প্রতিজ্ঞাদীপ্ত স্বপ্নবানদের মহাসম্মিলন by সালমান তারেক শাকিল
কোনো বাধা মানবো না'_ প্রত্যয়ে শুরু হলো নতুন দিনের গান। সমকাল সুহৃদ সমাবেশ নিয়েছে নতুন রূপে পথচলার অঙ্গীকার। গত শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে ছিল সুহৃদ সমাবেশের নতুনভাবে পথ অতিক্রম করার শপথ নেওয়ার দিন। সারাদেশ থেকে শত শত সুহৃদ বন্ধু এসেছিলেন সুহৃদ মহাসমাবেশে। উপস্থিত হয়েছিলেন রাশি রাশি স্বপ্ন নিয়ে। শিল্পকলার অঙ্গন পরিণত হয়েছিল স্বপ্নবানদের মহাসমাবেশে।
একদিকে সুহৃদ সমাবেশের নতুন গঠনতন্ত্র, অন্যদিকে এই প্রথমবারের মতো সারাদেশের সুহৃদদের পরিচালনার জন্য জাতীয় কমিটি। নতুন পথের দিশায় আকুল সারাদেশ থেকে আসা ৭০০ স্বপ্নবান সুহৃদ কর্মী সমাবেশ থেকে নেন দেশে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। এই নেতৃত্বের অঙ্গীকার নেওয়ার শপথ করান প্রথিতযশা আর গুণী কয়েকজন ব্যক্তিত্ব।
মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের আলোকিত ব্যক্তিত্ব শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, লেখক ড. জাফর ইকবাল। সভাপতি ছিলেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। সুহৃদ বিভাগীয় সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল [অব.] এস এম শাহাব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ এবং নবগঠিত ঢাকা কেন্দ্রীয় সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি তারেক মাহমুদ সজীব।
কুয়াশাঢাকা ভোরে খুলে যায় চোখের দুয়ার
আগের দিন শুক্রবার রাতেই [বি.স.] আবেদ ভাই ঢাকার সব সুহৃদকে সকাল ৭টার মধ্যে শিল্পকলায় আসার নির্দেশ দেন। যেই কথা সেই কাজ। ভোর হতে না হতেই ঢাকার সুহৃদরা আসতে শুরু করেন শিল্পকলার নান্দনিক প্রাঙ্গণে। একে একে আসতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন শাখার সুহৃদরা। এসেই যার যার নির্ধারিত কাজে লেগে পড়েন সবাই। রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারে তিন ভাগে কাজ শুরু করেন রিমন, সারা, শান্তা, লাবণ্য, অভিজিৎ, তানিয়া, আল-আমিনসহ আরও কয়েকজন। এই দলের সমন্বয় করেন জাহাঙ্গীর আলম, রানা এবং বিপুল খান।
রাজু শুরু করেন দেয়ালিকা লাগানোর কাজ। সুহৃদ নিথর মাহবুবের নেতৃত্বে শুরু হয় শিল্পকলা প্রাঙ্গণ সাজসজ্জার কাজ। সাজসজ্জা আর নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে ঘনিয়ে আসে সময়। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ অনুুষ্ঠানস্থলে আসেন সিলেট শহরের সুহৃদ বন্ধুরা। কুশল বিনিময়ের জন্য হাত বাড়াতেই সেলিম আহমদ আর কামরুজ্জামান জানালেন, তারা সিলেট থেকে এসেছেন। এভাবে ধীরে ধীরে সারাদেশের সুহৃদরা আসতে থাকেন। চলতে থাকে নিবন্ধনের কাজ।
উৎসবের র্যালি, র্যালির উৎসব
