সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ দিয়ে মৌলবাদ প্রতিরোধঃ দীপু মনি by সৈয়দ আনাস পাশা
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মনি হিংস্র মৌলবাদকে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, এটি মোকাবেলার প্রতিরোধ পরিকল্পনায় স্ব স্ব সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। তা নাহলে এ বিষয়ক যেকোনও পরিকল্পনাই ব্যর্থ হতে পারে। মঙ্গলবার ব্রিটেনের লেস্টার শহরের ডি মন্টফর্ট ইউনিভার্সিটিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটি আয়োজিত `হিংস্র মৌলবাদের শেকড়‘ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল আলোচকের বক্তৃতায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
সেমিনারের আরেক মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্বখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা মি: জেসি জ্যাকসন। মোট ৫টি ওয়ার্কশপে বিভক্ত দিনব্যাপী এই সেমিনারের সমাপনী কি-নোট স্পিকার ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে অন্যতম মূল আলোচক হিসেবে `লেসন ফরম ইউএস‘ শীর্ষক আলোচনা উপস্থাপন করেন আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা মি: জেসি জ্যাকসন। সেমিনারের শুরুতে হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কিথ ভাজ এমপি সেমিনারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, হিংস্র মৌলবাদের শেকড় খুঁজে বের করতে হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটি গত ২৫ মে যে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে, এই সেমিনার সেই তদন্তেরই একটি অংশ। সেমিনারের মূল আলোচক হিসেবে আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মি: জেসি জ্যাকসন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কিথ ভাজ বলেন, হিংস্র মৌলবাদের শেকড় খোঁজার এই প্রক্রিয়ায় আমরা আজকের সেমিনারের এই দুই মূল আলোচকের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
কিথ ভাজ মৌলবাদকে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সেমিনারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও আমেরিকান নেতা জেসি জ্যাকসনের উপস্থিতিকে স্বাগত জানান। কিথ ভাজের পর পরই ব্রিটিশ সরকারের মৌলবাদী সন্ত্রাস প্রতিরোধ বিষয়ক সংশোধিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ব্রিটেনের অপরাধ ও নিরাপত্তা বিষয়ক পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি জেমস ব্রোকেনশায়ার এমপি।
সেমিনারে দীপু মনি বলেন, হিংস্র মৌলবাদ সমাজে আছে, এবং সময়ের সাথে সাথে এর রূপও বদলায়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সমস্যা ও সংকট থেকেও এর বিস্তার ঘটে।
তিনি বলেন, মৌলবাদ শুধু ধর্মীয় আদর্শ থেকেই জন্ম নেয় না, সামাজিক ও রাজনৈতিক হতাশা থেকেও এর উৎপত্তি হতে পারে। মৌলবাদ বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে এর আগে ‘ইসলাম’ শব্দটি ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করে দীপু মনি বলেন, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের সাথে কোনও একক ধর্ম বা জাতীগোষ্ঠির পরিচয়কে একাকার করা ঠিক নয়, এতে এই সমস্যাকে আরও উস্কে দেয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজের হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মৌলবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ একটি কঠিন কাজ বলেই মনে হবে। এই সংজ্ঞা সময়ে সময়ে বদলায়। এ প্রসঙ্গে তিনি কবি কার্ল সেগানের একটি উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা কোনও একটি সম্প্রদায়ের কর্মকান্ড যখন পছন্দ করি, তখন বলি এরা মুক্তিযোদ্ধা, পছন্দ না করলে বলি সন্ত্রাসী আর এই গ্রুপটির কর্মকান্ড সম্পর্কে সঠিক কোনও ধারণা না পেলে বলি এরা গেরিলা।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রচার প্রোপাগান্ডা এমনভাবে হয় যে, মনে হয় যেন এর দায় একমাত্র মুসলমানদের। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ পরিকল্পনা সফল করতে হলে এই ধরনের প্রচার প্রোপাগান্ডা যে তরুণ সমাজে মৌলবাদের বিস্তার আরও বাড়িয়ে দেয় আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এটি বুঝতে হবে। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণের সাপোর্ট পেয়েছি বলেই আমরা এক্ষত্রে অনেকটা সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদ মোকাবেলা এই সরকারের জন্য একটি কঠিন কাজ ছিল। ইসলাম যে একটি আধুনিক ধর্ম, মৌলবাদের কোন লাইসেন্স নয় এ বিষয়টি আমরা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের দুই লক্ষ ইমামকে আমরা জনসচেতনতার কাজে উৎসাহিত করেছি এবং ফলও পেয়েছি। গ্রাসরুট পর্যায়ে হিংস্র মৌলবাদের কিছু কিছু উপস্থিতি এখনও আছে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘সমাজ থেকে এদের এই সামান্যতম উপস্থিতিও নিশ্চিহ্ন করতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। জনগণও এ বিষয়ে আমাদের সমর্থন দিচ্ছে।’
