শেয়ারবাজার-আস্থার সংকট দূর করুন
তারল্য সংকট দূর করে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার উদ্যোগে এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক ফল মেলেনি। বাজারে পুঁজিও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া আতঙ্ক যেমন কাটছে না, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এখনও পর্যন্ত নতুন বিনিয়োগে ইতিবাচক মনোভাব নেয়নি। শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংকটের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পুঁজির জোগান বৃদ্ধির চেয়েও আস্থার সংকটকেই বেশি দায়ী করেছেন।
গত সোমবার সিপিডি আয়োজিত এ সম্পর্কিত গোলটেবিল আলোচনায় আলোচকরা শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সে জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও রেখেছেন। ব্যাংকার ও শেয়ারবাজার সম্পর্কিত তদন্ত কমিটির প্রধান ইব্রাহিম খালেদ শেয়ারবাজারে এহেন অবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাজারে আস্থার ভাব ফিরে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন। আমরাও তার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। অধিকন্তু তদন্ত রিপোর্টে যাদের নাম দোষীদের তালিকায় রয়েছে তাদের কাউকে কাউকে দিয়ে বাজারকে স্থিতিশীল করার চেষ্টাটা অপরাধীকে পুরস্কৃত করার সমতুল্য। শেয়ারবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাটাই পুঁজি সংগ্রহের এই আর্থিক ব্যবস্থার প্রধান শক্তি। যারা শেয়ারবাজার সংকটের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কি বাজারকে স্থিতিশীল করা যায়! এর আগেও একবার শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি হয়েছে। তখনও এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরপর দুটি সরকার চলে গেলেও অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেতে পেরেছে। এবারও সে ধরনের অবস্থাই সৃষ্টি হচ্ছে বলে ধারণা করাটা অমূলক নয়। সরকার শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বাজারে আস্থার সংকট দূর করতে পারবে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেউই সহসা বাজারে পূর্ণোদ্যমে ফিরবে না। এতে শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য পুঁজি সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে শেয়ারবাজার তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে পারবে না। শেয়ারবাজারের ওপর ক্ষুদ্র ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ যাতে বক্তৃতা-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে সত্যি সত্যিই বৃদ্ধি পায়, তা নিশ্চিত করাও দরকার। আর বাজারে অহরহ হস্তক্ষেপ করার অভ্যাস ছাড়তে হবে। বাজারকে তার নিজস্ব নিয়মে চলতে দিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে।
No comments