সকাল ৯টার আগেই শিল্পকলার প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে সাদামনের সুহৃদদের সক্রিয় উপস্থিতিতে। এরই মধ্যে শেষ হয় র্যালির প্রাথমিক প্রস্তুতি। ততক্ষণে হ্যান্ড মাইকে সুন্দর সুন্দর কথা বলে আসা সুহৃদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন শরীয়তপুর জেলার সুহৃদ এমআর রাসেল। একে একে আসতে থাকেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল [অব.] এস এম শাহাব উদ্দিন, সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত ও কবি নাসির আহমেদসহ আরও অতিথিবৃন্দ।
এরপর সকাল ১০টায় শুরু হয় শত শত সুহৃদদের প্রাণচঞ্চল অংশগ্রহণে শুভ্রসাদা আনন্দ র্যালি। সব সুহৃদের গায়ে মহাসমাবেশের সাদা টি-শার্ট। গলায় লাল-হলুদ ফিতা ঝোলানো আইডি কার্ড। র্যালি শিল্পকলা থেকে বের হয়ে প্রেস ক্লাবের দিকে যাত্রা শুরু করে। দুই লাইনে সারিবদ্ধ হয়ে সুহৃদরা হাঁটতে থাকেন। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টি ও তালে তালে নাচ। ব্যান্ড পার্টির হরেকরকম বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে পুরো র্যালি মাতিয়ে রাখেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সুহৃদ রনি, সিদ্ধার্থ, নাঈম, রিজভী, মলি্লক, শানসহ আরও অনেকে। ঢাকার বাইরের সুহৃদরা সম্পাদককে পেয়ে একেবারে আত্মহারা। কোনো কোনো বন্ধু তো প্রিয় সম্পাদককে পেয়ে ছবি তোলার লোভ সামলাতেই পারছিলেন না। তাই কার আগে কার সামনে থাকে এ প্রতিযোগিতা। আবার অনেক সুহৃদ বন্ধু দেখিয়েছেন, বন্ধুত্বের সীমানা কত বড়। কোনো বন্ধু হয়তো সামনে ব্যানারে তো খানিক পরে আরেক সুহৃদকে টেনে ব্যানারে আসার সুযোগ করে দেওয়া। র্যালির সামনে, পেছনে, পাশাপাশি সুহৃদ সজীবের নেতৃত্বে মোবারক, নাসির, মনোজিৎ, আকাশ, নির্জন, ইমরান, আল-আমিন, আকবরসহ আরও অনেকের শ্রান্ত স্বেচ্ছাসেবা। র্যালির লাইন সোজা আছে তো, সামনে গাড়ি আছে কি-না সবকিছু দেখেশুনে র্যালি পরিচালনা করা। এভাবে র্যালি প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে তোপখানা রোড দিয়ে পল্টন মোড় ঘুরে সচিবালয়, প্রেস ক্লাব থেকে হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন হয়ে আবার শিল্পকলায় শেষ হয়।
আকাশে পায়রা ওড়ে বেলুন ঝোলে ডালে
বর্ণাঢ্য র্যালির উচ্ছ্বাস শেষে শুরু হয় মহাসমাবেশের মূল পর্ব। ড. জাফর ইকবাল ৪০টি রঙিন বেলুন আর পুুরান ঢাকা সুহৃদদের সৌজন্যে আনা সাদা পায়রা উড়িয়ে মহাসমাবেশ উদ্বোধন করেন। শত শত সুহৃদ হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান উদ্বোধনের এ আয়োজনকে। পাশে তখন আমন্ত্রিত অতিথি সবাই।
হাততালি আরও বাড়ে যখন মহাসমাবেশের ফেস্টুন বাঁধা বেলুনগুলো কাছেই একটি গাছে আটকে যায়। ততক্ষণে কিন্তু ১০টি পায়রা তাদের ঠিকানা খুঁজতে আকাশে ডানা মেলে দিয়েছে। রঙিন তুলিতে আঁকা দেয়ালের কথা
আমন্ত্রিত অতিথিরা উদ্বোধন শেষে প্রবেশ করেন মিলনায়তনের কাচঘেরা আঙিনায়। চোখ বুুলান ঢাকার সুহৃদদের রঙিন তুলির আঁচড়ে আঁকা নানা বিষয়ের ওপর করা দেয়ালিকায়। একে একে সুহৃদ সমাবেশ, ঢাবির অধিকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী, মুক্তিযুদ্ধ এবং ঢাকা কলেজের প্রতিবেশ শিরোনামের দেয়ালিকাগুলো দেখেন। এরপর প্রধান অতিথিসহ অন্যরা দেয়ালিকার জন্য স্বাক্ষর করে ধন্যবাদ জানান।
অতিথিদের উপদেশ আর নির্দেশনার শিক্ষা
