বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে-কণ্ঠস্বর by রাহাত খান
আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। লেখার শুরুতেই আর্দ্র হৃদয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। মহান আল্লাহর দরবারে তাদেরসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ বাঙালির আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাকারী বেশিরভাগই ছিল ১৯৭১ সালে বর্বর ও নৃশংস পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামী। মুসলিম লীগের কয়েকজন নেতাও তালিকা প্রণয়নের
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাকারী বেশিরভাগই ছিল ১৯৭১ সালে বর্বর ও নৃশংস পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামী। মুসলিম লীগের কয়েকজন নেতাও তালিকা প্রণয়নের
কাজে জড়িত ছিল। মেজর মালেকসহ তদানীন্তন পাকিস্তানি বাহিনীর কোনো কোনো সামরিক কর্মকর্তা বিষয়টি তাদের লেখা ১৯৭১ সাল সংক্রান্ত বইয়ে লিখে গেছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকাটি নিয়ে কয়েকজন জামায়াতি ও মুসলিম লীগের নেতা তদানীন্তর গভর্নর হাউসে (এখন বঙ্গভবন) অবস্থানরত জেনারেল ওমরাও খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। তালিকাটি খুব তাজিমের সঙ্গে তারা জেনারেলের হাতে তুলে দিয়েছিল। এই কুক্কুট-সন্তানদের মধ্যে ছিল 'নুরানী' চেহারার আড়ালে ভণ্ড, বাঙালি-বিদ্বেষী ও খুনি গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা প্রমুখ। অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২ ডিসেম্বর আকাশযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সব ক'টা সেভার যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর এবং যৌথ বাহিনীর হাতে মার খেয়ে খেয়ে দখলকৃত এলাকা ছেড়ে 'শেষ ভরসা' ঢাকা সেনা ঘাঁটির দিকে পাকিস্তানি বাহিনী পলায়ন করতে শুরু করলে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।
নভেম্বর মাস থেকেই পাকিস্তানিরা আশা করেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট রবার্ট নিক্সনের নির্দেশে ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেওয়া 'সপ্তম নৌবহর' তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। পাকিস্তানকে বাঁচাতে চীনও এগিয়ে আসবে এবং ভারত আক্রমণ করবে। এই আশাও করেছিল দুর্বৃত্ত সেনানায়ক ইয়াহিয়া খান এবং কুচক্রী, ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলি ভুট্টো। কিন্তু কিছুই ঘটল না। চীন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সাহায্যের লিপ-সার্ভিস দিয়েই সন্তুষ্ট ছিল। এ ছাড়া পাকিস্তানকে সাহায্য করার নামে যা করেছিল তা হচ্ছে, পাকিস্তানের কাছে নগদ দামে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করা। ব্যস, এর বেশি কিছু নয়।
ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেওয়া সপ্তম নৌবহরকে ব্যবহারের ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের যে ছিল না তা নয়। তাদের 'অকৃত্রিম' মিত্র পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালে তাদের চরম দুঃসময়ে সাহায্য করার ষোলআনা ইচ্ছা তাদের ছিল। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি চলে গিয়েছিল একশ' ভাগ তাদের বিরুদ্ধে। বিশ্ব জনমত তো বটেই। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও নৃশংস পাকিস্তানকে ধিক্কার জানাচ্ছিল। মুক্তিকামী বাঙালিদের জানাচ্ছিল সর্বাত্মক সমর্থন।
