যানে সমবেত হতে থাকে। এ সময় বিভিন্ন স্থানে মিছিলের ওপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের স্টেডিয়াম এলাকা থেকে গতকাল বিএনপির গণমিছিল বের হয়। মিছিলটি ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকায় এলে পুলিশ বাধা দেয় ও লাঠিপেটা করে। এতে বিএনপির পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন।
জামালপুর: জামালপুরে পুলিশের বাধায় বিএনপির গণমিছিল পণ্ড হয়ে গেছে। কর্মীদের ইটের আঘাতে সদর থানার এসআই মুখলেছুর রহমান ও কনস্টেবল মাসুদ গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সদর থানার ওসি মজিবুর রহমান মজুমদার বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
বগুড়া: বগুড়ায় বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ গতকাল একই সময়ে গণমিছিল ও সমাবেশ আহ্বান করায় প্রশাসন দিনব্যাপী ১৪৪ ধারা জারি করায় কোনো পক্ষই কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। তবে জেলা বিএনপি তাদের কর্মসূচি আজ করার ঘোষণা দিয়েছে।
এ ছাড়া গাইবান্ধা ও মানিকগঞ্জে গতকাল বিএনপি গণমিছিল করেছে। তবে ঝালকাঠি, খাগড়াছড়ি ও নেত্রকোনায় পুলিশের বাধায় বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.