সুুহৃদ মহাসমাবেশে আসা সব অতিথিই সারাদেশের সুহৃদদের শুনিয়েছেন মানবিক জীবন গড়ার শিক্ষার কথা, তেমনি দিয়েছেন গঠনমূলক পরামর্শও। প্রত্যেক অতিথির বক্তব্যে ছিল দরদমাখা স্নেহ। সুহৃদদের দিয়েছেন অপার সৎসাহসের নিশানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সমাগত সুহৃদদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের প্রশংসা করে বলেন, কাজ যত ছোটই হোক, অন্যের জন্য কাজ করার কত আনন্দ যে করে সে বোঝে।
তিনি আরও বলেন, শুধু লেখাপড়াই নয়, বরং অন্যান্য অভিজ্ঞতাও শিক্ষার্থীকে নিতে হবে। সঠিকভাবে সময়কে ব্যবহার করলে এক জীবনে অনেক কিছুই করা সম্ভব বলেও সুুহৃদদের বলেন।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সুহৃদদের উদ্দেশে বলেন, তরুণ ঐক্যবদ্ধ শক্তি সবসময় বাংলাদেশের প্রাণ। সবসময় রক্ত দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সুহৃদরাই পারে বড় ভূমিকা রাখতে। সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল [অব.] এস এম শাহাব উদ্দিন বলেন, সুহৃদ বন্ধুরা জাতির জাগ্রত বিবেক।
অতিথিদের আলোচনার এক পর্যায়ে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং লিয়াকত আলী লাকীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মাহমুদুল হাসান রানা এবং ফৌজিয়া কামরুন্নাহার শান্তা।
আলোচনার পর জীবনের নানাদিক নিয়ে মূকাভিনয় করেন নিথর মাহবুব। এ সময় মিলনায়তনে ছিল পিনপতন নীরবতা। মাইম শেষ হওয়ার পর সুহৃদরা তুমুল করতালি দিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানান।
এরপর সুহৃদ সমাবেশ গঠনতন্ত্র কণ্ঠভোটে পাস হয়। সমকালের যুগ্ম সম্পাদক রাশীদ উন নবীর সভাপতিত্বে এ পর্বে বক্তব্য রাখেন কয়েকজন সুহৃদ। গঠনতন্ত্র পাসের পর সাংগঠনিক আলোচনা হয় সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে। এ পর্বেও সারাদেশের অনেক সুহৃদ বক্তব্য রাখেন।
পুরস্কার আর উচ্ছ্বাসের পর্ব
দুপুরের খাবারের পর বিকেল ৩টায় শুরু হয় সুহৃদদের জন্য অন্যরকম পর্ব-বাধা পেরোনোর গল্প। এ পর্বে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বেশ কয়েকজন সফল মানুষ তাদের জীবনে নানারকম বাধা-বিপত্তি পার হয়ে আসার গল্প শোনান। এ পর্বটি পরিচালনা করেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। সমন্বয় করেন ইভেন্ট সম্পাদক ইমরান কাদির।
এরপর সারাদেশের ১২টি শাখাকে গত কয়েক বছরের কার্যক্রম দেখে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন।
পুরস্কার দেওয়ার পর ঘোষণা করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় সুহৃদ সমাবেশ কমিটি। তারেক মাহমুদ সজীবকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলমকে সেক্রেটারি করে কমিটি ঘোষণা করেন সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ।
এর আগে দেওয়া হয় জাতীয় পরিচালনা কমিটির ঘোষণা। সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে আহ্বায়ক করে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ।