এই পরিস্থিতিতে সপ্তম নৌবহর নিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি জাতির বিপক্ষে যাওয়া এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতায়, নৃশংসতায় সারাবিশ্বের ঘৃণা কুড়ানো, বিশ্ব জনমতের বিপক্ষে যাওয়া সহজ কাজ ছিল না। এ ছাড়া ভারত মহাসাগর এবং আশপাশে কৌশলগত সামুদ্রিক এলাকায় মোতায়েনকৃত সোভিয়েত ও ভারতীয় যুদ্ধ নৌবহরের পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কাও ছিল ষোলআনা। ফলে পাকিস্তানি বাহিনীর সাহায্যে বাঙালি দলনে সপ্তম নৌবহর ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
নভেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে রণাঙ্গনের সর্বত্র প্রচণ্ড মার খাচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। ২ ডিসেম্বর গভীর রাতে আকাশযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা এক স্কোয়াড্রন সেভার যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার পর পাকিস্তানের পরাজয় অনিবার্য হয়ে দেখা দেয় এবং ঠিক এ সময়েই বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে ওঠে জামায়াতে ইসলামী। নিজামী ছিল রাজাকার বাহিনী, মুজাহিদ ছিল বদর বাহিনী এবং কামারুজ্জামান ছিল আল্শামস বাহিনীর কমান্ডার। এসব বাঙালি-নিধন, বাঙালি নারী ধর্ষণ এবং লুটপাট বাহিনীর চিফ কমান্ডার ছিল গোলাম আযম।
রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী বাঙালিদের হাতে পাকিস্তানের অনিবার্য পরাজয়ের পরিণতি বুঝতে পেরে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে শুরু করে বাড়ি বা লুক্কায়িত স্থান থেকে বুদ্ধিজীবীদের আনার হীনতৎপরতা। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অজাতশত্রু, সদা হাস্যময়, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের ছাত্রছাত্রীরা যাকে শুধু শ্রদ্ধা নয়, ব্যক্তিত্বের কারণে ভালোবাসত, সেই প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয় শিক্ষক মুনীর চৌধুরী। ছিলেন বাংলাদেশে আধুনিক সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ নিরীহ এবং কর্মযোগী সিরাজুদ্দীন হোসেন। তালিকায় আরও ছিলেন সেরা সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সার। আরও ছিলেন সাংবাদিক নিজামুদ্দিন, মুহম্মদ আখতার, সেলিনা পারভিন, ডা. আলিম চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুজ্জামান, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীসহ আরও অনেকে। তালিকায় আরও ছিলেন নানা পেশার বহুসংখ্যক বাঙালি বুদ্ধিজীবী। তাদের আলবদর, রাজাকার ও আলশামসের লোকেরা চোখ-হাত কাপড় ও দড়ি দিয়ে বেঁধে বধ্যভূমিতে নিয়ে যেত। নিয়ে গিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এবং নৃশংস কায়দায় নির্যাতন করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
তারা ছিলেন বাঙালির মেধা, বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব ও দেশপ্রেমের প্রতীক। জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা তাদেরই_ হিটলারকে হার মানায় এমন নৃশংস কায়দায় নির্যাতনে নির্যাতনে রক্তাক্ত করে হত্যা করেছিল। ধর্মের ভেকধারী কুক্কুটের সন্তানরা সর্বকালের সেরা বাঙালি এসব মহান ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডের পর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন-কাফন ও শেষকৃত্যের ব্যবস্থাও করেনি। এই রাজাকার আলবদর, আলশামসের কুখ্যাত লোকগুলো আদালতে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বাইরে এসে জেলখানা থেকে আদালতে যাওয়ার সময় আজও জনতার উদ্দেশে জয়সূচক 'ভি' চিহ্ন দেখায়। যেন বলতে চায়, বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানেরই জয় হবে। বৃষ-স্কন্ধ মুজাহিদ, পাকিস্তানি মার্কা টুপি পরা নিজামী প্রমুখের এই 'ভি চিহ্ন' দেখানোর দৃশ্য দেখে বড় দুঃখ, কষ্ট হয়। চলি্লশ বছরেও এই নরপশুরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পায়নি। উপরন্তু বিএনপির কল্যাণে নরপশুদের দু'জনকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল।
জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশবিরোধী, ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের বাচ্চা এসব নরপশুকে শাস্তিদানের বদলে নানাভাবে পুরস্কৃত করেছেন। তাদের এই ভূমিকা বাঙালি জাতি কোনোদিন ক্ষমা করবে না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। দালাল আইন প্রণয়ন করে দালালদের বিচারের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। নিজামীসহ বহু পাকিস্তানি দালাল এবং যুদ্ধাপরাধী নিক্ষিপ্ত হয়েছিল কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতপ্রাপ্তির পর প্রথমে মোশতাক, পরে জিয়াউর রহমান এই দুটি আইন বাতিল করে দিয়েছিলেন। এরপর যত রকমে সম্ভব বাঙালির দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসংবাদী নেতৃত্ব, ৩০ লাখ শহীদ বাঙালির আত্মদান এবং বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করার তৎপরতা চলে বিএনপি এবং বিএনপি-জামায়াত আমলে। নামকাওয়াস্তে, বোধহয় বাঙালির সেন্টিমেন্টের কথা ভেবে, নামকাওয়াস্তে স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস পালন করেছেন তারা। তবে চিন্তা-চেতনা ও কাজকর্মে তারা যে বাংলাদেশে পাকিস্তানিকরণের কাজটাই করেছেন, এখনও করছেন, এ ব্যাপারে সন্দেহের তেমন অবকাশ নেই।
জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বর্তেছে স্বভাবতই তাদের জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের ওপর। তিনিও পাকিস্তানপ্রীতি ও জামায়াতপ্রীতির দিক দিয়ে বাবা-মায়ের চেয়ে কম যান না। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০১-০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে শাসন মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ-স্কন্ধ মুজাহিদকে সঙ্গে নিয়ে একই গাড়িতে বগুড়ায় গিয়েছিলেন তারেক রহমান। সেই বগুড়া ট্রিপে তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, বিএনপি ও জামায়াত একই রাজনৈতিক পরিবার। তারেক রহমান সত্য কথাটাই বলেছিলেন।
আবার বলি, সত্য কথাটাই বের হয়ে এসেছিল তারেক রহমানের মুখ দিয়ে। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক 'দর্শন' বলতে গেলে একই। এই দুই দলের আত্মার আত্মীয়তা বর্তমানে এমন এক স্তরে পেঁৗছেছে যে, আজকাল জামায়াতকে কিছু বলতে হয় না, বিএনপিই বলে দেয় জামায়াতের বক্তব্য। এই ডিসেম্বর, বিজয়ের মাসেও খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সব অপকাণ্ডকেই বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা জনগণ মেনে নেবে_ এই প্রত্যাশা কেউ করলে সেটা হবে মূর্খের স্বর্গে বাস করা। মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিকদের কাছে তো বটে, যারা দেশের মোট ভোটার সংখ্যার ষাট ভাগ, সেই তরুণ প্রজন্মও বিএনপির নিজেকে এবং জামায়াতকে বাঁচানোর এই গর্হিত প্রচেষ্টা কখনোই, কখনোই মেনে নেবে না। যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই শুধু প্রমাণ করে।
প্রথমবার ক্ষমতায় এসে হয়তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ফ্রন্ট খুলতে চায়নি আওয়ামী লীগ সরকার নানাদিক চিন্তা করে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিয়েছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে এটা তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরও অংশ বটে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা নিয়ে তারা একটি যথার্থ কাজই করেছে। তবে ট্রাইব্যুনালের কাজ যে গতিতে চলছে তাতে তো বিচার বছরের পর বছর চলতে থাকবে বলে মনে হয়। বিচারের এই শ্লথগতি সরকারের অদক্ষতার প্রমাণ বহন করে। বিচার স্বচ্ছভাবে হোক, সেটা সবারই কাম্য বৈকি! তাই বলে স্বচ্ছতার নামে উকিলদের নানারকম