নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চট্টগ্রামে আজ বিএনপির গণমিছিল

চট্টগ্রাম নগরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের গণমিছিলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে মহানগর পুলিশ। এতে আজ সোমবার বিকেলে চার দলের কর্মসূচি পালনে আর কোনো বাধা রইল না। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে নগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ফোন করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানান।


গতকাল চার দলের এই গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহানগর পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করা হয়। গত শনিবার রাতে নগর পুলিশ সে অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নগরে সব ধরনের মিছিল ও সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কাশেম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণমিছিলের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা আইন মেনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারবে। তবে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা ব্যবহার ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। সেটা করলে আমরা আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, ‘গণমিছিলে বাধা দেওয়া হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বিএনপি। তখন এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে।’
গতকাল রোববার দুপুরে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলের গণমিছিল কর্মসূচির ওপর শনিবার রাতে নিষেধাজ্ঞা জারি ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ও আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ বিকেলে কাজীর দেউড়ীর মোড় থেকে চার দল গণমিছিল করবে।
কর্মসূচিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করে সংবাদ সম্মেলনে এম কে আনোয়ার বলেন, ‘সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। শেখ হাসিনাও এর জন্য দায়ী থাকবেন।’ তিনি বলেন, ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। এর জন্য জনতার আদালতে তাদের বিচার হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এম কে আনোয়ার বলেন, ‘চার দল চারটি রোডমার্চ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ করেছে। চট্টগ্রামের সমাবেশে ১৫ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ওই সমাবেশে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। তাই নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, গণ মিছিলেও কোনো সংঘাত হবে না।’ তিনি বলেন, ‘পেশিশক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ারও ইচ্ছা আমাদের নেই। জনগণই বিএনপির শক্তি। চট্টগ্রামের সমাবেশে জনতার জোয়ার দেখে সরকার ভীত হয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা ও নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে।’
এম কে আনোয়ার আরও বলেন, ‘নিজ দেশের স্বার্থে কাজ না করে অন্য দেশের হাতে দেশের অর্থনীতির চাবিকাঠি তুলে দিয়ে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ কাজ করেছে। এ জন্য একদিন সরকারকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে।’
এর আগে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি সংঘাত ও হরতালের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সূচনা করেছে। এই সময়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সরকার কী করতে চায়? তাহলে তারা কি বাকশালী একদলীয় শাসন চায়?’
আমীর খসরুর দাবি, সরকার আজ দেশকে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসায় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। নেতা-কর্মীরা পুলিশের ভয়ে বাসাবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, বাসায় যেতে পারছে না।

No comments

Powered by Blogger.