এরপর শুরু হয় আকাঙ্ক্ষিত সাংস্কৃতিক পর্ব। এই পর্বে সুহৃদসহ জাতীয় পর্যায়ের স্বনামখ্যাত শিল্পীরা গান গেয়ে শোনান।
সঙ্গীতায়োজনের পরই সিরাজুল ইসলাম আবেদ আগামীতে আরও সুন্দর আয়োজন এবং সবার সুস্থতা কামনা করে মহাসমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
যাদের শ্রমলগ্ন এই মহাসমাবেশ
সমকাল পরিবারের প্রত্যেক সদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন মহাসমাবেশ সফল করার জন্য। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, মিরপুর ও পল্লবীর সুহৃদ সমাবেশের প্রত্যেক সদস্য মহাসমাবেশ সফল করতে রাত-দিন খেটেছেন। সবাইকে সুহৃদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
সুহৃদ সমাবেশ, ঢাকা
কুয়াশাঢাকা ভোরে খুলে যায় চোখের দুয়ার
আগের দিন শুক্রবার রাতেই [বি.স.] আবেদ ভাই ঢাকার সব সুহৃদকে সকাল ৭টার মধ্যে শিল্পকলায় আসার নির্দেশ দেন। যেই কথা সেই কাজ। ভোর হতে না হতেই ঢাকার সুহৃদরা আসতে শুরু করেন শিল্পকলার নান্দনিক প্রাঙ্গণে। একে একে আসতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন শাখার সুহৃদরা। এসেই যার যার নির্ধারিত কাজে লেগে পড়েন সবাই। রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারে তিন ভাগে কাজ শুরু করেন রিমন, সারা, শান্তা, লাবণ্য, অভিজিৎ, তানিয়া, আল-আমিনসহ আরও কয়েকজন। এই দলের সমন্বয় করেন জাহাঙ্গীর আলম, রানা এবং বিপুল খান।
রাজু শুরু করেন দেয়ালিকা লাগানোর কাজ। সুহৃদ নিথর মাহবুবের নেতৃত্বে শুরু হয় শিল্পকলা প্রাঙ্গণ সাজসজ্জার কাজ। সাজসজ্জা আর নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে ঘনিয়ে আসে সময়। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ অনুুষ্ঠানস্থলে আসেন সিলেট শহরের সুহৃদ বন্ধুরা। কুশল বিনিময়ের জন্য হাত বাড়াতেই সেলিম আহমদ আর কামরুজ্জামান জানালেন, তারা সিলেট থেকে এসেছেন। এভাবে ধীরে ধীরে সারাদেশের সুহৃদরা আসতে থাকেন। চলতে থাকে নিবন্ধনের কাজ।
উৎসবের র্যালি, র্যালির উৎসব
সকাল ৯টার আগেই শিল্পকলার প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে সাদামনের সুহৃদদের সক্রিয় উপস্থিতিতে। এরই মধ্যে শেষ হয় র্যালির প্রাথমিক প্রস্তুতি। ততক্ষণে হ্যান্ড মাইকে সুন্দর সুন্দর কথা বলে আসা সুহৃদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন শরীয়তপুর জেলার সুহৃদ এমআর রাসেল। একে একে আসতে থাকেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল [অব.] এস এম শাহাব উদ্দিন, সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত ও কবি নাসির আহমেদসহ আরও অতিথিবৃন্দ।