কৌশল, সময়ক্ষেপণ এবং টালবাহানাকে প্রশ্রয় দেওয়া? এটা অন্যায্য এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী নিঃসন্দেহে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন আছে, ৬ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে। জানতে ইচ্ছা করে সেখানে কি বিচার অস্বচ্ছ হয়? আমাদের মতে, সম্ভব হলে আইন করে ট্রাইব্যুনালের বিচার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। সুসভ্য সমাজে নূ্যনতম সময়ের টাইম ফ্রেমে বিচার নিষ্পত্তির বিধান থাকে। কোথাও বাংলাদেশের মতো দেওয়ানি-ফৌজদারি মামলা উকিলদের কারসাজিতে বছরের পর বছর গড়ায় না। চলি্লশ-পঞ্চাশ বছর লাগে না বিচার নিষ্পত্তি করতে। স্বচ্ছ বিচারের নামে কোথাও বছরের পর বছর এই অসহনীয় সময়ক্ষেপণ দেখা যায় না, এক উপমহাদেশীয় দেশগুলো ছাড়া। ইংরেজরা সম্ভাব্য স্বল্প সময়ে বিচার নিষ্পত্তির আইন করে নিয়েছে ঠিকই, শুধু ইংরেজ-প্রবর্তিত কিছু ন্যায়বিচারবিরোধী আইনের গোলামি করছি আমরাই। আইন সংস্কারের কমিশন গঠিত হয়েছে কতবার। তাদের চোখে বিচারের বেলায় এক শ্রেণীর বিচারক ও আইনজীবীর কারসাজিমূলক এই সময়ক্ষেপণ কোনো সময়ই ধরা পড়েনি_ এটাও এক আশ্চর্য ব্যাপার!
এটা বাঙালির বিজয়ের মাস। আজ ১৪ ডিসেম্বর, বুদ্ধিজীবী দিবস। আমরা স্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধী পশুদের স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই বিচার চাই দ্রুত। দ্রুততম সময়ে। আওয়ামী লীগ সরকারেরও মনে রাখা দরকার, রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর বিচার বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই শেষ করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল, শুনতে পাই, প্রয়োজনীয় লোকবলের স্বল্পতায় ভুগছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সময়ক্ষেপণের নানা কৌশল ও টালবাহানা নির্বিবাদে সহ্য করা হচ্ছে। এসবের প্রতিকার চাই। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্বাধীনতাবিরোধী নরাধম ব্যক্তিদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। ৩০ লাখ শহীদ ও বুদ্ধিজীবীর আত্মা তাতে শান্তি পাবে। বাংলাদেশও কলঙ্কমুক্ত হয়ে প্রবেশ করবে স্বাধীনতা-স্পৃহার এক নতুন মাত্রায়।
শেষ কথা। কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম, প্রবীণ শিক্ষাবিদ, বাঙালি সংস্কৃতির এক অসামান্য কাণ্ডারি, গোটা জাতির শ্রদ্ধাভাজন কবীর চৌধুরী আর নেই। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। শোক প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। বলতে হয় বিশাল এক নক্ষত্রের পতন। আমি সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কাছে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
রাহাত খান : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
নভেম্বর মাস থেকেই পাকিস্তানিরা আশা করেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট রবার্ট নিক্সনের নির্দেশে ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেওয়া 'সপ্তম নৌবহর' তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। পাকিস্তানকে বাঁচাতে চীনও এগিয়ে আসবে এবং ভারত আক্রমণ করবে। এই আশাও করেছিল দুর্বৃত্ত সেনানায়ক ইয়াহিয়া খান এবং কুচক্রী, ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলি ভুট্টো। কিন্তু কিছুই ঘটল না। চীন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সাহায্যের লিপ-সার্ভিস দিয়েই সন্তুষ্ট ছিল। এ ছাড়া পাকিস্তানকে সাহায্য করার নামে যা করেছিল তা হচ্ছে, পাকিস্তানের কাছে নগদ দামে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করা। ব্যস, এর বেশি কিছু নয়।
ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেওয়া সপ্তম নৌবহরকে ব্যবহারের ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের যে ছিল না তা নয়। তাদের 'অকৃত্রিম' মিত্র পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালে তাদের চরম দুঃসময়ে সাহায্য করার ষোলআনা ইচ্ছা তাদের ছিল। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি চলে গিয়েছিল একশ' ভাগ তাদের বিরুদ্ধে। বিশ্ব জনমত তো বটেই। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও নৃশংস পাকিস্তানকে ধিক্কার জানাচ্ছিল। মুক্তিকামী বাঙালিদের জানাচ্ছিল সর্বাত্মক সমর্থন।
এই পরিস্থিতিতে সপ্তম নৌবহর নিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি জাতির বিপক্ষে যাওয়া এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতায়, নৃশংসতায় সারাবিশ্বের ঘৃণা কুড়ানো, বিশ্ব জনমতের বিপক্ষে যাওয়া সহজ কাজ ছিল না। এ ছাড়া ভারত মহাসাগর এবং আশপাশে কৌশলগত সামুদ্রিক এলাকায় মোতায়েনকৃত সোভিয়েত ও ভারতীয় যুদ্ধ নৌবহরের পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কাও ছিল ষোলআনা। ফলে পাকিস্তানি বাহিনীর সাহায্যে বাঙালি দলনে সপ্তম নৌবহর ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
নভেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে রণাঙ্গনের সর্বত্র প্রচণ্ড মার খাচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। ২ ডিসেম্বর গভীর রাতে আকাশযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা এক স্কোয়াড্রন সেভার যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার পর পাকিস্তানের পরাজয় অনিবার্য হয়ে দেখা দেয় এবং ঠিক এ সময়েই বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে ওঠে জামায়াতে ইসলামী। নিজামী ছিল রাজাকার বাহিনী, মুজাহিদ ছিল বদর বাহিনী এবং কামারুজ্জামান ছিল আল্শামস বাহিনীর কমান্ডার। এসব বাঙালি-নিধন, বাঙালি নারী ধর্ষণ এবং লুটপাট বাহিনীর চিফ কমান্ডার ছিল গোলাম আযম।
রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী বাঙালিদের হাতে পাকিস্তানের অনিবার্য পরাজয়ের পরিণতি বুঝতে পেরে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে শুরু করে বাড়ি বা লুক্কায়িত স্থান থেকে বুদ্ধিজীবীদের আনার হীনতৎপরতা। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অজাতশত্রু, সদা হাস্যময়, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের ছাত্রছাত্রীরা যাকে শুধু শ্রদ্ধা নয়, ব্যক্তিত্বের কারণে ভালোবাসত, সেই প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয় শিক্ষক মুনীর চৌধুরী। ছিলেন বাংলাদেশে আধুনিক সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ নিরীহ এবং কর্মযোগী সিরাজুদ্দীন হোসেন। তালিকায় আরও ছিলেন সেরা সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সার। আরও ছিলেন সাংবাদিক নিজামুদ্দিন, মুহম্মদ আখতার, সেলিনা পারভিন, ডা. আলিম চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুজ্জামান, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীসহ আরও অনেকে। তালিকায় আরও ছিলেন নানা পেশার বহুসংখ্যক বাঙালি বুদ্ধিজীবী। তাদের আলবদর, রাজাকার ও আলশামসের লোকেরা চোখ-হাত কাপড় ও দড়ি দিয়ে বেঁধে বধ্যভূমিতে নিয়ে যেত। নিয়ে গিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এবং নৃশংস কায়দায় নির্যাতন করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
