মিনি বাংলাদেশ by পিন্টু রঞ্জন অর্ক

৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত_এ দেশের জন্ম ইতিহাসের নানা স্মৃতিচিহ্নের একটি উল্লেখযোগ্য সংগ্রহশালা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ডাকসু সংগ্রহশালা'। ঐতিহাসিক আন্দোলন-সংগ্রামের বিবরণ, দুর্লভ আলোকচিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের জিনিসপত্র, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, পুরনো পত্রিকার কাটিং ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ এই সংগ্রহশালাটি। ডাকসুর সংগ্রাহক ও আলোকচিত্রী গোপাল দাসের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং তৎকালীন ডাকসু নেতাদের


সহায়তায় এ সংগ্রহশালা যাত্রা শুরু করে ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ। 'বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে কাজ নিই। ডাকসুতে যোগ দেই পিয়ন হিসেবে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন দলিলপত্র, আলোকচিত্রসহ ছাড়াও পুরনো পত্রিকা, পোস্টার ইত্যাদি সংগ্রহের নেশা পেয়ে বসে। এক সময় সংগ্রহের পরিধি এত বেশি হলো যে, বাসায় রাখার জায়গা হচ্ছিল না। তখন ডাকসু কর্তৃপক্ষ এসব সংগ্রহ রাখার জায়গা করে দেন'_এভাবেই সংগ্রহশালা গড়ে তোলার গল্প বলছিলেন গোপাল।
ডাকসু সংগ্রহশালার প্রবেশপথেই 'চেতনায় একুশ' শিরোনামের ম্যুরালে রয়েছে চার ভাষা শহীদের ছবি। ভেতরে ঢুকতেই দেয়ালে ২০টি আলোকচিত্র স্মরণ করিয়ে দেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষকদের কথা। এখানে রয়েছে নানা দুর্লভ আলোকচিত্র_প্রশিক্ষণরত নারী মুক্তিযোদ্ধা, পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ, পিজি হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে এসেছেন মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, শরণার্থী শিবিরে নারী ও শিশুদের মানবেতর জীবনযাপন ইত্যাদি। পাশেই সাজানো রয়েছে নিউজউইক, পাকিস্তান অবজারভার, ডেইলি মেইল, আনন্দবাজার, সংবাদ ইত্যাদি দেশি-বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নানা প্রতিবেদন এবং মর্মস্পর্শী ছবি।
সংগ্রহশালার মাঝ বরাবর আয়তাকার কাচের ফ্রেমে সযত্নে রক্ষিত আছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ব্যবহৃত শাড়ি, চশমা ও আলোকচিত্র, দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা সর্বশেষ চিঠি ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র। পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল ও একটি আবক্ষ মূর্তি।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ কলা ভবনে উত্তোলিত বাংলাদেশের প্রথম পতাকাটির অনুকরণে তৈরি একটি পতাকাও রয়েছে এখানে। মুক্তিযুদ্ধের চারটি ম্যুরাল, শতাধিক স্মারক স্ট্যাম্প ছাড়াও পাবেন ধাতব ও কাগজের মুদ্রার সমৃদ্ধ সংগ্রহ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই আছে প্রায় দুই হাজার ৭০০। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ে তৈরি প্রায় এক হাজারের মতো কোলাজ থাকলেও এখন প্রদর্শিত হচ্ছে মাত্র ১১টি। জায়গার অভাবে কোলাজগুলো ছাড়াও অনেক মূল্যবান সামগ্রী প্রদর্শন করা সম্ভব হচ্ছে না। জানালেন গোপাল। মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃৃতিময় জিনিসের সঙ্গে পরিচিত হতে সংগ্রহশালায় প্রায়ই ভিড় জমান ছাত্রছাত্রীরা। আসেন অন্য ক্যাম্পাসের ছেলেমেয়েরাও। ঢাকা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী শাহনাজ জাফরিন সংগ্রহশালা দেখার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, 'বইয়ে পড়া ইতিহাস নিজের চোখে দেখে খুব ভালো লাগছে।'

No comments

Powered by Blogger.