এরপর সকাল ১০টায় শুরু হয় শত শত সুহৃদদের প্রাণচঞ্চল অংশগ্রহণে শুভ্রসাদা আনন্দ র্যালি। সব সুহৃদের গায়ে মহাসমাবেশের সাদা টি-শার্ট। গলায় লাল-হলুদ ফিতা ঝোলানো আইডি কার্ড। র্যালি শিল্পকলা থেকে বের হয়ে প্রেস ক্লাবের দিকে যাত্রা শুরু করে। দুই লাইনে সারিবদ্ধ হয়ে সুহৃদরা হাঁটতে থাকেন। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টি ও তালে তালে নাচ। ব্যান্ড পার্টির হরেকরকম বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে পুরো র্যালি মাতিয়ে রাখেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সুহৃদ রনি, সিদ্ধার্থ, নাঈম, রিজভী, মলি্লক, শানসহ আরও অনেকে। ঢাকার বাইরের সুহৃদরা সম্পাদককে পেয়ে একেবারে আত্মহারা। কোনো কোনো বন্ধু তো প্রিয় সম্পাদককে পেয়ে ছবি তোলার লোভ সামলাতেই পারছিলেন না। তাই কার আগে কার সামনে থাকে এ প্রতিযোগিতা। আবার অনেক সুহৃদ বন্ধু দেখিয়েছেন, বন্ধুত্বের সীমানা কত বড়। কোনো বন্ধু হয়তো সামনে ব্যানারে তো খানিক পরে আরেক সুহৃদকে টেনে ব্যানারে আসার সুযোগ করে দেওয়া। র্যালির সামনে, পেছনে, পাশাপাশি সুহৃদ সজীবের নেতৃত্বে মোবারক, নাসির, মনোজিৎ, আকাশ, নির্জন, ইমরান, আল-আমিন, আকবরসহ আরও অনেকের শ্রান্ত স্বেচ্ছাসেবা। র্যালির লাইন সোজা আছে তো, সামনে গাড়ি আছে কি-না সবকিছু দেখেশুনে র্যালি পরিচালনা করা। এভাবে র্যালি প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে তোপখানা রোড দিয়ে পল্টন মোড় ঘুরে সচিবালয়, প্রেস ক্লাব থেকে হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন হয়ে আবার শিল্পকলায় শেষ হয়।
আকাশে পায়রা ওড়ে বেলুন ঝোলে ডালে
বর্ণাঢ্য র্যালির উচ্ছ্বাস শেষে শুরু হয় মহাসমাবেশের মূল পর্ব। ড. জাফর ইকবাল ৪০টি রঙিন বেলুন আর পুুরান ঢাকা সুহৃদদের সৌজন্যে আনা সাদা পায়রা উড়িয়ে মহাসমাবেশ উদ্বোধন করেন। শত শত সুহৃদ হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান উদ্বোধনের এ আয়োজনকে। পাশে তখন আমন্ত্রিত অতিথি সবাই।
হাততালি আরও বাড়ে যখন মহাসমাবেশের ফেস্টুন বাঁধা বেলুনগুলো কাছেই একটি গাছে আটকে যায়। ততক্ষণে কিন্তু ১০টি পায়রা তাদের ঠিকানা খুঁজতে আকাশে ডানা মেলে দিয়েছে। রঙিন তুলিতে আঁকা দেয়ালের কথা
আমন্ত্রিত অতিথিরা উদ্বোধন শেষে প্রবেশ করেন মিলনায়তনের কাচঘেরা আঙিনায়। চোখ বুুলান ঢাকার সুহৃদদের রঙিন তুলির আঁচড়ে আঁকা নানা বিষয়ের ওপর করা দেয়ালিকায়। একে একে সুহৃদ সমাবেশ, ঢাবির অধিকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী, মুক্তিযুদ্ধ এবং ঢাকা কলেজের প্রতিবেশ শিরোনামের দেয়ালিকাগুলো দেখেন। এরপর প্রধান অতিথিসহ অন্যরা দেয়ালিকার জন্য স্বাক্ষর করে ধন্যবাদ জানান।
অতিথিদের উপদেশ আর নির্দেশনার শিক্ষা
সুুহৃদ মহাসমাবেশে আসা সব অতিথিই সারাদেশের সুহৃদদের শুনিয়েছেন মানবিক জীবন গড়ার শিক্ষার কথা, তেমনি দিয়েছেন গঠনমূলক পরামর্শও। প্রত্যেক অতিথির বক্তব্যে ছিল দরদমাখা স্নেহ। সুহৃদদের দিয়েছেন অপার সৎসাহসের নিশানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সমাগত সুহৃদদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের প্রশংসা করে বলেন, কাজ যত ছোটই হোক, অন্যের জন্য কাজ করার কত আনন্দ যে করে সে বোঝে।