তারা ছিলেন বাঙালির মেধা, বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব ও দেশপ্রেমের প্রতীক। জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা তাদেরই_ হিটলারকে হার মানায় এমন নৃশংস কায়দায় নির্যাতনে নির্যাতনে রক্তাক্ত করে হত্যা করেছিল। ধর্মের ভেকধারী কুক্কুটের সন্তানরা সর্বকালের সেরা বাঙালি এসব মহান ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডের পর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফন-কাফন ও শেষকৃত্যের ব্যবস্থাও করেনি। এই রাজাকার আলবদর, আলশামসের কুখ্যাত লোকগুলো আদালতে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বাইরে এসে জেলখানা থেকে আদালতে যাওয়ার সময় আজও জনতার উদ্দেশে জয়সূচক 'ভি' চিহ্ন দেখায়। যেন বলতে চায়, বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানেরই জয় হবে। বৃষ-স্কন্ধ মুজাহিদ, পাকিস্তানি মার্কা টুপি পরা নিজামী প্রমুখের এই 'ভি চিহ্ন' দেখানোর দৃশ্য দেখে বড় দুঃখ, কষ্ট হয়। চলি্লশ বছরেও এই নরপশুরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পায়নি। উপরন্তু বিএনপির কল্যাণে নরপশুদের দু'জনকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল।
জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশবিরোধী, ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের বাচ্চা এসব নরপশুকে শাস্তিদানের বদলে নানাভাবে পুরস্কৃত করেছেন। তাদের এই ভূমিকা বাঙালি জাতি কোনোদিন ক্ষমা করবে না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। দালাল আইন প্রণয়ন করে দালালদের বিচারের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। নিজামীসহ বহু পাকিস্তানি দালাল এবং যুদ্ধাপরাধী নিক্ষিপ্ত হয়েছিল কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতপ্রাপ্তির পর প্রথমে মোশতাক, পরে জিয়াউর রহমান এই দুটি আইন বাতিল করে দিয়েছিলেন। এরপর যত রকমে সম্ভব বাঙালির দীর্ঘকালের রাজনৈতিক সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসংবাদী নেতৃত্ব, ৩০ লাখ শহীদ বাঙালির আত্মদান এবং বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করার তৎপরতা চলে বিএনপি এবং বিএনপি-জামায়াত আমলে। নামকাওয়াস্তে, বোধহয় বাঙালির সেন্টিমেন্টের কথা ভেবে, নামকাওয়াস্তে স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস পালন করেছেন তারা। তবে চিন্তা-চেতনা ও কাজকর্মে তারা যে বাংলাদেশে পাকিস্তানিকরণের কাজটাই করেছেন, এখনও করছেন, এ ব্যাপারে সন্দেহের তেমন অবকাশ নেই।
জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বর্তেছে স্বভাবতই তাদের জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের ওপর। তিনিও পাকিস্তানপ্রীতি ও জামায়াতপ্রীতির দিক দিয়ে বাবা-মায়ের চেয়ে কম যান না। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০১-০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে শাসন মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ-স্কন্ধ মুজাহিদকে সঙ্গে নিয়ে একই গাড়িতে বগুড়ায় গিয়েছিলেন তারেক রহমান। সেই বগুড়া ট্রিপে তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, বিএনপি ও জামায়াত একই রাজনৈতিক পরিবার। তারেক রহমান সত্য কথাটাই বলেছিলেন।
আবার বলি, সত্য কথাটাই বের হয়ে এসেছিল তারেক রহমানের মুখ দিয়ে। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক 'দর্শন' বলতে গেলে একই। এই দুই দলের আত্মার আত্মীয়তা বর্তমানে এমন এক স্তরে পেঁৗছেছে যে, আজকাল জামায়াতকে কিছু বলতে হয় না, বিএনপিই বলে দেয় জামায়াতের বক্তব্য। এই ডিসেম্বর, বিজয়ের মাসেও খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সব অপকাণ্ডকেই বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা জনগণ মেনে নেবে_ এই প্রত্যাশা কেউ করলে সেটা হবে মূর্খের স্বর্গে বাস করা। মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিকদের কাছে তো বটে, যারা দেশের মোট ভোটার সংখ্যার ষাট ভাগ, সেই তরুণ প্রজন্মও বিএনপির নিজেকে এবং জামায়াতকে বাঁচানোর এই গর্হিত প্রচেষ্টা কখনোই, কখনোই মেনে নেবে না। যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই শুধু প্রমাণ করে।