‘হিংস্র মৌলবাদ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা একটি কঠিন কাজ’ মন্তব্য করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমাজের অবহেলিত অংশকে ব্যবহার করে মৌলবাদ বার বার সংগঠিত হয়। এই সমস্যা মোকাবেলাকে একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া হিসেবেই ধরে নিতে হবে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার সাথে দীর্ঘ সময় সম্পৃক্ত থেকে মৌলবাদ বিতাড়ণ করতে হবে। তবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সময় ক্ষেপণ চলবে না। গত এক দশকে সামাজিক অপরাধীদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদের ব্যাপক বিস্তৃতির অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির (সাইবার ওয়ার্ল্ড) ব্যাপক ব্যবহারও এক্ষেত্রে একটি ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো মৌলবাদ মোকাবেলা করতে গিয়ে এই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার কন্ট্রোল করা যাবে না, এতে জনগনের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রশ্ন জড়িত। মৌলবাদ মোকাবেলায় গণতন্ত্র চর্চাকে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর থাকলে মৌলবাদী তৎপরতার সুযোগ কমে আসে। তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুখ দু:খে তাদের সাথে সরকার ও সমাজের শীর্ষ স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখাকেও মৌলবাদ মোকাবেলার একটি ইতিবাচক পন্থা বলে মন্তব্য করেন। মৌলবাদ মোকাবেলায় সব সময় শক্তি প্রয়োগ সঠিক পরিকল্পনা নয় বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা জেসি জ্যাকসন বলেন, সমাজের অবহেলিত অংশকেই মৌলবাদীরা মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে সমাজ থেকে বৈষম্য দুর করে দায়িত্ববোধ, জবাবদিহিতা ও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিও সবার জন্য সমান করতে হবে। তিনি বলেন আইনের কাঠামো এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে এটি সমাজের অবহেলিত-বান্ধব হয়। `প্রত্যাখ্যান থেকে প্রতিক্রিয়া’ এই বাখ্যাটি উল্লেখ করে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা জ্যাকি জ্যাকসন বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি অধিকার থেকে কেউ যেন প্রত্যাখ্যাত না হয়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য যতদিন সমাজে অবস্থান করবে ততদিন মৌলবাদও সমাজ থেকে বিতাড়িত করা যাবে না, এমনই মন্তব্য করেন জেসি জ্যাকসন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জেসি জ্যাকসনের বক্তব্যের পর পুরো হল উঠে দাঁড়িয়ে তাদের সম্মান প্রদর্শন করে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জ্যাকি জ্যাকসন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের হোম অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সিলেক্ট কমিটির এই সেমিনারে যোগ দিতে মঙ্গলবার সকালেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী লন্ডন এসে পৌঁছেন। হিথরো বিমান বন্দর থেকে তিনি সরাসরি চলে যান সেমিনারস্থল লন্ডন থেকে ১০০ মাইল দূরবর্তী লেস্টারের ডি মন্টফর্ট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডমিনিক সেলার্ড ও হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কিথ ভাজ এমপি তাঁকে স্বাগত জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ডঃ সাইদুর রহমান খান, প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী, লন্ডনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিন আলী, এটিএন বাংলার সাংবাদিক বুলবুল হাসান ও এম এ কাদের, এবং বাংলানিউজের লন্ডন প্রতিনিধিও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারে দীপু মনি বলেন, হিংস্র মৌলবাদ সমাজে আছে, এবং সময়ের সাথে সাথে এর রূপও বদলায়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সমস্যা ও সংকট থেকেও এর বিস্তার ঘটে।
তিনি বলেন, মৌলবাদ শুধু ধর্মীয় আদর্শ থেকেই জন্ম নেয় না, সামাজিক ও রাজনৈতিক হতাশা থেকেও এর উৎপত্তি হতে পারে। মৌলবাদ বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে এর আগে ‘ইসলাম’ শব্দটি ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করে দীপু মনি বলেন, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের সাথে কোনও একক ধর্ম বা জাতীগোষ্ঠির পরিচয়কে একাকার করা ঠিক নয়, এতে এই সমস্যাকে আরও উস্কে দেয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজের হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মৌলবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ একটি কঠিন কাজ বলেই মনে হবে। এই সংজ্ঞা সময়ে সময়ে বদলায়। এ প্রসঙ্গে তিনি কবি কার্ল সেগানের একটি উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা কোনও একটি সম্প্রদায়ের কর্মকান্ড যখন পছন্দ করি, তখন বলি এরা মুক্তিযোদ্ধা, পছন্দ না করলে বলি সন্ত্রাসী আর এই গ্রুপটির কর্মকান্ড সম্পর্কে সঠিক কোনও ধারণা না পেলে বলি এরা গেরিলা।