তিনি আরও বলেন, শুধু লেখাপড়াই নয়, বরং অন্যান্য অভিজ্ঞতাও শিক্ষার্থীকে নিতে হবে। সঠিকভাবে সময়কে ব্যবহার করলে এক জীবনে অনেক কিছুই করা সম্ভব বলেও সুুহৃদদের বলেন।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সুহৃদদের উদ্দেশে বলেন, তরুণ ঐক্যবদ্ধ শক্তি সবসময় বাংলাদেশের প্রাণ। সবসময় রক্ত দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সুহৃদরাই পারে বড় ভূমিকা রাখতে। সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল [অব.] এস এম শাহাব উদ্দিন বলেন, সুহৃদ বন্ধুরা জাতির জাগ্রত বিবেক।
অতিথিদের আলোচনার এক পর্যায়ে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং লিয়াকত আলী লাকীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মাহমুদুল হাসান রানা এবং ফৌজিয়া কামরুন্নাহার শান্তা।
আলোচনার পর জীবনের নানাদিক নিয়ে মূকাভিনয় করেন নিথর মাহবুব। এ সময় মিলনায়তনে ছিল পিনপতন নীরবতা। মাইম শেষ হওয়ার পর সুহৃদরা তুমুল করতালি দিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানান।
এরপর সুহৃদ সমাবেশ গঠনতন্ত্র কণ্ঠভোটে পাস হয়। সমকালের যুগ্ম সম্পাদক রাশীদ উন নবীর সভাপতিত্বে এ পর্বে বক্তব্য রাখেন কয়েকজন সুহৃদ। গঠনতন্ত্র পাসের পর সাংগঠনিক আলোচনা হয় সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে। এ পর্বেও সারাদেশের অনেক সুহৃদ বক্তব্য রাখেন।
পুরস্কার আর উচ্ছ্বাসের পর্ব
দুপুরের খাবারের পর বিকেল ৩টায় শুরু হয় সুহৃদদের জন্য অন্যরকম পর্ব-বাধা পেরোনোর গল্প। এ পর্বে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বেশ কয়েকজন সফল মানুষ তাদের জীবনে নানারকম বাধা-বিপত্তি পার হয়ে আসার গল্প শোনান। এ পর্বটি পরিচালনা করেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। সমন্বয় করেন ইভেন্ট সম্পাদক ইমরান কাদির।
এরপর সারাদেশের ১২টি শাখাকে গত কয়েক বছরের কার্যক্রম দেখে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন।
পুরস্কার দেওয়ার পর ঘোষণা করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় সুহৃদ সমাবেশ কমিটি। তারেক মাহমুদ সজীবকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলমকে সেক্রেটারি করে কমিটি ঘোষণা করেন সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ।
এর আগে দেওয়া হয় জাতীয় পরিচালনা কমিটির ঘোষণা। সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকে আহ্বায়ক করে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ।
এরপর শুরু হয় আকাঙ্ক্ষিত সাংস্কৃতিক পর্ব। এই পর্বে সুহৃদসহ জাতীয় পর্যায়ের স্বনামখ্যাত শিল্পীরা গান গেয়ে শোনান।
সঙ্গীতায়োজনের পরই সিরাজুল ইসলাম আবেদ আগামীতে আরও সুন্দর আয়োজন এবং সবার সুস্থতা কামনা করে মহাসমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
যাদের শ্রমলগ্ন এই মহাসমাবেশ
সমকাল পরিবারের প্রত্যেক সদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন মহাসমাবেশ সফল করার জন্য। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, মিরপুর ও পল্লবীর সুহৃদ সমাবেশের প্রত্যেক সদস্য মহাসমাবেশ সফল করতে রাত-দিন খেটেছেন। সবাইকে সুহৃদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
সুহৃদ সমাবেশ, ঢাকা
No comments