প্রথমবার ক্ষমতায় এসে হয়তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ফ্রন্ট খুলতে চায়নি আওয়ামী লীগ সরকার নানাদিক চিন্তা করে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিয়েছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে এটা তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরও অংশ বটে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা নিয়ে তারা একটি যথার্থ কাজই করেছে। তবে ট্রাইব্যুনালের কাজ যে গতিতে চলছে তাতে তো বিচার বছরের পর বছর চলতে থাকবে বলে মনে হয়। বিচারের এই শ্লথগতি সরকারের অদক্ষতার প্রমাণ বহন করে। বিচার স্বচ্ছভাবে হোক, সেটা সবারই কাম্য বৈকি! তাই বলে স্বচ্ছতার নামে উকিলদের নানারকম কৌশল, সময়ক্ষেপণ এবং টালবাহানাকে প্রশ্রয় দেওয়া? এটা অন্যায্য এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী নিঃসন্দেহে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন আছে, ৬ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে। জানতে ইচ্ছা করে সেখানে কি বিচার অস্বচ্ছ হয়? আমাদের মতে, সম্ভব হলে আইন করে ট্রাইব্যুনালের বিচার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। সুসভ্য সমাজে নূ্যনতম সময়ের টাইম ফ্রেমে বিচার নিষ্পত্তির বিধান থাকে। কোথাও বাংলাদেশের মতো দেওয়ানি-ফৌজদারি মামলা উকিলদের কারসাজিতে বছরের পর বছর গড়ায় না। চলি্লশ-পঞ্চাশ বছর লাগে না বিচার নিষ্পত্তি করতে। স্বচ্ছ বিচারের নামে কোথাও বছরের পর বছর এই অসহনীয় সময়ক্ষেপণ দেখা যায় না, এক উপমহাদেশীয় দেশগুলো ছাড়া। ইংরেজরা সম্ভাব্য স্বল্প সময়ে বিচার নিষ্পত্তির আইন করে নিয়েছে ঠিকই, শুধু ইংরেজ-প্রবর্তিত কিছু ন্যায়বিচারবিরোধী আইনের গোলামি করছি আমরাই। আইন সংস্কারের কমিশন গঠিত হয়েছে কতবার। তাদের চোখে বিচারের বেলায় এক শ্রেণীর বিচারক ও আইনজীবীর কারসাজিমূলক এই সময়ক্ষেপণ কোনো সময়ই ধরা পড়েনি_ এটাও এক আশ্চর্য ব্যাপার!
এটা বাঙালির বিজয়ের মাস। আজ ১৪ ডিসেম্বর, বুদ্ধিজীবী দিবস। আমরা স্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধী পশুদের স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই বিচার চাই দ্রুত। দ্রুততম সময়ে। আওয়ামী লীগ সরকারেরও মনে রাখা দরকার, রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর বিচার বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই শেষ করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল, শুনতে পাই, প্রয়োজনীয় লোকবলের স্বল্পতায় ভুগছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সময়ক্ষেপণের নানা কৌশল ও টালবাহানা নির্বিবাদে সহ্য করা হচ্ছে। এসবের প্রতিকার চাই। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্বাধীনতাবিরোধী নরাধম ব্যক্তিদের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। ৩০ লাখ শহীদ ও বুদ্ধিজীবীর আত্মা তাতে শান্তি পাবে। বাংলাদেশও কলঙ্কমুক্ত হয়ে প্রবেশ করবে স্বাধীনতা-স্পৃহার এক নতুন মাত্রায়।
শেষ কথা। কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম, প্রবীণ শিক্ষাবিদ, বাঙালি সংস্কৃতির এক অসামান্য কাণ্ডারি, গোটা জাতির শ্রদ্ধাভাজন কবীর চৌধুরী আর নেই। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। শোক প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। বলতে হয় বিশাল এক নক্ষত্রের পতন। আমি সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কাছে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
রাহাত খান : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
No comments