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রচার প্রোপাগান্ডা এমনভাবে হয় যে, মনে হয় যেন এর দায় একমাত্র মুসলমানদের। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ পরিকল্পনা সফল করতে হলে এই ধরনের প্রচার প্রোপাগান্ডা যে তরুণ সমাজে মৌলবাদের বিস্তার আরও বাড়িয়ে দেয় আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এটি বুঝতে হবে। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণের সাপোর্ট পেয়েছি বলেই আমরা এক্ষত্রে অনেকটা সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদ মোকাবেলা এই সরকারের জন্য একটি কঠিন কাজ ছিল। ইসলাম যে একটি আধুনিক ধর্ম, মৌলবাদের কোন লাইসেন্স নয় এ বিষয়টি আমরা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের দুই লক্ষ ইমামকে আমরা জনসচেতনতার কাজে উৎসাহিত করেছি এবং ফলও পেয়েছি। গ্রাসরুট পর্যায়ে হিংস্র মৌলবাদের কিছু কিছু উপস্থিতি এখনও আছে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘সমাজ থেকে এদের এই সামান্যতম উপস্থিতিও নিশ্চিহ্ন করতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। জনগণও এ বিষয়ে আমাদের সমর্থন দিচ্ছে।’
‘হিংস্র মৌলবাদ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা একটি কঠিন কাজ’ মন্তব্য করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমাজের অবহেলিত অংশকে ব্যবহার করে মৌলবাদ বার বার সংগঠিত হয়। এই সমস্যা মোকাবেলাকে একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া হিসেবেই ধরে নিতে হবে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার সাথে দীর্ঘ সময় সম্পৃক্ত থেকে মৌলবাদ বিতাড়ণ করতে হবে। তবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সময় ক্ষেপণ চলবে না। গত এক দশকে সামাজিক অপরাধীদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদের ব্যাপক বিস্তৃতির অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির (সাইবার ওয়ার্ল্ড) ব্যাপক ব্যবহারও এক্ষেত্রে একটি ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো মৌলবাদ মোকাবেলা করতে গিয়ে এই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার কন্ট্রোল করা যাবে না, এতে জনগনের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রশ্ন জড়িত। মৌলবাদ মোকাবেলায় গণতন্ত্র চর্চাকে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর থাকলে মৌলবাদী তৎপরতার সুযোগ কমে আসে। তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুখ দু:খে তাদের সাথে সরকার ও সমাজের শীর্ষ স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখাকেও মৌলবাদ মোকাবেলার একটি ইতিবাচক পন্থা বলে মন্তব্য করেন। মৌলবাদ মোকাবেলায় সব সময় শক্তি প্রয়োগ সঠিক পরিকল্পনা নয় বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা জেসি জ্যাকসন বলেন, সমাজের অবহেলিত অংশকেই মৌলবাদীরা মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে সমাজ থেকে বৈষম্য দুর করে দায়িত্ববোধ, জবাবদিহিতা ও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিও সবার জন্য সমান করতে হবে। তিনি বলেন আইনের কাঠামো এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে এটি সমাজের অবহেলিত-বান্ধব হয়। `প্রত্যাখ্যান থেকে প্রতিক্রিয়া’ এই বাখ্যাটি উল্লেখ করে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা জ্যাকি জ্যাকসন বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি অধিকার থেকে কেউ যেন প্রত্যাখ্যাত না হয়। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য যতদিন সমাজে অবস্থান করবে ততদিন মৌলবাদও সমাজ থেকে বিতাড়িত করা যাবে না, এমনই মন্তব্য করেন জেসি জ্যাকসন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জেসি জ্যাকসনের বক্তব্যের পর পুরো হল উঠে দাঁড়িয়ে তাদের সম্মান প্রদর্শন করে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জ্যাকি জ্যাকসন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের হোম অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক সিলেক্ট কমিটির এই সেমিনারে যোগ দিতে মঙ্গলবার সকালেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী লন্ডন এসে পৌঁছেন। হিথরো বিমান বন্দর থেকে তিনি সরাসরি চলে যান সেমিনারস্থল লন্ডন থেকে ১০০ মাইল দূরবর্তী লেস্টারের ডি মন্টফর্ট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডমিনিক সেলার্ড ও হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কিথ ভাজ এমপি তাঁকে স্বাগত জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ডঃ সাইদুর রহমান খান, প্রেস মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরী, লন্ডনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিন আলী, এটিএন বাংলার সাংবাদিক বুলবুল হাসান ও এম এ কাদের, এবং বাংলানিউজের লন্ডন প্রতিনিধিও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
No comments